"কি হয়েছে সমু , কি ভাবছো ?", অনুরিমা জড়িয়ে ধরে তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলো।
"কিছু না। "
" ক'দিন ধরেই দেখছি তুমি কিরকম অন্যমনস্ক থাকো। কি হয়েছে বলো তো ?"
" না সেরকম কিছু না। "
"অফিসের স্ট্রেস যাচ্ছে ?"
"হ্যাঁ , ওই আর কি। "
"অতো স্ট্রেস নিয়ে শরীরের বারোটা বাজিও না। অফিসের কতো প্রবলেম তুমি সিঙ্গেল হ্যান্ডেডলি ট্যাকেল করেছো। যাই হোক না কেন , এবারও সব ঠিক হয়ে যাবে। "
স্ত্রীয়ের প্রাণোজ্জ্বল কথা শুনে সমীর শুধু হাসলো, তাও সেটা সৌজন্যমূলক। অনুরিমা নিজের নগ্ন শরীর কে চাদর দিয়ে ঢেকে সমীরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিচ্ছুক্ষণ ধরে তারা সঙ্গমে লিপ্ত ছিল। হ্যাঁ , এখন কিচ্ছুক্ষণ বলাই ভালো। বিয়ের প্রায় দশ দশটা বছর পেরিয়ে গেছে। তাদের একটি সাত বছর বয়সী মেয়েও আছে , যে ক্লাস থ্রী তে পড়ে। যাই হোক তাদের যৌন জীবন যেন এখন বিরিয়ানি থেকে পান্তা ভাতের মত হয়ে গেছে। দশ বছর ধরে একই প্রোডাক্ট ইউস করলে যা হয়।
অনুরিমা এক অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী এক নারী , যাকে দেখে স্বয়ং আয়নাও হিংসেতে ফেটে পড়তে চায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে সে দেখতে Swikriti Majumder এর মত , অর্থাৎ ষ্টার জলসার "খেলাঘর" সিরিয়ালের পূর্ণার মত। এরকম অপরূপ স্ত্রীয়ের প্রতি স্বামীর আকর্ষণ কমে যাওয়া অসম্ভব , তা বিয়ের দশ বছরই হয়ে যাক না কেন। কিন্তু সমীরের তো তার পূর্ণার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়নি। ওর সমস্যা অন্য।
সমীর এখন নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না। সে ভাবছে তার ভাবনা , তার চিন্তা , অনুরিমার প্রতি তার মনোভাব কি করে এতোটা চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে , তাও তার অজান্তেই ! কলেজ জীবন থেকেই ও অনুরিমার প্রতি কতোটা পোসেসিভ ছিল সেটা কলেজের সবার জানা ছিল। কোনো ছেলেকেই অনুর ধারে কাছে ঘেঁষতে দিতোনা। এতো সুন্দরী মেয়ে যদি গার্ল ফ্রেন্ড হয় , তবে সে ছেলের চিন্তা তো লেগেই থাকে , এবং সে এক অদ্ভুত নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগে। কলেজের পর চাকরি পেয়ে সে আর বেশি দেরি করেনি। অনুরিমা কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাকে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু বিয়ের পরও অনুরিমার প্রতি ওর পোসেসিভনেস একটুও কমেনি। রাস্তায় কোনো ছেলে যদি তার স্ত্রীয়ের দিকে তাকাতো তাহলে সে সেটা মোটেও ভালো ভাবে নিতো না। কখনও কখনও সিন ক্রিয়েটও করে ফেলতো। কিন্তু এতো বছর পর কয়েকমাস আগের এক ঘটনা তাকে তার বিবেকের সামনেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলো। সেই ঘটনায় যাওয়ার আগে তারও পূর্বের কিছু মুহূর্তসমূহ উল্লেখনীয় , নতুবা বোঝা মুশকিল হবে সমীরের এই চারিত্রিক পরিবর্তনের উৎস খুঁজতে।
স্বাভাবিক নিয়মে বিয়ের বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেছে। একটু একঘেয়েমি জীবনে এসছে। এখানে বলে রাখা ভালো বিয়ের পূর্বে তারা কখনও শারীরিক মিলনে আবদ্ধ হয়নি। বিয়ের সময় দুজনেই পুরো পবিত্র ছিল। দুজনেই দুজনের প্রথম প্রেম , যার সূত্রপাত কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকেই। বিয়ের পর যখন প্রথমবার তারা মিলিত হয়েছিল তখন দুজনকেই লজ্জাবতী লতিকা মনে হচ্ছিলো। প্রথমরাতে তো কেবল শুয়ে একে অপরকে চুমু খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছিলো। সেই রাতে প্রথমবার তারা একই শয়নকক্ষে রাত কাটিয়ে ছিল। কলেজ জীবনে সেরকম সুযোগ কখনও আসেনি , আর তারা সেরকম সুযোগ খোঁজার চেষ্টাও করেনি। তখনকার কলেজ জীবন আলাদাই ছিল। সোশ্যাল মিডিয়া ছিলোনা , তাই কেউ তখন অতো এঁচোড়ে পক্ক ছিলোনা। তখনকার প্রেম মানে কফি হাউস , ময়দান , এবং নন্দনে সিনেমা দেখা। তখন oyo room ছিলোনা , ছিলোনা ভিডিও কল , আর নেটও তেমন সস্তা ছিলোনা বলে সচরাচর ওয়েব সিরিজের নামে পর্ন ভিডিও দেখা হতো না। সেই সময়ের প্রেমের মধ্যে এক অদ্ভুত পবিত্রতা ছিল। তখন লক্ষ্য হতো মন পাওয়া , শরীর নয়। বেশি পুরোনো কথা বলছি না। এই ১২-১৫ বছর আগেকার পৃথিবীর কথাই বলছি। এরই মধ্যে পৃথিবী কতো বদলে গেছে , তাই না ?
যাই হোক , গল্পে ফেরা যাক। বিয়ের প্রথমরাতে নবদম্পতি সমীর ও অনুরিমা বিছানায় একে অপরকে চুমু খেয়েই কাটিয়ে দিলো। আসলে দুজনেই তো সম্পূর্ণভাবে অনভিজ্ঞ ছিল। আস্তে আস্তে তারা আরো কাছাকাছি হতে লাগলো। হানিমুনে যেদিন প্রথমবার তারা যৌনমিলনে আবদ্ধ হলো সেদিন তারা ঘরের লাইট অফ করে চাদরের নিচে শুধু শরীরের নিম্নাংশের কাপড় খুলে একে অপরকে সুখ প্রদান করেছিল। এতটাই তারা পরস্পরের প্রতি লাজুক ছিল। আস্তে আস্তে এই লজ্জা শরম তাদের কাটতে লাগলো। নগ্ন হয়ে বিছানায় সঙ্গম করিতে লাগিলো। প্রতিবারের মিলিত হওয়ার পর পর তারা যৌন স্নাতকে এক একটা সেমিস্টার পাশ করতে লাগলো। সারা বাড়িতে তাদের পরীক্ষার নমুনা পাওয়া যেতে লাগলো। বাড়িতে আর কেউ না থাকলে , তাদের ঠিকানা হতো কখনো বসার ঘরে , কখনও রান্নাঘরে , কখনও বা বাথরুমে। পরীক্ষা দেওয়ার পর পরীক্ষার হল তারা পরিষ্কারও করে দিতো যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে তারা যৌনতায় শুধু স্নাতক বা স্নাতকোত্তর নয় , পিএইচডি পর্যন্ত পড়াশুনা করছে।
তবে সব শুরুর একটা শেষ থাকে। পরীক্ষার রেজাল্ট স্বরূপ অনুরিমার কোল আলো করে একটি কন্যা সন্তান এলো। তারপর স্বামী স্ত্রীর সাথে তাদের আরো একটি পরিচয় হলো যে তারা তিন্নির বাবা মা। সুতরাং দায়িত্বও বাড়লো। সেই দায়িত্বের ঠেলায় এটা বোঝা গেলো না যে তারা যৌনতায় পিএইচডি করতে পেরেছিলো কি পারেনি। উত্তর টা পাওয়া গেলো প্রায় সাত-আট বছর পর , যে তারা পারেনি যৌনতার সবদিক এক্সপ্লোর করতে।
তিন্নি হওয়ার পর তাদের জীবনটা আর চার পাঁচটা সুখী দায়িত্বশীল দম্পতির মত সমানতালে চলতে লাগলো। এখনও তারা মিলিত হতো , তবে সেটা শুধু ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে। প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিল, পরে তা হয়েগেলো রুটিন মাফিক। আর সেক্স যখন রুটিন হয়ে যায় , তখন তার সময়কাল হয়ে যায় সাপ্তাহিক , বা পাক্ষিক , কারোর কারোর ক্ষেত্রে মাসিকও। অনুরিমা এই একঘেয়েমি তার জীবনের একটি ধাপ বা অঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সমীরের খিদে একটু বেশিই ছিল। আর হবে নাই বা কেন , অনুরিমার মত মেয়েকে সে শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে পেয়েছে , তাহলে তার খিদে অল্পতে মিটবে কেমন করে ! আপনিই বলুন , আপনার বাড়ির পাশে যদি দাদা-বৌদির বিরিয়ানির দোকান থাকতো , আপনার মন তো বিরিয়ানি বিরিয়ানি করতোই। কিন্তু রোজ রোজ বিরিয়ানি খেতে খেতে একটা সময়ে সেটাও পান্তা ভাতের ন্যায়ই মনে হবে , নতুবা পেট খারাপ হবে।
সমীরও তাই ভেবে পাচ্ছিলো না অনুরিমা বিছানায় থাকতে তার জীবন কেন একঘেয়েমি তে ছেয়ে রয়েছে ! আচ্ছা অভিষেক বচ্চনেরও কি একঘেয়েমি লাগে , ঐশ্বর্য রাই এর মত বউ পাওয়ার পরেও ? এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন সমীরের মাথায় আসে। একদিন সে অনুরিমা কে জিজ্ঞেস করলো যে অনুরিমা কোনোদিনও পর্ন ফিল্ম দেখেছে কিনা ? অনুরিমার লজ্জায় কান লাল হয়েগেলো। সমীরের অনেক ইনসিস্ট করায় সে বললো তার রুমমেট সুচরিতা একবার তাকে দেখিয়েছিলো নীল ছবি। সুচরিতা কে সমীরও ভালোমতো চিনতো। একই কলেজে পড়তো , তার উপর অনুরিমার রুমমেট ছিল। সুচরিতা মেয়ে টি বরাবরই একটু বাচাল প্রকৃতির ছিল , তাই সমীর খুব একটা তাকে ভালো চোখে দেখতো না। ওর ভয় হতো সুচরিতা যদি অনুরিমা কে খারাপ পথে চালিত করে। যাক সেসব এখন অতীত। ওসব মিথ্যে আশংকার দিন শেষ। পর্ন ফিল্মের প্রসঙ্গ উঠতে অনুরিমা বললো যে সে কয়েকবার সুচরিতার সাথে কিছু পর্ন ফিল্ম দেখেছিলো , ব্যাস এইটুকুই।
কলেজ লাইফে সমীর পর্ন ফিল্ম মাঝে মাঝেই দেখতো। ছেলে বলে কথা, তাই সাত খুন মাফ , কেউ চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তুলবে না। মেয়ে হলেই যতো দোষ। বিয়ের পর সমীরের আর পর্ন ফিল্ম দেখার প্রয়োজন পড়েনি। যখন সাক্ষাত রূপের দেবী তার বিছানা আলো করে শুয়ে থাকে তখন ভার্চুয়াল সেক্সের আর দরকার কি ! কিন্তু এখন আবার তার প্রয়োজনীয়তা পড়েছে সমীরের জীবনে। সে মাঝে মাঝে পর্ন ফিল্ম দেখতে শুরু করেছে , নিজের অত্যাধিক যৌন তাড়নার কারণে। কিছুদিন পর সে সেক্স স্টোরিজও পড়তে শুরু করলো। আর তখুনি সে এমন একটি যৌন অধ্যায় খুঁজে পেলো যা তার কাছে বেশ অজানাই ছিল। তা হলো কাকোল্ডিং , অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে দেখছে।
এধরণের গল্প পড়ে তার খুব অবাক ও অদ্ভুত ফিলিং হলো। মনে কৌতূহল জাগলো যে এধরণের ঘটনা আদেও ঘটে ? নাকি এসব কোনো এক ঘৃণ্য মানসিকতার মানুষের ঘৃণ্যতম কল্পনার লেখনী রূপ ? নেটে রিসার্চ করতে গিয়ে সে পেলো যে সত্যি এরকম ঘটনা অনেক ঘটে , কিন্তু গোপনে। সে এরকম আরো কিছু গল্প পড়তে লাগলো এবং ভাবতে লাগলো যে দুনিয়া কিরকম বৈচিত্রময় , আর ততোটাই বৈচিত্রময় এই স্বামীরা যারা নিজের বউকে অন্য কারোর সাথে শুতে দেখে। কি করে পারে এরা ? এরা কি মানুষ !! কে জানতো , এই প্রশ্নটা একদিন হয়তো তাকে নিজেকেই করতে হতে পারে।
এবার আসি সেই দিনকার কথায় যেদিন সমীর নিজেই নিজের প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। আসলে হয়েছিল কি যে সমীর ও অনুরিমা একটু বেড়িয়ে ছিল শপিং করতে , তিন্নি কে তাদের ঠাকুমা - ঠাকুরদার কাছে রেখে। হঠাৎ মলে তার চোখ পড়ে একটা ছেলের দিকে যে কন্টিনুয়াসলি অনুরিমার দিকে তাকিয়ে দেখছিল। ছেলেটির তাকানোর মধ্যে শত সহস্র গ্যালন কামরস ভরা ছিল। অনুরিমা শপিং এ ব্যস্ত ছিল , তাই ওর নজর এসবে পড়েনি। কিন্তু সমু দেখছিল একটা বছর বাইশের কলেজ পড়ুয়া তার বউকে যেন চোখ দিয়ে স্ক্যান করছে। এসব দেখে স্বভাবসিদ্ধ ভাবে সমুর রাগ আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া কাঙ্খিত ছিল। কিন্তু সমুর অজান্তেই সমু যে কবে এতোটা পরিবর্তিত হয়েগেছে সেটার টের ও আগে পায়নি। সেদিন পেলো। রাগের বদলে তার বাঁড়াটা ফুলে ফেঁপে উঠলো প্যান্টের ভেতর থেকে। সমু নিজেও অবাক তার শরীরের এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে। তার অনুকে কেউ এরকম নোংরা নজরে দেখছে , সেটা সে বুঝতেও পারছে , তবুও তার রাগের বদলে অদ্ভুত এক উত্তেজনা কেন হচ্ছে। এটা ভেবেই সমীর চিন্তায় ঘামতে লাগলো। অনু সমীরকে ঘামতে দেখে জিজ্ঞেস করলো ও ঠিক আছে। সমীর মাথা নাড়িয়ে বললো ঠিক আছে , কিন্তু অনু যাতে তাড়াতাড়ি সেই দোকানের কেনা কাটা সেরে অন্য দিকে যায় তার জন্য অনুরোধ করলো। সে অনুকে সেই ছেলেটার নোংরা নজর থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চাইছিলো। কারণ সে এক অন্তর্দ্বন্দ্বে ফেঁসে গেছিলো। অনুরিমা বললো তার এই দোকানে কোনো ড্রেস পছন্দ হচ্ছেনা , তাই সে এখুনি এখান থেকে বেরিয়ে অন্য দোকানে ঢুকবে। সেই মতো সমীর অনুরিমাকে নিয়ে অন্য দোকানে চলে গেলো। তারপর সেই ছেলেটি কে সে আর দেখতে পেলো না।
বাড়িতে এসে সমীর ভাবতে লাগলো যে ওর সাথে এটা হলো টা কি ? ও নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো। সে কি ভীরু হয়ে গেছে ? তার উচিত ছিলোনা ছেলেটা কে কনফ্রন্ট করার ? সে কি ছেলেটার সাথে লড়তে ভয় পেলো ? কিন্তু সেসব কথা যদি ছেড়েই দিই , ছেলেটিকে অনুর দিকে নোংরা নজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার বাঁড়াটা কেন ফুলে উঠলো ? তার মানে সে উত্তেজিত হয়েছিল ? কিন্তু কেন ? তাও আবার এরকম পরিস্থিতি চাক্ষুস দেখে ? তখন তার মাথায় এলো কাকোল্ড এর উপর আধারিত গল্পসমূহ গুলি। কিন্তু সে তো এরকম নয়। এসব কথা সে কল্পনাও করতে পারেনা। সেদিন রাতে সমীরের ঘুম আসছিলো না কিছুতেই। হঠাৎ যখন আবার তার চোখের সামনে সেই ছেলেটির কু-নজরের চাউনি ভেসে উঠলো , তার বাঁড়া আবার অজান্তেই খাড়া হয়ে গেলো। কি হচ্ছে এসব ওর সাথে সে নিজেই বুঝতে পারছে না। পাশে অনুরিমা শুয়ে ছিল। তিন্নি এখন একটু বড়ো হয়েছে তাই সে ঠাকুমা - ঠাকুরদার সাথেই ঘুমোয়। তাদের অন্ত প্রাণ যে।
সমীরের বাঁড়া টনটনিয়ে খাড়া হয়েছিল। এরূপ অবস্থায় সে অনুর খোলা বাহুতে হাত দিলো। সে আরো গরম হয়েগেলো। মনে হচ্ছিলো যেন সে প্রথমবার অনুরিমা কে ছুঁলো। সে থাকতে না পেরে অনুরিমা কে জাপটে ধরলো , এবং পেছন থেকে চুমু খেতে খেতে নিজের খাড়া হয়ে থাকা বাঁড়াটা কে অনুরিমার পোঁদে রগড়াতে লাগলো। ঘুমের ঘোরে অনুরিমা বলে উঠলো , "ঊমমহঃ .... রাত হয়েছে সমু , কি করছো। .."
অনুর সমু তখন অন্য মুডে ও ভিন্ন জগতে ছিল, প্যারালাল ইউনিভার্স বলতে পারেন। সে তাই কোনো কথা না শুনে অনুরিমার উপর চড়ে বসলো , এবং তারপর বাকিটা ইতিহাস। সমুর মনে হলো যে এটাই তার বেস্ট সেক্স ছিল। সে এতো উদ্দম নিয়ে এতো সময় ধরে কখনো অনুরিমার সাথে কামসূত্রে বাধা পড়েনি। অনুরিমাও মনে মনে কিছুটা হলেও অবাক ও আশ্চর্যচকিত হয়েছিল। সমুর হঠাৎ হলো কি ? মাঝরাতে উঠে এরকম দুরন্তপনা করলো , তাও আবার অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশিক্ষণ ধরে ! অনু মনে মনে চিন্তা করলো। তারপর ভাবলো হয়তো স্বপ্নে আমার সাথে এসব করছিলো তাই বাস্তবেও উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। যে কারণেই হোক না কেন , তারও তো ভালোই লাগলো এরকম একটা সারপ্রাইজ সেক্স পেয়ে। তাই এই নিয়ে এতো মাথা খাপিয়ে লাভ কি। এই ভেবে অনু ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু তার শয্যা ও জীবনসঙ্গী সমীরের তো ঘুম আসছিলো না। সে অনুরিমার মতো এতো সহজ করে সবকিছু ভাবতে পারছিল না। তার সব কিরকম তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। সে বাথরুমে গিয়ে একটু মুখ হাত ধুয়ে আসলো। ঘটনাক্রম গুলো আবার শুরু থেকে সাজালো এবং ভাবলো। প্রথমে শপিং মলে একজন কলেজ গোয়িং ছাত্র কাম ছোকরা তার বউয়ের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল , যেন হাতে পেলেই অনুরিমাকে ছিঁড়ে খাবে। তা দেখে ওর রাগ কম কামুক হলো বেশি। সমীর নিজের কাছে স্বীকার করে নিলো যে সে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল , রেগে যাওয়ার পরিবর্তে। নিজের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে সে কিছুতেই নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পোষণ করতে পারবে না। আর নিজের কাছে হার মানতে দোষের কি ? সম্মানেও লাগবে না। বিবেক তো হাটে বাজারে নিজের বিজয়ের ডঙ্কা বাজিয়ে বেড়াবে না। মানুষ তো হার স্বীকার করেনা লোকের সামনে হিউমিলিয়েট্ হওয়ার ভয়ে।
তারপর যখুনি সে সেই ছেলেটার কথা ভাবছে বিশেষ করে সেই ছেলের অনুরিমার প্রতি তার কামুকভরা চাউনির কথা ভাবছে তখুনি সে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে, বারবার , ইভেন এখনও। তবে কি বেশি বেশি কাকোল্ড স্টোরি পড়ার মাশুলই কি সে দিচ্ছে ? কাকোল্ডনেস কি তার মাথায় ছেয়ে গ্যাছে ? এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়লো। তারপরের দিন থেকে শুরু হলো মন ও মস্তিকের যুদ্ধ , যাতে যেই জিতুক ক্ষতবিদ্ধস্ত সমীর কেই হতে হচ্ছিলো। অনুরিমার সাথে সঙ্গমের সময়ে যখুনি সমীর সেই ছেলেটার কথা ভাবছিলো গুদের মধ্যে প্রবেশ করে মর্দন করা বাঁড়াটি সেই অবস্থায় আরো এক ইঞ্চি বেড়ে যাচ্ছিলো , যা সঙ্গমরত অনুরিমার হঠাৎ প্রবল শিৎকারেই টের পাওয়া যাচ্ছিলো। আর এসব দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছিলো সমীর নিজেই। সে নিজের কাছেই এক আশ্চর্য ধাঁধায় পরিণত হয়েগেছিলো। একদিন সে ঠিক করলো যে সে নিজেই নিজেকে কনফ্রন্ট করবে। নিজের কাছে লজ্জা কিসের ? কেউ তো জানতে পারবে না।
সমীর বাথরুমে ঢুকে নিজের বুকে পাথর রেখে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতে লাগলো। কি কল্পনা ? নাহঃ ! সেই ছেলেটা ধীরে ধীরে অনুরিমার দিকে এগিয়ে আসছে। অনুরিমা যতো পিছোচ্ছে ছেলেটা ততো অনুরিমার দিকে ধেয়ে আসছে। তারপর অনুরিমাকে সে জাপটে ধরেছে। এখানে সেখানে সবজায়গায় চুমু খেতে শুরু করেছে। জোর জবরদস্তি অনুরিমার শাড়ি খুলে ফেলছে। অনুরিমার আটকানোর চেষ্টা করছে , কিন্তু সে বিফল হচ্ছে। অনুরিমার ব্লাউজ ছিঁড়ে ফেলেছে। অনুরিমার বুকে ছেলেটি নিজের মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে সমীরের শরীরে যেন ৮৮০ ভোল্টের কারেন্ট দৌড়োতে লাগলো। শিরায় শিরায় গরম রক্ত বইতে লাগিলো। বুকটা চিন চিন করছিলো। নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। সমীরের বাঁড়াও যেন সমীরকে বলছিলো এবার তার কল্পনার ঘোড়া কে থামাতে , নাহলে হয়তো সে ফেটে বেড়িয়ে আসবে শরীর থেকে। সে আর লম্বা হতে পারছে না। এরকম অবস্থায় সমীর তার রগরগে গরম বাঁড়ায় হাত দিতেই ফিন্কির মতো রস ছিটকে বেরিয়ে এলো , হিলাতেও হলো না। সমীর ভেবেই অবাক যে মাত্র এইটুকু ভাবতেই তার শরীর এতো কামুকতা নিতে পারলো না , তাহলে পুরোটা কল্পনা করলে তো হয়তো সে সেখানেই ফেন্ট হয়ে বাথরুমে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতো।
তার মাথা চরম ঘুরছিলো। সে যেমন তেমন করে নিজেকে পরিষ্কার করে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মনে হচ্ছিলো সে প্রথমবার কোনো ড্রাগস্ সেবন করেছে , এবং চরম নেশা হয়ে মাথা ঘুরতে লেগেছে। সেই সময়ে ঘরে অনুরিমা কাচা কাপড় গুলো গুছিয়ে নিয়ে এলো। সমীরকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। সমীর কিছু না বলে কিচ্ছুক্ষণ এক নাগাড়ে অনুরিমার দিকে চেয়ে থাকলো। অনুরিমা অবাক হয়ে ফের জিজ্ঞেস করলো সব ঠিক আছে তো। সমীরের চেতনা ফিরলো। ও শুধু হুঁ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অনুরিমার খুব খটকা লাগলো। তবুও সে তার স্বামীকে বেশি ইন্টারোগেট করে ডিস্টার্ব করতে চাইলো না তখন।
এদিকে সমীর ভাবতে লাগলো যে এতোটা উত্তেজিত সে কিভাবে হলো। মনের পাপ বোধটা কে মেরে সে অনেক কষ্টে তার অনুরিমা কে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করার সাহস জুগিয়েছিল। কল্পনায় অনুরিমার দুই স্তনের মাঝখানে অন্য পুরুষের মুখ ডুবে থাকতে দেখে ফিন্কির মতো বীর্য তার লিঙ্গ থেকে বেরিয়ে এলো। যদি সবটা কল্পনা করতো তাহলে হয়তো হার্ট অ্যাটাক্ই হয়ে যেত। তবে কি সেও একজন কাকোল্ডে পরিণত হয়েছে ? সেও বিকৃতমনস্ক স্বামীদের মতো চায় নিজের স্ত্রী অনুরিমাকে অন্য পুরুষের সাথে বিছানায় যেতে দেখতে ? ছিঃ ছিঃ , এসব আমি কি ভাবছি ! সমীরের নিজেকেই নিজে চড় মারতে ইচ্ছে করলো।
কিছুদিন কেটে গেলো। সমীরের নিজের মাথা থেকে কাকোল্ডের ভূতটা কে কিছুতেই নামাতে পারছিলোনা , বরং দিন দিন আরো জেঁকে বসছিলো। তার পরিণামস্বরূপ সে ঠিক করলো যে সে আবার কল্পনা করবে , অনুরিমা কে নিয়ে। সমীরের কল্পনায় এবার সেই ছেলেটা অনুরিমার বুকের খাঁজে চুমু খেতে লাগলো। সমীরের কল্পনা সেদিন যেখানে শেষ হয়েছিল , সেখান থেকেই সে শুরু করলো আবার আকাশকুসুম ভাবতে। এবার সে ঠিক করেই নিয়েছিল যতক্ষণ না কল্পনায় সে তার স্ত্রীয়ের সতীত্ব উজাড় হতে পুরোপুরি ভাবে দেখছে ততক্ষণ সে তার নিজের যৌনাঙ্গে হাত দেবে না। হাত দিলেই যদি আবার বীর্য বেরিয়ে যায়। পায়খানার কমোডে বসে সে ভাবতে লাগলো কিভাবে সমান্তরাল এক কল্পনার জগতে একটা অজানা পড়ুয়া ছেলে তার অনুর কাপড় টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেলছে। তার অনুরিমা কে নগ্ন করে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে সেই ছেলেটি অনুর সব কাপড় জোর করে খুলে ফেলে দিলো। অনুরিমা চিৎকার করছে , সমু তুমি কোথায় ? আমায় বাঁচাও। কিন্তু সমু , চুপ করে আড়াল থেকে বসে সবটা দেখছে। এক ঝটকায় ছেলেটাও ন্যাংটো হয়ে গেলো। অনুরিমা ও সেই ছেলে , দুজনেই এখন নগ্ন , আদিম , যেন অ্যাডাম আর ইভ্।
কমোডে বসে বসে সমীর ঘামতে লাগলো। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো , মনে হচ্ছিলো বাঁড়াটা বড়ো হতে হতে ছিঁড়ে না বেরিয়ে আসে। সমীরের আর তর সইছিলো না। তাই সে তার কল্পনাশক্তি কে আদেশ দিলো ছেলেটা যাতে একেবারে ঢুকিয়ে দেয় অনুর শরীরে। ভাবা মাত্রই কাজ। ছেলেটা কল্পনায় অনুরিমার গুদ ফালা ফালা করে দিলো। ছেলেটা পাশবিকভাবে অনুরিমাকে চুদছিলো। অনুরিমা তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিলো। সমীর ভাবতে ভাবতে যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলো। হঠাৎ তার অজান্তেই তার কল্পনাশক্তি তাকে এমন দৃশ্য দেখালো যেটা সে কল্পনা করতে চায়নি। সে দেখলো আস্তে আস্তে অনুও উপভোগ করতে শুরু করেছে। সেও সেই ছেলেটির সাথে তালে তাল মিলিয়ে ওঠা নামা করে চুদছে। এই ছবি চোখের সামনে ভাসতেই সমীর নিজের বাঁড়া তে হাত লাগিয়ে দিলো, এবং কিচ্ছুক্ষণ নাড়াতেই আবার ফিন্কির মতো বীর্য ঠিকরে বেরিয়ে এলো, যা ডাইরেক্ট বাথরুমের দেওয়ালে আছড়ে পড়লো।
সমীরের মনে হচ্ছিলো সে যেন ড্রাগ অ্যাডিক্টেড হয়ে গ্যাছে। রাস্তাঘাটে যেখানেই সে কোনো পুরুষকে দেখছিলো অনুরিমার দিকে তাকাতে , বাড়ি ফিরে সেই পুরুষকেই বানিয়ে ফেলছিলো অনুরিমার শয্যাসঙ্গী , নিজের কল্পনাতে। না জানি অনুরিমা কে সে কল্পনাতে পতিতার চেয়েও কতো অধম বানিয়ে ফেলেছিলো , শুধুমাত্র নিজের যৌন লালসা নিবারণের জন্য। অনুরিমার মতো সুন্দরী মেয়ে রাস্তায় বেরোলে ভদ্রলোকের চোখও ওর দিকে গিয়ে পড়ে , সেটা স্বাভাবিক। দুনিয়ায় সবাই সুন্দরের পূজারী যে। তাই সমীরের কাল্পনিক চরিত্রের অভাব কখনোই ঘটতো না।
এবার আসি সেদিন রাতের কথায় যেখান থেকে এই কাহিনীটি শুরু করা হয়েছে। সেক্সের পর অনু সমীরকে জিজ্ঞেস করছিলো যে তার কি হয়েছে। জবাবে সমীর খানিকটা এড়িয়ে গেলো , কিছু না বলে। সরল অনু বললো অফিসের স্ট্রেস , তো সমীরও হ্যাঁ বলে দিলো। অনুরিমা বেশি ঘাটাতে চাইলো না। কারণ ওর বিশ্বাস ছিল খুব বড়ো কিছু হলে সমীর নিজেই ওকে জানাবে। তাই সে নগ্ন শরীর কে চাদর দিয়ে ঢেকে সমীরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সমীরের চোখের সামনে দিয়ে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো সব ঘটনা মনে পড়তে লাগলো। কতোটা পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে এখন , কলেজ জীবন থেকে এখন। কয়েকমাস ধরে কাকোল্ডের ভূত মাথায় চেপে বসেছে যা এখনও নামেনি। এখন তো সে স্বয়ং কে কাকোল্ড প্রবৃত্তির হিসেবে মেনেও নিয়েছে। তা সম্ভব হয়েছে অনবরত এসব নিষিদ্ধ চিন্তা করে , মাথার মধ্যে সে সকল চিন্তার পোষণ ও জল দিয়ে বৃদ্ধি করে , আর মনে চরম কামুক খিদে জাগিয়ে। প্রথমে অনুকে অন্য কারোর সহিত কল্পনা করে মাস্টারবেট করা , প্রায় প্রতিনিয়ত করা। তারপর রাস্তায় ঘাটে নজর রাখা কে ওর সুন্দরী বউয়ের দিকে তাকাচ্ছে, তাকে নিজের কল্পনার নায়ক করে তোলা। পরের ধাপে নিজেকেই অন্য পুরুষ ভেবে অনুরিমার সাথে সেক্স করতে শুরু করা। অবশেষে মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যে তার এই কল্পনাকে অন্তত একবার বাস্তবতার রূপ দেওয়া। আর এই কথাটা সে কিভাবে নিজের স্ত্রীয়ের সামনে পাতবে সেটাই সে ভেবে পাচ্ছিলো না। তার নগ্ন হয়ে থাকা স্ত্রী তাকে বিশ্বাস করে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছিলো। আর সে নিজেকে অন্য পুরুষ ভেবে তার স্ত্রীয়ের খোলা পিঠে হাত বোলাচ্ছিলো, আর ভাবছিলো কল্পনাকে বাস্তব রূপ কিভাবে দেওয়া যায়।
কয়েকটা দিন কেটে গেলো। সমীরের সাহসেই কুলোচ্ছিলোনা এধরণের কথা অনুরিমার সামনে রাখতে। অনুরিমা কি ভাববে ? ওর চোখে সে কতোটা নিচে নেমে যাবে এসব বলার পর ? কিন্তু মন ? মনের খিদে ? সেটা কে সামাল দ্যায় কি করে ? সমীরের তো এখন অফিসেও মন বসছিলো না। বারবার এসব উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসে। তার আর ভালো লাগছে না। সে হাঁফিয়ে উঠেছে নিজের মনের সাথে দ্বন্দ্ব করতে করতে।
এরই মধ্যে একদিন হঠাৎ রাস্তায় অনুরিমার সাথে দেখা সুচরিতার। তার সেই পুরোনো রুমমেট যাকে সমীর পছন্দ করতো না। অনুরিমা তিন্নি কে নিয়ে একটু বেড়িয়ে ছিল , বিগ বাজারে টুকিটাকি জিনিস পত্র কিনতে। আর সেখানেই কলেজ বন্ধুর সাথে দেখা।
"কি রে অনু ? চিন্তে পারছিস ? "
"আরে , সুচরিতা তুই ! কেমন আছিস ? কতোদিন পর !"
"তুই তো একটুও চেঞ্জ হোসনি দেখছি। সেই অপরূপা সুন্দরীই রয়েগেছিস। বিয়ের পর তো আর যোগাযোগ রাখিস নি। হ্যা রে , সমীর আছে তো নাকি ছেড়ে দিয়েছিস ওকে , হি হি। "
"ধ্যাৎ , যতো সব বাজে কথা। আমার সব ঠিকই আছে , তোর কথা বল। "
সুচরিতা না জানুক , অনুরিমা তো মনে মনে জানে কেন সে তার কলেজের বন্ধুর সাথে যোগাযোগ রাখেনি। তার স্বামীই রাখতে বারণ করেছিল। আগেই বলেছি সমীর ঠিক পছন্দ করতো না সুচরিতা কে। আর না করার যথেষ্ট কারণও ছিল। ভীষণ বাচাল , যখন তখন আলটপকা মন্তব্য করে দ্যায়। এই যেমন ছোট্ট তিন্নির সামনেই জিজ্ঞেস করে বসলো, ওর মা কি ওর বাবা কে ছেড়ে দিয়েছে ? এটা কোনো কথার কথা হলো !
দুজনের অনেকদিন পর দেখা। তাই একটা ক্যাফেতে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বার্তা হলো , অল্প-স্বল্প পেট পুজো হলো। সুচরিতা তিন্নি কে একটা চকলেট কিনে দিলো , যদিও অনুরিমা না করছিলো , তবুও সে জানে তার বান্ধবীর কথা সে কলেজ লাইফ থেকেই ফেলতে পারেনা। দুজনের মধ্যে ফোন নম্বরের আদান-প্রদান হলো। তারপর অনুরিমা সুচরিতার সাথে যোগাযোগ রাখার প্রমিস করে তিন্নি কে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো।
অনুরিমা ভাবছিলো সুচরিতার সাথে দেখা করার কথাটা সে সমীরকে বলবে কি না। কিন্তু সে তো কোনোদিনও তার স্বামীর কাছ থেকে কিচ্ছুটি লুকোয়নি। তাহলে আজ কেন অন্যথা করবে। রাতের বেলা তিন্নি ঘুমোনোর পর অনু সমীরকে আজকের ঘটনাক্রম শুরু থেকে সব বললো। সুচরিতার কথা শুনে সমীর তেমন ভাবে কোনো রিএক্ট করলো না , যা অনুরিমা কে একটু অবাক করলো।
অনুরিমা কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছিলো সমীর প্রচন্ডভাবে সব ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েছে। অনুরিমার সমীরের জন্য চিন্তা হচ্ছিলো। অনুরিমা তাই ফের জিজ্ঞেস করলো সমীর কে সবকিছু ঠিক আছে। সমীর চুপ করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না। অনু এবার সমীর কে জড়িয়ে ধরে আরো আদর করে জিজ্ঞেস করলো , "সমু , কি হয়েছে , বলোই না সোনা !"
"কি করে বলি তোমায় অনু , তুমি আমায় ভুল বুঝবে। "
"তোমার কি আমার উপর এইটুকু বিশ্বাস নেই সোনা , এতোদিনে তুমি আমায় এই চিনলে ? তুমি সৎ ভাবে কিছু বললে আমি কেন তার ভুল ব্যাখ্যা করতে যাবো ?"
সমীর চুপ করে রইলো , তা দেখে অনুরিমা আবার বললো , "এবার দয়া করে বলবে , কি এমন কথা যা তুমি আমায় বলতে পারছো না ?"
"আচ্ছা অনু , তুমি কি খুশি ?"
"মানে ?"
"মানে , তোমার একঘেয়েমি লাগেনা এই জীবনটা নিয়ে ?"
"আচ্ছা সমু , তোমার জীবনে কি অন্য কেউ এসছে ?", আতঙ্কিত হয়ে অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো। সচরাচর বিবাহীত মহিলারা নিজের স্বামীকে নিয়ে যেরকম ওভারথিঙ্কিং করে থাকে আর কি, অনুরিমাও তার ব্যাতিক্রম ছিলোনা।
"ধুর , তুমি কি বলোনা , সত্যি ! তোমার মতো এতো সুন্দরী মেয়ে কে ছেড়ে আমি অন্য কোথাও মন দেবো , সেটা ভাবলেও বা কি করে। "
"তাহলে ? ব্যাপারটা কি ?"
"সেটাই তো বলবো বলবো করে বলে উঠতে পারছি না। একটু ধৈর্য ধরে শুনতে হবে। "
"ঠিক আছে , বলো। "
"আচ্ছা আমাদের যে এতো বছর বিয়ে হয়ে গেলো , তোমার একবারও একঘেয়েমী লাগেনা , আমাদের সেক্সউয়াল লাইফ নিয়ে ?"
"সত্যি বলতে এখন এতো বছর পর আমাদের জীবনের প্রায়োরিটি অনেকটা বদলে গ্যাছে , তাই নয় কি ? আমরা আরো বেশি সংসারী হয়েছি। আমাদের মেয়ে হয়েছে , তার দেখভাল করাটা আমাদের কর্তব্য। তাই এখন আর এসব নিয়ে অতো ভাবিনা। তাছাড়া আমরা তো প্রায়ই মিলিত হই। সবকিছু তো ঠিকই আছে। "
"তুমি আসলে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়েছো বলেই তোমার অসুবিধা হচ্ছেনা। "
"কেন ? তোমার বুঝি সমস্যা হচ্ছে ? আমি কি তোমাকে সুখী করতে পাচ্ছিনা ?"
"নাহঃ , সেরকম নয়। এখন মনে হচ্ছে আমিই ভুল। আমার এখন তোমার মতো নিজের কাজে , সংসারে মন দেওয়া উচিত। তা না করে আমি কিসব আলটপকা জিনিস ভাবছি। "
"আচ্ছা তুমি কি আমাকে নিয়ে আনস্যাটিসফাইড , বিছানায়?"
"তোমায় কি করে বলি , সমস্যাটা তোমার নয় , আমার। বেশ কয়েকমাস ধরে আমার মাথায় এক অদ্ভুত চিন্তা জেঁকে বসেছে , যেটা আমি কিছুতেই নামাতে পারছি না। "
"কি চিন্তা , বলো। "
"বলে লাভ নেই। তুমি আমাকে ভুল বুঝবে। এটা এক ধরণের বিকট ফ্যান্টাসি। "
"আরে বাবাহঃ, বলেই দেখো না। আমি তো তোমার স্ত্রী নাকি। আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে। প্রমিস করছি , আমি কিচ্ছু মাইন্ড করবো না।"
"তুমি কাকোল্ড ফ্যান্টাসির কথা শুনেছো ?"
"কাকোল্ড ফ্যান্টাসি ? নাহঃ তো। তুমি তো জানোই এসব ব্যাপারে আমার নলেজ একটু কম। আমি তো আর সুচরিতার মতো এঁচোড়ে পাকা নই। হি হি। .."
"তোমাকে তাহলে কয়েকটা এরোটিক গল্প পড়তে দিচ্ছি , যা কাকোল্ড ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখা। সেগুলো পড়লে তুমি বুঝতে পারবে , আমি কি বলতে চাইছি। কিন্তু একটাই রিকোয়েস্ট , দয়া করে আমাকে ভুল বুঝো না। তোমাকে আমি কোনো ব্যাপারেই কোনো কিছু করতে বাধ্য করবো না। মানুষের চাহিদার কোনো সীমা পরিসীমা নেই , তাই হয়তো এসব খেয়াল আমার মাথায় এসেছে। ভালো না লাগলে , এই ব্যাপারটা ভুলে যেও। মনে কোরো যে এরকম কোনো কথা আমাদের মধ্যে কোনোদিনও হয়নি। ঠিক আছে।.... "
"আচ্ছা বেশ , আমি পড়বো , জানবো তোমার কি এমন ফ্যান্টাসি আছে যা আমাকে বলতে তুমি এতোটা দ্বিধা বোধ করছো। আর ইন কেস যদি ভালো লাগে , তাহলে তোমাকে জানাবোও। কেমন। ...."
সমীর ড্রয়ার থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে দিলো , সেটা অনুরিমার হাতে দিয়ে বললো , "এতে সেই গল্পগুলো রয়েছে। কালকে তিন্নি কে স্কুলে দিয়ে এসে , বাড়ির সব কাজ সেরে ল্যাপটপে কানেক্ট করে সব গুলো পোড়ো। "
"ঠিক আছে। ", এই বলে অনুরিমা সমীরের কাছ থেকে পেনড্রাইভ টা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলো।
পরের দিন নিয়মমাফিক সমীর অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেলো। অনুরিমা তিন্নিকে স্কুলে দিয়ে এলো। ফেরাটা ওর ঠাকুরদা নিয়ে আসে স্কুল থেকে। সেদিন সমীরের আরোই অফিসের কাজে মন বসছিলো না। খুব টেনশন হচ্ছিলো ওর এটা ভেবে যে বাড়ি ফিরে অনুর কোনো রূপটা ওকে ফেস করতে হবে। অনু কি খুব রেগে যাবে এসব দেখে ? সারাটা দিন অনু একবারও ফোন করেনি। রোজ তো এরকম হয়না। ও কি এখন ওইসব সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ গল্পগুলো পড়ছে আর মনে মনে আমার প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়ছে ? নাহলে জল খেতে খেতেও আমি এতো বিষম খাচ্ছি কেন ? জানিনা বাড়ি গিয়ে কি দেখবো ?
এসি ঘরে বসেও সমীর এসব আকাশকুসুম ভেবে নিজের বিপি বাড়াচ্ছে , আর দর দর করে ঘামছে। ওর নিজেরও অনুকে ফোন করার সাহস হচ্ছে না। ও শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে অনুকে একটা মেসেজ করলো , "খাওয়া হয়েছে?"
অনু কোনো রিপ্লাই দিলো না , যা যথেষ্ট ছিল সমীরকে একটা মিনি হার্ট অ্যাটাক দেওয়ার জন্য। অবশেষে সমীর ভাবলো , "যা হবে বাড়ি গিয়ে দেখা যাবে। আমি তো শুধু নিজের গভীর সুপ্ত বাসোনাটাই সৎ ভাবে নিজের স্ত্রীয়ের কাছে প্রকাশ করেছি মাত্র। খুব জোড় কি আর হবে , রাগ করবে , অশান্তি করবে। আমি মাথা নিচু করে ওর সব রাগ কে অ্যাবসর্ব করে নেবো। পারলে পা ধরে ক্ষমাও চেয়ে নেবো। কিন্তু এই বিকট ফ্যান্টাসিকে এতো মাস ধরে কাউকে না বলে নিজের ভেতরে রেখে বয়ে নিয়ে চলার থেকে তো মুক্তি পাবো। "
৩
সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে সমীর দেখলো ঘরের পরিবেশটা কিরকম যেন থম মেরে গ্যাছে। অনুরিমার মুখের আবহাওয়াটাও খুব একটা পরিষ্কার নয়। বাবা মা এর সামনে এই নিয়ে সে স্ত্রীকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছিলো না। সে জানতো তাকে রাত অবধি অপেক্ষা করতে হবে , জল কোন দিকে এবং কতদূর গড়িয়েছে সেটা বোঝার জন্য।
রাতে খাওয়ার পর তিন্নি ঘুমোলে সমীর অনুর কাছে গেলো , "কি গো , কি হয়েছে ?"
ভারী গলায় অনুরিমা উত্তর দিলো , "তুমি আমার সাথে একদম কথা বলতে আসবে না। "
সমীরের বুঝতে দেরি হলোনা যে তার স্ত্রী এখন আগুন হয়ে আছে , নাহঃ , সেক্সউয়াল পয়েন্ট অফ ভিউ দিয়ে নয়। এ আগুন রাগের আগুন , যৌনতার নয়। আর কেন রেগে আছে সেটা আন্দাজ করা খুব একটা কঠিন ছিলোনা।
সমীর তাও একটু ম্যানেজ দেওয়ার চেষ্টা করলো , "দেখো এটা আমার জাস্ট একটা ফ্যান্টাসি ছিল , কল্পনা বলতে পারো। আর কিছু নয়। "
"এটা তোমার ফ্যান্টাসি ! ", গলার স্বর উঁচু করে বললো।
"আস্তে , তিন্নি সমেত বাবা মাও জেগে যাবে। "
"জাগুক ! তারাও দেখুক তাদের ছেলে কিসব ভাবে নিজের বউ কে নিয়ে। " , এটা বলে অনুরিমা কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে সে আরো বলতে লাগলো , "আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি তুমি আমার সম্পর্কে এসব ভাববে। তুমি এতোটা কি করে বদলে গেলে? এমন তো ছিলেনা ! উল্টে আগে কতো পোসেসিভ ছিলে আমার প্রতি, সেই কলেজ লাইফ থেকে। এর চেয়ে বরং তুমি আমাকে একটু বিষ এনে দিতে , আমি তোমার মুখ চেয়ে খুশি মনে খেয়ে নিতাম , তোমাকে মুক্তি দিতাম। তোমার হয়তো এখন আমার উপর থেকে মন উঠে গ্যাছে। তাই তো তুমি আমাকে নিয়ে এসব খারাপ চিন্তা মনে আনতে পারছো। "
সমীর রীতিমতো অনুরিমার পায়ে পরে ক্ষমা চাইতে লাগলো, "প্লিজ অনুরিমা , আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কথা দিচ্ছি , আমি এই নিয়ে আর একটা কথাও তোমাকে বলবো না। আসলে অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা হয়। আমারও হয়তো খানিকটা সেরকমই হয়েছিল। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও , প্লিজ !"
সেদিন আর ওদের মধ্যে কোনো কথা হলোনা। অনুরিমা চুপচাপ গিয়ে তিন্নির পাশে ঘুমিয়ে পড়লো। সমীর নিজের ফ্যান্টাসির কথা বলে তখন হাত কামড়ানোর মতো অবস্থায় পড়েগেছিলো। সেদিন রাতটা যেমন করে হোক কেটে গেলো। এরকম আরো কিছু রাত রাগে অভিমানে কেটে গেলো। ধীরে ধীরে স্থিতাবস্থা এলো তবে একটা দাগ যেন কোথাও থেকে গেলো। সম্পর্ক হয় আয়নার মতো , যেখানে আমরা রোজ নিজের প্রতিবিম্বটা কে দেখতে পারি। আর সেই আয়নায় একটু ফাটল ধরলে তার দাগ সুস্পষ্টভাবে দেখাও যায় আবার থেকেও যায়।
কিছুদিন পর অনুরিমার ফোনে সুচরিতার কল এলো। জানতে চাইলো ফোন নাম্বার নেওয়ার পরও অনুরিমা কেন তার সাথে যোগাযোগ করেনি। অনুরিমা কি করে বলতো যে এরই মধ্যে তার স্বামী এরকম অদ্ভুত আকাঙ্খা তার কাছে পেশ করবে। আর তাই তার মন মেজাজ এতোদিন ভালো ছিলোনা। যাই হোক , অনুরিমা কোনো অজুহাত দিলো না , শুধু নিজের বন্ধুকে ছোট্ট একটা সরি বললো। সুচরিতার সেই সরি-র বদলে একদিন দেখা করতে চাইলো। অনুরিমা রাজিও হয়েগেলো।
উইকেন্ড দেখে অনুরিমা একদিন গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। ওরা সাউথ সিটি মলে দেখা করলো। কিছুক্ষণ ঘুরলো , কথাবার্তা বললো। একে অপরের বিষয়ে অনেক কথা হলো। অনুরিমা জানলো যে সুচরিতার ডিভোর্স হয়েগেছে। সুচরিতার কথায় সুচরিতা এখন স্বাধীন। সে ভালোই আছে , তার এখন কাউকে দরকার নেই। সংসারের ঝুট-ঝামেলা নেই। তার মতে সংসার মানেই হলো সং সেজে ভালো মানুষীর অভিনয় করা। সে খুশি যে সে এসব থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন সে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে অ্যাজ এ মার্কেটিং কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করে।
সুচরিতা অনুরিমার ব্যাপারে জানতে চাইলো , তো অনুরিমা জানালো তার গতে বাঁধা জীবন স্বামী সংসার নিয়ে। সে বললো সে ভালোই আছে এবং একজন গৃহিনী হিসেবে সুখে সংসার করছে। কলেজের পুরোনো স্মৃতির পাতা ওল্টানো হলো। দুজনেই খুব নস্টালজিক হয়ে গেছিলো। বাড়ি ফিরে অনুরিমার বেশ ভালোই লাগছিলো। অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধুর সাথে সময় কাটালে কারই না ভালো লাগে। সে সমীরের কাছ থেকে কিছু লুকোয়নি। বলেই গেছিলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। সমীর আর আগের মতো নেই তাই সুচরিতাকে নিয়ে সমীর অহেতুক মাথা ঘামাতেই রাজি নয়। তার স্ত্রী যে তার সাথে কথা বলছে , এইটুকুই তার কাছে এখন যথেষ্ট।
অনেকদিন পর পুরোনো বান্ধবী কে কাছে পেয়ে অনুরিমারও খুব ভালো লাগছিলো। সে তাই প্রায়শই সুচরিতার সাথে দেখা করতে লাগলো। কখনো-সখনো তিন্নি কেও নিয়ে যেত। তাই এরই মধ্যে সুচরিতা ও অনুরিমা আবার খুব close friend হয়ে উঠেছিল। আবার তারা একে অপরকে নিজেদের গোপন থেকে গোপনোতর কথা শেয়ার করতে লাগলো। সুচরিতার কিছু কথা শুনে মাঝে মাঝে অনুরিমা অবাক হয়ে যেত আর ভাবতো মানুষ এইভাবেও ভাবতে পারে , এবং এরকম ভাবেও জীবনযাপন করতে পারে ! এরকমই কিছু কথাসমূহ একদিন ওদের মধ্যে হচ্ছিলো।
"হ্যাঁ রে , একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? তোর সেক্স লাইফ কেমন চলছে রে ?"
"ধ্যাৎ , কি যে বলিস। তোর সবসময়ে উল্টোপাল্টা কথা। "
"এতে উল্টোপাল্টা কথার কি হলো ? সেক্স ইস আ ভেরি ন্যাচারাল থিং ইন এভরি ম্যারেড লাইফ। আজকে তো তিন্নিও আসেনি , তুই একা। সো আই আস্ক। আমার সামনে কিসের লজ্জা তোর ?"
"ভালোই চলছে। .."
"শুধুই ভালো ?"
"তাহলে আর কি বলবো ?"
"সত্যি ?"
"কি সত্যি ? "
"এই যে তুই বলছিস , ইউ আর লিভিং এ গুড সেক্স লাইফ। "
"হ্যাঁ , বললাম তো। "
"তোর চোখ মুখ কিন্তু অন্য কথা বলছে। আমি নোটিশ করছি , তুই একটু আপসেট থাকিস। কোনো সমস্যা ? দ্যাখ তুই কিন্তু আমাকে বলতেই পারিস। আফটার অল , আই এম ইওর বেস্ট ফ্রেন্ড। "
"আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা , আমি কি করবো এখন। "
এই বলে অনুরিমা হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে মাথা নিচু করে নিলো।
৪ (চার) ----
সুচরিতা অনুর হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো , "কি হয়েছে রিমা , আমাকে বল। "
অনুরিমার চোখ ছল ছল করছিলো। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , "আমি কিভাবে তোকে বলবো বুঝতে পারছি না রে। আমার খুব লজ্জা করছে। সমীর ইস টোটালি চেঞ্জড নাও। "
"শোন্ রিমা , আমাকে বলা মানে তোর নিজের আয়না কে বলার সমান। কাম অন রিম্স , we used to be best buddies during our college days । তুই কি সব কথা ভুলে গেছিস। আমরা একে অপরের কাছ থেকে কোনো কথা গোপন করতাম না। we shared everything. তাহলে আজ কি হলো তোর ?"
"প্রমিস কর , তুই এই কথা গুলো কাউকে বলবি না। "
"আমি কাকেই বা বলতে যাবো বল। "
"ইদানিং সমীর খুব অদ্ভুত চিন্তা করতে শুরু করেছে। আমি ভাবতেও পারিনি , ও কখনো আমার সম্পর্কে এরকম ভাবনা পোষণ করবে ! "
"কি ভাবছে ? কি ওর ভাবনা ?"
"ওর একটা ফ্যান্টাসি রয়েছে। .."
"কি ?"
অনুরিমা গলার আওয়াজ নিচু করে বললো , "তুই কাকোল্ড সম্পর্কে শুনেছিস ?"
"আঃহ্হ্হঃ। ..", সুচরিতা অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে বসলো, তারপর বললো , "সিরিয়াসলি ! সমীর সত্যি এখন এসব ভাবছে ?"
অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সুচরিতা কিছুটা সেকেন্ড নিজেকে সামলে নিয়ে অনুরিমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো , "তা তুই কি ভাবছিস ওর এই ফ্যান্টাসিটা কে নিয়ে ?"
"মানে ? তুই বলতে কি চাইছিস ?", অনুরিমা হঠাৎ সুচরিতাকে ঝাঁঝিয়ে কথাটা বললো।
"রিল্যাক্স , এতো উত্তেজিত হোসনা। একটু প্র্যাক্টিক্যাল হও। দেখ এটা তো সত্যি যে সমীরের মাথায় এই কথাটা এসছে , তুই নিজেই সেটা বললি। আর তোর রিঅ্যাকশন দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তুই এসব কথা নিজের কল্পনাতেও আনতে পারিস না। তাই তো ? "
অনুরিমা চুপ করে রইলো। সুচরিতা বললো , "এবার বল , সমীর কি তোকে ফোর্স করছে এসবের জন্য ?"
"নাহঃ , ও এই কথাটা শুধু একবারই তুলেছিল। তারপর আমি এমন অশান্তি করেছি যে দ্বিতীয়বার বলার সাহস পায়নি আর। "
"ব্যাস , তাহলে তো ঝামেলা মিটেই গেলো। "
"কিন্তু , তারপর থেকে ....."
"তারপর থেকে কি ?"
"তারপর থেকে আমাদের সম্পর্কের তার টা কেমন জানি কেটে গ্যাছে মনে হচ্ছে। ও ভয়ে একথা আর তুলছে না ঠিকই , কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারছি , এই ব্যাপারটা ও এখনো নিজের মাথা থেকে নামাতে পারেনি। আর এতে মনে মনে ও অশান্তিতে ভুগছে , আর আমিও। আমাদের মধ্যে এখন বেশ কয়েকদিন ধরে ঠিক মতো কথাও হচ্ছেনা। "
"তাহলে তুই ওর সাথে কথা বল। বলে দ্যাখ ওর ভেতরে এখন কি চলছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যাপার নিয়ে টানাটানি চললে সেটা কে ঝুলিয়ে রাখতে নেই। আমাকে তো দেখছিস , আমি ঘর পোড়া গরু। "
সুচরিতার কথা শুনে অনুরিমা ঠিক করলো যে সে আজই নিজের স্বামীর সাথে বসবে , এবং বসে কথা বলে সবকিছু ক্লিয়ার করে নেবে। সেই মতো রাতে অনুরিমা সমীরের কাছে গেলো , এবং ওদের কথোপকথন শুরু হলো।
"কি ভেবেছো ? মাথা থেকে ভূতটা নেমেছে তোমার ?"
"তুমি কিসের কথা বলছো ?"
"বুঝতে পারছো না , তোমার সেই ফ্যান্টাসির কথা বলছি। "
সমীর প্রথমে ভাবলো অনুরিমা কে কি জবাব দেবে সে। তারপর ঠিক করলো যে যা হওয়ার দেখা যাবে , কিন্তু সে নিজের কাছে এবং নিজের স্ত্রীয়ের কাছে সৎ থাকবে। তাই সে বললো , "দেখো অনুরিমা , আমি জানি আমার এসব জিনিস ভাবা অপরাধ। কিন্তু আমি তো শুধু এটা তোমাকেই বলেছি , আর কাউকে তো নয়। আমাদের বিয়ের প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। আমরা দুজনেই সংসারের নিত্যকার ঝুট ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে আছি। তারপরও যেটুকু সময় পাই, আমি যদি ভুলবশত সে সময়ে তোমায় নিয়ে অন্য কিছু ভেবেও থাকি , তাতে আমি কি খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি ?"
"তুমি বুঝতে পারছো না , তোমার এই ভাবাটা কতোটা বিষাক্ত ভাবনা ? এরকম কেউ ভাবে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ? ছিঃ। "
"তুমি কি এখন আমাকে ঘেন্না করতে শুরু করেছো ?"
"করবো না ? নিজেকে কোথায় এনে নামিয়েছো তুমি নিজেই সেটা দেখো , এবং বোঝার চেষ্টা করো। "
"অনু , এটা শুধু আমার একটা ফ্যান্টাসি , সেক্সউয়াল ফ্যান্টাসি। "
"ফ্যান্টাসি মানে তো কল্পনা , আর কল্পনা মানে ভাবনা। তুমি আমাকে অন্য কারোর সাথে ভেবেছো ! এটা কি করে ভাবতে পারো তুমি ? আমি তোমার স্ত্রী সমু। নিষিদ্ধ পল্লীর কোনো পতিতা নই। "
"অনু , তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো ! তুমি এসব কি বলছো ?"
"তাহলে আর কি বলবো , বলো ? তুমি হয়তো মনে মনে চেয়েইছো আমাকে অন্য কারোর সাথে শুতে দেখতে ! নিজের কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়ণ হতে দেখতে। একবার ভেবে দেখো সমু , কোনো স্বামী কি এটা চাইতে পারে ? তার উপর তুমি এতো পোসেসিভ স্বামী ! এখন কোথায় গেলো সেইসব পোসেসিভনেস তোমার ? সমু আমার দিকে চেয়ে দেখো , আমি তোমার স্ত্রী , অনুরিমা বসু মল্লিক , এই মল্লিক পরিবারের বউ , সমীর মল্লিকের স্ত্রী। আমি কোনোদিনও নিজের স্বামী ব্যাতিত অন্য কারোর কথা নিজের কল্পনাতেও আনিনি। কলেজ লাইফে প্রথমবার প্রেমে পড়ি , তাও সেটা তোমারই প্রেমে। তুমি আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম। তুমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষ আমার জীবনে কোনোদিনও আসেনি, আর আসবেও না। এই কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও তোমার। "
এই বলে অনুরিমা মুখ ঘুরিয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। সেদিন সমীরও কিছু বললো না আর। সেই রাতটাও স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার অমীমাংসিত ঝামেলার সাক্ষী হয়ে থেকে গেলো।
অনুরিমা ঠিক করলো সে সুচরিতার সাথে আবার দেখা করবে , এবং এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে। কারণ এই কথা তো সে আর অন্য কাউকে বলতে পারবে না। একমাত্র সুচরিতাই আছে যাকে সে শেয়ার করতে পারবে।
বিকেলে অনুরিমা গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে নন্দনের কাছে মোহরকুঞ্জে। সুচরিতা একটা কাজে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিল। যেমনটা আগে বলেছি ডিভোর্সের পর সুচরিতা এখন স্বাধীন ঝাড়া হাত-পা হয়ে যাওয়া একজন নারী। চাকরির সাথে সাথে সে টুকিটাকি শিল্প-সাহিত্য নিয়েও চর্চা করতে থাকে। যাই হোক , দুই বান্ধবীতে আবার বসলো গল্প করতে।
"কি রে , হঠাৎ করে এতো জরুরি তলব ? আমি যখন দেখা করতে বলি তখন তো নিজের সংসারের হাজার একটা বাহানা দিস। শশুর-শাশুড়ি বাড়িতে থাকবে না , তিন্নির টিউশন আছে , সমীরের এই হয়েছে , ওই হয়েছে , আরো কতো কি। আর এখন ? আমি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিলাম , একটা এক্সহিবিশন ছিল। পুরোটা না দেখেই বেরিয়ে এলাম , তোর জন্য , তোকে টাইম দিয়ে রেখেছিলাম বলে। "
"আই এম সরি রে ", এই বলে অনুরিমা মাথা নিচু করে চোখের জলটা মুছে নিলো।
"হেই , কি হয়েছে তোর ? সব ঠিক আছে ? আরে আমি তো জাস্ট এমনি বললাম , কিছু মনে করিসনা প্লিজ। তোর জন্য তো আমার জান হাজির , মাই ডার্লিং !"
"কিচ্ছু ঠিক নেই রে !"
"তুই কি সমীরের সাথে সেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছিলিস ? আই মিন ওর সেই ফ্যান্টাসি-টা নিয়ে ?"
"হুমঃ। .."
"তা কি হলো , তারপর ?"
"কি আর হবে ?"
"ও কি এখনো চায় এসব করতে ?"
"মুখে কিছু বলছে না , তবে ওর হাব-ভাব দেখে কেন জানিনা আমার সেরকমই কিছু মনে হচ্ছে। "
"তা তুই কি ঠিক করলি ? "
"মানে ?"
"মানে , তুই কি ওর ফ্যান্টাসিটা কে এনকারেজ করবি ?"
"তুই কি পাগল হয়েছিস ? আমি এসব কথা নিজের দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা ! হাও কুড ইউ সে দিস ?"
"দেখ তুই হয়তো ভাবতে পারিস না , বাট অনেকে ভাবে , এবং ইমপ্লিমেন্টও করে। "
"কি বলছিস তুই এসব !"
"ওই জন্যই বলি ডার্লিং , ঘর সংসার থেকে একটু বেরো , বেড়িয়ে দুনিয়াটা কে দেখ। এটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার এক ভার্চুয়াল দুনিয়া। এই সমাজে এখন অনেক কিছু হয় , লোক চক্ষুর আড়ালে। "
"সে যাই হোক না কেন , আমি ওসবের মধ্যে একদম নেই। "
"তা তুই নাই বা থাক, কিন্তু জানতে তো কোনো অপরাধ নেই। "
"তুই হেয়াঁলি না করে , সোজাসুজি বলবি , এক্সাক্টলি কি বলতে চাইছিস। "
"খুব সিম্পল। তোরা একটা সেক্সওলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট কর। দেখ তুই চাসনা এসব করতে , সমীর মনে মনে হয়তো চায় , কিন্তু ভয়ে তোকে খোলাখুলিভাবে বলতে পারছে না। এভাবে মনে মনে দ্বন্দ্ব চললে তো তোদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে তো ফাটল ধরে যাবে , সেটা নিশ্চই তুই চাইবি না। তোকে একটা ডিসিশন নিতে হবে। হয় তুই সমীরের ফ্যান্টাসিটা কে অ্যাপ্রুভ করে সেটা কে সত্যি করবি , আর নতুবা সমীরকে ওই ফ্যান্টাসির মোহঃ মায়া থেকে সরিয়ে আনবি। আমি জানি তুই সেকেন্ডটাই করার চেষ্টা করবি। প্রথম অপশনটা তোর সামনে রাখা বৃথা। তবে যেটাই হোক না কেন , বোথ অফ ইউ শুড হ্যাভ কনসাল্ট উইথ আ সেক্সওলজিস্ট ফর দিস পারপাস। আমার এক বন্ধু সেক্সওলজিস্ট , নাম ডক্টর রাজীব রায় , আমাদেরই বয়সী। আমি ওর নাম্বার তোকে দিচ্ছি। তুই বললে আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে পারি। "
"রাজীব রায় , ছেলে তো। ওকে কি করে বলবো সব। "
"কাম অন অনুরিমা , সেক্সওলজি বিভাগে তুই দেশে ক'জন মহিলা ডাক্তার কে পাবি বল তো ? আর সে তো তোর পরিচিত নয় , তোরা যাবি নিজেদের সেক্সউয়াল প্রবলেম নিয়ে কথা বলতে , ও ডক্টর , ওর এটাই পেশা , এইসব সমস্যা নিয়ে ডিল করা। সো অতো হিচকিচাস না। "
"কিন্তু সমীর রাজি হবে ? "
"আলবাত হবে। এখন তুই ডমিনেটিং পজিশনে আছিস , আর ও নিজের মরমে মরছে। তুই যদি এখন ওকে চাঁদেও যেতে বলিস , ও তোর সাথে সেখানেও যেতে রাজি হয়ে যাবে। শুধু বলিস না , আমি তোকে ডাক্তারের নম্বরটা দিয়েছি। বলবি তুই ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পেয়েছিস। আমিও রাজীবকে বলে রাখবো যে ও যেন সমীরের সামনে আমার নাম না নেয়। আমি জানি সমীর আমাকে পছন্দ করেনা , সেই কলেজ এর টাইম থেকেই। আমি আসলে ঠিক ওর টাইপের মেয়ে নই , তাই ওর চোখে আমি সবসময়ে একটা বাচাল , উৎশৃঙ্খল মেয়ে ছিলাম , এবং অ্যাম প্রিটি সিওর এখনও ওর ভাবনাটা আমার প্রতি ওরকমই রয়েছে। আসলে এতে আমি সমীরের দোষ দেখিনা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জন্য কিছু গতে বাধা নিয়ম রয়েছে , যেগুলো আমি কোনোদিনই মানিনি। তাই বেশিরভাগ পুরুষেরই চক্ষুশূল আমি , তা সে সমীর হোক বা আমার স্বামী আদিত্য , সরি প্রাক্তন স্বামী। "
৫
বাড়ি ফিরে অনুরিমা ভাবতে লাগলো কিভাবে সে সমীর কে বলবে ডাক্তার দেখানোর কথাটা। সমীর ওকে ভুল বুঝবে না তো ? সে তো নিজেও জানেনা সেক্সওলজি টা ঠিক কি, খায় না মাথায় দেয় ? কোনোদিনও তো জানার দরকারই পড়েনি না ! অনুরিমা তাই সমীর অফিস থেকে আসার আগে নেটে একটু রিসার্চ করে নিলো সেক্সওলজি , এবং সেক্সওলজিস্ট সম্পর্কে। সমীর বাড়ি ফিরলো। অনুরিমার সাথে সে সংসার করছে প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেলো। তাই অনুরিমার মুখে প্রশ্নের ভাঁজ সে দেখতে পারে , বুঝতে পারে যে অনুরিমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে তার কাছে। সে তাই নিজে থেকেই অনুরিমা কে জিজ্ঞেস করলো , "কিছু বলবে ?"
"হ্যাঁ , ওই আর কি। "
"তা বলো। .."
"তুমি আগে ডিনার করে নাও , তারপর শোয়ার সময়ে বলবো। "
"আচ্ছা , ঠিক আছে। "
ডিনারের পর সমীর জানতে চাইলো অনুরিমার কাছে , তার কি বলার আছে। অনুরিমা ঘুরিয়ে সেক্সওলজিস্টের কথা তুললো।
"সমু , তুমি এটা ভালো মতোই বুঝতে পারছো যে বিগত কয়েকদিন ধরে আমাদের মধ্যে কোনো কিছু ঠিক চলছে না। আর তা কেন সেটাও তুমি জানো। "
"হুমঃ। .."
"তা এটার তো কোনো একটা সলিউশন বের করতে হবে। এভাবে তো চলতে পারেনা। "
"কি সলিউশন বলো ?"
"দেখো সমু , কিছু মনে কোরোনা , তবে আমার ধারণা এটা তোমার একপ্রকার মানসিক সমস্যা। এর একটা ট্রিটমেন্ট হওয়ার দরকার। রাগ কোরোনা , আমি তোমাকে পাগল বলছি না , আর তোমাকে আমি সাইক্রেটিস্ট এর কাছেও নিয়ে যাবো না। আমি ভাবছি একটা সেক্সওলজিস্ট কে দেখানোর কথা। আশা করবো , তুমি এতে না করবে না। "
"যা ভালো বোঝো , করো। আমার কোনো আপত্তি নেই। "
সমীর যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে সেটা অনুরিমা ভাবতে পারেনি। সুচরিতা ঠিকই বলেছিলো , এখন সে ডমিনেন্ট পজিশনে আছে আর সমীর সাবমিসিভ। অনুরিমা সুচরিতা কে জানালো সমীর রাজি আছে। সুচরিতা সেই মতে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিলো। উইকেন্ডে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছিল যাতে সমীরের সুবিধা হয়। সুচরিতা অনু কে জানালো ডক্টর রায় এর চেম্বার হাজরা মোড়ে। ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিলো।
শনিবার বিকেলে ছিল অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সময় মত অনুরিমা আর সমীর হাজির ডক্টরের চেম্বারে। ডাক্তারের রুমের বাইরে শুধু একজন লেডি অ্যাটেনডেন্ট বসে ছিল। আর কোনো পেশেন্ট পার্টি ছিলোনা। গুপ্তরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে সচরাচর তো মানুষ যেতে চায়না , তাই একজন সেক্সওলজিস্টের প্রাইভেট চেম্বারে শুধু নির্জনতা ভীড় করে।
সুচরিতা আগে থেকে অনুরিমাকে বলে দিয়েছিলো , অ্যাপয়েন্টমেন্ট-টা সে অনুর নামেই করেছে। তাই অনু লেডি অ্যাটেনডেন্ট এর কাছে গিয়ে নিজের নাম বললো। সমীর ভাবলো অনুই অ্যাপয়েন্টমেন্ট-টা নিয়েছে , তাই হয়তো নিজের নামটা দিয়েছে। ওদিকে সুচরিতা নিজের ডাক্তার বন্ধুকে বলে রেখেছিলো যে অনুরিমার হাজবেন্ডের সামনে সে যেন তার নাম না নেয়। ওকে বুঝিয়ে রেখেছিলো তার আর অনুর স্বামীর মধ্যেকার সাপে-নেউলের সম্পর্কের ইকুয়েশনটা। লেডি অ্যাটেনডেন্ট অনু ও সমীরকে বসতে বলে চেম্বারের ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বেড়িয়ে এসে বললো , "যান আপনারা। "
অনু ও সমীর ভেতরে ঢুকলো। দেখলো তাদেরই সমবয়সী একজন লোক , বয়স ৩৭-৩৮ হবে , দেখতে মোটামুটি , গায়ের রং তামাটে মতন। কিন্তু আমি ডাক্তারের শারীরিক বর্ণনা কেন দিচ্ছি ? সে তো শুধু ওদের ট্রিটমেন্ট করবে , শলা-পরামর্শ দেবে , তাই না ? দেখা যাক , কি লেখা আছে নিয়তি তে।
ডক্টর রাজীব রায়ের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো , যখন সে প্রথম ঝলকে অনুরিমা কে দেখলো। মনে মনে ভাবলো, "কি অপূর্ব সুন্দরী মহিলা , না জানি ঈশ্বর কতোটা সময় নিয়ে একে বানিয়েছে ! যেমন মুখশ্রী , তেমন শারীরিক গঠন। এক কথায় , লা জবাব।" ডক্টর রায়ের ঘোর ভাঙলো সমীর বললো , "আসবো? ...."
"হ্যাঁনঃ। .... হ্যাঁ হ্যাঁ , আসুন আসুন। " , ডক্টর রায় নিজেকে সামলে নিয়ে বললো।
ডক্টর রায়ের এরূপ চাউনি টা অনু বা সমীর কেউই লক্ষ্য করেনি। আসলে তারা দুজনেই খুব নার্ভাস ছিল , কিভাবে একজন অজানা তৃতীয় ব্যক্তিকে নিজেদের বৈবাহিক জীবনের সমস্যার কথা বলবে ! এটা ভেবেই একটু অন্যমনস্ক ছিল তারা। তাই তাদের নজরটা ডক্টর রায়ের কু'নজরের উপর ঠিক পড়েনি।
ডঃ রায় -- বসুন।
অনু ও সমীর চেয়ার টেনে বসলো।
"বলুন কি সমস্যা ?"
সুচরিতা ওদের সমস্যার ব্যাপারে আগে থেকে ডঃ রায়কে কিছু বলেনি। স্বামী স্ত্রীর সমস্যা তাদের মতো করে তারাই শুধু বলতে পারবে , তাই জন্য। কিন্তু চেম্বারে অনু সমীর বুঝে পাচ্ছিলো না , কে প্রথমে বলবে , কার প্রথমে বলা উচিত , এবং সর্বোপরি কিভাবে বলবে ? ওদের হেজিটেশন দেখে রাজিব বললো , "সমস্যাটা ঠিক কার ? আপনার ? নাকি আপনার ?"
অনু ইতঃস্ততভাবে হাত দেখিয়ে সমীরের দিকে ইশারা করলো। ডঃ রাজীব বুঝলেন সমস্যাটা সমীরের। এটাও বুঝলেন যে তারা দুজনই খুবই সংকোচ বোধ করছেন নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। তাই তিনি ঠিক করলেন এক এক করে দুজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তিনি অনুকে বাইরে গিয়ে বসতে বললেন। অনু সেইমতো চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো।
"এবার বলুন , কি সমস্যা ? বাই দা ওয়ে , আপনার নামটা ?"
"সমীর মল্লিক। "
"আচ্ছা তো সমীর বাবু , এবার নিঃসংকোচে সব কথা গুলো বলে ফেলুন দেখি। লজ্জা করবেন না একদম। জানেন না , লজ্জা ঘেন্না ভয় , তিন থাকতে নয়। "
"আমি জানিনা ব্যাপারটা কিভাবে বলবো , বা বোঝাবো। "
"এমনভাবে বলুন , যেন নিজের ছায়া কে বলছেন ও বোঝাচ্ছেন। "
সমীর মাথা নিচু করে বসে রইলো। রাজীব এক গ্লাস জল সমীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে সেটা পান করতে বললো। সমীর এক ঢোঁকে পুরো গ্লাসটা শেষ করে দিলো। দিয়ে মুখ মুছে বললো , "আমার মনে হয় , আমি খুব খারাপ একজন স্বামী। "
"আর সেটা কেন মনে হয় আপনার ?"
"আমি মনে মনে অনেক খারাপ চিন্তা ভাবি। আমি চাইনা ভাবতে , তবুও সেটা চলে আসে আমার কল্পনায়। আমি চাইলেও সেটাকে অ্যাভয়েড করতে পারিনা। "
"তা সেই খারাপ চিন্তাটা কি শুনি ?"
সমীর একটু থেমে বললো , "মাঝে মাঝে কল্পনাতে নিজের স্ত্রীকে অন্য কারোর সাথে ভেবে পেলি। মানে ......., আপনি বুঝতে পারছেন তো আমি কি বলতে চাইছি ?"
"হুমঃ। .... তা সেসব ভেবে আপনার রাগ হয় , না ভালো লাগে ?"
"আগে রাগ হতো , এখন কেন জানিনা ........ "
"ভালো লাগে , তাই তো ?"
সমীর নিম্নস্বরে বললো , "হুমঃ। ...."
"বুঝলাম। আপনার স্ত্রী নিশ্চই এসব চায়না। আর সেই জন্যই সে আপনাকে এখানে নিয়ে এসছে। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো প্রশ্নটা হলো এখন আপনি কি চান ? আপনি কি মনে করেন , এটা আপনার একটা মানসিক অসুস্থতা , নাকি ওয়াইল্ড ফ্যান্টাসি ?"
"সেটা তো আপনি ভালো বলতে পারবেন , এটা আসলে কি !"
"দেখুন , সবটাই পার্সপেক্টিভের উপর ডিপেন্ড করে। আপনি ব্যাপারটা কে কিভাবে দেখছেন। সবটাই আপেক্ষিক। খানিকটা অর্ধেক ভর্তি জলের গ্লাসের মতো , একদিক দিয়ে দেখলে মনে হবে অর্ধেক পূর্ণ , অপরদিক দিয়ে অর্ধেক খালি। "
"আপনি কি বলছেন আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। "
"মানে , এটা কে ফ্যান্টাসি ভাবলে ফ্যান্টাসি , অসুস্থতা ভাবলে অসুস্থতা। "
"তার মানে আপনি বলতে চাইছেন , আমার এইসব ভাবাটা অস্বাভাবিক নয় ?"
"আচ্ছা আগে এটা বলুন , আপনাদের বিয়ে কতদিন হয়েছে ?"
"প্রায় এগারো বছর। "
"আপনাদের সেক্স লাইফ কিরকম চলছে ?"
"মোটামুটি। .."
"মানে , অ্যাভারেজ , কখনো-সখনো বিলোও অ্যাভারেজ , তাই তো ?
"বলতে পারেন। "
"সপ্তাহে কতোবার মিলিত হন ?"
"ঠিক নেই। "
"আপনার অন্য কোনো সম্পর্ক আছে , এক্সট্রা ম্যারিটাল ? "
"নাহঃ। "
"স্ত্রী কে সন্দেহ করেন ?"
"নাহঃ , ও সেরকম নয়। "
"তাহলে আপনার এই ফ্যান্টাসিটা এসছে আপনার ম্যাড়ম্যাড়ে সেক্স লাইফের জন্য। আপনার সেক্সউয়াল লাইফে আপনি খুব বোড়িং ফিল করছেন , তাই আপনি একটু অন্যরকম কিছু ভাবছেন। "
"হতে পারে। "
"আপনার স্ত্রী এই ব্যাপারে কি করে জানলো ? আপনি নিজে থেকে বলেছেন , নাকি উনি কোনোভাবে জানতে পেরে গেছেন ?"
"আসলে আমি বেশ কয়েকদিন ধরে এইসব কারণে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম , আমার স্ত্রী এর কারণ জানতে জোর করায় আমি বাধ্য হই স্ত্রী কে সবটা বলতে। তারপর থেকে আমাদের মধ্যে কোনোকিছু ঠিক নেই , সি ইস অফেন্ডেড অন মি। "
"আপনি কি কখনো ভেবেছেন , এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার কথা ?"
"হ্যাঁ ভেবেছি , কিন্তু অনুকে বলবো কিভাবে সেটা বুঝে পাইনি। "
"এখন স্ত্রীয়ের প্রতিক্রিয়া দেখে সেই ভাবনা থেকে সরে এসেছেন , নাকি এখনো সেটাকে পোষণ করে চলেছেন ? "
"কল্পনা করতে তো ভালোই লাগে , বাট সেটাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনা। "
"আপনি আমার কাছ থেকে কি চান ? আপনার স্ত্রীয়ের ইচ্ছা মতো আপনাকে এই সো কল্ড মানসিক অসুস্থতার থেকে বের করে আনি , নাকি আপনার কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে আপনাকে সাহায্য করি ?"
সমীর বুঝে পাচ্ছিলো না এর উত্তর সে কি দেবে ! সে নিজের সম্মানের কথা ভাববে , নাকি লাজ লজ্জা ত্যাগ করে নিজের কামের লালসায় বশীভূত হয়ে এক অজানা ব্যক্তির সাহায্য নেবে নিজের ফ্যান্টাসিকে পূরণ করতে ?
৬
ডক্টর রাজীব রায় আবার এক গ্লাস জল সমীরের কাছে এগিয়ে দিলো , দিয়ে সমীরকে পান করতে বললো। নার্ভাসনেসের ফলে সমীরের গলা শুকিয়ে এসছিল। কিন্তু সে এবার অর্ধেক জল পান করে , গ্লাসটি কে অর্ধেক পূর্ণ করে রাখলো , বা বলতে পারেন অর্ধেক খালি করে রাখলো। ডক্টর রায়ের কথায় যে যেভাবে দেখবে, সবটাই তো আপেক্ষিক না !
সমীর কিছুক্ষণ ভেবে বললো , "আচ্ছা এটাও কি সম্ভব ?"
"কোন অসম্ভবের কথা বলছেন যেটা সম্ভব নয় ?"
"মানে আমার ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তব রূপ দেওয়া। অনুরিমা সেরকম মেয়ে নয় , ওকে রাজি করানো আর বিন্ধ পর্বত টলানো দুটোই সমান , এক কথায় অসম্ভব ! আমি নিজের কামের তাড়নায় একবার ভেবেছিলাম ওর কাছে কথাটা পাতবো , পরে যখন কনফেস করতে হলো , তখন বুঝলাম কতো ভুল ছিল সেই ভাবনা। "
"ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব সমীর বাবু। সঠিক পরিকল্পনা , এবং সঠিক টাইমিংয়ের দ্বারা যেকোনো নারীকেই যেকোনো কাজ করার জন্য ম্যানুপুলেট করা যায়। রাস্তাটা কঠিন খুব , কিন্তু অসম্ভব বলে পৃথিবীতে হয়না কিছুই , সবটা মানুষের কর্মক্ষমতার পরিধির উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার পরিধির সীমানা যতো বাড়াবেন , ততোই অনেক অসম্ভব কাজ আপনার কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠবে। নীল আর্মস্ট্রং নিজের পরিধি বাড়িয়ে চাঁদ অবধি পৌঁছে গেছিলেন , কেউ আগে সেটা ভাবতে পেরেছিলো কোনোদিনও ? "
"কিন্তু আপনি আমাকে এই অ্যাডভাইস দিচ্ছেন কেন ? আমার স্ত্রী তো আপনার কাছে আমাকে সম্পূর্ণ বিপরীত কারণে নিয়ে এসছিল। সেটা না করে উল্টে আপনি আমাকে এবং আমার ফ্যান্টাসিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন !"
"আমি আপনাকে আগেই জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি চান ? নিজের ফ্যান্টাসিটা কে পূরণ করতে , নাকি স্ত্রীয়ের কথা শুনে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে। দা চয়েস ইস ইয়র্স। "
"কিন্তু এই ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তব রূপ দেওয়া কি ঠিক হবে ? আমাদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হবে না এতে ? কিছু কিছু জিনিস ভাবতে ভালো লাগে কিন্তু বাস্তবে তার কংসিকুয়েন্সেস কতোটা সাংঘাতিক হতে পারে তার আইডিয়া আমাদের কাছে সবসময়ে থাকেনা। "
"আমার মতে সবটাই পার্সপেক্টিভের উপর ডিপেন্ড করছে। অনেস্টলি স্পিকিং আমি আমার অনেক পেশেন্ট কাপাল কে দেখেছি যারা এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসির পথ বেছে নিয়েছিলো নিজের সেক্সউয়াল লাইফ কে বেটার করার জন্য , এখন তারা দিব্বি সুখে আছে। তাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং অনেক বেটার হয়েছে , সম্পর্কে একটা ট্রান্সপারেন্সি এসছে। তাই মাঝে মাঝে স্রোতের বিপরীতে গিয়েও সমস্যার সমাধান করা যায়। আপনার স্ত্রী যেটা কে সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখছে , কে বলতে পারে সেটাই হয়তো সমস্যার একমাত্র সমাধান। "
"কিন্তু কার সাথে ? কে করতে পারে আমার ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তবায়িত ? কার উপর বিশ্বাস করে এই চরম পদক্ষেপটা নেবো আমি ? "
"দেখুন কিছু মনে করবেন না , আপনার স্ত্রীকে আমি যতটুকু দেখলাম তাতে আমি বলতেই পারি যে আপনার স্ত্রী এক অপরূপ সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ এক নারী , আপনার স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য যে কেউ রাজি হয়ে যাবে। "
"কিন্তু সেই ব্যক্তিটি যদি পরে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চায় ? সে যদি আমার স্ত্রীকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চায় ? তখন ! "
"আপনার কি নিজের উপর একটুও বিশ্বাস নেই ? সাধারণত কাকোল্ড ফ্যান্টাসি সেইসব বিবাহীত পুরুষই করতে চায় , যাদের নিজেদের উপর ভরসা আছে , নিজের বৈবাহিক সম্পর্কের উপর বিশ্বাস আছে। তারা শুধু নিজের যৌনজীবনকে আরো উন্নত ও রঙিনতর করে তোলার জন্যই এই রাস্তাটা বেছে নেয়। "
"কিন্তু তার জন্য তো সেই তৃতীয় ব্যক্তিটি কে একটু ভরসাযোগ্য হতে হবে। আমার নিজের উপর বিশ্বাস ঠিকই আছে , কিন্তু একটা সোশ্যাল ইমেজ বলেও তো একটা বিষয় রয়েছে। সে লোকটি যদি এই বিষয়টা গোপন না রাখে , তাহলে ? পরে যদি ব্ল্যাকমেইল করতে চায়। "
"সেরকম প্রিকশন নিয়ে চলতে হবে। আর বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বলছেন , টাকা দিলে বিশ্বাসযোগ্যতাও কিনতে পাওয়া যায়। এখনকার দিনে সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে আপনজনেরাই। কঠিন সময়ে তারাই সবার প্রথমে সরে দাঁড়ায়। একটা জিগোলো ছেলের কথার দাম আপনার যেকোনো আত্মীয়ের কথার থেকে অনেক বেশি। কেন জানেন ? কারণ সেই জিগোলো ছেলেটির অন্য কোনো স্বার্থ থাকেনা, সে শুধু নিজের পেশার দায়ে যেকোনো নারীর বিছানায় চলে যেতে রাজি হয়। দে আর ভেরি মাচ প্রফেশনাল। সো ইউ ক্যান ট্রাস্ট দেম। "
"তার মানে আপনি বলছেন এই কাজের জন্য আমাকে একটা জিগোলো ছেলে কে হায়ার করতে হবে ?"
"তারাই এই সমাজের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য পুরুষ শ্রেণী। "
"কিন্তু অনুরিমা রাজি হবে না , কিছুতেই হবে না। "
"আপনাকে অলরেডি বলেছি সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক চললে কঠিন থেকে কঠিনতর পর্বতকেও ভেঙে রাস্তা তৈরি করা যায় , এটা তো তাও একটি মেয়ের কোমল হৃদয়। অসম্ভব কিছুই নয় , যদি ইরাদা মজবুত থাকে। "
"তাহলে আপনি আমাকে নিজের ফ্যান্টাসিটা কেই নিয়ে এগোতে বলছেন ? "
"নাহঃ , ভুল ভাবছেন। আমি একজন প্রফেশনাল সেক্সওলজিস্ট। আমার কাজ পেশেন্টের সমস্যার সল্যুউশন বের করা। আমি শুধু প্রাথমিক অবস্থায় সবকটা সম্ভাবনার দরজা খোলা রাখছি। আপনি আগে ভাবুন , নিজেকে প্রশ্ন করুন , আপনি কি সত্যিই চান আপনার ফ্যান্টাসিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে , নাকি শুধু কল্পনায় এটা কে ভাবতে ভালো লাগে। আমি এখন একটু আপনার স্ত্রীয়ের সাথে কথা বলবো। আগে দুজনের পয়েন্ট অফ ভিউ শুনবো , তারপর একটা ডিসিশনে আসা যাবে। মনে রাখবেন আপনার লক্ষ্য এটা হওয়া উচিত নয় যে আপনার ফ্যান্টাসি পূরণ করা , আপনার লক্ষ্য এটা হওয়া উচিত আপনাদের সম্পর্কটা কে ঠিক করা। আর তার জন্য যদি ইন কেস এক আধবার আপনার কাকোল্ড ফ্যান্টাসিকে রিয়্যালিটির রূপ দিতে হয় , তখন সেটা আলাদা ব্যাপার। বুঝলেন ?"
সমীর গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বললো , "হুমঃ। ......"
"তাহলে এবার আপনি একটু বাইরে বসুন , আর আপনার মিসেস এর সাথে একটু কথা বলে নিই। দাঁড়ান , আমি ডেকে নিচ্ছি। ..... মালিনী..... মালিনী....." , এই বলে ডক্টর রাজীব দুবার টেবিলের উপর রাখা নিজের বেলটা বাজালো। মালিনী সেই লেডি অ্যাটেন্ডারের নাম। সে চেম্বারে এলো তো রাজীব তাকে বললো বাইরে বসে থাকা সেই ম্যাডাম কে ডেকে নিতে। মালিনী বাইরে বেরিয়ে অনুরিমা কে ডাকলো। অনুরিমা চেম্বারের ভেতরে ঢুকলো। রাজীব এবার সমীরকে বাইরে বসতে বললো। সমীর উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে চেম্বারের বাইরে যেতে লাগলো। একবারের জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শুধু চোখাচুখি হলো। তারপর সমীর বেরিয়ে গেলো। ডক্টর রাজীব অনুরিমা কে বসতে বললো। অনুরিমা চেয়ার টেনে বসলো। এবার ছিল অনুরিমার পালা, সমীরের ন্যায় ডক্টর রায়ের সামনে কাইন্ড অফ ইন্টারভিউ দেওয়ার।
অনুরিমা কে দেখে ডক্টর রায়ের মন আবার যেন কেমন বিচলিত হয়ে উঠলো ! কেন জানিনা ডাক্তারবাবু মনে মনে ভাবলেন এই নারীটি যদি ব্যাকলেস স্যাটিন শাড়ী পড়ে আসতো তাহলে কি দারুণই না লাগতো তাকে। কে জানে এটাও হয়তো এক ধরণের ফ্যান্টাসি , পরস্ত্রী কে নিজের মনমতো খোলামেলা পোশাকে কল্পনা করা।
"নমস্কার , আপনার নামটা ঠিক কি যেন ?"
"অনুরিমা বসু মল্লিক। "
"আপনার স্বামীর নাম কি ছিল যেন ?"
"সমীর মল্লিক। "
"উনি মল্লিক , আপনি বসু মল্লিক। বাপেরবাড়ি , শশুরবাড়ি উভয়ের পদবীই ক্যারি করছেন দেখছি। বাহঃ , ভালো। তার মানে আপনাকে তো একটু আধুনিকমনস্কাই বলতে পারি আমি। "
"শিক্ষিতা বলতে পারেন। আধুনিকমনস্কা কিনা , জানিনা। "
"দুটোই তো কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ , তাই না। .... তা শিক্ষিতা হয়েও আপনি এতো বাস্তববিমুখ কেন ?"
"মানে ? আমি ঠিক বুঝলাম না। "
"আপনি মনে করেন আপনার স্বামীর ফ্যান্টাসিটা আসলে একটা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। .... "
"আমার মনে করাটা কি খুব ভুল ? একজন স্বামী কি করে চিন্তা করতে পারে তার স্ত্রীয়ের সম্পর্কে এধরণের কথা ?"
"নাহঃ নাহঃ , আপনার ভাবনাটা কে আমি পুরোপুরিভাবে ভুল আখ্যা দিচ্ছি না। আপনি আংশিক ঠিক। কিন্তু আপনাকে কয়েনের আদার সাইডটাও দেখতে হবে। একটু ভাবুন তো , আপনার স্বামীর মাথায় এরকম চিন্তা হঠাৎ করে এলো কেন ! "
"আমি ঠিক জানিনা। "
"সেটাই আপনাকে জানতে হবে , বুঝতে হবে। নাহলে এই সমস্যা থেকে বেড়োবেন কি করে ? তা এর সমাধান যাই হোক না কেন সেটাকে একসেপ্ট করতে হবে। এই জন্য আমি আপনাকে বাস্তববিমুখ বললাম। আপনি শুধু নিজের দিক থেকে ভাবছেন। মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে সবকিছু ঘটে কোনো না কোনো কারণবশত। একটা কথা বলুন তো , আপনাদের সেক্স লাইফ কেমন ? লজ্জা পাবেন না। আপনার স্বামীর কাছ থেকে শুনে আমার কিছুটা আইডিয়া হয়েছে , কিন্তু আমি আপনার ভার্শান টা শুনতে চাই। "
"সমীর কি বলেছে এটা নিয়ে ? "
"সরি ম্যাডাম , সেটা আপনাকে বলবো না আমি। আপনাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটা বৈবাহিক টানাপোড়েন চলছে। ডাক্তার হিসেবে আমার কর্তব্য হলো সেটাকে সল্ভ করা। তাই আমি আপনাদের সাথে আলাদা আলাদা করে ব্যাপারটা কে ডিল করতে চাই। যেকথা গুলো আপনারা একে অপরকে বলতে পারছেন না , সেই কথা গুলো আপনারা আমার সাথে শেয়ার করুন। প্রাথমিকভাবে আপনার কথাও আমি ওনাকে বলবো না , ওনার কথাও আমি আপনাকে বলবো না। এবার বলুন , আপনার মতে আপনাদের সেক্স লাইফ কিরকম ? "
"আসলে বিয়ের প্রায় দশ বছর পর সেক্স জিনিসটা যেকোনো বিবাহীত দম্পতির কাছে সেকেন্ডারি হয়ে যায়। প্রায়োরিটির লিস্টে প্রথমে উঠে আসে সংসার , বাচ্চা-কাচ্চা এসব। তাই আমি সেইভাবে কখনো ভেবে দেখিনি এই ব্যাপারটা কে। হ্যাঁ , আমাদের মধ্যে প্রায়ই এসব হয় , মানে আমরা মাঝেসাঝেই কাছাকাছি আসি , তবে সেটা ভালোবাসার টানে , কামের টানে নয়। আকর্ষণ এক সাথে থাকতে থাকতে একটা সময়ে কেটে যায় , কিন্তু ভালোবাসা , সেটা চিরন্তন থেকে যায়। "
ডক্টর রাজীব হাঁ হয়ে অনুরিমার কথা শুনছিলো। সে অনুরিমার কথায় অবাক ও মুগ্ধ হয়ে গেছিলো। সে তার পেশাগত জীবনে এতোদিন অনেক পেশেন্ট পার্টির সাথে ডিল করেছে , অনেক বিবাহীত মহিলার সাথে কথা বলেছে , তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছে। কিন্তু অনুরিমার মতো মেয়ে সে আগে কখনোই দেখেনি। কি চমৎকার ভাবনা তার ! এরকম স্ত্রী কোনো পুরুষ পেলে তার সারাটা জীবন সফলভাবে উতরে যাবে।
রাজীব মনে মনে ভাবছিলো , ইসস , এরকম মেয়েকে যদি আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে পেতাম , তাহলে আমি সারাজীবন তাকে মাথায় করে রাখতাম। এমাহঃ , আমি এসব কি ভাবছি , ছিঃ ছিঃ।
রাজীব ভাবনার সমুদ্রে হারিয়ে গেছিলো। অনুরিমা বেশ কিছুক্ষণ বসেছিল নিজের কথা শেষ করে। অপরদিক থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে সেই আবার বলে উঠলো , "ডক্টর রয়, কি হলো ! কিছু ভাবছেন ? আমি কি কিছু ভুল বললাম ? "
"হ্যাঁ , .... নাহঃ নাহঃ , আপনার মত কে ২০০ শতাংশ সাপোর্ট করি ", এই বলে রাজীবের চেতনা ফিরলো , এবং সে ভাবনার সমুদ্র থেকে ফের বাস্তবের বালিয়াড়ি তে এসে পড়লো।
"তাহলে বলুন , আমার এখন কি করণীয় ? কিভাবে আমি আমার স্বামীকে কল্পনার নরক থেকে বাস্তবের স্বর্গে ফিরিয়ে আনবো ? "
রাজীব মনে মনে ভাবছিলো , এই মোহঃ মায়াময়ী ভুবনভোলানি নারী যেকোনো পুরুষকেই বাস্তবের স্বর্গ থেকে কল্পনার নরকে পাঠিয়ে দিতে পারে। রাজীব নিজেও তো বারবার তাকে নিয়ে কুভাবনা পোষণ করে ফেলছে, যা তার ডাক্তারি জীবনে প্রথমবার হচ্ছিলো। আর সেই মেয়েই নাকি তাকে জিজ্ঞেস করছে কিভাবে সে নিজের স্বামীকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে আনবে। আরে যাকে জিজ্ঞেস করছে , সেই ডাক্তার নিজেই তো অনুরিমার মায়াবী আকর্ষণে বারংবার বাস্তবের মাটি থেকে নিজের পা উঠিয়ে ফেলছে !
রাজীব তাও নিজেকে সামাল দিয়ে একজন পেশাগত ডাক্তার হিসেবে অনুরিমা কে বললো, "চিন্তা করবেন না , আমি আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করবো। তবে আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে , আপনি আমার সামনে কোনো ব্যাপার নিয়ে হেজিটেট ফীল করবেন না। অলওয়েজ বি ওপেন উইথ মি। খোলাখুলি ভাবে সবকথা শেয়ার করবেন , আর আমি যা অ্যাডভাইস দেব সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আপনি তো সুচরিতার বন্ধু। সুচরিতার সাথে আমার পরিচয় বেশ কয়েকদিনের। আসলে ওর মতো আমিও এক্সট্রা ক্যারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি হিসেবে একটু আধটু থিয়েটার করি। সেখান থেকেই আমাদের আলাপ। সুচরিতা বলেছিল বটে যে আপনার স্বামী সমীর ওকে ঠিক পছন্দ করেনা , ও একটু আলাদা প্রকৃতির মেয়ে বলে। তাই সমীরবাবুর সামনে আমি ওর কথা তুলিনি। আপনি আমাকেও সুচরিতার মতো নিজের বন্ধু হিসেবে মনে করতে পারেন। "
"অনেক ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু , আপনার কথা শুনে আমি এখন একটু নিজেকে আস্বস্ত বোধ করতে পারছি। "
"ডাক্তারবাবু নয় , বন্ধু বলে যখন ভেবেছি আপনাকে , তখন আপনি আমাকে শুধু নাম ধরে মানে রাজীব বলেও ডাকতে পারেন। "
"ঠিক আছে , রাজীব বাবু। "
"আবার বাবু কেন ? বাবু তো আমার সারনেম নয়। শুধু রাজীব। "
এই কথার পর দুজনেই হেসে ফেললো। থমথমে নার্ভাসনেসে পরিপূর্ণ পরিবেশটা একটু হলেও নরম ও ফ্রিই হলো।
"তাহলে কি বললাম , মনে থাকবে তো আপনার ? আমি যা বলবো , সেটাই করতে হবে , আর আমাকে সবকথা শেয়ার করতে হবে। "
"হুমঃ। .... ঠিক আছে ", অনুরিমা নিচু গলায় বললো।
"দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল। .. সরি , গুড ওয়াইফ। হা হা ...."
আবার একপ্রস্থ হাসি বিনিময় হলো দুজনের মধ্যে। রাজীবের সাথে কথা বলে অনুরিমার আড়ষ্টতা অনেকটা কেটে গেছিলো। রাজীব এরপর টেবিলের বেল বাজিয়ে ফের মালিনী কে ডাকলো। ডেকে বললো , সমীরকে ভেতরে ডাকতে। সমীর চেম্বারে এলো , মালিনী চেম্বার থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো।
রাজীব দুজনের সামনে বললো , "দেখুন , আপনাদের দুজনের কথাই আমি এক এক করে শুনলাম। আমাকে কিছু সময় দিন। আমি ভালোমতো ভেবে আমার ওপিনিয়ন এবং অ্যাডভাইস দেবো। আপনারা নেক্সট উইকে আসুন। ইন দা মিন টাইম , আপনারা যতোটা সম্ভব একে অপরের প্রতি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। এই বিষয় নিয়ে একদম কথা বলতে হবেনা। অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। চিন্তা করবেন না , সমস্যা যখন আছে , তখন তার সমাধানও আছে। কথা দিচ্ছি , আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে খারাপ কিছু ঘটবে না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে , তা যাই ঘটুক না কেন। আপনারা এখন আসুন। আবার নেক্সট শনিবার ঠিক এই সময়ে দেখা হচ্ছে কেমন ! "
সমীর ও অনুরিমা রাজীবের সাথে নমস্কার বিনিময় করে উঠলো , এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলো। বাড়ি ফেরার পথে ওদের মধ্যে সেরকম কোনো কথা হলো না। ডক্টর রায় যে ওদেরকে এই নিয়ে ফার্দার কথা বলতে বারণ করেছিল। বাড়ি ফিরে তারা রোজনামচার জীবনে ব্যাস্ত হয়েগেলো। কিন্তু দুজনেই মনের কোনো এক গভীর কোণ থেকে আগামী শনিবার এর দিনটা আসার নিবিড় অপেক্ষা করতে লাগলো।
পর্ব ৭
বেহালার বাড়িতে বসে ডক্টর রাজীব রায় অনুরিমার কথা ভাবছিলো। ভাবছিলো ওদের সমস্যার কথা। খাতা পেন নিয়ে বসে এক এক করে সমীর ও অনুরিমার কথা গুলো মনে করে করে নোটডাউন করছিলো , এবং তাদের সমস্যার key-point গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলো। রাজীব কিছুটা দোটানায় পড়ে গেছিলো। একদিকে সমীরের সুপ্ত বাসনা ছিল, কাকোল্ড ফ্যান্টাসি , অপরদিকে অনুরিমার নিঃস্বার্থ আদর্শবাদিতা। রাজীব এখন কোন দিকে যায় ?
ভাবতে ভাবতে রাজীবের চোখ লেগে আসছিলো। তাই সে ওয়াশরুমে গেলো স্নান করে ফ্রেশ হতে। শাওয়ারের নিচে যখন সে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ালো তখন হঠাৎ তার অনুরিমার কথা মনে পড়ে গেলো। কল্পনায় সে দেখলো অনুরিমা সাদা একটি স্লীভলেস নাইটি পড়ে আপন মনে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
বলেছিলাম না , পরস্ত্রী কে মনের মতো পোশাকে কল্পনা করাটাও এক ধরণের ফ্যান্টাসি। রাজীব আর নিজেকে বিরত রাখতে পারলো না অনুরিমার কথা ভেবে হস্তমইথুন করা থেকে। ফ্যানার মতো বেড়িয়ে এলো বীর্য তার লিঙ্গ থেকে , আর সেই সাদা বীর্যের প্রতিটি কণায় যেন কাল্পনিক কলম দিয়ে লেখা ছিল শুধু একজনের নাম , অনুরিমা।
ডক্টর রায়ের তখন শরীরটা একটু হালকা অনুভব হচ্ছিলো। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে আবার বসলো নিজের কাজে, তার পেশেন্ট পার্টি সমীর ও অনুরিমার সমস্যার কাঁটাছেড়া করতে।
ওদিকে অনুরিমা ভাবছিলো এরই মধ্যে একদিন সে সুচরিতার সাথে দেখা করবে। ডাক্তারের সাথে নেক্সট অ্যাপয়েন্টমেন্ট আসতে দেরি আছে , সেই আবার শনিবার। এর মধ্যে একবার নিজের বান্ধবীর সাথে এবিষয়ে শলা-পরামর্শ যদি করে নেওয়া যায় আর কি। ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করার আইডিয়া টা তো সুচরিতাই দিয়েছিলো। তাই অনুরিমা সুচরিতাকে নিজের প্রবলেম-শ্যুটার বলে মনে করতে শুরু করেছিল। অনুরিমার কথায় সেই সপ্তাহে একদিন সুচরিতা মিট করলো সাউথ কলকাতার একটা ক্যাফে তে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো ইনক্লুডিং ডক্টর কনসালটেশন। হটাৎ সেই ক্যাফেতে এসে হাজির আদিত্য রায়চৌধুরী , সুচরিতা সেনগুপ্তের প্রাক্তন স্বামী।
অকস্মাৎ দেখাতে দুই প্রাক্তন একে অপরের সাথে সৌজন্য বিনিময় করতে ভুললো না। সম্পর্ক নাই বা থাকতে পারে , তাই বলে কি মিনিমাম ভদ্রতাটুকু থাকবেনা , সেটা কি হয়। সুচরিতা আদিত্যর সাথে অনুরিমার পরিচয় করিয়ে দিলো। প্রথম দেখাতেই অনুরিমা আদিত্যর মনে জায়গা করে নিলো গোপনে। সত্যি , অনুরিমার মধ্যে এমন কি আকর্ষণ রয়েছে , যার ফলে যেকোনো পুরুষই প্রথম দেখায় তার উপর ফিদা হয়ে যায় !
বেশ কিছুটা সময় নিয়েই আদিত্য অনুরিমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো , যা সুচরিতার চোখ এড়ালো না। অনুরিমা এসব ছোট ছোট ব্যাপার গুলো কে অতো ডিপলি অবজার্ভ করেনা।
সেদিন অনুরিমা একটি ওয়াইন কালার এর শাড়ী পড়েছিল , যা দেখে আদিত্যর মধ্যে ওয়াইন এর নেশা ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। আদিত্য সেখানে কিছু কলিগের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। কিছুক্ষণ কথা বলার পর আদিত্য সেখান থেকে চলে যায়। সুচরিতা ও অনুরিমার মধ্যেকার কথা সেদিনের মতো শেষ হয়ে এসেছিলো , তাই তারা ক্যাফে থেকে প্রস্থান করলো।
অনুরিমা বাড়ি গিয়ে দেখলো আদিত্য তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে , এবং মেসেজে লিখেছে "হাই , দিস ইস আদিত্য , আজকে ক্যাফেতে দেখা হলো , সুচরিতার এক্স। "
সুচরিতার প্রাক্তন স্বামীর এহেন হটাৎ মেসেজ ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ফেসবুকে সে অনুরিমাকে খুঁজে পেলো কি করে ? অনুরিমা আদিত্যর প্রোফাইলে গিয়ে দেখে তাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এ সুচরিতা আছে। অনু মনে মনে ভাবলো ভারী অদ্ভুত মেয়ে তো এই সুচরিতা। এখনো নিজের প্রাক্তন স্বামীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে ! ক্যাফেতেও দেখলাম খুব ভালোভাবে কথা বলছিলো , দেখে কেউ বলবে না ওরা এক্স ম্যারেড কাপল , মনে হবে যেন বন্ধু !
যাই হোক , অনুরিমা ভাবলো সুচরিতা যখন এতো easily আদিত্যর সাথে মিশছে , তখন সুচরিতারই সুবাদে ওর প্রাক্তন স্বামীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা যেতেই পারে , তবে সে আদিত্যর মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিলো না।
এদিকে সমীর ডক্টর রাজীবের পরামর্শ অনুযায়ী চলছিলো। অনুরিমার সাথে ফ্যান্টাসি নিয়ে কোনো কথা বলছিলোনা , যা কথা হচ্ছিলো ওদের মধ্যে তা সবই সাংসারিক। এরকম চলতে চলতে পরের শনিবার চলে এলো। দুজনে ফের হাজির হাজরার ডক্টর রাজীবের চেম্বারে।
ডঃ রায় -- "তা বলুন , কেমন কাটলো এই সপ্তাহটা আপনাদের ?"
সমীর -- "ওই যেমন আর চার-পাঁচটা সপ্তাহ কাটে। "
ডঃ রায় -- "এর মধ্যে কখনো শারীরিক মিলন হয়েছে ?"
সমীর মাথা নিচু করে অনুরিমার সামনে জবাব দিলো , "নাহঃ , মানে আপনিই তো বলেছিলেন না এসব বিষয় নিয়ে এই এক সপ্তাহ কোনো মাথা না ঘামাতে। "
"ওহঃ , কাম অন সমীর বাবু , আমি আপনাদের কাকোল্ড ফ্যান্টাসি নিয়ে কোনোরকম কথা বলতে বারণ করেছিলাম , সেক্স করতে বারণ করিনি ", সমীরের ভাবলেশহীন এরকম অযৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনে ডঃ রায় খানিকটা ইরিটেট হয়ে কথাটা বললেন। অনুরিমাও সমীরের উপর খানিকটা বিরক্ত হলো। সেও ভাবলো যে তার স্বামী দিন দিন বড্ড বেশি বোধবুদ্ধিহীন সম্পন্ন কার্যকলাপ করছে বা ভাবছে। ধীরে ধীরে অনুর অজান্তেই তার মনে তার স্বামীকে নিয়ে এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা জমছিলো , যা পরে গিয়ে হয়তো এক ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে !
অনুরিমা একবার বিরক্তিভরে সমীরের দিকে তাকালো। সমীরেরও নিজের ষ্টুপিডিটির উপর একটু লজ্জা বোধ হলো।
ডঃ রায় -- দেখুন সমীরবাবু আমি একজন সেক্সওলজিস্ট। লোকের সেক্সউয়াল সমস্যা নিয়ে আমি ডিল করি। আর আপনাদের মধ্যে যদি সেই সেক্সউয়াল সম্পর্কটাই না থাকে তাহলে আমি কি করে আপনাদের সমস্যার সমাধান করবো।.......
ডঃ রায় ফারদার কিছু বলতে যাবে তার আগে মাঝপথে ডঃ রায় কে থামিয়ে অনুরিমা বললো , "একটা কথা ক্লিয়ার করে দিতে চাই , সমস্যাটা আমাদের নয় , সমস্যাটা ওর (সমীর কে দেখিয়ে অনু বললো) । আর তাই জন্য আমরা আপনার কাছে এসছি। "
-- "সমস্যাটা সমীরবাবুর হতে পারে কিন্তু তার সাথে তো আপনিও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। আপনার সহযোগিতা ছাড়া তো সমাধান সম্ভব নয়। সমীরবাবু না হয় আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করে আপনার সাথে এই ক'দিনে একবারও মিলিত হয়নি , কিন্তু আপনি ? আপনি নিজে থেকে কেন উদ্যোগ নিলেন না মিলিত হবার ?"
ডঃ রায়ের কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। এবিষয়ে এবার তার একটিও বাক্য খরচা করার মতো কোনো জায়গা ছিলোনা। ডঃ রায় কমপ্লিটলি শাট হার মাউথ বাই হিস্ ওয়ার্ডস।
ডঃ রাজীব রায় তারপর আরো বললেন , "আমি যতদূর বুঝেছি , আপনি একজন খুবই লাজুক প্রকৃতির নারী। কিন্তু নিজের স্বামীর সামনে কিসের লজ্জা ! কেন স্বামীর সাথে আপনি খোলাখুলিভাবে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না ? "
"আসলে এই বিষয়ে আমি বড্ড বেশি আনাড়ি। এত বছরের দাম্পত্য জীবনে আমরা শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি অনেকবার , কিন্তু সেসব নিয়ে বিশেষ আলোচনা করিনি। এসব দিক দিয়ে আমার চাহিদা খুব একটা বেশি নয়। "
"এটা আপনার ভুল ধারণা। প্রত্যেক মানুষেরই , বিশেষ করে বিবাহিত মানুষেরই যৌনচাহিদা অপরিসীম থাকে। কেউ সেটা কে দমিয়ে রাখে , কেউ সেটা কে বেশি গুরুত্ব দেয়না , কেউ বা পরিস্থিতির সাথে আপোষ করে নেয়। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা হয়েছে , সেটা সময়ই ঠিক বলে দেবে। আপাতত আসি আসল সমস্যার কথায়।..... দেখুন আপনারা দুজনেই এখন একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে বাস করছেন। একজন নর্থ পোলে রয়েছেন তো আরেকজন সাউথ পোলে। এবার দুজনকেই একটা মধ্যস্ততায় আসতে হবে, অর্থাৎ সামহোয়্যার বিটউইন দা লং লাইন। "
"এর মানে ?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।
"মানে ধরুন আপনার ও আপনার স্ত্রীয়ের চিন্তাধারাটা কে যদি কোনো রুট ডেস্টিনেশন দিয়ে তুলোনা করি তাহলে আপনি রয়েছেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আর আপনার স্ত্রী রয়েছে শিয়ালদাহ স্টেশনে। সমস্যাটা হচ্ছে , মুখে যতই বলুন , সত্যিটা হলো যে আপনিও শিয়ালদাহ আসতে চাইছেন না , আর আপনার স্ত্রী অনুরিমাও নিউ জলপাইগুড়ি যেতে চাইছেন না। তাহলে উপায় হলো একটাই......"
"কি ???? ", সমীর ও অনুরিমা দুজনেই একসাথে জিজ্ঞেস করে উঠলো।
"দুজনকেই নিজ নিজ স্টেশন ছেড়ে মাঝামাঝি কোনো স্টেশন যেমন - ফারাক্কা জংশন, স্টেশনে আসতে হবে। "
"মানে ??"
"শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার , এবং শিয়ালদাহ থেকে ফারাক্কা জংশন এর দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার , অর্থাৎ একেবারে মাঝামাঝি অবস্থান। তাই ফারাক্কা জংশনের উদাহরণটা দিলাম। আসলে এই উদাহরণ দ্বারা আমি বোঝাতে চাইছিলাম যে, দুজনকেই কিছুটা নিজের নিজের জায়গা ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হবে, একে অপরের জন্য। ফারাক্কার বাঁধ যেমন গঙ্গা ও পদ্মা কে আলাদা অথচ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সাথে প্রবাহিত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে , ঠিক সেইভাবে আমিও আপনাদেরকে কিছুটা ত্যাগ , কিছুটা মিউচুয়াল একসেপটেন্সের মাধ্যমে পরস্পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সাহায্য করবো। "
"আমাদের ঠিক কি কি করতে হবে ?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।
"সমীরবাবু আপনাকে যেমন ধীরে ধীরে অনুরিমাকে অন্য পুরুষের সাথে কল্পনা করা থেকে নিজেকে যতোটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে , ঠিক তেমনই অনুরিমা আপনাকেও এই সাংসারিক গৃহবধূর খোলস থেকে নিজেকে কিছুটা মুক্ত করে খোলা আকাশের নিচে বাঁচতে জানতে হবে। "
"খোলা আকাশের নিচে বাঁচতে হবে বলতে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন ডক্টর ?" , অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো।
"মানে আপনি তো দিনের বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতেই থাকেন। শশুর শাশুড়ি মেয়ে নিয়ে পুরোদস্তুর সংসারে ব্যস্ত থাকেন। এবার একটু কয়েকদিনের জন্য হলেও সংসার থেকে কিছুটা সময় বার করে বাইরে বেড়ুন। পুরোনো বন্ধু-বান্ধবী দের সাথে যোগাযোগ করুন , তাদের সাথে দেখা করুন। বান্ধবীদের থেকেও বেশি ভালো হয় যদি কোনো বন্ধু থেকে থাকে কলেজ লাইফে, আই মিন ছেলে বন্ধু। না থাকলে , নতুন করে কোনো ছেলে বন্ধু বানান নিজের জীবনে। আপনার সমকাক্ষিক অপোজিট জেন্ডারের সাথে আপনার ইন্টার্যাকশন এতো কম বলেই হয়তো আপনি আপনার স্বামীর মনের ব্যাপার গুলোকে ঠিক মতো বুঝতে পারেন না। "
অনুরিমা ডক্টর রায়ের কথা শুনে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। ডক্টর রায় সমীরের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো , "কি সমীরবাবু , আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো যদি কোনো ছেলে বন্ধু আপনার স্ত্রীয়ের জীবনে আসে , শুধু বন্ধু হিসেবেই। আমি যতদূর জেনেছি আপনারা কলেজ লাইফ থেকে একসাথে পড়াশুনা করেছেন , তাই সব বন্ধুই আপনাদের কমন ফ্রেন্ড। তার আগে আপনার স্ত্রী গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করেছে। আপনার শশুরবাড়ি রক্ষণশীল পরিবার ছিল তাই মেয়েকে বেশি বাইরে বেরোতেও দিতোনা। তাই আপনি ওনার জীবনে আসার আগেও ওনার কোনো ছেলে বন্ধু, মানে ছেলেবেলার কোনো বন্ধু ছিল বলে আমার মনে হয়না। কি ম্যাডাম , ঠিক বলছি তো ? "
"আচ্ছা , আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে ?", সমীর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
"মাছ ধরতে নেমে গায়ে জল ছোঁয়াবো না , তা কি করে হয় বলুন। সেক্সজনিত সমস্যা আমাদের সমাজে বড়োই গোপন একটা সমস্যা বলে গণ্য করা হয়। আর সেক্সউয়াল বিষয়ক বিশারদ হয়ে আমাকে ডাক্তারির পাশাপাশি গোয়েন্দাগিরি টাও করতে হয় , আমার পেশেন্ট দের ভালোর জন্য। তবে চিন্তা নেই , আমি যা করবো আপনাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কে মাথায় রেখেই করবো। অল উইল বি কেপ্ট সিক্রেট বাই মি , ভেরি ভেরি কনফিডেনশিয়াল। কোনো কথাই পাঁচ কান হবেনা , বিশ্বাস রাখতে পারেন। "
আসলে রাজীব এরই মধ্যে সুচরিতার কাছ থেকে সমীর ও অনুরিমার সম্পর্কে যাবতীয় যতো ইনফরমেশন অ্যাভেইলেবেল আছে তা সব ইন ডিটেলস নোট ডাউন করে রেখেছিলো। শুধু সে সুচরিতাকে এ ব্যাপারে অনুরিমাকে কিছু বলতে বারণ করেছিলো, আদারওয়াইস অনুরিমা তাদের দুজনকেই হয়তো ভুল বুঝতো।
"তা আপনি কি চাইছেন , এখন আমি বাইরে বেরিয়ে নতুন নতুন ছেলে বন্ধু বানাই ?", কিছুটা রাগের ছলে ও কিছুটা সারকাস্টিক ওয়েতে অনুরিমা কথাটা রাজীবকে বললো। রাজীব তা বুঝে জবাব দিলো , "তাতে কি কোনো আপত্তি আছে ম্যাডাম। একদিক থেকে দেখতে গেলে আমরাও তো একপ্রকার ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। গত সপ্তাহে আমরা কতকিছু আলোচনা করলাম , আপনাদের প্রবলেম গুলো ডিসকাস করলাম। সেদিনও বলেছি , আজকেও বলছি আপনার স্বামীর সামনেই দ্যাট ইউ ক্যান কনসিডার মি অ্যাজ ইওর ফ্রেন্ড। এরকম নির্ভেজাল বন্ধুত্ব যদি আপনি আরো কয়েকজনের সাথে করেন তাহলে সমস্যা কোথায় ? আপনি তো কোনো কিছু আপনার স্বামীকে লুকিয়ে করছেন না ! "
"তবুও এরকম উদ্ভট উপদেশ দেওয়ার পিছনে কারণটা জানতে পারি ? কি করবো আমি ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে ?"
"দেখুন সমীরবাবুর সামনেই অপ্রিয় সত্যি কথাটা বলছি , আপনার স্বামী একজন পারভার্ট , কাকোল্ড মানসিকতা সম্পন্ন মানুষে পরিণত হয়েছে। এই জল কতদূর গড়িয়েছে সেটা আপনি তখুনি বুঝতে পারবেন যখন আপনি অন্য পুরুষের সাথে মিশবেন। ঠিক কতোটা আমে দুধে মিশলে আঁটি ছটফট করে গড়াগড়ি খাবে তার উপর ডিপেন্ড করছে অনেক কিছু। এখানে আঁটি হলো সমীরবাবু , আম হলো কোনো এক তৃতীয় ব্যক্তি , আর দুধ হলেন , আপনি। ....."
"নাহঃ , নাহঃ , আমি এসব কিচ্ছু করতে পারবো না, ক্ষমা করবেন। "
"আরে কথা বলতে আপত্তি কিসের আপনার ? কোনো একটি পুরুষ আপনার জীবনে বন্ধু হিসেবে এলে , শুধু বন্ধু হিসেবে এলে , আপনার বৈবাহিক জীবনে দুটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। প্রথমত , আপনি আপনার স্বামীর সমকাক্ষিক ছেলেদের মানসিকতার সম্পর্কে আরো ভালোভাবে ওয়াকিবহাল হবেন , যা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার স্বামীকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য। দ্বিতীয়ত , আপনার আর সেই তৃতীয় ব্যাক্তিটির মধ্যেকার বন্ধুত্ব আপনার আর সমীরবাবুর দাম্পত্য সম্পর্ককে আরো বেশি ট্রান্সপারেন্ট করে তুলবে। এতোদিন আপনাদের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আসেনি , সমীরবাবুর পক্ষ থেকেও নাহ , আর আপনার পক্ষ থেকে তো নাইই। তাই আপনাদের রিলেশনশিপের ভাইব্স টেস্ট হয়নি। অনেকে বলে সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি এলে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় , এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। যদি পরস্পরের উপর অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা মজুদ থাকে তাহলে সেই দম্পত্তির জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি আশীর্বাদ হয়ে আসে , অভিশাপ হয়ে নয়। "
"সেটা কিভাবে ?", সমীর খুব কিউরিয়াস হয়ে রাজীব কে জিজ্ঞেস করলো।
"এটা বোঝানোর আগে আমি আপনাদের দুজনের সমস্যার কথাটা আগে বলি। "
"দুজনের সমস্যা ??", অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো।
"হ্যাঁ ম্যাডাম , আবার বলছি, সমস্যা আপনারও আছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একজন ওয়েল এডুকেটেড স্মার্ট মেয়ে হয়েও আপনি সংসারের জাঁতাকলে নিজেকে পিষে দিয়েছেন , এবং একপ্রকার নিজেকে ঘরবন্দি করে দিয়েছেন সংসার সামলানোর নামে। তাই একটা সেক্সউয়াল ফ্যান্টাসিকে আপনি মানসিক অসুখ বলে গণ্য করছেন। "
"আমি একটা কথা গত সপ্তাহ থেকেই বুঝে উঠতে পারছি না যে আপনি কি করে এই পুরো ব্যাপারটা কে এতোটা সহজ করে দেখছেন ! আমার হাসবেন্ড আমাকে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করছে , বুঝতে পারছেন এই ব্যাপারের সিরিয়াসনেসটা ? আমি কি করে এসব অ্যালাও করবো ! আই কান্ট ইম্যাজিন দিস। "
"হতে পারে আপনার এই ফ্যান্টাসিটা পছন্দ নয়। ঘেন্না করে আপনার এসব ভাবতে। কিন্তু মানুষের মন যা কিছু অপবিত্র তার পানেই বারংবার অগ্রসর হয় , সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে আপনার স্বামী আপনার কাছে পতি পরমেশ্বর হতে পারে কিন্তু আদতে তিনিও একজন রক্তেমাংসে গড়া একজন মানুষ , সর্বোপরি একজন প্রাণী , যার মধ্যে বন্যভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। সবার মধ্যে সেটা রয়েছে , কেউ সেটা আপনার স্বামীর মতো প্রকাশ করে ফেলে , কেউ লোকলজ্জা সমাজের ভয়ে সেটা করেনা , সিম্পল। "
"আর আমার সমস্যাটার কথা একটু বলবেন ", সমীর নিচু গলায় বিনম্রভাবে রাজীবকে জিজ্ঞেস করলো।
"মিস্টার মল্লিক , আমি জানিনা কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা সামাজিকভাবে কতোটা একসেপটেড , এটা প্রত্যেকটা কাপল এর ম্যাচুরিটি , মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং , এবং ট্রাস্টের উপর ডিপেন্ড করে। আপনি এবং আপনার স্ত্রীর বর্তমান অবস্থা একেবারে অপোজিট ডিরেকশনে যাচ্ছে। আপনার স্ত্রীয়ের যেমন আপনাকে বোঝা উচিত ঠিক তেমনই আপনারও আপনার স্ত্রীকে বোঝা উচিত। অনুরিমা ম্যাডাম আপনার এই ফ্যান্টাসিটা কে একেবারেই এন্টারটেইন করতে চাইছেন না , উনি একেবারে সৎ চরিত্রবতী সতী এক নারী। "
"কিন্তু আমি তো অনু কে জোর করিনি। "
"করেননি , কিন্তু এই যে আপনি ইদানিং এতো অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড থাকেন , তার জন্য তো আপনাদের সম্পর্কে ও জীবনে একটা কুপ্রভাব পড়বেই। আর আপনি কেন এতো অন্যমনস্ক থাকেন তা নিশ্চই আপনি নিজে ভালো করে খুব জানেন। "
"তাহলে উপায় ?", হতাশ সমীর প্রশ্ন করলো।
"উপায় বলার আগে কারণগুলো ফের একবার ঝালিয়ে নিই ? " -- ডঃ রায়
"বেশ .... গো অ্যাহেড। ...." -- সমীর
"আপনি জানেন , আপনার মধ্যে এই ফ্যান্টাসিটা কেন এসছে ?"
"কেন ?"
"আচ্ছা তার আগে বলুন প্রথমবার এই খেয়ালটা কবে আপনার মাথায় এসছিল ?"
সমীর খুব হেজিটেট ফীল করছিলো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে , তাই রাজীব ওকে আবার ইনসিস্ট করার মতো করে বললো , " প্লিজ লজ্জা পাবেন না নিজের স্ত্রীয়ের সামনে কথাটা বলতে। আপনারা দয়া করে একটু নিজেদের মধ্যে খোলামেলা হোন , নাহলে আপনাদের দাম্পত্যের সমস্যা কোনোদিনও মিটবে না। তাই সত্যি কথাটা স্ত্রীয়ের সামনে বুক ঠুকে বলুন। কোনোকিছু কল্পনা করাটা অপরাধের নয় , কারণ কল্পনার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ অনেক সময়ে থাকেনা। কিন্তু সেই কল্পনাটা কে কারোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাস্তবায়িত করাটা অপরাধের। আর এখনও পর্যন্ত আপনি সেই অপরাধটা করেননি , আমার স্থির বিশ্বাস ভবিষ্যতেও করবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যা হলো এইটুকুই যে, আপনার কল্পনা আপনার স্ত্রীয়ের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কথায় এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা হয়েছে , স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা। "
পর্ব ৮
রাজীবের আশ্বাস পেয়ে সমীর মনে একটু বল পেলো। তাই সে ঠিক করলো অনুরিমার সামনেই সব কথা খুলে বলবে। যেমন ভাবনা , তেমন কাজ। সমীর বলতে শুরু করলো , "আসলে আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১১ বছর হয়েগেলো। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক সব ঠিকই ছিল। অনুরিমার মতো স্ত্রী পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। অনুরিমার মধ্যে কোনোরকম শারীরিক সমস্যা নেই , যে আমি বলতে পারবো আমি ওর প্রতি সন্তুষ্ট নই। বিছানায় আমি যথেষ্ট স্যাটিসফ্যাক্শন পেয়েছি। আমার স্ত্রী সত্যি খুব সেক্সি একজন মেয়ে। "
"আহ্হঃ , কি সব বলছো তুমি, ডাক্তারবাবুর সামনে !", নিজের সম্পর্কে এক পরপুরুষের সামনে নিজের স্বামীর এহেন উপমা শুনে অনুরিমা অসন্তোষ প্রকাশ করলো।
"অনুরিমা ওনাকে বলতে দিন। বলেছি না আমার সামনে কোনো দ্বিধা বোধ না রাখতে ", রাজীব অনুরিমার অসন্তোষ কে প্রশমিত করার চেষ্টা করলো। দিয়ে তারপর সমীরকে নিজের বক্তব্য কন্টিনিউ করতে উৎসাহিত করলো , "হ্যাঁ , সমীরবাবু বলুন কি বলছিলেন। আমি জানি আপনার স্ত্রী খুব সুন্দরী। আর আপনার কথা শুনে এও বুঝতে পারছি যে অনুরিমা দেবী কোনোদিনও আপনার বৈবাহিক সুখের কোনো খামতি রাখেনি , তা সংসারের ক্ষেত্রে হোক বা বিছানায়। অনুরিমা ম্যাডামের যদি নিজের সম্পর্কে এই সুন্দর সুন্দর বিশেষণ গুলো শুনতে হেজিটেশন হয় , তাহলে আপনি একথা গুলো কে স্কিপ করে আসল কথায় আসতে পারেন , যে ঠিক কিভাবে এবং কবে থেকে আপনার মধ্যে এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসির উদয় হলো। "
"ঠিক আছে , তবে আমি আসল কথায় আসি। দেখুন প্রায় এগারো বছর সংসার করতে করতে একটু একঘেয়েমি আসে , বিশেষ করে যৌনতার দিক দিয়ে। তাই আমি ভিন্ন ভিন্ন পথের সন্ধান করতে লাগলাম আমাদের শারীরিক সম্পর্কের মুহূর্তগুলো কে আরো বেশি ইন্টারেস্টিং করবার জন্য। প্রথমে আমি পর্ন ভিডিও দেখতে শুরু করলাম। তারপর সেক্স স্টোরিজ পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে একদিন হঠাৎ কাকোল্ড বিষয়ক স্টোরি আমি পড়ে ফেললাম । "
"এখানে আমি একটু আপনাকে থামাতে চাই। এই যে আপনি বললেন আপনার একটু একঘেয়েমি লাগছিলো , সেটা অনুরিমাকে জানিয়েছিলেন ?"
"নাহঃ , সাহস পাইনি কথাটা বলার ", সমীর নিচু স্বরে রাজীবকে কথাটা বললো।
"কেন ? আপনি আপনার স্ত্রীকে ভয় পান ?"
"নাহঃ , আমি ভাবলাম অনুরিমা যদি আমাকে ভুল বোঝে। "
"অলরেডি তো ভুল বুঝেই ফেলেছে। যাই হোক আপনি কন্টিনিউ করুন। "
"বিশ্বাস করুন , আমি এতো কিছু ভাবতে চাইনি। অনুরিমার আমার প্রতি কোনো অভিযোগ ছিলোনা। কেন জানিনা সমস্যাটা আমার মধ্যেই হচ্ছিলো। "
"কারণটা আমি আপনাদের পরে বুঝিয়ে বলছি , এখন আপনি শুধু ঘটনাক্রম গুলো পর পর বলতে থাকুন , কোনো ব্যাখ্যা না করে ", সমীরকে ইন্টারাপ্ট করে রাজীব বললো।
ডক্টর রাজীবের কথা মেনে সমীর বলতে শুরু করলো , "কাকোল্ড স্টোরিজ পড়ার পর থেকে আমার ভেতরে কিরকম একটা অদ্ভুত ফিলিং হতে লাগলো। ভাবলাম এরকমও ঘটনা বাস্তবে হয়। প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো , পরে কৌতূহলবশত নেটে ছানবিন করে জানলাম যে সত্যিই এসব ঘটনা সমাজে ঘটে। তারপর থেকে জানিনা কি হলো যখুনি আমি দেখতাম অনুরিমার দিকে অন্য কোনো ছেলে তাকাচ্ছে তখুনি আমার গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে যেতো। এরকম কিন্তু আগে হতো না। আগে ভীষণ রাগ হতো। অনুরিমার মতো সুন্দরী মেয়ে বিবাহীত হলেও তার দিকে পথচলতি পুরুষেরা ফিরে ফিরে তাকায়। স্বামী হিসেবে সে জন্য একটু জেলাস ফীল করতাম। কিন্তু কখনো ইনসেক্যুরিটি ফীল হতো না , কারণ আমার স্ত্রী কখনোই তাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না। কিন্তু যখন আমার কল্পনায় এসব কাল্পনিক দৃশ্য আসতে শুরু করলো , মনের মধ্যে যেন ৫০০ থেকে ৬০০ মাইল পার আওয়ার গতিতে সুনামি আঁছড়ে পড়তে লাগলো। কারণ বাস্তবে অনুরিমা কোনোদিনও আমি ব্যাতিত দ্বিতীয় পুরুষের কথা মনেও আনেনি। তাই আকাশকুসুম কল্পনায় এসব অসম্ভব দৃশ্য ভাসলে শরীরে একটা বৈপরীত্য মনোভাবের উদয় হয়। প্রথমে নিজের উপর ঘেন্না হতো , তারপর আস্তে আস্তে উত্তেজনার ঢেউ বইতে লাগলো শরীরে।"
"আর তারপর যখন ক্রমাগত এসব ভাবনা মনে আসতে শুরু করলো , তখন এটি একটি অদ্ভুত কিন্তু উত্তেজক অভ্যাসে পরিণত হলো , এবং সেখান থেকেই আপনার কাকোল্ড মানসিকতার শুরু। কি তাই তো সমীর বাবু ?" , ডক্টর রাজীব, সমীর কে থামিয়েই সমীরের কথার উপসংহার টেনে দিলো।
সমীর মাথা নিচু করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না। মৌনং সম্মতি লক্ষণম।
"এবার আসি আমার ব্যাখ্যায় , আপনি কাকোল্ড হলেন কিভাবে ! কেন যৌন অসন্তুষ্টি আপনাকে আঁকড়ে ধরলো , কিন্তু আপনার স্ত্রী এর থেকে বিরত থাকতে পারলো ! "
রাজীব একটু pause নিয়ে বলতে শুরু করলো , "আসলে আপনি চাকরি করেন তাই আপনার পৃথিবীটা একটু বড়ো। আপনি অনেক বেশি মানুষের সাথে মেশেন , তাদের চিন্তাধারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আপনাকে প্রভাবিত করেন। এটাই মানুষের চরিত্র , একেবারে জলের মতো , যে পাত্রে রাখবে সেই পাত্রের আকার ধারণ করে নেবে। "
"কিন্তু এসব কাকোল্ড বিষয় নিয়ে তো আমি কারোর সাথে কোনোদিন কোনো আলোচনা করিনি ", রাজীবকে থামিয়ে সমীর বললো।
"আমি তো একবারও বলিনি যে আপনি আপনার ফ্যান্টাসির কথা কাউকে জানিয়েছেন। আমি বলেছি যে দৈনন্দিন জীবনে হরেক রকমের মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাত হয় , তাদের কথা ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি ভাবে আমাদের মানসিকতা-কে প্রভাবিত করে। যেমন ধরুন আপনার অফিসে কেউ যদি অন্য কারোর কলিগের স্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা করে , তার রূপের প্রশংসা করে , সেই কথা আপনার কানে গেলো , তখন আপনি না চাইতেও সেই কথাটি আপনার ব্যাক অফ দা মাইন্ডের মেমোরিতে থেকে গেলো। এরকম ছোট ছোট ঘটনা এভাবে আপনার সাব-কনসাস মেমোরিতে যোগ হতে হতে একটা চিন্তাধারা তৈরী হয়। তারপর সেটা আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয়র উপর নির্ভর করে , সেই চিন্তাধারা কে আপনি কতোটা মনে মনে পোষণ করবেন। "
"তাহলে কি এরকম সবার সাথে হয়?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।
"নাহঃ , আগেই বলেছি অনেককটা ঘটনাক্রমকে সংযুক্ত করলে এরকম ফ্যান্টাসি তৈরী হয়। বিন্দু বিন্দু দিয়ে সিন্ধু হয়। যেমন পৃথিবীর মতো কয়েকটা গ্রহ নিয়ে একটা সৌরজগৎ তৈরী হয় , কয়েকটা সৌরজগতের ন্যায় নক্ষত্রমন্ডল মিলে একটি ছায়াপথ তৈরী হয় , কয়েকটি ছায়াপথ মিলে তৈরী হয় সুপার-ক্লাস্টার , এইভাবে বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রসার হয়। আমাদের চিন্তাধারা গুলোও ঠিক যেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের মতো অসংখ্য ছায়াপথ , নক্ষত্রমন্ডল ও সৌরজগতে বিভক্ত এবং প্রসারিত। কেউ শুধু নিজের সৌরজগতের মধ্যেই আটকে থাকতে চায় , তো কেউ আবার নিজের চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে ছায়াপথ পেরোতে চায়। আপনি চেয়েছেন তাই এরকম হয়েছে। "
"তাহলে এটার কোনো প্রতিকার নেই ?", অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো রাজীব কে।
"নিশ্চই আছে। তবে তার জন্য আমার আপনাদের দুজনেরই সম্পূর্ণ সহযোগিতা ও আমার উপর অগাধ বিশ্বাস থাকা চাই। "
"আচ্ছা তো বলুন কি করতে হবে আমাকে আর সমীর কে ?"
"সেটা তো আমি আপনাকে আগেই বলেছি ম্যাডাম , একটু নিজেকে মেলে ধরুন , খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিন। বাড়ি থেকে একটু বেড়োন। বেশ নাহয় ছেলে বন্ধু নাই পাতালেন , এমনি যারা রয়েছে মানে কলেজের পুরোনো বন্ধুবান্ধবরা , তাদের সাথে তো আবার যোগাযোগ স্থাপন করতেই পারেন , তাই না ? নতুন বন্ধু তৈরী করতে এই জন্য বলছিলাম কারণ পুরোনো বন্ধুদের তো আপনারা দুজনে চেনেন সবাইকে । নতুন কোনো বন্ধু এলে জীবনটা কে নতুন ভাবে ডিসকভার করতে পারবেন। "
"তাহলে আপনিই হয়ে যান সেই বন্ধু ", ফ্রাসট্রেটেড হয়ে অনুরিমা মুখ ফসকে বলে ফেললো।
"মন্দ বলেননি , বাট আই নিড পারমিশন ফ্রম মিস্টার মল্লিক। "
"এতে পারমিশন নেওয়ার মতো কি আছে ?", অবাক হয়ে সমীর জিজ্ঞেস করলো।
"কারণ টা বিশ্বাসের। আপনি বা আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন তো ?"
"বিশ্বাস না করলে নিজের স্বামীকে নিয়ে আপনার কাছে আসতাম। "
"তাহলে ঠিক আছে , বুধবার দেখা হচ্ছে আপনার সাথে ", রাজীব অনুরিমার দিকে তাকিয়ে বললো।
"মানে !!", অনুরিমা was shocked.
"এইভাবে চমকানোর কি আছে অনুরিমা। আপনাকে বললাম না বাড়ি থেকে বেড়িয়ে খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিতে হবে আপনাকে। সেটাই হবে আপনাদের সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ। তাই আপনাকে বললাম বুধবার দেখা করতে আমার সঙ্গে , সমীরবাবুর সামনেই বললাম। "
"তারপর ?" -- অনুরিমা।
"তারপর আবার কি ! আপনার সাথে ঘুরবো , পার্কে যাবো , সিনেমা দেখবো। যেমন বন্ধুরা সাধারণত করে। "
এই কথা গুলো এতো অবলীলায় রাজীব বললো যে অনুরিমা চমকে থ হয়ে গেছিলো। অনুরিমা বুঝতে পারছিলো না এর প্রত্যুত্তরে সে কি বলবে।
"কি সমীরবাবু , আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো যদি আমি আপনার স্ত্রীয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিশি , ঘুরি , কথা বলি , তাতে ? আমি কথা দিচ্ছি অনুরিমাকে বাস্তব পৃথিবীটা কে চেনানোর দায়িত্ব আমার। অনুরিমা এরপর থেকে আপনার সমস্যাটা কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আর অনুরিমা আপনাকেও প্রমিস করছি আমি সমীরবাবুকেও আপনার মনের মতো করে তুলবো। দেখবেন সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। শুধু একটু আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। "
এই কথা শোনার পর আর দুজনেরই কিছু বলার উপক্রম ছিলোনা। রাজীব ওদের দুজনের আস্থা খুব ভালোমতো অর্জন করতে পেরেছিলো। তাই অনুরিমা হেজিটেট করলেও সমীরের কোনো আপত্তি ছিলোনা। সমীরের এবিষয়ে ইতিবাচক মত দেখে অনুরিমাকেও রাজি হতে হলো , শুধু তাদের সম্পর্কটাকে বাঁচানোর খাতিরে। ঠিক হলো অনুরিমা যাবে বুধবার রাজীবের সাথে , ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।
এরপর সেদিনের মতো ডক্টর কনসাল্টমেন্ট পর্বের ইতি হলো। অনুরিমা ও সমীর বাড়ি ফিরে এলো। অনুরিমা চাইছিলো এই বিষয়ে একবার সুচরিতার উপদেশ নেবে , তাই জন্য সে সুচরিতাকে ফোন করে পরেরদিন অর্থাৎ রবিবার দেখা করতে বললো।
পর্ব ৯
রবিবার অনুরিমা একটি ক্যাফেতে গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে সে অবাক , দেখে সুচরিতার সাথে সুচরিতার প্রাক্তন স্বামী আদিত্য রায়চৌধুরীও হাজির ! অনুরিমা সুচরিতাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো তার প্রাক্তন কেন এখানে ? সুচরিতাও সেই ভাষায় অনুরিমাকে আস্বস্ত করে পরে বিস্তারিতভাবে সব বলার প্রতিশ্রুতি দিলো।
আদিত্য হেসে নিজে থেকে এগিয়ে এসে অনুরিমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অনুরিমাও ভদ্রতার খাতিরে সৌজন্য বিনিময়টা করলো। তিনজনে ক্যাফের একটা কর্নারে বসলো। আদিত্য বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো অনুরিমা কতোটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে তাকে দেখে। তাই সে নিজেই কনভার্সেশনটা স্টার্ট করলো।
"দেখুন আমি বুঝতে পারছি এখানে এসে আমি আপনাকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছি। আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসছেন , আর আমি আউট অফ সিলেবাস চলে এসছি। "
আদিত্যর এই হিউমার্ ভরা কথা শুনে অনুরিমা না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো। আদিত্য ভাবলো যে যাক সে তার কথার স্কিল দিয়ে অনুরিমাকে কমফর্টেবল করতে পাচ্ছে। তারপর অনুরিমা তৎক্ষণাৎ হাসি চেপে নিজেকে সামলে নিলো। এবার সুচরিতা কিছুটা সিরিয়াস হয়ে অনুরিমাকে বললো , "অনু আমি জানি এই কথাটা শুনলে তুই রাগ করবি , তবুও তোকে কথাটা বলবো। তুই নিশ্চই ভাবছিস আমার এক্স আদিত্য কি করছে এখানে ? .... দেখ আদিত্য আমার এক্স হাসব্যান্ড হতে পারে বাট ষ্টীল উই শেয়ার আ গুড বন্ডিং অফ ফ্রেন্ডশিপ। আজও আমি আদিত্যকে প্রায় সবকিছু শেয়ার করি। প্লিজ রাগ করিসনা , আমি আদিত্যকে তোর আর সমীরের ব্যাপারে সবটা বলেছি। "
"ওয়াট !!", অনুরিমা চেয়ার থেকে উঠে পড়লো , "রিতা আমি তোকে বিশ্বাস করে আমার প্রবলেমের কথা শেয়ার করেছিলাম। তুই আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি !"
"কুল ডাউন অনুরিমা। সুচরিতাকে বলা যা , আমাকে বলাও তাই। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন , আমি কাউকে কিচ্ছু বলবোনা। আসলে সুচরিতা জেনুইনলি চায় আপনার সমস্যার সমাধান করতে। ওই তো আপনাকে সেক্সওলজিস্ট রেকমেন্ড করেছিলো। সিমিলারলি ও আমার সাথেও এই ব্যাপার নিয়ে ডিসকাস করেছে , ফর ইওর বেটারমেন্ট। আপনি আগে শান্ত হয়ে বসুন। আমরা তিনজনে মিলে কথা বললে কিছু একটা উপায় নিশ্চই বেড়োবে। "
আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা ভরা কাফের মধ্যে আর কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাইলো না। সে বসলো কিন্তু রক্তচক্ষু দিয়ে সুচরিতার দিকে তাকাচ্ছিলো , যেন এক্ষুনি ওকে গিলে ফেলবে। সুচরিতা আবার অনুরিমাকে শান্ত করার জন্য বললো , "আমি জানি তুই আমার উপর এখন খুব রেগে আছিস , কিন্তু বিশ্বাস কর , আদিত্য ইস ভেরি ট্রাস্টওয়ার্থই ম্যান। ওর সাথে আমার বিয়েটা ওয়ার্ক করেনি ঠিকই , বাট আনডাউটেডলি হি ইস আ হেল্পফুল এন্ড জেনুইন গাই। তাই জন্যই তো ডিভোর্সের পরও আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা রয়েছে। "
অনুরিমা চুপ করেছিলো। ভেবে পাচ্ছিলো না সে কি বলবে। অনুরিমার নিস্তব্ধতা দেখে আদিত্য ঠিক করলো যে সে সেখান থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবে , দুই বান্ধবীকে স্পেস দেওয়ার খাতিরে। অনুরিমা একটু স্বাভাবিক হলে তখন সে জয়েন করবে। তাই সে চেয়ার থেকে উঠে বললো , "তোমরা দুজনে নিজেদের মধ্যে আগে সবকিছু শর্ট আউট করে নাও , আমি ততোক্ষণে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি। এক্সকিউস মি। ", বলে আদিত্য ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আদিত্য চলে যাওয়ার পরই অনুরিমা সুচরিতাকে চার্জ করতে লাগলো , "তুই কেন ওকে সব বললি ? এতোই যদি নিজের এক্স হাসব্যান্ড এর উপর ভরসা , তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়েছিলিস কেন ? "
"লিশন অনু , নাও ইউ বিকাম পার্সনাল। "
"পার্সনাল , রিয়্যালিই ! এটা তুই বলছিস ! যে আমার পার্সোনাল সমস্যা গুলোকে ভরা বাজারের সামনে নিয়ে চলে এসছে। আর কাকে কাকে বলেছিস তুই ? বা বলবি বলে ঠিক করেছিস ? "
"অনু কুল ডাউন , এতো হাইপার হোসনা। "
"শাট আপ ", অনু এতো জোরে বললো যে গোটা ক্যাফের নজর ওদের টেবিলে পড়লো। অনু প্রচন্ড এম্ব্যারেস্ ফীল করলো। সে সঙ্গে সঙ্গে নিজের হ্যান্ডব্যাগ-টা নিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে আদিত্য দাঁড়িয়ে ছিল। সে দেখলো অনু গটমট করে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে। পেছন থেকে আদিত্য ডাকলো , কিন্তু কোনো সাড়া পেলোনা। কি হয়েছে তা সুচরিতার থেকে জানতে সে ক্যাফেতে ঢুকলো। দেখে সুচরিতা মুড অফ করে বসে আছে। সে সুচরিতার কাছ থেকে জানতে পারলো যে তার যাওয়ার পর অনুরিমা সুচরিতার উপর প্রচন্ড রিএক্ট করেছে। তার প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করে যাবে সেটা আদিত্য রায়চৌধুরী বুঝতে পারেনি। আসলে অনুরিমা বসু মল্লিক কে বোঝা যে অতো সহজ কার্য নয়। আর নয়ও বা তাকে কোনো অছিলায় কাছে পাওয়া। সি ইস অনুরিমা বসু মল্লিক , এ ভেরি টাফ গার্ল টু গেট কন্ভিন্সড।
অনুরিমা প্রচন্ড রেগে ছিল। বাড়িতে এসে সে চুপচাপ নিজের সংসারের কাজ করতে লাগলো। তার সমীরের উপরও খুব বিরক্তি এসে পড়ছিলো। আজ সমীরের জন্যই যতো সমস্যার শুরু। সে কিনা করেছে সমীর ও সমীরের ফ্যামিলিকে খুশি রাখতে। কতো স্যাক্রিফাইসই না করেছে। চাকরি করেনি , মাসের পর মাস বাপের বাড়ি যায়নি শশুর শাশুড়ি কে দেখভাল করার জন্য। বদলে সে কি পেলো ? অপমান ! হ্যাঁ অপমানই তো। কি লজ্জার ব্যাপার , তার স্বামী তাকে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করে দেখতে চায়। ছিঃ ! কাজ করতে করতে অনুরিমা এসব ভাবতে লাগলো। সে আরো ভাবলো যে বুধবার ডক্টর রায়ের সাথে একা দেখা করতে যাবে কিনা , তাও আবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো অদ্ভুত জায়গায়। অদ্ভুতই তো। তার আর ডক্টর রায়ের সাক্ষাতের জন্য জায়গাটা যে বড়োই বেমানান। লোকে সেখানে পরিবার নিয়ে যায় , কপোত কপোতিরা প্রেম করতে যায়। রাজীববাবু কে হয় তার ? স্বল্পদিনের সাক্ষাৎ তবুও এক অজানা অচেনা পরপুরুষই সে।
রাজীব বাবুও কি সবকথা সুচরিতাকে বলে ফেলে ?? নাহঃ নাহঃ , সেটা জানতেই হবে। আর সেটা জানার জন্যই আমাকে বুধবার দেখা করতে হবে তার সাথে। আমি আমার জীবনের সমস্যাকে এভাবে সর্বজনীন করতে পারবো না। আমাকে জানতেই হবে রাজীববাবু কতোটা বিশস্ত মানুষ। তাই আমি ওনার সাথে দেখা করবো বুধবার। -- মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো অনুরিমা।
কেটে গেলো দুদিন। এর মধ্যে সুচরিতা অনেকবার তাকে ফোন - ম্যাসেজ করেছিল , যার একটারও উত্তর অনুরিমা দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে সে ফাইনাল ভাবে সমীরকে জিজ্ঞেস করলো , আগামীকাল তার যাওয়া উচিত হবে কিনা ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করতে ? সমীর কোনো বিশ্লেষণে না গিয়ে শুধু হ্যাঁ বললো। অনুরিমা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো , সত্যিই তার যাওয়া উচিত ? পুনরায় জবাব এলো হ্যাঁ। মনে পাথর রেখে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যাওয়ার।
বুধবার সকাল -- অনুরিমার বুক ধড়পড় করতে লাগলো। নার্ভাসনেসে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। সমীর ওর বাবা মা কে বলে রেখেছিলো যে আজ তিন্নি স্কুলে যাবেনা , বাড়িতেই থাকবে , কারণ সে ও অনুরিমা আজ এক বিশেষ কাজে বেড়োবে , ফিরতে দেরী হবে। তাই তিন্নি স্কুলে গেলে , তাকে আনতে যেতে কেউ যেতে পারবে না। সমীরের বাবার শরীরটা কয়েকদিন ধরে খুব একটা ভালো ছিলোনা , আর মা তো পায়ে ব্যাথা নিয়ে প্রায় শয্যাশাহী। তাই অনুরিমার অনুপস্থিতিতে তিন্নিকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব নয় একেবারে।
ঠিক ছিলো সমীর অনুরিমা কে ভিক্টোরিয়ার কাছে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সমীরের মাথায় অন্য প্ল্যান ছিল। সে গাড়ির ডিকিতে নিজের আরেক সেট জামা এবং ভাড়া করে আনা কিছু মেক আপের সরঞ্জাম এনে রেখে দিয়েছিলো। পরে কাজে আসবে বলে। সেটা অনুরিমা অগোচরেই। ওদিকে রাজীবও নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে আসছিলো। আজকে কেনো জানিনা সে একটু বেশি সেজেছিলো। অনেকদিন পর আবার কলকাতা ভ্রমণে বেড়োবে বলে নাকি অনুরিমা আসছে বলে ??.... অনুরিমাকে দেখতে যেমন অভিনেত্রী Swikriti Majumder এর মতো , ঠিক তেমন রাজীবকে দেখতে Swikriti এর সহ-অভিনেতা সৌনক রায়ের মতো।
আর সমীর ? তার কথা নাহয় এখন বাদই দিলাম। সে তো এখন ছদ্মবেশ ধারণ করবে বলে ঠিক করেছে , নিজের বউয়ের উপর জাসুসি করার জন্য। তাই সে কিরকম দেখতে তা এখন অর্থহীন। কারণ সে এখন আসল রূপ ছেড়ে নকল এক রূপে আসতে চলেছে ।
আর যাকে কেন্দ্র করে এতো কিছু সে অনুরিমাই তাপ-উত্তাপহীন সাদামাটা একটা শাড়ি পড়ে বেড়িয়েছিল। যদিও অনুরিমার মতো সুন্দরী অপসরাকে যাই পড়বে তাতেই মানাবে , কিছু না পড়লে আরো ভালো লাগবে। সেটা তো না জানি কতো রাহাচলতি পুরুষের ফ্যান্টাসি , অনুরিমাকে একবার তার বার্থডে স্যুটে দেখার। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত সেই অবস্থায় আজ পর্যন্ত শুধু একজন পুরুষই তাকে দেখতে সক্ষম হয়েছে , সে হলো সমীর মল্লিক , অনুরিমার স্বামী।
যাই হোক , সময়মতো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে সমীরের গাড়িটা এসে থামলো। অনুরিমা সমীরের দিকে একবার তাকালো , তারপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সমীর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো , তবে সে অফিস গেলো না। রবীন্দ্রসদনের কাছে একটি পার্কিংয়ে গিয়ে সে গাড়িটা কে দাঁড় করালো। ডিকি থেকে আরেক সেট জামা কাপড় নিয়ে সে কাছের একটি পে এন্ড ইউস টয়লেটে গিয়ে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফেললো। ফের গাড়িতে এসে মোটা কাপড় মাথায় পাগড়ির মতো করে বেঁধে নিলো। চোখে কালো একটা গগোলস পড়লো। আঁঠা দেওয়া ফলস দাঁড়ি গোঁফ মুখে লাগিয়ে নিলো। গাড়ির মিরর গ্লাসে নিজেকে একবার দেখে নিলো। নাহঃ , সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না , ঠিক যেন সর্দারজি লাগছে , হুবহু। ওদিকে অনুরিমা জানে তার স্বামী অফিসের দিকে গমন করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার স্বামীর অভিপ্রায় ছিল তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা। সমীর যে তার কৌতূহল কে কিছুতেই কাবু করতে পারেনি। সে দেখতে চায় অনুরিমা কিভাবে ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করবে , কথা বলবে , সব।
অনুরিমা ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো। সেরকমই কথা ছিল। শনিবার রাজীব বলে রেখেছিলো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটে মিট করতে। রাজীবের কাছে অনুরিমার নাম্বার ছিলোনা , আর চাওয়ার সাহসও রাজীব দেখায়নি। ডক্টর রাজীব দূরে এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করে আসছিলো। তাই রাজীবের একটু দেরী হয়েছিলো। আসলে ভিক্টোরিয়ার আসে পাশে তো পুলিশ গাড়ি পার্কিং করতে দেয়না। দেরীতে আসায় রাজীব অনুরিমার কাছে সৌজন্যমূলক ক্ষমা চেয়ে নিলো। অনুরিমা এসব ছোটোখাটো ব্যাপারে মাইন্ড করেনা , তাই সে শুধু ইট'স ওকে বলে ব্যাপারটাকে খ্যান্ত দিলো।
"চলুন তবে , ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা দেখা যাক। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো ", এই বলে রাজীব দুজনের জন্য এন্ট্রি টিকিট কেটে অনুরিমা কে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করলো।
এন্ট্রি গেট দিয়ে ঢুকে ভিক্টোরিয়ার দিকে যেতে যেতে হঠাৎ রাজীব বললো , "একটা কথা বলবো আপনাকে ? কিছু মনে করবেন না তো ?"
"কি ?"
"আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। "
"ওহঃ , থ্যাংক ইউ ডক্টর রায়। "
"আচ্ছা আপনি একটা কথা দিয়েছিলেন আমাকে , মনে আছে ? যেটা আপনি পুরোপুরিভাবে ভুলে গেছেন !"
"কি কথা ?"
"মনে করে দেখুন , গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে , আমাদের প্রথম সিটিংয়ে আমরা একটা প্রমিস শেয়ার করেছিলাম। "
"প্রমিস ?? কি প্রমিস? সরি আমার কিছু মনে পড়ছে না। "
"স্বাভাবিক। আপনার উপর দিয়ে যা চাপ চলছে , এরকম ছোটখাটো ব্যাপার মেমোরি থেকে একেবারে ওমিট হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। "
"আমার উপর দিয়ে চাপ যাচ্ছে সেটা আপনি বুঝছেন ?"
"বুঝছি বলেই তো দেখা করতে এসছি। বন্ধু হতে এসছি। যাতে যা কিছু আপনি আপনার স্বামীকে বা কাউকে বলতে পারছেন না সেটা যেন নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। "
রাজীবের এই কথাটা কেন জানিনা অনুরিমার মন ছুঁয়ে গেলো। খুব ভালো লাগলো তার যখন রাজীব বললো সে তাকে বোঝে। কারণ এই ক'দিনে তার অনেক মনোক্ষুন্ন হয়েছে , নিজের আপনজনদের কাছ থেকে। যাদের সে আপন ভাবতো, বিশ্বাস করতো, তারাই তাকে আপসেট করেছে অনেক বেশি করে , তা সমীর হোক বা সুচরিতা , মন ভেঙেছে সবাই। তাই সে রাজীব কে জিজ্ঞেস করলো , "বন্ধুদের-কেও কি বিশ্বাস করা যায় ? তারাও কি আদেও কথা রাখে ?"
রাজীব বললো , "সবার কথা বলতে পারবো না , তবে আমি শুধু আমার গ্যারেন্টি দিতে পারি। "
"তাই ? আচ্ছা সুচরিতার সাথে আপনার কথা হয় ? "
"কি নিয়ে ?"
"আমার সাংসারিক জীবন নিয়ে ? "
"আমি ওর কাছ থেকে সব ইনপুট নিয়েছি , কিন্তু কোনো আউটপুট দিইনি। নাহলে আমি জানতাম কি করে বলুন যে আপনার জীবনে ছেলে বন্ধুর সংখ্যা নেহাতই এক সিং বিশিষ্ট গন্ডারের মতো , বিলুপ্তপ্রায়। খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। "
রাজীবের এই কথা শুনে অনুরিমা হেসে ফেললো , আর বললো , "ঠিকই বলেছেন। তাছাড়া পুরুষেরা হয়েই গন্ডারের মতো , বিশেষ করে তাদের চামড়া , কিছুতেই কিছু যায় আসেনা। হি হি। "
রাজীব এই প্রথম অনুরিমাকে একটু খোলামেলা ভাবে হাসতে দেখলো, যেটা সত্যি ভালো লাগারই বিষয়।
"বাই দা ওয়ে , আপনি বললেন না তো , কি প্রমিস করেছিলাম আমি ?"
"মনে করে দেখুন প্রথম সিটিংয়ের সময়ে বলেছিলাম আপনাকে যদি বন্ধু বলে মনে করেন তাহলে নো ডক্টর রায় , নো রাজীব বাবু , ওনলি রাজীব। "
"ওহঃ !! তা আগে আপনাকে বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করি, তারপর তো। "
"হুমঃ , তাহলে আমাকে কি করতে হবে আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে হলে ?"
"আপনি শুধু এইটুকু বলুন যে আপনি সুচরিতা কে কি কি বলেছেন ?"
"কিচ্ছু না , নাথিং। আমি আপনাকে আগেও বলেছি , এখনও বলছি। আই এম এ সেক্সওলজিস্ট , হোয়াট ইউ শেয়ার উইথ মি , ইট অলওয়েজ কেপ্ট উইদিন মি। শুরুর দিকে সুচরিতার কাছ থেকে আপনাদের ব্যাপারে অনেক ইনফরমেশন জোগাড় করেছি , জাস্ট ফর মাই ট্রিটমেন্ট পারপাস। কারণ দম্পতিরা অতো ইসিলি সবকথা খুলে বলতে পারেনা। তাই আমাকেই খুঁড়ে খুঁড়ে বার করতে হয় ইনফরমেশন , সেটা পেশেন্ট এর মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু পেশেন্ট এর কথা একজন প্রকৃত সেক্সওলজিস্ট কখনও কারোর কাছে লিক করেনা। "
"বুঝলাম , তবে এরপর থেকে আমাদের ব্যাপারে যাবতীয় যা ইনফরমেশন জানার ফর আওয়ার প্রবলেম পারপাস , তা সব আপনি আমার কাছ থেকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন , কেমন ?"
"ঠিক আছে , তবে একটা শর্তে। আপনার জীবনে আমাকে বন্ধুর স্থানটা দিতে হবে , শুধু রাজীব বলে ডাকতে হবে , রাজি ? "
"আচ্ছা , বেশ। তাই হবে ", অনুরিমা হেসে উত্তর দিলো।
"চলুন তবে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা গিয়ে একটু দেখা যাক। "
"ঠিক আছে। "
এই বলে তারা দুজন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদিকে সমীরও সেইসময়ে রবীন্দ্রসদনের পার্কিং থেকে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্টোরিয়ায় এসে হাজির , ছদ্মবেশে।
পর্ব ১০
সমীরের কাছে একটা বাইনোকুলার অর্থাৎ দূরবীন ছিল , দূরের জিনিস কাছ থেকে দেখার জন্য। সমীরও মেইন গেট থেকে এন্ট্রি টিকিট কেটে ধীর গতিতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পানে চলিতে লাগিলো। সেখানে যে তার নিজের ভিক্টোরিয়া কুইন রয়েছে বন্ধুরূপী অন্য এক পুরুষের সহিত। সমীর একটু নার্ভাস ফীল করছিলো , অনুরিমা ওকে চিনে না ফেলে। যতোই ভালো ছদ্মবেশ ধারণ করুক , স্ত্রী তো , তাই নিজেকে আড়াল করে রাখা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং , সেটা সমীর ভালোমতো জানতো।
ওদিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে ঢুকতেই অনুরিমার মনে পড়লো একবার সমীর কে কল করে জানতে , ও ঠিক মতো অফিসে পৌঁছেছে কিনা। দায়িত্ববতী স্ত্রী হলে যা হয়। কিন্তু অনুরিমার এই পতিব্রতা মনোভাবকে কি আদেও তার স্বামী সমীর বোঝে ? বা সেটার সম্মান করে ?
সমীরের ফোন বেজে উঠলো। কলার নেম এ অনুর নাম দেখে সে চমকে উঠলো ! ধরা পড়ে গেলাম না তো ! চোরের মন বোঁচকার দিকে হলে যা হয়। সে আসে পাশে আগে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো , অনু কোথাও নেই তো ! তারপর মাথা নিচু করে ধীর গলায় ফোনটা তুলে বললো , "হ্যালো। .."
"কিগো তুমি পৌঁছে গেছো ?" , ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অনুরিমার মিষ্ট গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।
অবুজের মতো সমীর বললো , "কোথায় ?"
"কোথায় আবার ? অফিসে ?"
"হা..। .... হ্যাঁ হ্যাঁ পৌঁছে গেছি। তুমি কোথায় ?"
"ভিক্টোরিয়া তে ", কিছুটা গম্ভীর হয়ে অনুরিমা বললো।
"রাজীব বাবু এসছেন ?"
"হুম। "
"আচ্ছা , ঠিক আছে। রাখছি তাহলে ", বলে সমীর ফোনটা কেটে দিলো। সমীরের প্রাণে যেন প্রাণ আসলো, "যাক। খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করেছিল ", ভেবে সমীর আস্বস্ত হলো।
ফোন কেটে যাওয়ার পর, অনুরিমা অবাক হয়েগেলো সমীরের এই ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ দেখে। ওর কি কিছুই যায় আসেনা , আমি কার সাথে আছি , কিভাবে আছি , তাতে ! তবে কি ও সত্যি আমাকে অন্য কারোর কাছে পাঠাতে চায় ? সমীরের এই অদ্ভূত ফ্যান্টাসিকে সমীর বাস্তবে রূপায়িত করতে যাবেনা তো ? .... এসব ভেবে মনে মনে অনুরিমা আঁতকে উঠলো। অনুরিমার মুখ-চোখ দেখে রাজীবের ঠিক লাগলো না। সে অনু কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো অনু ঠিক আছে কিনা। রাজীবের বারংবার এর কথায় অনুরিমার চেতনা ফিরলো, গভীর চিন্তার সমুদ্র থেকে বাস্তবের মাটিতে বাস্তবের সময়ে।
অনু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , "নাহঃ , কিছু হয়নি। চলুন ভেতরের মিউজিয়াম-টা দেখি। আমার ঐতিহাসিক জিনিস দেখতে খুব ভালো লাগে। "
অনুরিমা ওভারথিংকিং এর লোড মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করছিলো।
"বাহঃ , তাহলে তো বলতেই হবে আমি আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে এসছি। সময় থাকলে তাহলে পাশেই পার্ক স্ট্রিটের কাছে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামটাও দেখে নেওয়া যাবে , কেমন। "
"নাহঃ নাহঃ , আপনাকে অতো প্রেসার নিতে হবে না। "
"ধুর , এতে প্রেসার এর কি আছে। আমি তো বললাম, সময় ও ইচ্ছা থাকলে দেখা যাবে। আমার তো মনে হয় , মিছি মিছি আপনি প্রেসার নিচ্ছেন। "
"আমি !! আমি কেন নিতে যাবো প্রেসার ??"
"হয়তো এখনও আমি আপনার বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে অর্জন করে উঠতে পারিনি। "
"সেটা যদি সত্যি হয়েও , তবুও মিউজিয়াম যেতে গেলে আলাদা করে কোনো বিশ্বাস অর্জন করতে হয়না। আমি শুধু বলছিলাম আপনাকে আমার ভালো লাগা , খারাপ লাগার ব্যাপারে এতো না ভাবলেও হবে। "
"দ্যাটস সো রুড অনুরিমা। কি হয়েছে আপনার ? সমীরবাবু কে কল করার পর থেকে আমি দেখলাম আপনি একটু অন্যমনস্ক হয়ে রইলেন। অনেকবার বলাতে আপনি আমার কথার উত্তর দিলেন। "
অনুরিমা মাথা নিচু করে বললো , "আসলে আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেছি। "
এটা শোনা মাত্রই রাজীব অনুরিমার হাত ধরে তাকে একটা বসার জায়গায় নিয়ে গেলো এবং বললো , "আগে আপনি বসুন। "
অনুরিমার খুব অড্ লাগলো রাজীবের এই বিহেভিয়ার-টা। রাজীব কেন ওর পারমিশন ছাড়া ওকে টাচ করলো ! কিন্তু রাজীব ওকে অতো ভাবার সুযোগ না দিয়ে ওকে এনকোয়েরি করতে লাগলো চিন্তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য। অনুরিমা তাই বাকি সব ভুলে রাজীবকে ডেসক্রাইব করতে লাগলো পুরো বিষয়টা। সেক্সওলজিস্ট হিসেবে এখন রাজীবই তো তার ত্রাতা , অন্তত খাতায় কলমে।
রাজীব বুঝলো অনুরিমার শঙ্কার বিষয়টা। সে তাই অনুরিমাকে বললো যে সে পুরো ওয়াকিবহাল সমীরের বিষয়টা নিয়ে। অনুরিমার শঙ্কাটা কে সে মিথ্যে শান্ত্বনা দিয়ে উড়িয়েও দিলো না , কিন্তু পাশাপাশি অনুরিমাকে ভরসা জাগালো সমস্যার সমাধানের। এই ভাবে সে ধীরে ধীরে নিজের জন্য অনুরিমার মনের বিশ্বাসের জায়গাটা আরো বেশি পোক্ত করার চেষ্টা করলো। প্রাক্টিক্যালি সমস্যার সমাধান কতোটা হবে তার গ্যারান্টি তো স্বয়ং ঈশ্বরও দিতে পারবে না , সে তো সামান্য ডাক্তার মাত্র। কিন্তু অনেক সময়ে মুখে বলা ইতিবাচক উক্তি সাময়িকভাবে হলেও ভীত মনকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে প্রশমিত করে ঘুম পাড়িয়ে দ্যায়। কে জানে রাজীব হয়তো সেটাই করছিলো অনুরিমার সাথে , মিথ্যে আশ্বাস !
"আচ্ছা , এবার নিজেকে একটু শান্ত করুন। মনটাকে কিছুক্ষণের জন্য একটু ডিসট্র্যাক্ট করুন। চিন্তা করবেন না , সব ঠিক হয়ে যাবে। Aal izz well . হা হা হা। .... চলুন এবার ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা ভালো করে ঘুরে দেখি। অনেকদিন পর এসছি , এই সুযোগ মিস করা যাবেনা। আপনিও তো মনে হয় অনেকদিন পর এলেন ?"
"হুম .."
রাজীব আর কথা না বাড়িয়ে অনুরিমাকে ভিক্টোরিয়ার ভেতরের মিউজিয়াম দেখাতে লাগলো। অনুরিমাও খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে সব পূরাতন যুগের ব্রিটিশ আমলের জিনিস দেখছিলো। আগেই বলেছি অনুরিমার এসব ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখতে পছন্দ করে। নিজেকে এক নস্টালজিয়ার মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। ভাবে সেই যুগে জন্মালে কতো ভালোই না হতো। বীর পরাক্রমী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হতে পারতো। রাজীবও তার এই কাল্পনিক নস্টালজিয়া কে উসকে দিচ্ছিলো নানারকম আকাশ কুসুম কল্পনার কথা বলে। যাতে কোনোভাবে সে অনুরিমাকে আরো বেশি কমফোর্টেবল করতে পারে নিজের সাথে।
যেমন - সে বলছিলো যদি তুমি হতে কাদম্বরী , আমি হতাম রবীন্দ্রনাথ , তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতাম।
"যাহঃ , কিসব বলেন আপনি। আমি কাদম্বরী হলে আপনি রবীন্দ্রনাথ। তা কি করে সম্ভব। "
"কেন , তারাও তো একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিলো। "
"আপনি সেরকম বন্ধুত্ব করতে চান ? তাহলে এক্ষুনি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। "
"কেন ? আপত্তি কিসের ? তারা তো সম্পর্কে দেওর বৌদি ছিল। "
"তাও। .. তাদের সম্পর্কটা শুনেছি একটু অন্যরকম ছিল। "
"এই হলো আমাদের বাঙালিদের সমস্যা। আমরা রবীন্দ্রনাথকে অ্যাডমায়ার করি ঠিকই , কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জীবন আদর্শে কখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারিনা। আচ্ছা দেখুন তো রবীন্দ্রনাথ কতো গল্প লিখেছে পরকীয়ার উপর। তার মানে উনিও সবকিছুকে সহজ করে দেখতেন। বিবাহ মানেই যে বন্ধনের নামে সারাজীবনের বন্দী দশা সেটা তিনিও কিন্তু মানতেন না। "
"আপনি কি বলতে চাইছেন ? "
"কিছুনা। শুধু রবীন্দ্রনাথের মতো করে সবকিছু সহজ ভাবে দেখতে ও অ্যাডপ্ট করতে বলছি। চলুন সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠা যাক। ওপরের ব্যালকনি থেকে ভিক্টোরিয়ার পেছনের দিকের সৌন্দর্য্যটা অপরূপ লাগে। ঠিক আপনার মতো। " , এই বলেই রাজীব সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। কোনো বিকল্প না পেয়ে অনুরিমাও তাকে ফলো করে উঠতে লাগলো , ভিক্টোরিয়ার সিঁড়ি দিয়ে নাকি বাস্তব জীবনের সিঁড়ি দিয়ে, সময় বলবে তা।
ওদিকে সমীর ভিক্টোরিয়ার আসে পাশে ফাঁকা জায়গাতে ওদের দুজনকে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে সে ভাবলো তারা দুজনে নিশ্চই ভিক্টোরিয়ার ভেতরে গ্যাছে। ভিক্টোরিয়ার বিল্ডিং এর এক্সিট টা পেছনের দিকে। তাই সমীর সময় নষ্ট না করে ভিক্টোরিয়ার পেছন দিকটা গিয়ে একটা সেফ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলো, যেখান থেকে সে চট করে যাতে ওদের নজরে না পড়তে পারে। এবং অপেক্ষায় থাকলো কখন ওরা বেড়োয়।
রাজীব নিজের কমিউনিকেশন স্কিলের ভরপুর ফায়দা তুলে অনুরিমার সাথে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলো। অনুরিমাও তাই আস্তে আস্তে রাজীবের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ কমফোর্টনেস ফীল করছিলো। কিছুক্ষণ পর তারা হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে এক্সিট গেট দিয়ে বেড়িয়ে আসলো। সমীর লক্ষ্য করলো অনুরিমা বেশ ভালোই হেসে খুলে রাজীব বাবুর সাথে কথা বলছে। যা দেখে সমীরের মনটা হঠাৎ হিংসায় জ্বলে ছ্যাৎ করে উঠলো।
ভিক্টোরিয়ার মেইন বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে রাজীব অনুরিমার হাত ধরে বললো , "চলুন এবার বাইরের গ্রাউন্ড টা একটু ঘোরা যাক । "
"একি , আপনি আমার হাত ধরলেন কেন ?"
"বন্ধু হয়ে বন্ধুর হাত ধরতে পারিনা ? এটা কোথায় লেখা আছে ? প্লিজ একটু কমফোর্টেবল হন , একটু বিশ্বাস রাখুন আমার উপর। চলুন একটু ওই ঝিলের ধারে বসে গল্প করা যাক। "
বন্ধু বন্ধু করে রাজীব যে আর কতোদূর এগোতে চায় তা কে জানে ! অনুরিমার সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছিলো। রাজীব তার সাথে যেটা করছে সেটা ঠিক কিনা, সেটাই সে ঠিকমতো বুঝতে পারছিলো না। কো-এডুকেশন কলেজে পড়লেও তার বান্ধবীর সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ছেলে বন্ধু বলতে সেভাবে সমীর ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। আর সেই অর্থে সেই একমাত্র ছেলে বন্ধুকেই সে নিজের জীবনের পরম বন্ধু করে নিয়েছিলো।
দূর থেকে সমীর সব দেখছিলো। দেখছিলো কিভাবে রাজীব তার স্ত্রীয়ের হাতটা হঠাৎ করে ধরে নিলো। আচ্ছা রাজীব বাবু কি তাহলে আমার অনুরিমার উপর একটা ট্রাই মারার চেষ্টা করছে ? সমীর নিজের ধন্ধের উত্তর খুঁজতে শেষ অবধি সবকিছু দেখার সিদ্ধান্ত নিলো।
রাজীব অনুরিমাকে হাত ধরে নিয়ে এসে ঝিলের সামনে বসলো। সমীর দূরে এক গাছের পিছনে বসে ওদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। রাজীব ও অনুরিমার পাশেই একটা কাপল বসে মেক আউট করছিলো। অনুরিমার তাতে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো। সে বললো , "ইস্স , এখানে এরা এসব করছে। এখান থেকে চলুন। আমি আগেই বলেছিলাম এই জায়গাটা আপনার সাথে দেখা করার জন্য মানানসই নয়। এখানে লোকেরা হয় নিজের পরিবার নিয়ে আসে , নাহলে যুগলরা আসে প্রেম করতে , তাও এভাবে। এখানে কোনো পেশেন্ট পার্টি তার ডাক্তারের সাথে দেখা করতে আসেনা। "
"কিন্তু আমি তো যে সে ডাক্তার নই ম্যাডাম। আমি একজন যৌন-বিশেষজ্ঞ। আমার কাজ যৌনতা নিয়েই। তাই এসব ছোটখাটো বিষয়-তে বিচলিত হলে চলবে ! আপনাকে তো আরো অনেক কিছু এক্সপিরিয়েন্স করতে হতে পারে। "
"মানে ? কি বলতে চাইছেন আপনি ? আর কি দেখার আছে ? "
"এতো প্যানিক করবেন না। প্যানিক করার তো কিছু নেই। আচ্ছা আপনি কখনো সমীরের সাথে বি-গ্রেড সিনেমা দেখেছেন ? "
"নাহঃ। ছিঃ। "
"এতে ঘেন্না করার কিছু নেই। জীবনের সবচেয়ে আপনজনের সাথে এরকম ছোটোখাটো নোংরামো না করলে , জীবনের সব রং যে ফিকে হয়ে যায় , অনুরিমা। "
"হুম। .. কি জানি হয়তো আপনি ঠিক বলছেন। "
"যাক , আপনি যে অ্যাট লিস্ট অ্যাডমিট করতে পারছেন , এটাই অনেক। নাইস ডেভেলপমেন্ট। "
"দেখবেন , বেশি ডেভেলপ করতে গিয়ে আমার পুরো নেচার টাকেই ডেস্ট্রয় করে দেবেন না যেন। আমি এখন খুব কনফিউশনের মধ্যে আছি সমীরের স্টেট অফ মাইন্ডটা কে নিয়ে। ও কি চায় , কি করবে , আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। যতোদিন যাচ্ছে ততোই যেন ওকে নিয়ে এই আশংকার মেঘ আমার মনে ঘনীভূত হচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে আমি চাই আপনাকে বিশ্বাস করতে। কারণ এই বিকট সমস্যার সমাধান শুধু আপনার কাছেই থাকতে পারে। "
"চিন্তা করবেন না অনুরিমা , যখন বন্ধু বলে মেনেছেন ,তখন বন্ধুত্বের দায়িত্বটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো ", রাজীব অনুরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটা বললো। অনুরিমা নিজের সম্পর্কের চিন্তায় এতোটাই নিজের মস্তিস্ককে ব্যাস্ত করে রেখেছিলো যে রাজীবের স্পর্শের খবর তার ইন্দ্রিয় তার মস্তিস্কর কাছে পাঠাতে পারলো না। নিমেষের মধ্যে রাজীবের এই ছোট্ট কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ বিস্মৃতি তে পরিণত হলো।
কেন জানিনা মনে হচ্ছে ডক্টর রাজীব হয়তো আস্তে আস্তে অনুরিমার কাছে আসার চেষ্টা করছে। রাজীব খুব সাবধানে এবং প্রতিটা পদক্ষেপ খুব মেপে মেপে নিচ্ছিলো। তাই প্রথমে বন্ধুত্বের নামে অনুরিমার হাত ধরা , এখন অছিলায় অনুরিমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে নেওয়া শান্ত্বনার নামে। ইশারা কিন্তু মোটেই ঠিক দিয়ে নির্দেশ করছে না। রাজীব অনুরিমার এই দূর্বল পরিস্থিতির ফায়দা নিতে চাইছেনা তো ? নাহলে যৌন-বিশেষজ্ঞ রাজীব কখোন দায়িত্বপরায়ণ বন্ধু হয়েগেলো , আপনি ধরতে পারলেন না তো ?
দূর থেকে সমীর এই দৃশ্যটা দেখলো , যে রাজীব অনুরিমার মাথায় একবার হাত বোলালো। কেন বোলালো সে জানেনা , সে শুধু দেখলো অন্য একজন পুরুষ কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও তার স্ত্রীয়ের ভরসার জায়গাটা তার কাছ থেকে কেড়ে নিলো। কারণ একজন পুরুষ যখন একজন স্ত্রীয়ের মাথায় হাত রাখে তখন সে বোঝাতে চায় যে সে তার পাশেই রয়েছে , সে নারী যেন তার ভরসার জায়গাটা তাকে দিতে পারে। এটাই কি তবে প্রথম পদক্ষেপ ছিল , সমীরের ফ্যান্টাসি পূরণের ? এবার কি তবে স্বামীর কল্পনা স্বামীরই যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়াবে ?
পর্ব ১১
কিছুক্ষণ রাজীব ও অনুরিমা চুপ করে বসেছিল ঝিলের ধারে। আহঃ , কি মনোরম পরিবেশ ! নির্জনতা ছেয়ে রয়েছে। পাখি আর কয়েকজন প্রেমিক যুগল ছাড়া কেউ নেই। আর রয়েছে নতুন নতুন হওয়া এক গোয়েন্দা যে দূর থেকে নিজের স্ত্রীয়ের উপর নজর রাখছে, যাকে সে নিজেই পাঠিয়েছে সেখানে। একেই বলে ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা।
অনুরিমা হঠাৎ রাজীবকে জিজ্ঞেস করলো , "আমাকে কি করতে হবে ?"
"হুম ? কিছু বললেন ?"
"এই যে আপনি বারবার বলেন আপনি যা বলবেন তাই করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই জিজ্ঞেস করছি , কি করতে হবে আমাকে , সমীরকে ফিরে পেতে গেলে ? "
"এতো তাড়াতাড়ি সব বললে আপনি নিতে পারবেন না। ইউ কান্ট ডাইজেস্ট ডোস থিংস টুগেদার। তাই একটু সময় নিন। আস্তে আস্তে বলবো সব করণীয়। "
"আমি আর সময় নিতে পারছি না রাজীব , আই এম টায়ার্ড অফ অল দিস স্টাফস। আমি ইমিডিয়েট সলিউশন চাই। তার জন্য আমার যা করার আমি সব করতে রাজি আছি। ইউ জাস্ট টেল। "
"আচ্ছা ! ঠিক আছে , তাহলে আমাকে কিস করুন , এক্ষুনি। " , রাজীব মওকে পে চওকা মেরে বললো। শেষমেশ অনুরিমার দূর্বল মুহূর্তের সুযোগ রাজীব নিতে শুরু করেই দিলো। ছিঃ , রাজীব ! তুমিও প্রমান করলে যে সুন্দরী নারী দেখলে যেকোনো পুরুষেরই তার পেশা কর্তব্য সবকিছু থেকে বিচ্যুতি ঘটে যায়।
"ওয়াট !!", অনুরিমার চোখ যেন বেড়িয়ে আসলো রাজীবের এরকম দুঃসাহসিক কথা শুনে।
"কুল ডাউন , আগে পুরো কথাটা শুনুন , তারপর রিএক্ট করবেন। "
"আর কিছু শোনার বাকি থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয় ?", অনুরিমা ঝাঁঝিয়ে বললো।
দূর থেকে সমীর লক্ষ্য করলো যে অনুরিমা কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব হাইপার হয়েগেছে। কিন্তু বিষয়টা কি সেটা জানার কোনো উপায় ছিলোনা তার কাছে। আসলে এতো বড়ো ভিক্টোরিয়া গ্রাউন্ডে একমাত্র তারই তো শুধু খেয়ে দেয়ে কাজ ছিলো অনুরিমা ও রাজীবের প্রতিটি মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার।
রাজীব তাও শান্ত হয়ে নিজের কথার সমর্থনে দলিলটা অনুরিমার সামনে পেশ করলো , "এইটুকু কাজ আপনাকে করতেই হতো। আমার সাথে নাহোক অন্য কারোর সাথে। তাই বারবার আপনাকে একটা ছেলে বন্ধু বানাতে বলছিলাম। সমীরের কাকোল্ড ভূতটা ছাড়ানোর জন্য। আপনি খামোখা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছেন। আপনিই আমাকে সেই বন্ধুর জায়গাটা দিয়েছেন। "
"তাই বলে সেই বন্ধুত্বের ফায়দা তুলবেন এভাবে , সেটা আমি আগে বুঝিনি। "
"আপনাকে আগেই বলেছিলাম আপনি এখুনি এসব ডাইজেস্ট করতে পারবেন না। তবুও আপনার যখন এতো তাড়া , তাহলে শুনুন , আপনার স্বামীর মন ও মস্তিষ্কে কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা জেঁকে বসেছে। সমীরকে সেখান থেকে বার করতে হলে সীতার মতো আপনাকে কিছু তো অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে , আপনি তার স্ত্রী বলে কথা। পার্থক্য শুধু একটাই , সীতাকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল , আর আপনাকে কিছুটা অসতীত্বের দিতে হবে। কারণটা আপনাকে বুঝিয়ে বলছি , যদি আপনি ধৈর্য ধরে শুনতে চান। আদারওয়াইস ভিক্টোরিয়ার গেট-টা ওদিকে আছে , আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন। আমি আটকাবো না। "
রাজীবের কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। ওর কাছে যে কোনো উপায় নেই। এই সমস্যার সমাধানে রাজীবই অ্যাস এ সেক্সওলোজিস্ট তার একমাত্র ত্রাতা। তার নিজও বুদ্ধি যে জবাব দিয়ে দিয়েছে , এই এতো কমপ্লিকেটেড সিচুয়েশনের থেকে বেড়োনোর রাস্তা তার জানা নেই। তাই এখন সে না চাইতেও রাজীবের মুখাপেক্ষী।
অনুরিমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে রাজীব কারণ ব্যাখ্যা করতে শুরু করলো , "সমীরকে এই ফ্যান্টাসি থেকে বের করে আনার একটাই উপায় , ওকে একেবারের জন্য হলেও এই ফ্যান্টাসির পরিণতি সম্পর্কে অবগত করা। স্বপ্নে কল্পনায় ও যে সিনেমাটা দেখছে , তার ট্রেইলার যদি নাও দেখানো যায় , অ্যাট লিস্ট টিজার তো দেখাতেই হবে। তবেই ও বুঝবে কি মারাত্মক হতে পারে এসব কিছু বাস্তবে ঘটলে। যতোক্ষণ না ওর মনে তোমাকে হারানোর ভয় জন্মাচ্ছে , ততোক্ষণ ওর মুক্তি নেই এই ফ্যান্টাসির কবল থেকে। তাই সমীরকে একটা ডেমো দেখাতেই হবে। সেটা তখুনি সম্ভব যদি তুমি রাজি হও ওর সামনে আমাকে চুমু খেতে। সেটাই হবে প্রাকটিক্যাল ডেমো। সমীরের সামনে তোমাকে কিছু করতে হবে না।
আমিই তোমাকে কিস করবো , তুমি শুধু বাধা দিও না তখন। "
রাজীব এবার 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে নেমে এসছিল। কিন্তু অনুরিমার সেইসবে কোনো খেয়াল ছিলোনা। তার সামনে যে তার চেয়েও অনেক বড়ো বিষয় ছিল ডিল করার। রাজীবকে কিস করতে হবে , তাও আবার সমীরের সামনে সমীরের ভালোর জন্যই।
"আপনাকে যদি এসব করতে আমি অ্যালাও করি , তাহলে আমার সংসার থাকবে ? আপনার কথা গুলো অবাস্তব বলে আপনার মনে হচ্ছে না ? সমীর আর আমার সম্পর্ক একেবারে শেষ হয়ে যাবে তখন। "
"আর আমি যদি সমীরের পারমিশন নিয়েই করি , তাহলে ?"
"আপনি কি পরিস্থিতির অ্যাডভান্টেজ নিতে চাইছেন ? আপনি জানেন এই সময়ে সমীরের মাথার ঠিক নেই। ও কি করছে , কি চাইছে , সেটা ও নিজেই জানেনা। সে যদি ঝোঁকের বশে আপনাকে অনুমতি দিয়েও দ্যায় , আমি সুস্থভাবে কি করে অ্যালাও করবো আপনাকে ?"
"সমীর কনফিউস্ড , তাই জন্যই তো এসব করতে বলা , যাতে সমীরের কনফিউশন দূর হয়। ওর মধ্যে যতোক্ষণ না গিল্ট ফিলিং কাজ করতে শুরু করবে ততোক্ষণ পর্যন্ত ওর মাথা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার হবে না। "
"কিন্তু এটা আমার করা উচিত নয়। প্লিস অন্য কোনো উপায় ভাবুন। "
"দেখো তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি যথাযথ যুক্তি দিয়ে দিলাম। তুমি জিজ্ঞেস করলে তোমাদের সম্পর্কের কি হবে , আমি বললাম সমীরের পারমিশন নিয়েই যা করার করবো , যাতে ভবিষ্যতে ও তোমাকে দোষারোপ করতে না পারে। তুমি ভাবলে আমি অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি , সমীরের যা অবস্থা সমীর পারমিশন দিয়েই দেবে। তুমি কেনো অ্যালাও করবে এসব , তাই তো ? কারণ সমীরকে ঠিক পথে নিয়ে আনতে। ওকে বোঝাতে যে স্বামীর এরূপ কল্পনা কিভাবে স্ত্রীয়ের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওর এই রিয়েলাইজেশন-টা হওয়া খুব জরুরি। দ্যাটস ওয়াই ইউ হ্যাভ টু ডু দিস অনুরিমা। "
"আপনি এখন আমাকে কিস করতে বললেন কেন ?"
"তার পিছনেও একটা কারণ আছে, কিন্তু জানিনা সেটা তুমি মানবে কিনা। "
"কি কারণ ? বলুন। ...."
"জীবনে কোনো ইম্পর্টেন্ট কিছু পরীক্ষার আগে আমাদের একটা ভাইটাল জিনিস করার দরকার হয় , তা হলো প্রিপারেশন বা রিহার্সাল। সমীরকে যদি প্রথমবারই পারফেক্ট ডেমো দেখাতে পারি আমরা , তাহলেই আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। নাহলে বারংবার করতে হতে পারে সমীরের সামনে কনভিনসিং দেখানোর জন্য। প্রথম তীরেই যে লক্ষভেদটা করতে হবে। তার জন্য তো আগে ধনুর বিদ্যাটা ঠিকমতো আয়ত্ত করতে হবে। "
"আমি প্রথমবারেই করতে পারবো , যদি আমাকে এই অগ্নিপরীক্ষাটা দিতেই হয়। তার জন্য কোনো রিহার্সালের দরকার পড়বেনা আমার। "
"আপনার সমস্যা হচ্ছে আপনি খুব একগুঁয়ে, জেদি। আপনি ভাবেন আপনি সব পারেন করতে। এটাই আপনার মস্ত বড়ো ভুল। ইউ হ্যাভ টু অ্যাডমিট যে ব্যাপারটা আপনার নিজের পক্ষে এতোটা সহজ হবেনা। কিস করা তো দূরের কথা আপনি আজ পর্যন্ত কোনো অন্য পুরুষকে ছুঁয়েও দেখেননি। তাই আসল সময়ে এসে আপনি সবকিছু ঘেঁটে দিতে পারেন। আমরা এটা একবারই করবো সমীরের সামনে , কিন্তু এমনভাবে করতে হবে যাতে সমীরের মনে গিয়ে লাগে , এবং সে নিজে আসে আমাদের আটকাতে। তবেই তার মাথা থেকে কাকোল্ডনেসের ভূতটা যাবে। "
রাজীব আবার 'তুমি' থেকে 'আপনি' তে আপগ্রেড করলো অনুরিমার প্রতি সম্বোধনটা কে। মনে রাখবেন বাঘ দু পা পেছোয় বড়ো লাফ মারার জন্যই।
"কিন্তু এসব রিহার্সাল আমি কি করে করবো ? প্লিস বুঝুন একটু ব্যাপারটা। "
"আমি বলেছিলাম আপনি যদি দাঁড়িয়ে থাকেন শিয়ালদাহ তে , তাহলে সমীর দাঁড়িয়ে আছে নিউ জলপাইগুড়িতে। আপনাদের দুজনকেই ফারাক্কায় মানে মাঝামাঝি একটা জায়গায় আসতে হবে। এবার আপনাকে তার জন্য ভালোমতো রিহার্সাল করে সমীরের সামনে আমাকে চুমু খেতে হবে। তখন সমীর আপনা আপনিই জলপাইগুড়ি ছেড়ে ফারাক্কায় এসে হাজির হবে , আমাদের ট্রেনটা কে আটকাতে। আর এইভাবেই সমীর কাকোল্ড ফ্যান্টাসির মায়াজাল থেকে মুক্ত হবে। "
অনুরিমা এবার বড়ো ডিলেমায়ে পড়ে গেছিলো। ও একদমই বুঝতে পারছিলোনা যে কি করবে। ও শুধু বললো , "আমার মাথা একদম কাজ করছে না ", এই বলে সে নিজের দুহাত দিয়ে মাথা চেপে নিচু করে বসে রইলো। রাজীব ওকে সময় দিলো নিজেকে সামলে নিয়ে ওঠার। তারপর অনুরিমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললো , "ইউ ক্যান ডু ইট অনু , ইউ আর আ ফাইটার। ইউ শুড ফাইট ফর ইওর লাভ। সো লেট্স ডু ইট .... " .... এই বলে রাজীব দু'হাত দিয়ে অনুরিমার মুখটা কে আলতো করে চেপে ধরলো। ধরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আনলো চুমু খাওয়ার জন্য। অনুরিমা সঙ্গে সঙ্গে দুটি ঠোঁটের মাঝখানে হাত রেখে বললো , "এখানে না। "
রাজীব বুঝতে পারলো দ্যাট হি হ্যাস ডান দা জব। সে পেরেছে , পেরেছে অনুরিমার মতো মেয়েকে কনভিন্স করতে। ইয়েস্স !!.. দূর থেকে সমীর সবটা দেখলো। সে বাকরুদ্ধ হয়েগেলো রাজীবের বোল্ডনেস দেখে। অনুরিমার আচরণও তাকে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কারণ সমীর যে অনুরিমা কে চেনে সে রাজীবকে তার কান অবধি পৌঁছতে দিতোনা , ঠোঁটের কাছে তো অনেক দূরের ব্যাপার।
পর্ব ১২
অনুরিমা সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিলো। সে ভাবলো কি বললো এটা সে !! এখানে না , মানে ? তার মানে কি সে অন্য কোথাও 'রিহার্সাল' করতে চায় ? সর্বোপরি সে কি রাজি ? নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করতে শুরু করলো। তখুনি রাজীব আস্তে করে অনুরিমাকে বললো , "আমি বুঝতে পারছি এই খোলামেলা জায়গায় তুমি হেসিটেট ফীল করছো। ঠিক আছে , তাহলে অন্য কোথাও যাওয়া যাক রিহার্সের জন্য। "
"মিস্টার রায় , আমার একটু সময় লাগবে , ভাবার জন্য। আমি এখুনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। "
"ওকে , টেক ইওর টাইম। "
দুজনেই ঠিক করলো আজকের মতো তাদের মিটিং এখানেই ইতি। তাই তারা উঠে পড়লো নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যাওয়ার আগে রাজীব এবার অনুরিমার সাথে ফোন নম্বর আদান প্রদান করতে ভুললো না। সাথে সে অনুরিমা কে এও বললো যে যেকোনো প্রকার দরকার পড়লে সে যেন রাজীবকে স্মরণ করতে না ভোলে।
ভিক্টোরিয়া থেকে বেড়িয়ে অনুরিমা একটা ট্যাক্সি ধরলো। রাজীব বলছিলো তাকে ড্রপ করে দেবে , বাড়িতে নাহোক নিয়ারেস্ট কোনো ডেস্টিনেশন পয়েন্টে। কিন্তু অনুরিমা পোলাইটলি ভাবে সেই অফার রিফিউস করলো। অনুরিমার মনের অবস্থা বুঝে রাজীবও তাই বেশি জোরাজুরি করলো না।
বাড়ি ফিরে অনুরিমা যথারীতি নিজের সাংসারিক কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে সমীর ওদের ফিরে যেতে দেখে নিজেও গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলো। আজকে নাহয় সে অফিসে হাফটাইম করবে। কিন্তু রাজীবের সেই দুঃসাহসিকতা কি তাকে অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে দেবে ?
সন্ধ্যে সমীর বাড়ি ফিরে দেখলো অনুরিমা যথারীতি তার জন্য চা বানিয়ে এনেছে। দৈনন্দিনের মতো এটাও আরেকটা স্বাভাবিক দিন। রাতে খাওয়ার পর শুতে যাওয়ার আগে অনুরিমা অনেকদিন পর তার সাদা স্লীভলেস নাইটি-টা পড়েছিলো। এই নাইটিটা অনেকদিন আগে সমীরই তাকে গিফট করেছিল , রাতের বেলা পড়ে যৌন আনন্দ দেওয়ার জন্য।
সমীর ভাবলো অনুরিমা হয়তো আজকে ঘটে যাওয়া রাজীবের দুঃসাহসিক পদক্ষেপে উত্তেজিত হয়ে এই পোশাকটা পড়েছে। ভেতর ভেতর সে হয়তো রাজীবের জন্যই গরম হয়ে আছে। কিন্তু আসলে অনুরিমা এই নাইটি-টা পড়েছিল অন্য কারণে। সে একবার শেষ চেষ্টা করতে চাইছিলো ওইসব ডেমো-ফেমো না দেখিয়ে যদি তার স্বামীকে সঠিক পথে ফেরানো যায়। সে যদি আজকে তার স্বামীকে বিছানায় সন্তুষ্ট করতে পারে , তাহলে মে বি সমীর আবার পুরোনো সমীর হয়ে উঠবে।
নাইটি পড়ার কারণ সমীর ভুল জাজ করলেও এটা বুঝতে সমীরের দেরী হয়নি যে আজ অনুরিমা চায় ওকে , বিছানায় , ভালোবাসতে। কারণ অনুরিমা তার স্বামীকে স্বামী হিসেবে ফিরে পেতে চায় , নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে। আর সমীর ? সে তো আবার ছদ্মবেশ ধারণ করতে শুরু করেছিলো , তবে সেটা মনে মনে। তার মাথায় তখন দুপুরে ঘটে যাওয়া রাজীবের সেই কাছে আসার মুহূর্তটা ঘুরছিলো। তাই সে না চাইতেও নিজেকে মনে মনে রাজীব ভাবতে শুরু করেছিল।
রাজীব থুড়ি সমীর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিলো অনুরিমার দিকে। অনুরিমা একটু লজ্জা পাচ্ছিলো। আসলে বেশ কয়েকদিন পর সে তার স্বামীর সাথে মিলিত হচ্ছিলো। এমনিতেই সেক্স সম্বন্ধ বিষয়ে সে বরাবরই খুব লাজুক। যাই হোক , সমীর যখন ওকে ছুঁলো , ওর শরীরে ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট বয়ে গেলো। কিন্তু সমীর ভাবলো , সে নয় , রাজীব ওকে ছুঁয়েছে। তাই ভেবে সমীরের শরীরে উত্তেজনার ঢেউ বইতে শুরু করলো।
সমীর অনুরিমাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় পড়লো। চটজলদি নিজের ও অনুরিমার নিচের দিকের কাপড় খুলে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে নিজের লিঙ্গ অনুরিমার যোনিতে ঢুকিয়ে দিলো। পুরো কাপড় খোলারও প্রয়োজন বোধ করলো না সমীর , এতোটাই সে রাজীবকে কল্পনা করে উত্তেজিত ছিল। সমীরের এই মনোভাবে অনুরিমা একটুও স্যাটিসফাই ছিলোনা। সমীর দায়সাড়া ভাবে রাজীবকে কল্পনা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের বীর্য অনুরিমার যোনিতে ঢেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো।
জীবনে প্রথমবার অনুরিমার মনে হলো দ্যাট সামথিং ইস মিসিং। সমীর কুডুন্ট স্যাটিসফাই হার টুনাইট। অনুরিমা ভাবলো, আজকেরটা একটু বেশিই তাড়াতাড়ি ও তাড়াহুড়ো করে করা সঙ্গম ছিল। অনুরিমার কখনোই এসব নিয়ে সমীরের প্রতি কোনো কমপ্লেইন ছিলোনা। সে যে সমীরকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু ভালোবাসার মোহঃ আপনার ভুল গুলোকে একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ছাড় দ্যায়। যখন জল মাথার উপর দিয়ে বইতে শুরু করে তখন না পেরে মানুষ হাতের কাছে উপস্থিত যেকোনো একটা শিখন্ডি ধরে সাঁতরে উঠতে চায়। অনুরিমার কাছে সেই শিখন্ডি কি তবে রাজীব ছিল ?
পরের দিন সকালে অনুরিমা দেখে তার ফোন সুচরিতার মেসেজ। সে বারবার অনুরিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে বিশ্বাসঘাতক নয় , সে অনুরিমার কোনো বিশ্বাস ভাঙেনি। তার প্রাক্তন স্বামী অনুরিমার মতোই তার একজন বিশস্ত বন্ধু , যে কোনো কথা পাঁচকান করবে না , উপরন্তু সে সাহায্যই করবে। তাই সে সমীরের ব্যাপারটা আদিত্য কে জানিয়ে ছিল।
এরই মধ্যে অনুরিমার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছিল। সে ভাবলো একবার তার বন্ধুর কথাটা তার শোনা উচিত। সে তাই সুচরিতাকে আবার মিট করতে বললো। কিন্তু এবার আদিত্যকে না নিয়ে আসার কথা কড়া ভাবে জানিয়ে দিলো। সুচরিতা রাজি হয়েগেলো তার এই শর্তে।
পর্ব ১৩
পরের দিন সকালে অনুরিমা দেখে তার ফোন সুচরিতার মেসেজ। সে বারবার অনুরিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে বিশ্বাসঘাতক নয় , সে অনুরিমার কোনো বিশ্বাস ভাঙেনি। তার প্রাক্তন স্বামী অনুরিমার মতোই তার একজন বিশস্ত বন্ধু , যে কোনো কথা পাঁচকান করবে না , উপরন্তু সে সাহায্যই করবে। তাই সে সমীরের ব্যাপারটা আদিত্য কে জানিয়ে ছিল।
এরই মধ্যে অনুরিমার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছিল। সে ভাবলো একবার তার বন্ধুর কথাটা তার শোনা উচিত। সে তাই সুচরিতাকে আবার মিট করতে বললো। কিন্তু এবার আদিত্যকে না নিয়ে আসার কথা কড়া ভাবে জানিয়ে দিলো। সুচরিতা রাজি হয়েগেলো তার এই শর্তে।
সেদিনই বিকেলে অনুরিমা আবার গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সে যে দোটানার মধ্যে রয়েছে তাতে পারলে শত্রুকেও সে একবারের জন্য বিশ্বাস করতে পারে , সুচরিতা তাও তো ওর বান্ধবী ছিল , সেটাও আবার কলেজ জীবনের।
অনুরিমার সাথে দেখা হওয়া মাত্র সুচরিতা ওকে সব খুলে বলতে লাগলো। আদিত্য কৌতূহলবশত অনুরিমার সম্পর্কে ওর কাছে জানতে চেয়েছিলো। তখন ও আদিত্যকে সব খুলে বলে অনুরিমা এবং সমীরের সমস্যার ব্যাপারে। তখন আদিত্যও চায় অনুরিমার এই জীবনযুদ্ধে তার সৈনিক হতে। তাই সুচরিতা সেদিন তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে এসেছিলো অনুরিমার সাথে দেখা করাতে।
সুচরিতার যুক্তিতে অনুরিমা কিছুতেই কনভিন্সড হচ্ছিলো না। অনেকবার করে বোঝানোর পর ফাইনালি অনুরিমা মেনে নিলো সুচরিতার সব যুক্তি। কিন্তু একটা শর্তে , অনুরিমা না চাইলে বা অনুরিমাকে না বলে সুচরিতা আর কোনো কথা আদিত্য সেনগুপ্তকে বলবে না। তবেই অনু বিশ্বাস করে আবার সব কথা সুচরিতার সাথে শেয়ার করতে পারবে , নতুবা নয়। এই শর্তে সুচরিতা এক কথায় রাজি হয়েগেলো। এরপর জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেন অনু তাকে আজ ডেকে পাঠালো , শুধুই কি তাদের মধ্যে সবকিছু শর্ট আউট করতে নাকি আরো কিছু কথা আছে যা বলার আছে।
অনুরিমা আস্তে আস্তে নিজের কথার বাক্স খুলতে লাগলো। সে বললো রাজীব তাকে কি কি করতে বলেছে। শুনে তো সুচরিতা অবাক ! মুখে হাত দিয়ে সে বসে পড়লো। ভাবতেই পারছে না , যে বান্ধবী তার কোনোদিন সমীর ব্যাতিত আর কারোর কথা কল্পনাতেও আনেনি , তাকে কিনা এখন অন্য পুরুষকে চুমু খেতে হবে তাও সেটা সমীরকে "সুস্থ" করার জন্য !
"আর ইউ সিরিয়াস ? তুই এটা পারবি করতে ?"
অনুরিমা খুব হেসিটেট ফীল করছিলো , কি বলে উঠবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা। সুচরিতা অনুরিমার দ্বন্দ্ব অনুভব করতে পারছিলো। সে অনুরিমার হাতটাকে আলতো ভাবে ধরে বললো , "দেখ অনু , আমি জানি তুই এখন অনেক বড়ো ধর্মসংকটে পড়েছিস। এই পরিস্থিতিতে কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো তোর পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু তুই যদি আমার সাজেশন চাস , তাহলে আমি বলবো , রাজীবের কথাটা তোর একবার ভেবে দেখা উচিত। ওর কথায় কিন্তু যুক্তি রয়েছে। সর্বোপরি ও একজন সেক্সওলজিস্ট, এসব ব্যাপারে তোর আমার থেকে ও বেশি বুঝবে। "
"কি গ্যারান্টি আছে সুচরিতা , যে রাজীব যা বলছে সেটা আমার আর সমীরের ভালোর জন্য। হতেই পারে এর পেছনে ওর কোনো অন্য উদ্দেশ্য আছে। "
"আমি বুঝতে পারছি , তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস। আসলে দোষ তোর নয়। তুই ওর ব্যাপারে সবটা জানিসনা তাই এইভাবে ভাবছিস। কিন্তু আমি তো ওকে চিনি। আমি জানি ও এরকম ছেলেই নয়। ও খুব ভালো ছেলে , কিন্তু বেচারার জীবনে অনেক দুঃখ রয়েছে। "
"দুঃখ ! কিসের দুঃখ ?"
"রাজীব নিজের স্ত্রী মৌ-কে খুব ভালোবাসতো। ওদের লাভ ম্যারেজ ছিল। বিয়ের প্রথম কয়েকটা বছর খুব সুখেই কাটছিলো। কিন্তু ওদের জীবনে একটা শূন্যস্থান ছিল, ওদের বাচ্চা হচ্ছিলো না। রাজীব নিজের উদ্যোগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে টেস্ট করে জানতে পারে যে সে সম্পূর্ণ সুস্থ ও সক্ষম। তার স্ত্রীয়ের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে যা চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। ব্যাপারটা খোলসা করে সে মৌ-কে জানায়নি , পাছে সে দুঃখ পায়। সে বলতো সমস্যা একটা রয়েছে দুজনের যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু মৌ ভাবতো সমস্যা বুঝি শুধু রাজীবের রয়েছে , নিজের অক্ষমতা ঢাকতে সে এই সমস্যাকে ভাগ করে নিতে চাইছে। প্রথম প্রথম মৌ এসব নিয়ে কিছু বলতো না। কিন্তু একদিন হঠাৎ রাজীব জানতে পারে তার আদরের মৌ তার সাথে প্রতারণা করছে। সে তার অফিসের এক কলিগের সাথে পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়েছে। রাজীব তারপরেও চেষ্টা করেছিলো নিজের বিয়েটাকে বাঁচানোর। কিন্তু ওর স্ত্রী নাছোড়বান্দা ছিল। রাজীবের নামে সে মিথ্যে অভিযোগ আনতে লাগলো। বললো রাজীব নাকি ইম্পোটেন্ট , সে তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম , আর এই মিথ্যে কথাটা সে রটিয়ে দেবে। লোকলজ্জার ভয়ে তাই রাজীব বাধ্য হয় মৌ কে নিঃশর্ত ডিভোর্স দিতে। কিন্তু রাজীব তো জানতো তার মধ্যে কোনো অসুবিধা ছিলোনা। তার স্ত্রী তার ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তাকে জাস্ট ব্ল্যাকমেইল করেছিল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। এরপর রাজীব সেক্সওলজি নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলো। ও প্রথমে একজন জেনারেল মেডিসিনের ডক্টর ছিল। তারপর সেখান থেকে স্ট্রিম চেঞ্জ করে সেক্সওলজি বিভাগে চলে এলো। যাতে ওর মতো আর কোনো স্বামীকে এরকম সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়। ও যদি মেডিসিনের ডাক্তারিটা চালিয়ে যেত তাহলে আজ না জানি কতদূর পৌঁছে যেত। যৌন বিষয়ে কথা বলতে ক'জনই বা আসে। সবাই যে লোক লজ্জার ভয় পায়। কিন্তু তবুও রাজীব সেক্সওলজির ক্লিনিকই চালায়। আশা করছি এবার তোর ওকে নিয়ে সব ডাউট ক্লিয়ার হয়েছে ?"
সব কথা শুনে অনুরিমা মাথা নিচু করে বললো , "আমি জানতাম না ওনার জীবনে এতো কিছু ঘটে গ্যাছে ", মনে মনে অনুরিমার একটু খারাপ লাগলো , রাজীবকে নিয়ে স্বল্প সিমপ্যাথির উদয় হলো।
"তাই তোকে বলি , আগে থেকে কারোর ব্যাপারে কোনো জাজমেন্ট দিয়ে বসিস না। এই যেমন তুই আদিত্যকেও ভুল বুঝলি। সেও কিন্তু শুধু তোর হেল্প করতেই চেয়েছে। ওর সাথে আমার বিয়েটা টেকেনি ঠিকই ফর সাম ফ্যামিলি ইস্যুস, কিন্তু তবুও বলবো মানুষ হিসেবে ও সত্যি অতুলনীয় , এখনও তাই ওকে মনে মনে আমি খুব রেসপেক্ট করি।"
অনুরিমা আর কিচ্ছু বুঝতে চাইছিলো না। ওর মাথা হ্যাং হয়েগেছিলো এতো ভাবনার যানজটে। সে মাথায় হাত চেপে বসেছিলো। সুচরিতা ওকে সময় দিচ্ছিলো নিজের ভাবনাগুলো কে একের পর এক সাজিয়ে সেই যানজটকে মুক্ত করার। অবশেষে অনুরিমা মুখ খুললো। .......
"তাহলে তুই কি অ্যাডভাইস করছিস ?"
"আমি রাজীবকে ভালোমতো চিনি। ও খুব বিশ্বস্ত ছেলে। আমার মনে হয় ওর সবকথা তোর অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাটাই একমাত্র অপশন। ও যদি এখন তোকে জলে ঝাঁপও দিতে বলে তাহলেও তোর সেটাই করা উচিত। ওর উপর বিশ্বাস করে দেখ , ঠকবি না। "
সেদিনের মতো অনুরিমা ও সুচরিতার মধ্যেকার বাক্যালাপ শেষ হলো। অনুরিমা বাড়ি ফিরে এলো , আর ভাবতে লাগলো তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত। অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর সে নিজের ফোনটা হাতে নিলো , নিয়ে রাজীবকে কল দিলো। রাজীব ধরলো , ফোনটা।
অনুরিমা বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাজীবকে বললো সে সব শর্তে রাজি আছে। রাজীব যা যা বলবে অনুরিমা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে , তাতে যদি তার স্বামী পূনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তাহলে তাই ঠিক। রাজীব তাকে আরেকদিন দেখা করতে বললো। জানালো তাদের "রিহার্সাল" খুব শীঘ্রই শুরু করতে হবে নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে সমীরকে মূলস্রোতে ফেরাতে। অনুরিমা রাজীবকে অনুরোধ করলো এসব যতোটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করতে , কারণ সে সমীরের পতিব্রতা স্ত্রী , তাকে এসব কাজ শোভা পায়না। পাঁকে পড়ে সে এসব করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজীব ফোনে আশ্বাস দিয়ে বললো কমল তো পাঁকেই ফলে। গায়ে কাদা না মাখলে আগামী দিন পদ্মের ন্যায় সুশোভিত হবে কি করে ! রাজীবের ইঙ্গিত বুঝতে অনুরিমার অসুবিধা হলো না। সে ইতিবাচক সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
সেই সপ্তাহের শনিবার রাজীব তাদের আসতে বারণ করে দিলো। জানতো যে এসেও কোনো লাভ নেই। যেই সমাধান সে বার করেছে তার জন্য আগে অনুরিমাকে তৈরী হতে হবে। তার আগে সমীরের সাথে সিটিং করে কি হবে। অনুরিমা কে রাজীব অনুরোধ করলো তাদের পরিকল্পনার সম্পর্কে সমীরকে কিছু না জানাতে , খানিকটা কাউন্সেলিং এর স্বার্থেই। কিন্তু অপরদিকে রাজীব সমীরের সাথে আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলে রেখেছিলো ! কবে কোথায় সে অনুরিমার সাথে দেখা করবে সব ডিটেইলস সমীরকে আগাম দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলো !
আসলে রাজীব তখন ডাবল গেম খেলছিলো, তাদের স্বার্থেই। রাজীব অনুরিমাকে যথা সম্ভব সেক্সচুয়ালি ওপেন করার চেষ্টা করছিলো , অপরদিকে সমীরকে কিছুটা হলেও কাকোল্ড অভিজ্ঞতার স্বাধ দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। যাতে দুদিকটাই বজায় থাকে। এর মাধ্যমে সে নিজের সেই থিওরির উপরই কাজ করছিলো , যেখানে দুজন দুই বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে , দুজনকে একত্রে মধ্য বিন্দুতে নিয়ে আনতে হবে। এক কথায় শিয়ালদাহ আর নিউ জলপাইগুড়ির ট্রেন দুটিকে ফারাক্কায় নিয়ে আসার ব্যাপার।
আসলে ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে বোঝা যাবে যে রাজীবের বাজপাখির নজর থেকে সেদিন সমীর লুকোতে পারেনি। ভিক্টোরিয়ায় সে যতোই ছদ্মবেশে যাক , অনুরিমা না পারলেও রাজীব ঠিক সমীরকে চিনতে পেরেছিলো। তখন কিছু না বললেও পরে ফোন করে রাজীব সেই কথা সমীরকে জানায়। ধরা পড়ে সমীর বাধ্য হয় স্বীকার করতে যে সে ভিক্টোরিয়ায় নিজের স্ত্রী ও রাজীবের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে গেছিলো, সন্দেহের বশে নয় , তবে কৌতূহলবশে। রাজীব বুঝতে পারে সমীর তার কাকোল্ড ফ্যান্টাসির তাড়নায় এসব করেছিলো। রাজীব তখন সমীরকে আশ্বাস দ্যায় যে তার গোপনে তার স্ত্রীয়ের সাথে সে কোনো অভিসারে লিপ্ত হবে না। যা করবে , বা যদি কিছু করার থাকে তাহলে সেটা সমীরকে সাক্ষী রেখেই করবে।
এরপর শুরু হয় রাজীবের পরবর্তী পরিকল্পনা। সে অপেক্ষা করতে থাকে অনুরিমার ফোন কলের। এর মাঝে অনুরিমা সুচরিতার কাছে পরামর্শ নিতে যায়। তারপর অবশেষে অনুরিমা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সে রাজীবের সব কথা মানবে , সমীরকে ঠিক করার স্বার্থে। তাই সে বহুকাঙ্খিত ফোন কলটি করেই ফেলে রাজীবকে এবং বলে সে রাজি , রাজীবের সব কথা মেনে চলতে।
পর্ব ১৩
পরের দিন সকালে অনুরিমা দেখে তার ফোন সুচরিতার মেসেজ। সে বারবার অনুরিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে বিশ্বাসঘাতক নয় , সে অনুরিমার কোনো বিশ্বাস ভাঙেনি। তার প্রাক্তন স্বামী অনুরিমার মতোই তার একজন বিশস্ত বন্ধু , যে কোনো কথা পাঁচকান করবে না , উপরন্তু সে সাহায্যই করবে। তাই সে সমীরের ব্যাপারটা আদিত্য কে জানিয়ে ছিল।
এরই মধ্যে অনুরিমার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছিল। সে ভাবলো একবার তার বন্ধুর কথাটা তার শোনা উচিত। সে তাই সুচরিতাকে আবার মিট করতে বললো। কিন্তু এবার আদিত্যকে না নিয়ে আসার কথা কড়া ভাবে জানিয়ে দিলো। সুচরিতা রাজি হয়েগেলো তার এই শর্তে।
সেদিনই বিকেলে অনুরিমা আবার গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সে যে দোটানার মধ্যে রয়েছে তাতে পারলে শত্রুকেও সে একবারের জন্য বিশ্বাস করতে পারে , সুচরিতা তাও তো ওর বান্ধবী ছিল , সেটাও আবার কলেজ জীবনের।
অনুরিমার সাথে দেখা হওয়া মাত্র সুচরিতা ওকে সব খুলে বলতে লাগলো। আদিত্য কৌতূহলবশত অনুরিমার সম্পর্কে ওর কাছে জানতে চেয়েছিলো। তখন ও আদিত্যকে সব খুলে বলে অনুরিমা এবং সমীরের সমস্যার ব্যাপারে। তখন আদিত্যও চায় অনুরিমার এই জীবনযুদ্ধে তার সৈনিক হতে। তাই সুচরিতা সেদিন তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে এসেছিলো অনুরিমার সাথে দেখা করাতে।
সুচরিতার যুক্তিতে অনুরিমা কিছুতেই কনভিন্সড হচ্ছিলো না। অনেকবার করে বোঝানোর পর ফাইনালি অনুরিমা মেনে নিলো সুচরিতার সব যুক্তি। কিন্তু একটা শর্তে , অনুরিমা না চাইলে বা অনুরিমাকে না বলে সুচরিতা আর কোনো কথা আদিত্য সেনগুপ্তকে বলবে না। তবেই অনু বিশ্বাস করে আবার সব কথা সুচরিতার সাথে শেয়ার করতে পারবে , নতুবা নয়। এই শর্তে সুচরিতা এক কথায় রাজি হয়েগেলো। এরপর জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেন অনু তাকে আজ ডেকে পাঠালো , শুধুই কি তাদের মধ্যে সবকিছু শর্ট আউট করতে নাকি আরো কিছু কথা আছে যা বলার আছে।
অনুরিমা আস্তে আস্তে নিজের কথার বাক্স খুলতে লাগলো। সে বললো রাজীব তাকে কি কি করতে বলেছে। শুনে তো সুচরিতা অবাক ! মুখে হাত দিয়ে সে বসে পড়লো। ভাবতেই পারছে না , যে বান্ধবী তার কোনোদিন সমীর ব্যাতিত আর কারোর কথা কল্পনাতেও আনেনি , তাকে কিনা এখন অন্য পুরুষকে চুমু খেতে হবে তাও সেটা সমীরকে "সুস্থ" করার জন্য !
"আর ইউ সিরিয়াস ? তুই এটা পারবি করতে ?"
অনুরিমা খুব হেসিটেট ফীল করছিলো , কি বলে উঠবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা। সুচরিতা অনুরিমার দ্বন্দ্ব অনুভব করতে পারছিলো। সে অনুরিমার হাতটাকে আলতো ভাবে ধরে বললো , "দেখ অনু , আমি জানি তুই এখন অনেক বড়ো ধর্মসংকটে পড়েছিস। এই পরিস্থিতিতে কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো তোর পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু তুই যদি আমার সাজেশন চাস , তাহলে আমি বলবো , রাজীবের কথাটা তোর একবার ভেবে দেখা উচিত। ওর কথায় কিন্তু যুক্তি রয়েছে। সর্বোপরি ও একজন সেক্সওলজিস্ট, এসব ব্যাপারে তোর আমার থেকে ও বেশি বুঝবে। "
"কি গ্যারান্টি আছে সুচরিতা , যে রাজীব যা বলছে সেটা আমার আর সমীরের ভালোর জন্য। হতেই পারে এর পেছনে ওর কোনো অন্য উদ্দেশ্য আছে। "
"আমি বুঝতে পারছি , তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস। আসলে দোষ তোর নয়। তুই ওর ব্যাপারে সবটা জানিসনা তাই এইভাবে ভাবছিস। কিন্তু আমি তো ওকে চিনি। আমি জানি ও এরকম ছেলেই নয়। ও খুব ভালো ছেলে , কিন্তু বেচারার জীবনে অনেক দুঃখ রয়েছে। "
"দুঃখ ! কিসের দুঃখ ?"
"রাজীব নিজের স্ত্রী মৌ-কে খুব ভালোবাসতো। ওদের লাভ ম্যারেজ ছিল। বিয়ের প্রথম কয়েকটা বছর খুব সুখেই কাটছিলো। কিন্তু ওদের জীবনে একটা শূন্যস্থান ছিল, ওদের বাচ্চা হচ্ছিলো না। রাজীব নিজের উদ্যোগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে টেস্ট করে জানতে পারে যে সে সম্পূর্ণ সুস্থ ও সক্ষম। তার স্ত্রীয়ের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে যা চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। ব্যাপারটা খোলসা করে সে মৌ-কে জানায়নি , পাছে সে দুঃখ পায়। সে বলতো সমস্যা একটা রয়েছে দুজনের যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু মৌ ভাবতো সমস্যা বুঝি শুধু রাজীবের রয়েছে , নিজের অক্ষমতা ঢাকতে সে এই সমস্যাকে ভাগ করে নিতে চাইছে। প্রথম প্রথম মৌ এসব নিয়ে কিছু বলতো না। কিন্তু একদিন হঠাৎ রাজীব জানতে পারে তার আদরের মৌ তার সাথে প্রতারণা করছে। সে তার অফিসের এক কলিগের সাথে পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়েছে। রাজীব তারপরেও চেষ্টা করেছিলো নিজের বিয়েটাকে বাঁচানোর। কিন্তু ওর স্ত্রী নাছোড়বান্দা ছিল। রাজীবের নামে সে মিথ্যে অভিযোগ আনতে লাগলো। বললো রাজীব নাকি ইম্পোটেন্ট , সে তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম , আর এই মিথ্যে কথাটা সে রটিয়ে দেবে। লোকলজ্জার ভয়ে তাই রাজীব বাধ্য হয় মৌ কে নিঃশর্ত ডিভোর্স দিতে। কিন্তু রাজীব তো জানতো তার মধ্যে কোনো অসুবিধা ছিলোনা। তার স্ত্রী তার ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তাকে জাস্ট ব্ল্যাকমেইল করেছিল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। এরপর রাজীব সেক্সওলজি নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলো। ও প্রথমে একজন জেনারেল মেডিসিনের ডক্টর ছিল। তারপর সেখান থেকে স্ট্রিম চেঞ্জ করে সেক্সওলজি বিভাগে চলে এলো। যাতে ওর মতো আর কোনো স্বামীকে এরকম সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়। ও যদি মেডিসিনের ডাক্তারিটা চালিয়ে যেত তাহলে আজ না জানি কতদূর পৌঁছে যেত। যৌন বিষয়ে কথা বলতে ক'জনই বা আসে। সবাই যে লোক লজ্জার ভয় পায়। কিন্তু তবুও রাজীব সেক্সওলজির ক্লিনিকই চালায়। আশা করছি এবার তোর ওকে নিয়ে সব ডাউট ক্লিয়ার হয়েছে ?"
সব কথা শুনে অনুরিমা মাথা নিচু করে বললো , "আমি জানতাম না ওনার জীবনে এতো কিছু ঘটে গ্যাছে ", মনে মনে অনুরিমার একটু খারাপ লাগলো , রাজীবকে নিয়ে স্বল্প সিমপ্যাথির উদয় হলো।
"তাই তোকে বলি , আগে থেকে কারোর ব্যাপারে কোনো জাজমেন্ট দিয়ে বসিস না। এই যেমন তুই আদিত্যকেও ভুল বুঝলি। সেও কিন্তু শুধু তোর হেল্প করতেই চেয়েছে। ওর সাথে আমার বিয়েটা টেকেনি ঠিকই ফর সাম ফ্যামিলি ইস্যুস, কিন্তু তবুও বলবো মানুষ হিসেবে ও সত্যি অতুলনীয় , এখনও তাই ওকে মনে মনে আমি খুব রেসপেক্ট করি।"
অনুরিমা আর কিচ্ছু বুঝতে চাইছিলো না। ওর মাথা হ্যাং হয়েগেছিলো এতো ভাবনার যানজটে। সে মাথায় হাত চেপে বসেছিলো। সুচরিতা ওকে সময় দিচ্ছিলো নিজের ভাবনাগুলো কে একের পর এক সাজিয়ে সেই যানজটকে মুক্ত করার। অবশেষে অনুরিমা মুখ খুললো। .......
"তাহলে তুই কি অ্যাডভাইস করছিস ?"
"আমি রাজীবকে ভালোমতো চিনি। ও খুব বিশ্বস্ত ছেলে। আমার মনে হয় ওর সবকথা তোর অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাটাই একমাত্র অপশন। ও যদি এখন তোকে জলে ঝাঁপও দিতে বলে তাহলেও তোর সেটাই করা উচিত। ওর উপর বিশ্বাস করে দেখ , ঠকবি না। "
সেদিনের মতো অনুরিমা ও সুচরিতার মধ্যেকার বাক্যালাপ শেষ হলো। অনুরিমা বাড়ি ফিরে এলো , আর ভাবতে লাগলো তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত। অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর সে নিজের ফোনটা হাতে নিলো , নিয়ে রাজীবকে কল দিলো। রাজীব ধরলো , ফোনটা।
অনুরিমা বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাজীবকে বললো সে সব শর্তে রাজি আছে। রাজীব যা যা বলবে অনুরিমা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে , তাতে যদি তার স্বামী পূনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তাহলে তাই ঠিক। রাজীব তাকে আরেকদিন দেখা করতে বললো। জানালো তাদের "রিহার্সাল" খুব শীঘ্রই শুরু করতে হবে নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে সমীরকে মূলস্রোতে ফেরাতে। অনুরিমা রাজীবকে অনুরোধ করলো এসব যতোটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করতে , কারণ সে সমীরের পতিব্রতা স্ত্রী , তাকে এসব কাজ শোভা পায়না। পাঁকে পড়ে সে এসব করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজীব ফোনে আশ্বাস দিয়ে বললো কমল তো পাঁকেই ফলে। গায়ে কাদা না মাখলে আগামী দিন পদ্মের ন্যায় সুশোভিত হবে কি করে ! রাজীবের ইঙ্গিত বুঝতে অনুরিমার অসুবিধা হলো না। সে ইতিবাচক সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
সেই সপ্তাহের শনিবার রাজীব তাদের আসতে বারণ করে দিলো। জানতো যে এসেও কোনো লাভ নেই। যেই সমাধান সে বার করেছে তার জন্য আগে অনুরিমাকে তৈরী হতে হবে। তার আগে সমীরের সাথে সিটিং করে কি হবে। অনুরিমা কে রাজীব অনুরোধ করলো তাদের পরিকল্পনার সম্পর্কে সমীরকে কিছু না জানাতে , খানিকটা কাউন্সেলিং এর স্বার্থেই। কিন্তু অপরদিকে রাজীব সমীরের সাথে আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলে রেখেছিলো ! কবে কোথায় সে অনুরিমার সাথে দেখা করবে সব ডিটেইলস সমীরকে আগাম দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলো !
আসলে রাজীব তখন ডাবল গেম খেলছিলো, তাদের স্বার্থেই। রাজীব অনুরিমাকে যথা সম্ভব সেক্সচুয়ালি ওপেন করার চেষ্টা করছিলো , অপরদিকে সমীরকে কিছুটা হলেও কাকোল্ড অভিজ্ঞতার স্বাধ দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। যাতে দুদিকটাই বজায় থাকে। এর মাধ্যমে সে নিজের সেই থিওরির উপরই কাজ করছিলো , যেখানে দুজন দুই বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে , দুজনকে একত্রে মধ্য বিন্দুতে নিয়ে আনতে হবে। এক কথায় শিয়ালদাহ আর নিউ জলপাইগুড়ির ট্রেন দুটিকে ফারাক্কায় নিয়ে আসার ব্যাপার।
আসলে ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে বোঝা যাবে যে রাজীবের বাজপাখির নজর থেকে সেদিন সমীর লুকোতে পারেনি। ভিক্টোরিয়ায় সে যতোই ছদ্মবেশে যাক , অনুরিমা না পারলেও রাজীব ঠিক সমীরকে চিনতে পেরেছিলো। তখন কিছু না বললেও পরে ফোন করে রাজীব সেই কথা সমীরকে জানায়। ধরা পড়ে সমীর বাধ্য হয় স্বীকার করতে যে সে ভিক্টোরিয়ায় নিজের স্ত্রী ও রাজীবের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে গেছিলো, সন্দেহের বশে নয় , তবে কৌতূহলবশে। রাজীব বুঝতে পারে সমীর তার কাকোল্ড ফ্যান্টাসির তাড়নায় এসব করেছিলো। রাজীব তখন সমীরকে আশ্বাস দ্যায় যে তার গোপনে তার স্ত্রীয়ের সাথে সে কোনো অভিসারে লিপ্ত হবে না। যা করবে , বা যদি কিছু করার থাকে তাহলে সেটা সমীরকে সাক্ষী রেখেই করবে।
এরপর শুরু হয় রাজীবের পরবর্তী পরিকল্পনা। সে অপেক্ষা করতে থাকে অনুরিমার ফোন কলের। এর মাঝে অনুরিমা সুচরিতার কাছে পরামর্শ নিতে যায়। তারপর অবশেষে অনুরিমা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সে রাজীবের সব কথা মানবে , সমীরকে ঠিক করার স্বার্থে। তাই সে বহুকাঙ্খিত ফোন কলটি করেই ফেলে রাজীবকে এবং বলে সে রাজি , রাজীবের সব কথা মেনে চলতে।
পর্ব ১৪
পরের সপ্তাহের সোমবার রাজীব অনুরিমাকে মানি স্কোয়ারে আসতে বলে, দুপুরবেলায় , যাতে অনুরিমা বাড়ির সব কাজ সেরে নিশ্চিন্তে আসতে পারে। সমীরকেও সে টাইম এন্ড লোকেশন জানিয়ে দ্যায় , সেই মতো সমীরও অফিস থেকে হাফ ডে নিয়ে ন্যায়। দুটো নাগাদ অনুরিমা মানি স্কোয়ারে এসে পৌঁছয়। তার আগে সে তিন্নিকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে , যাতে তার শ্বশুর শাশুড়ি কে কষ্ট করতে না হয়।
রাজীব মানি স্কোয়ারে অনুরিমার জন্য অপেক্ষারত ছিল। অনুরিমাকে দেখা মাত্র সে তার পানে এগিয়ে গেলো। অনুরিমাও তখন খেয়াল করলো তাকে। দুজনের মধ্যে প্রথমে ফর্মাল হাই-হ্যালো হলো, তারপর রাজীব অনুরিমাকে অনুরোধ করলো মলের ভেতর যেতে। দুজনে একসাথে প্রবেশ করলো মানি স্কোয়ারে।
অনুরিমা জানতে চাইলো রাজীব কেন তাকে আজ মানি স্কোয়ারে দেখা করতে বললো। রাজীব উত্তর দিলো যে আজ সে প্ল্যান করেছে মানি স্কোয়ারের পিভিআর এ নূন শো দেখার। সোমবারের এই সময় পিভিআর এর হল প্রায় খালিই থাকে , তাই প্রাইভেসী নিয়ে কোনো সমস্যা হবেনা। এখানেই সেই রিহার্সাল শুরু করা যাবে।
রিহার্সালের কথা শুনে অনুরিমার বুক ধড়পড় করতে লাগলো। সে কিছুটা আঁতকে উঠে বললো , "আজকেই ! আজ থেকেই ওসব করতে হবে ?"
কিছুটা বিরক্তিভাব মুখে নিয়ে রাজীব বললো , "তাহলে তোমাকে আজকে ডাকলাম কেন অনুরিমা ? শুধু গল্প করার জন্য ? এইটুকু কমন সেন্স তোমার নেই ?"
রাজীবের বকা খেয়ে অনুরিমার মুখ ভিজে বেড়ালের মতো চুপসে গেলো। সে বেশি উচ্চবাচ্য করতে পারলো না। অনুরিমার অবস্থা দেখে এবার রাজীব একটু নরম গলায় বললো , "দেখো অনুরিমা , ভিক্টোরিয়ার মতো কোনো খোলা জায়গায় এসব করলে তোমার অস্বস্তি বাড়তো বই কমতো না। আর আমার বাড়িতেও তুমি আসতে না , আমি জানি। আসবেই বা কেন , আমি তো তোমার কয়েকদিনের পরিচিত মাত্র। তাই এখনও পর্যন্ত তোমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস না অর্জন করতে পারাটাই স্বাভাবিক। অগত্যা এমন একটি জায়গা আমাদের বেছে নিতে হতো যেখানে আমাদের প্রাইভেসী ডিস্টার্ব করার মতো লোক প্রায় থাকবেনা বললেই চলে। অনেক ভেবেচিন্তে তাই এর থেকে ভালো সময় ও জায়গা আমি আপাতত খুঁজে পাইনি। দুপুরের শো তে , তাও আবার সোমবারে , লোকে এই সময় সিনেমা দেখতে আসেনা বললেই চলে। বিশ্বাস নাহলে হলের ভেতরে গেলেই বুঝতে পারবে। তাও আমি প্রাইম রো তে পেছনের দিকে টিকিট কেটেছি , যাতে স্বল্প সম্ভাবনাও না থাকে তোমার প্রাইভেসী নষ্ট করার। তাছাড়া যে গুটি কয়েকজন থাকবে তাদের চোখ অন্ধকারে সিলভার স্ক্রিনেই থাকবে , তোমার দিকে নয়। তাই তোমার কোনো ভয় নেই।...... এসো আমার সাথে, তুমি নির্দ্বিধায় আমায় বিশ্বাস করতে পারো। "
অনুরিমা আর কোনো অহেতুক প্রশ্ন না করে রাজীবের কথা মতো তার সাথে পিভিআর এর সিনেমা হলের দিকে যেতে লাগলো। রাজীব আগে থেকে অনলাইনে সিট দেখে টিকিট কেটে রেখেছিলো। তাই তারা সোজা সিনেমা হলে প্রবেশ করলো। অনুরিমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো নার্ভাসনেসে। তারা টিকিট নাম্বার অনুযায়ী পিছনের দিকে প্রাইম সিটে গিয়ে বসলো। আশানরুপ ভাবেই হল প্রায় ফাঁকা ছিল। কিন্তু সেইসব দিকে অনুরিমার মন ছিল। তার মন তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলো 'রিহার্সাল' এর জন্য। রিহার্সাল তো নয় যেন অগ্নিপরীক্ষা ছিল তার কাছে।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে রাজীবকে বললো , "দেখুন , বেশি কিছু আমি করতে পারবো না। আমার ব্যাপারটা একটু বুঝুন। আমি যা করছি শুধু আমার স্বামীর জন্য , শুধু তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য। তাই আমার মনে হয় আমাদের ওপর ওপর যা করার করতে হবে , যতোটা না করলেই নয় , অতো গভীরভাবে লিপ্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। "
রাজীব কিছুটা ভেবে ঠান্ডা মাথায় বললো , "আমি জানি আপনি যা করছেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করছেন , সমীরবাবুর ভালোর জন্য করছেন। তবে আপনাকে একটা কথা বলি শুনুন, ......... আপনি নিশ্চই মহাভারত পড়েছেন?.... সেখানে সবচেয়ে পবিত্র নারী ছিলেন দ্রৌপদী , যার বস্ত্রহরণের প্রচেষ্টার কারণেই মহাভারতের যুদ্ধ লেগেছিলো। সেই দ্রৌপদীর কয়টি স্বামী ছিল ? .. পাঁচটি ! কি করে তার পাঁচটি স্বামী হলো ? সে স্বয়ংবরে শুধু অর্জুনকে পছন্দ করেছিল। শুধু অর্জুনকেই সে ভালোবাসতো। কিন্তু তার শাশুড়ির কথায় তাকে তার বাকি চার ভাইয়ের সাথেও বিয়ে করতে হয়েছিলো। বিয়েটা তার খানিকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও পরে সে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলো। পাঁচ ভাইয়ের সাথে সমান ভাবে সে সংসার করেছিল। প্রত্যেকের সাথে ক্রমান্বয়ে এক বছর করে সে দাম্পত্য জীবন কাটাতো। প্রত্যেকের সাথে সে সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল এবং প্রত্যেকের সন্তানের জননী হয়েছিল। আমরা সবাই সতী সাবিত্রীর উদাহরণ দিই , কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে এই দেশ যতোটা সাবিত্রীর ততোটা দ্রৌপদীরও। তাই কখনো কখনো পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে পরিবর্তন করাই হলো এক আদর্শ নারীর উপযুক্ত লক্ষণ। পাপ পুণ্য এসব আপেক্ষিক ব্যাপার। যদি সেই যুগে একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েও দ্রৌপদী কোনো পাপ করে না থাকে তাহলে এই যুগে আমার সাথে বসে আপনিও এখন কোনো পাপ করতে যাচ্ছেন না। কোনো কাজের পিছনে যদি যথার্থ কোনো কারণ থাকে তাহলে সেই কাজ যতোই নিকৃষ্ট হোক না কেন , তাকে কখনোই পাপ বলে গণ্য করা হয়না। "
বলতে বলতে হলের আলো নিভে গেলো, সিনেমা শুরু হতে যাবে বলে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব বললো , "আশা করছি , আপনি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছেন। এবার তাই দয়া করে আমি যা করতে চলেছি তার সাথে সায় দিয়ে একটু সহযোগিতা করুন আমায়।"
এই বলে রাজীব অনুরিমার দিকে হাত বাড়ালো। তাকে আলতো করে স্পর্শ করলো। অনুরিমার বুকের ভেতর যেন এক দমকা হাওয়া বয়ে গেলো। আর চার পাঁচটা দিনের মতোই সেদিন অনুরিমা একটি সুতির শাড়ি পড়েছিল , সাথে হাফ হাতা ব্লাউজ , যা আপামর মধ্যবিত্ত ঘরণীরা পড়ে থাকে। কচি কলাপাতা রঙের ছিল শাড়ি ও ব্লাউজটি। যা তার রূপকে আরো বেশি স্নিগ্ধ ও পবিত্র করে তুলছিলো। কিন্তু এই পবিত্রতা সে কতোক্ষণ আর ধরে রাখতে পারবে , তা ছিল তখন লাখ টাকার প্রশ্ন !
আলতো ছোঁয়ার পর রাজীব কিছু মুহূর্তের মধ্যেই অনুরিমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো। অনুরিমা হতচকিত হয়েগেলো ! এতো তাড়াতাড়ি রাজীব এতোটা এগিয়ে যাবে সেটা সে কল্পনা করতে পারেনি। সে শুধু মৃদুস্বরে বলে উঠলো , "আস্তে !! এখন তো সবেমাত্র অন্ধকার নেমেছে হলে। এখনও না জানি কত দর্শকের আনাগোনা হতে পারে। "
প্রত্যুত্তরে রাজীব বললো , "তারা কেউ আমাদের দেখতে আসবে না। অন্ধকারে আমাদের খুঁজেও পাবেনা। চারিদিকে চেয়ে দেখো তো অনুরিমা , কাউকে দেখতে পাচ্ছ কিনা ? আমাদের আশে পাশে , বা কেউ আমাদের দিকে চেয়ে আছে কিনা ! "
সরল মনে অনুরিমা মুখ বাড়িয়ে চেয়ে দেখলো। নাহঃ , কেউ নেই আশে পাশে। অন্ধকারে বিশেষ বোঝা না গেলেও, গুটিকয়েক যারা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে , বেশিরভাগই তারা কাপল , কারণ তারা সব দুটি মাথা এক করে নিজেরদের মধ্যেই মত্ত হয়েছিলো। কেউ দেখছেও না একে অন্যদের দিকে তাকিয়ে। কারোর অতো ইন্টারেস্ট নেই ঘাড় ঘুরিয়ে অপর কোনো কপোত-কপোতির যুগলবন্দী দেখার।
কিন্তু একটি নজর পিছনের সারিতে কোণের দিকে বসা এক ছদ্মবেশী পুরুষের ছিল , যে মূলত এসেই ছিল রাজীবের দ্বারা অনুরিমার প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির সাক্ষী হতে। সে আর কেউ নয় , অনুরিমার স্বামী সমীর ! যাকে আগে থেকেই রাজীব বাবু সব জানিয়ে রেখেছিলো। অন্ধকারে অনুরিমার চোখ তাকে খেয়াল করেনি , বা খেয়াল করলেও তার ছদ্মবেশী চেহারার পিছনে আসল লোকটাকে চিনতে পারেনি। সেই লোকটা দেখলো কিভাবে স্বল্পদিনের পরিচয়ে পরিচিত এক ডাক্তার তার স্ত্রী-কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরেছে। তার স্ত্রী একটু চেষ্টা করছে ঠিকই সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কিন্তু স্বল্প চেষ্টায় পর্বতকে তো আর টলানো যায়না !
পর্ব ১৫
প্রায় ফাঁকা সিনেমা হলে রাজীব অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। পিছনের সারিতে বসে কিছুটা দূর থেকে সেটা প্রত্যক্ষ করছিলো সমীর। অনুরিমা ছটফট করছিলো আর বলছিলো , "প্লিজ রাজীব বাবু , এতো তাড়াতাড়ি এতোদূর এগোবেন না। আমাকে একটু সময় দিন দয়া করে। "
ক্রমাগত বলার ফলে রাজীব অনুরিমাকে ছেড়ে দিলো।
- "ঠিক আছে , তুমি যদি প্রস্তুত না থাকো , তাহলে আমি জোর করবো না। কিন্তু মনে রেখো , তুমি যত দেরী করবে ততোই তার ফল দেরীতে পাবে।"
এই বলে রাজীব সিনেমার স্ক্রিনে নিজের ফোকাসটা ঘুরিয়ে নিলো। সে আর কিছু করলোও না , কিছু বললোও না। অনুরিমার কিছুটা খারাপ লাগলো। সে এভাবে রাজীবকে বলতে চাইনি , কিন্তু সে একটু বেশিই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলো। রাজীব তো যা করছে সেটা তাদের দাম্পত্য জীবনের ভালোর জন্যই করছে। এইভাবে সে কিছুক্ষণ ভাবতে লাগলো। তারপর নিজেই রাজীবের দিকে হাত বাড়ালো। রাজীবের হাত স্পর্শ করে বললো , "আপনি এবার শুরু করতে পারেন , আমি নিজের মন কে তৈরি করিয়ে নিয়েছি। "
এই কথা শোনা মাত্রই রাজীব আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরলো ! ধরে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগলো। অনুরিমা আর কোনো প্রতিবাদ করলো না , নিথর হয়ে এক পরপুরুষের লালামিশ্রিত চুমু নিজের দেহে নিতে লাগলো। রাজীব ওকে চুমু খেতে খেতে ওর সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় এসে পৌঁছলো , সেটা হলো তার ঘাড়। ঘাড়ে চুমু পড়তেই অনুরিমা কুকঁড়িয়ে উঠলো। রাজীব বুঝতে পারলো সে অনুরিমার মোক্ষম জায়গায় স্পর্শ করেছে। এবার অনুরিমার রেহাই নেই। সে অনুরিমার ঘাড়ে ঠোঁট বসিয়ে ক্রমাগত চুমু খেতে লাগলো। অনুরিমা ঘাড় বেঁকিয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিলো , কিন্তু বারংবার অসফল হচ্ছিলো। শেষে অনুরিমা বলে উঠলো , "ছাড়েন এবার , অনেক হয়েছে। আমাকে একটু বিরতি দিন। "
অনুরিমার কথায় রাজীবের হুঁশ ফিরলো। সে নিজেকে সংযত করে অনুরিমার ঘাড় থেকে মুখটা সরিয়ে নিলো। অনুরিমা লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলো, এসব যে তার জীবনে প্রথমবার হচ্ছিলো , কোনো পরপুরুষের সাথে এরকম একটা ফাঁকা সিনেমা হলে....... ।
অনুরিমার আতংকিত অবস্থা দেখে রাজীব তার শরীরের উপর থেকে নিজের হাত দুটোও সরিয়ে নিলো , ওকে কিছুক্ষণ নিজের মতো করে একা ছেড়ে দিলো। পাশ থেকে রাজীব উঠে গেলো। রাজীবকে উঠে যেতে দেখে অনুরিমা একটু অবাক হলো। মনে প্রশ্ন জাগলো , সে কেন উঠে গেলো ? কোথায় গেলো ? সে কি আবার তার উপর রাগ করেছে ? এই মানুষটা কে যে এখন অনুরিমার সবচেয়ে বেশি দরকার নিজের স্বামীকে ঠিক করার জন্য ! তাকে তো চটালে চলবে না ! ওর কি এখন রাজীব বাবুর পেছনে যাওয়া উচিত ? কোথায় গেলেন দেখার জন্য।
এসব মনে মনে ভাবতে লাগলো অনুরিমা। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো যে সে অপেক্ষা করবে কিছুক্ষণ , না এলে তখন গিয়ে দেখবে , বা ফোন করবে। ওদিকে ঠিক পিছনের সারিতে বসে আড়াল থেকে সবটা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করছিলো সমীর। তার মনে এক অদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল , যা সে বাক্যের দ্বারা বলে কাউকে বোঝাতে পারবে না। তার প্যান্টের ভিতর বাল্জ এর সৃষ্টি হয়েছিল , অর্থাৎ তার পুংজননেন্দ্রিয়টি প্যান্টের ভেতর ফুলে ফেঁপে উঠেছিল এসব দৃশ্য অনুভব করে।
রাজীব আসলে গেছিলো অনুরিমার জন্য জলের বোতল কিনে আনতে। অনুরিমাকে এরূপ বিধস্ত অবস্থায় দেখে খানিকটা আঁতকে উঠেছিল রাজীব। অনুরিমা যে এতোটা ভয় পেয়ে যাবে সেটা রাজীব কল্পনা করতে পারেনি। তাই ওকে সুস্থ স্বাভাবিক করতে রাজীব ফুড কাউন্টারে গেছিলো কিছু খাবার আর পানীয় আনতে।
কিছুক্ষণ পর রাজীব এক বাকেট পপ কর্ন ও একটা জলের বোতল নিয়ে হলে ঢুকলো। সিনেমা তখনও চলছিলো , ইন্টারভেল হয়নি। অনুরিমার পাশে এসে বসলো রাজীব। রাজীবকে দেখে অনুরিমা হাঁফ ছাড়লো। রাজীবকে হঠাৎ উঠে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতে যাবেই তার আগে রাজীব উত্তর দিলো যে সে অনুরিমার জন্য পপ কর্ন ও জলের বোতল আনতে গেছিলো। কারণ অনুরিমাকে দেখে তার খুব টেন্সড লাগছিলো, তাই সে ভাবলো কিছু খাবার আর জল সে তার বন্ধু অনুরিমার জন্য যদি নিয়ে আসে।
রাজীবের এই কাইন্ড জেসচার অনুরিমার খুব ভালো লাগলো। সে যেন ভুলেই গেলো কিছুক্ষণ আগে এই রাজীবই তাকে কতোটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছিলো। রাজীব তাকে পপ কর্ন এর বাকেট-টা দিলো। অনুরিমা সাদরে সেটি গ্রহণ করলো। কয়েকটা কর্ন সে মুখে দিয়ে চেবাতে লাগলো। সৌজন্যতাবশতঃ রাজিবকেও অফার করলো , রাজীব পোলাইটলি রিফিউস করলো। কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো। তারপর ইন্টার্ভালের সময় এসে পড়লো। বিরতির সময়ে অনুরিমা ও রাজীব একটু বাইরে বেড়োলো , রিফ্রেশ হতে।
সমীর নিজের সিটেই বসেছিলো। ওখান থেকে নড়লো না চড়লো না। পাছে যদি রাজীবের ন্যায়ে অনুরিমাও তাকে ধরে ফেলে। সে তাই ঘাপটি মেরে নিজের সিটেই বসে রইলো। সিনেমা চলাকালীন অবশ্য সে একটি কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলো। নিজের উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে না পেরে সমীর সিটে বসেই অনুরিমা ও রাজীবের মধ্যে ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলো কে পূনরায় চিন্তা করে হস্তমৈথুন করেছিল। লিঙ্গ থেকে রস খসে গড়িয়ে পড়েছিল সিটের সামনে মেঝেতে। ইন্টার্ভালে আলো ফিরলে সে চেক করতে থাকে তার বাঁড়া নিঃসৃত রস কোথাও কোনো সন্দেহভাজন দাগ ফেলেছে কিনা কোনো ফাঁকা সিটে বা মেঝেতে। সেটা পরবর্তীতে হলের স্টাফরা জানতে পারলে কোনো বড়ো ইস্যু নাহলেও সেটা সমীরের বিবেক ও পৌরুষত্বের কাছে খুবই এম্ব্যারাসিং ব্যাপার , যে সে তার স্ত্রীকে তার ডাক্তারের সাথে চাক্ষুস দেখে সিনেমা হলেই মাল ফেলে হলের পরিষ্কার মেঝে বা সিটে দাগ করে একাকার করে দিয়েছে। সে যে নিজের পাপের কোনো চিহ্ন রাখতে চায়না। তাতে তার বিবেকে আঘাত লাগবে। সে আজকে এখানে এসেছে একটা অনুভূতি নিতে , নিজের ম্যান সম্মান কে নিজের যৌনরসের মাধ্যমে হলে ছড়িয়ে দিতে নয়।
হল থেকে বাইরে বেরিয়ে অনুরিমা ওয়াশরুমে গেলো। রাজীব বাইরে অপেক্ষা করছিলো। ওয়াশরুম থেকে ফেরার পর অনুরিমা ও রাজীব একটু এদিক-ওদিক ঘুরলো। বিভিন্ন সিনেমার অ্যাড দেখে সেইসব সিনেমা নিয়ে চর্চা আলোচনা করলো। দুজনের মধ্যে সবকিছু ফের স্বাভাবিক হয়েগেছিলো। রাজীব সেটা করার জন্য উদ্যত হয়েছিল। তাই হল থেকে বেরিয়ে হলে ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলি নিয়ে সে একটি বাক্যও খরচা করেনি। সেই প্রসঙ্গই আনতে দেয়নি।
সেকেন্ড হাফ শুরু হওয়ার কিছু মুহূর্ত আগে তারা ফের হলে প্রবেশ করলো। সমীর সেই থেকে নিজের স্থানেই বসেছিলো। চাতক পাখির মতো তাদের ফেরার অপেক্ষা করছিলো। তাদের আসতে দেখে সমীর মাথাটা নিচু করে নিলো। কারণ তখনও সিনেমার সেকেন্ড হাফ শুরু হয়নি , ফলে থিয়েটারের আলো নেভেনি। ছদ্মবেশে থাকলেও সে কোনোপ্রকার রিস্ক নিতে চাইছিলনা।
রাজীব ও অনুরিমা পূনরায় নিজের সিটে গিয়ে বিরাজমান হলো। ইন্টার্ভালের সময়ে রাজীব ও অনুরিমার মধ্যে হওয়া স্বাভাবিক কথোপকথন অনুরিমার জড়তাকে অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলো। আর এটাই রাজীব চেয়েছিলো। কিন্তু এখন সে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাইছিলো না। শুধু সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষারত ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধে সিনেমা শুরু হলো। যথারীতি আলো আবার নিভে অন্ধকার নেমে এলো হলে। সমীরও একটু রিল্যাক্স হলো থিয়েটার অন্ধকার হয়ে যাওয়ায়। এবার সে আরো মনোযোগ দিয়ে সামনের সারিতে কি ঘটছে তার উপর নজর রাখতে পারবে। কিছুক্ষণ সব স্বাভাবিক থাকলো। রাজীব কোনোরকম "উদ্যোগ" নিলোনা অনুরিমার দিকে হাত বাড়ানোর। অনুরিমা সেটা আশা করেনি। কারণ ও জানে রাজীব তাকে কেন হলে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিলো না যে দ্বিতীয়ার্ধে এতো সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও রাজীব কেন কিছু করছে না ? যদিও না করলেই ভালো বাট রিহার্সাল ইস ইনএভিটেবেল। কখনো না কখনো তো তাকে এটা করতেই হবে। কতোক্ষণ বা কতোদিন সে পরিস্থিতি থেকে মুখ ফিরিয়ে পালাবে ? রাজীবই তো তাকে বলেছে যত তাড়াতাড়ি রিহার্সাল হবে ততো তাড়াতাড়ি তারা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারবে।
তাই না পারতে লজ্জার মাথা খেয়ে অনুরিমাই তাকে জিজ্ঞেস করে উঠলো তাদের রিহার্সালের কথা। আর রাজীব ঠিক এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। তাই সে আগে থেকে আগ বাড়িয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অনুরিমা বললো , "রাজীব বাবু , আপনি কি করবেন বলেছিলেন ..... মানে আমাদের রিহার্সাল ..... সেটা করবেন না ?"
- "আমি তো তোমায় সময় দিচ্ছিলাম , তুমি প্রস্তুত হলেই আমি প্রস্তুত।"
নিচু স্বরে অনুরিমা বললো , "হুমঃ ..... আমি প্রস্তুত। "
- "ঠিক তো ? আর হেসিটেট করবে না তো ?"
- "নাহঃ। .... আপনিই বলেছেন না, দ্রৌপদীকেও পরিস্থিতির কারণে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অনেক কঠিন কার্য করতে হয়েছিল , তাহলে এই যুগের অনুরিমা কেন সেটা পারবে না ? যখন এসবের পেছনে উদ্দেশ্যেটাই হলো আমার স্বামীর মঙ্গল কামনা , তাকে সঠিক পথে নিয়ে আনা। "
"চিন্তা করোনা , আমি আছি তো। আমার উপর আস্থা রাখো , সব ঠিক হয়ে যাবে ", এই বলে রাজীব অনুরিমার হাত স্নেহের সাথে স্পর্শ করলো। অনুরিমা এবার কিছু বললো না। সে নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েছিলো এই অগ্নিপরীক্ষা দেওয়ার জন্য।
পর্ব ১৬
রাজীব ধীরে ধীরে অনুরিমার হাতে মালিশ করতে লাগলো। ঠান্ডা শীতল হলে তার কোমল হাতকে ঘষে গরম করছিলো যাতে তার মনে অল্প হলেও এক চিলতে উষ্ণতার আগুন জ্বলে। তারপর রাজীব নিজের বাম হস্ত দ্বারা অনুরিমাকে জড়িয়ে বুকে টেনে নিলো। না পারতে অনু রাজীবের ডান বাহুটি জাপটে ধরলো , যাতে সে সিটের সামনে মুখ থুবড়ে না পড়ে। তখন তার মুখটা ছিল রাজীবের বক্ষ জুড়ে। রাজীব সেখান থেকে মুখটা টেনে উপর দিকে আনলো, চুম্বন দেবে বলে। সে প্রথমে অনুরিমার ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিলো। তারপর মুখশ্রীর চারপাশে চুম্বনের বর্ষণ করতে লাগলো।
চুম্বনের প্রবণতা বাড়তে থাকলো, ফলে অবচেতন মননেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। পেছন থেকে সেটা চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা নিচ্ছিলো সমীর। রাজীব ও অনুরিমা উষ্ণ চুম্বনের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো। রাজীব তো পারলে অনুরিমাকে নিজের কোলেই তুলে নিচ্ছিলো। অনুরিমা নিজের শরীরের ভার-টা কে প্রায় রাজীবের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলো। রাজীব দু'দিক দিয়ে নিজের হস্তযুগলের দ্বারা অনুরিমাকে শেকলের ন্যায় জাপ্টে রেখেছিলো।
এলোপাথাড়ি চুমুতে অনুরিমার বদন সে যেন ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। অনুরিমা কি করবে বুঝে উঠতে পাচ্ছিলো না। রাজীবের দামালপনায় যে তার উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বেড়েই চলেছিলো। সে এসেছিলো এখানে শুধু রিহার্সালের জন্য , কিন্তু রাজীবের দুস্টুমি তাকে এ কোন অতল সমুদ্রে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ! ডুবে যাওয়ার আগে এক্ষুনি নিজেকে সামলে নিতে হবে নাহলে যে বড্ড দেরী হয়ে যাবে ! এই ভেবে অনুরিমা রাজীবকে থামতে বললো। বাধ্য ছেলের মতো রাজীবও নিজের কারুকার্য সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে অনুরিমার পানে চেয়ে রইলো , এটা জানার জন্য যে আবার কেন হঠাৎ ছন্দপতন ?
অনুরিমা বললো , "আমাদের মনে হয় এর থেকে বেশি এগোনো উচিত নয়। রিহার্সাল করতে করতে আমরা যেন অজান্তেই বারংবার ক্যারিড অ্যাওয়ে হয়ে যাচ্ছি। এরকম চলতে থাকলে না চাইতেও বড়োসড়ো একটা অনাচার হয়ে যাবে আমাদের দ্বারা , যেটা কোনোমতেই কাঙ্খিত নয়। তাই আমার মনে হয় আজকের মতো এখানেই আমাদের রিহার্সালের ইতি টানা যাক। "
অনুরিমার কথা শুনে রাজীবের প্রচন্ড রাগ উঠছিলো। কারণ তার যৌনউত্তেজনা তখন সীমানা পেরিয়ে গেছিলো। তার মন চাইছিলো অনুরিমাকে হলের মেঝেতে শুইয়ে মর্দন করতে। সে কোনোমতে নিজের চাহিদার উপর লাগাম টেনে বললো , "ঠিক আছে , তুমি যদি এখন আর কমফোর্টেবল ফীল না করো , তাহলে আজ এই পর্যন্তই থাক ! তোমার কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে আমি কিছু করতে চাইনা। তবে মনে রেখো , আগামী দিন তোমাকে আরো প্রস্তুত হয়ে আসতে হবে। আজকে যা হলো তা আশানরুপ হয়নি। তোমাকে মনকে আরো বেশি শক্ত ও দৃঢ় করতে হবে। মনে রাখবে , তুমি যা করছো তোমার সমীরের ভালোর জন্যই করছো। "
অনুরিমা চুপ করে মন দিয়ে রাজীবের কথা গুলো শুনলো। রাজীবের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো। রাজীব বললো আর এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই , এমনিতেও তারা সিনেমা দেখতে আজ আসেনি , বেশিরভাগ সময়ই তারা মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটা দেখেনি। তাই এখন তাদের ওঠবার পালা। রাজীবের কথামতো অনুরিমাও নিজের সিট থেকে উঠলো। সমীর দেখলো দুজন কে সিনেমা শেষ হওয়ার প্রাক্কালেই হল ত্যাগ করে চলে যেতে। সে তাও কিছুক্ষণ বসে রইলো , পাছে তারা আবার ফিরে আসে। সমীর তাদের কারুকার্য দেখতে পেলেও , তাদের কথোপকথন তো সে শুনতে পায়নি। তাই তাদের এতো তাড়াতাড়ি হঠাৎ উঠে যাওয়ার কারণ সে ঠাহর করে উঠতে পাচ্ছিলো না। তবে কি রাজীব ও অনুরিমা অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করলো ? অন্য কোথাও গিয়ে তারা এসব করবে ? রাজীব অনুরিমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেনা তো ? এইসব আশঙ্কা সমীরের মনের ভেতর ঘুরতে লাগলো।
কিন্তু রাজীব তো তাকে বলেছিলো আগাম সবকিছু সে আগে থেকে সমীরকে জানিয়ে রাখবে ! সেই ভেবে সমীর পকেট থেকে ফোনটা বের করে চেক করতে লাগলো রাজীবের তরফ থেকে তার উদ্দেশ্যে নতুন কোনো আপডেট আছে কিনা। ফোনটা সাইলেন্ট ছিল যাতে কোনোভাবে হঠাৎ বেজে না ওঠে। রিংটোন টা তো অনুরিমার চেনা ছিল , তার কানে এসে পৌঁছলে সাড়ে সর্বনাশ হতো। সমীর ফোন খুলে কিছু না পেয়ে খানিকটা ডিসাপয়েন্টেড হলো। ভাবলো যে সেও এখন উঠবে। হল থেকে বেরিয়ে দেখবে কোথায় গেলো ওরা দুজন। সেইমতো সমীরও সিনেমা হল ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বেরিয়ে তাদের খুঁজে পেলো না সে। কিছুটা নিরাশ , কিছুটা হতভম্ব হয়ে রইলো। কি করবে সেটা ভেবে উঠে পাচ্ছিলো না। রাজীবকে কল করবে ? নাহঃ ! অনুরিমা তো ওর সাথে আছে । তাহলে কি একটা মেসেজ দেবে ? ভাবতে ভাবতে সমীরের কাঁধে একটা হাত এসে পড়লো। সমীর চমকে উঠলো। পিছন ফিরে দেখে , রাজীব দাঁড়িয়ে। যথারীতি আর কেউ চিনুক না চিনুক রাজীব ঠিক ওকে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছিলো।
"কি , কেমন দেখলেন আমাদের ?", রাজীব জিজ্ঞেস করলো।
সমীর ভয়ে ভয়ে চারপাশটা দেখলো , অনুরিমা নেই তো ! রাজীব বুঝতে পারলো , "অনুরিমাকে খুঁজছেন ? চিন্তা নেই , সে চলে গ্যাছে। আমি বললাম এগিয়ে দিই , উনি রিফিইউস করলেন। আমি আপনাকে অনেক আগেই খেয়াল করেছি , সেই একই ছদ্মবেশ নিয়েই তো এসেছেন। হলে পিছনের রো তে বসেছিলেন, সব নোটিশ করেছি। "
রাজীবের কথা শুনে সমীর খানিকটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়লো। তা দেখে রাজীব আর তার অস্বস্তি না বাড়িয়ে বললো , "অতো লজ্জা পাবেন না। যে পথে আপনি নেমেছেন সেই পথে লজ্জা ঘেন্না ভয় তিন থাকতে নয়। আপনার মুখ-চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আপনি ভয়ে ভয়ে ছিলেন পাছে অনুরিমা আপনাকে চিনে ফেলে। এখন আমি আপনাকে চিনতে পারায় আপনি লজ্জিত বোধ করছেন। আর ঘেন্না ? সেটা আপনার অভিরুচির উপর নির্ভর করছে , আপনি কিরকম ফীল করলেন আমাকে আর অনুরিমাকে একসাথে দেখে। "
- "আসলে আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না আমার ফিলিংসটা কে। একদিকে যেন ভেতরটা পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছিলো ওই দৃশ্য দেখে আবার অন্যদিকে অদ্ভুত এক অবিরাম উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছিলো। অনুরিমা কোনোদিনও আমাকে ছাড়া অন্য কোনো পুরুষকে স্পর্শ করেনি , সেই প্রাণের প্রিয়া অনুরিমাকে আপনার সাথে দেখে কিছুটা হলেও ঘেন্না হচ্ছিলো বইকি। আর হ্যাঁ ভয় আমি পেয়েছিলাম , অনুরিমার কাছে ধরা পড়ার। এই অবস্থায় এইসব নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে লজ্জা বোধও করছি। তাই স্বীকার করতে বাধা নেই যে আমার এখনও লজ্জা ঘৃণা ভয় কোনোটাই যাইনি , সবকটি চেতনা বর্তমান রয়েছে।"
- "বেশ , তাহলে আপনিই বলুন , এখন আপনি কি চান ? আমি কি আপনার স্ত্রীয়ের সাথে কন্টিনিউ করবো নাকি এখানেই ইতি টানবো ? আপনার সাধ কি মিটে গ্যাছে ?"
- "বুঝতে পারছি না ডাক্তার বাবু , এক অদ্ভুত অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে গেছি। মন চাইছেনা এসব মানতে কিন্তু হরমোন বারবার উত্তেজিত হয়ে পড়ছে , আরো কিছু দেখবার বা অনুভব করবার আশায়। "
- "তার মানে মুখে যাই বলুন না কেন, এখনও আপনার আঁশ মেটেনি। কি তাই তো ?"
সমীর মাথা নিচু করে রইলো , তারপর কিছুক্ষণ থেমে সে জিজ্ঞেস করলো , "আচ্ছা আমি যদি আপনাকে অ্যালাও করি তাহলে কতদূর আপনি অনুরিমার সাথে যাবেন ? "
"যতদূর আপনি অ্যালাও করবেন ততদূর ", সপাটে জবাব দিলো রাজীব।
"তার মানে আমি থামতে না বললে আপনি সবকিছু করে ফেলবেন আমার স্ত্রীয়ের সঙ্গে ", বলে শিউরে উঠলো সমীর।
- "আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি। এবার এটাকে ইন্টারপ্রেট করার পালা আপনার।"
রাজীবের সাথে অনুরিমা , নগ্ন অবস্থায় ! এক লহমায় কল্পনা করতেই সমীরের মাথা চট করে ঘুরে গেলো। তা দেখে রাজীব তাকে ধরে সামলে নিয়ে বললো , "আপনি ঠিক আছেন, মিস্টার মল্লিক ?"
"আমিঃ ...... আমি একটু জল খাবো। ....." , কাঠ গলায় সমীর বলে উঠলো।
- "দাঁড়ান আমি ব্যবস্থা করছি , আপনি একটু বসুন এখানে। "
সমীরকে বসিয়ে রাজীব গেলো জল কিনে আনতে। জল এনে দিয়ে সমীরকে সে পান করালো। কাঁধে হাত রেখে বললো , "আমি বলি কি আপনি আপনার গেট আপ-টা চেঞ্জ করে এবার বাড়ি ফিরে যান। অনেকক্ষণ এই ছদ্মবেশে রয়েছেন। পাগড়ি পড়ার অভ্যাস নেই আপনার তাই মাথায় এতো চাপ পড়ছে। বাড়ি গিয়ে শান্ত মনে ভাবুন , আপনিই কি চান ! নিজের ভাগ্যের নির্ধারক এখন আপনি নিজেই। আপনি যদি আপনার অবচেতনে মন বানিয়ে থাকেন অনুরিমাকে আমার বিছানায় পাঠানোর তাহলে সেটা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করুন। ভাবুন আপনি সেই দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন কিনা ? তবেই আমি এগোবো আপনার কথামতো , নাহলে নয়। "
- "আচ্ছা , অনুরিমা রাজি হবে আপনার সাথে যেতে ? ওর স্বামী বলে বলছিনা , কিন্তু সত্যি ও খুব আলাদা মেয়ে। ওর পক্ষে দ্বিচারিতা করা সত্যিই নেক্সট টু ইম্পসিবল। "
- "দ্রৌপদীও তো শুধু অর্জুনকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলো , তাঁর ব্যাতিত অন্য কাউকে মন দিতে সে দৃঢ়ভাবে অরাজি ছিল। কিন্তু সেই দ্রৌপদীকেও পরিস্থিতির জাঁতাকলে পড়ে তাঁর ভাসুর ও দেওরদের শুধু বিয়েই করতে হয়নি , শরীরও দিতে হয়েছিলো। পরিস্থিতি মানুষ তথা দেবতাকে দিয়েও অনেক কিছু করায়। নিঃসন্দেহে আপনার স্ত্রী একজন পতিব্রতা নারী , কিন্তু কালচক্রে তার সতীত্বও নষ্ট হতে পারে যদি আপনি চান। "
- "কিন্তু এর ফলে যদি ও আমার থেকে দূরে সরে যায় ?"
- "কার কাছে যাবে ? আপনি তো তাকে আমার কাছেই পাঠাচ্ছেন ? আর এরকম ক্রিয়া আমি তো প্রথমবার করছিনা। আমি যদি আপনার মতো পেশেন্টের সাথে প্রতারণা করে তাদের স্ত্রীদের ইলোপ করে নিতাম তাহলে তো আমার পশাড় কবেই উঠে যেত মশাই।"
- "তার মানে এর আগেও আপনি ......?"
- "অতো ডিটেইলস-এ আপনাকে বলবো না , কারণ আমি আমার সব পেশেন্টের গোপনীয়তাটা-কে মেইনটেইন করি। নিজের ঢাক পেটানোর জন্য একজন পেশেন্টের খবর অন্য পেশেন্টকে দিইনা। এটা আমার এথিক্স এর বাইরে। তবে এইটুকু বলতে পারি যে আমি পূর্বেও কিছু বিবাহিতা নারীর সাথে যৌনকার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছি। বেশিরভাগ সময়ে তা হয়েছে তাদের স্বামীর অনুমতির দ্বারা। বেশ কিছু নিঃসন্তান দম্পত্তির কোল আমি ভরিয়েছি স্ত্রীদের সহিত বিছানা ভাগ করে। তবে আপনার স্ত্রীয়ের মতো এতো দৃঢ় মানসিকতার মেয়ে আমি আগে একটাও দেখিনি। আগে যে সকল কেস আমার কাছে এসছে , তা সবই প্রায় সেলিব্রিটি কেস , যারা লোকলজ্জার ভয়ে আইভিএফ পদ্ধতির শরণাপন্ন হতে চায়না। অদ্ভুত সোশ্যাল ডগমা কাজ করে তাদের মধ্যে। তাই তারা তাদের বাড়িতে আমায় নিমন্ত্রণ জানায় , বলা ভালো বিছানায় নিমন্ত্রণ জানায় , বাড়ির বধূকে অন্তঃসত্ত্বা করার জন্য। কেউ কেউ নিজের কাকোল্ড ফ্যান্টাসি পূরণ করার জন্যও আমার সাথে কনসাল্ট করেছে। কিন্তু সেইসব ক্ষেত্রে দেখা গ্যাছে স্বামী স্ত্রী উভয়ই রাজি এই পরিকল্পনায় শামিল হতে। আপনাদের ব্যাপারটাই খুব ইউনিক এবং জটিল। যেখানে আপনি চান এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাকে অনুভব করতে , আর আপনার স্ত্রী চান তা থেকে আপনাকে বিরত রাখতে। "
- "তাহলে আপনি আমার স্ত্রীয়ের সেই ইচ্ছেকে প্রাধান্য না দিয়ে আমার ইচ্ছেটাকেই কেন প্রাধান্য দিচ্ছেন ?"
- "কারণ আমি জানি আপনি নাছোড়বান্দা ব্যক্তি। মুখে না বললেও আপনার হাবেভাবে তা বোঝা যায়। ডেসপারেশনে এসে আপনি কোনো ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে ফেলেন , তার জন্যই আপনারই ইচ্ছেটাকে আমায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হচ্ছে। আমি চাইলে আজকে আরো অনেক কিছু করতে পারতাম , যদিও আপনার স্ত্রী রাজি ছিলোনা , তাও কোনোমতে তাকে রাজি করিয়ে ফেলতাম। কিন্তু কেন করলাম না জানেন ? আপনার জন্য ! আপনার কথা ভেবে। আগে দেখতে চাইলাম আপনার কিরকম রিঅ্যাকশন হয় এই স্বল্প অনুভবে। আমি চাইনা আপনার আর অনুরিমার সম্পর্ক খারাপ হোক। আমি দেখতে চাই আপনি কতোটা তৈরী নিজের ফ্যান্টাসির বাস্তবে সম্মুখীন হওয়ার জন্য। সেই বুঝে ব্যবস্থা নেবো আমি।"
"তাহলে এখন আমার কি করণীয় ডাক্তার বাবু ?", হতভম্বের মতো সমীর জিজ্ঞেস করলো।
- "ওই যে বললাম , আপনি এখন নিজের গেট আপটা চেঞ্জ করে বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি ফিরে আগে ভাবুন আপনি কতদূর অবধি নিজের ফ্যান্টাসিটা-কে বাস্তব রূপ দিতে চান। আমি ধাপে ধাপেই এগোবো। যখন মনে হবে জল মাথার উপর দিয়ে বইছে , তখন বলবেন আমি থেমে যাবো। কিন্তু সাবধান ! অনুরিমার মন উচাটন হলে তখন আমার হাত থেকে খেলাটা বেরিয়ে যাবে। তখন উল্টে আমাকে ওর ডাকে সাড়া দিতে হবে , দিতেই হবে। আমি কোনো মেয়েকে উত্তেজিত করে উপোসী রাখতে পারবো না , তাতে কামদেব আমায় পাপ দেবে। "
- "আচ্ছা , এরপর আপনি কি করতে চলেছেন ওর সাথে ?"
- "আগে নিজের মনকে স্থির করুন। একটা সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছন। করলে আজকেও অনেক কিছু করতে পারতাম , তখন দেখতেন আমার পরবর্তী কার্যক্রম গুলো। কিন্তু আজকে আপনার স্ত্রী প্রাথমিকভাবে আমায় বাধা দিলেন , আমিও প্রথমদিন বলে তেমন বিশেষ জোর করলাম না। আপনার স্ত্রী এখনও সংকুচিত হয়ে রয়েছে। আপনার স্ত্রী আজ আপনার কথা ভেবেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের ডানা মেলতে এসছিলেন। তার মানে এখনও খেলাটা আমার নিয়ন্ত্রনেই আছে। আপনি বললে দান দেবো নাহলে ছেড়ে দেবো। এবার আপনি ম্যাচ রেফারি , বললে ম্যাচ আবার আরম্ভ হবে নাহলে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে।"
রাজীব ও সমীরের কথা শেষ হলো। রাজীব নিজ বাড়ি ফিরে গেলো। যাওয়ার আগে পুনরায় তার কথা গুলো সমীরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলো। সমীর গাড়িতে বসে নিজের গেট আপটা খুলে আসল রূপে ফিরে এলো। সেও বাড়ির দিকে রওনা দিলো। মাঝপথে সে একটি পার্কে এসে বসলো। এখনও তার টাইম হয়নি বাড়ি ফেরার। সময়ের আগে বাড়ি ফিরলে যদি অনুরিমা কোনো প্রশ্ন করে ? নার্ভাস হয়ে উল্টোপাল্টা উত্তর যদি দিয়ে ফেলে ? নাহঃ নাহঃ , এসব ফালতু রিস্ক একদম নেওয়া যাবেনা। তার চেয়ে বরং বাড়ির ছেলে যথা সময়ে বাড়ি ফিরুক। আর তার মধ্যে সে আরো একবার রাজীবের বলা কথা গুলোকে নিজের বিচার বিবেচনা দিয়ে ঝালিয়ে নিক।
সেই মতো পার্কে বসে সমীর রাজীবের কথা গুলো নিয়ে মনে মনে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে লাগলো। একটা সিদ্ধান্তে যে তাকে পৌঁছতেই হবে। হয় ইস্স পার নাহলে উস্স পার। মনে মনে কৌতূহল জাগছিলো রাজীবের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। তাই সে অনেক ভেবে চিন্তে ডিসাইড করলো যে সে রাজীবকে আরো একটা চান্স দেবে নিজের বিরল প্রতিভাকে অনুরিমার উপর প্রয়োগ করে তার সামনে তা প্রদর্শিত করানোর জন্য।
পর্ব ১৭
বাড়িতে ফিরে সমীর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে রাজীবকে টেক্সট মেসেজ করে জানায় যে সে রাজি প্রক্রিয়াটা-কে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাজীব তাকে পরবর্তী সময় ও লোকেশন অনুরিমার সাথে কথা বলে ঠিক করে নিয়ে সময়মতো জানিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে ফোন রাখে। বাড়িতে অনুরিমা মোটামুটি স্বাভাবিকই ছিল। রোজকার কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু অনুরিমাকে দেখে সমীরের এক অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছিলো , বমি পাচ্ছিলো। ওর মাথায় তখন সিনেমা হলের দৃশ্য গুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সে ভাবলো এইটুকুতেই তার এই অবস্থা , আরো কিছু ঘটতে দেখলে কি পরিণতি হবে তখন ? সে কি আর তার স্ত্রীকে নিজের কাছে টেনে নিতে পারবে ? সে কোনো ভুল পথে হাঁটছে না তো ?
অনুরিমাও লক্ষ্য করলো যে সমীর প্রচন্ড অন্যমনস্ক হয়ে আছে। সে তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না ! কিন্তু কেনো ? সে কি জানতে পেরে গ্যাছে আজকের ঘটনাগুলো ? নাহঃ !! মনে মনেই কেন জানি অনুরিমা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো এই সম্ভাবনার কথা ভেবে। সমীর জানবে কি করে ? রাজীব তো কোনোমতে তাকে জানাবে না। সারাদিন সমীর অফিসে ছিল , যথারীতি নিজের সময় মতোই বাড়ি ফিরলো। তাহলে ? সে কি একটু বেশিই ভাবছে আজকের ব্যাপারটা নিয়ে ? সমীর হয়তো আবার কোনো অফিসের ব্যাপার নিয়েই চিন্তা করছে। যা হেক্টিক কাজ ওর , সবসময়েই কিছু না কিছু লেগেই থাকে ওর কর্মজীবনে। এইসব ভেবে অনু একটু হালকা অনুভব করলো। কিন্তু মনের এক ঈশান কোণে যে কষ্টের বাসা বেঁধেছে। যতই সে মনকে বোঝাক , মন যেন বারবার বলছে আজ সে যা করেছে তা কোনোভাবেই যুক্তিসম্মত ছিলো না। সে তার স্বামীর সাথে প্রতারণা করেছে। যার কোনো ক্ষমা হয়না।
অনুরিমা একবারের জন্য ভাবলো যে সে সমীরকে সব সত্যি কথা বলে দেবে। সমীর নিশ্চই বুঝবে কেন সে রাজীবের সাথে দেখা করতে গেছিলো এবং সেইসব মুহূর্ত কাটিয়েছিলো। পরক্ষণে ভাবলো যে এই বিষয়টা নিয়ে একবার সুচরিতার সাথে কথা বলে নেওয়া যাক। সুচরিতা তো মোটামুটি জানেই সব। ও হয়তো সঠিক উপদেশ দিতে পারবে। তারপর নাহয় সে সমীরকে বলার চেষ্টা করবে। অথচ এই পতিপাগল মেয়েটি জানতোই না যে সবকিছু সমীরের ইচ্ছানুসারেই হচ্ছিলো। জানতে পারলে যে অনুরিমা কি করতো তা কারোর পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
রাতের বেলা যখন দুজনেই একই বিছানায় এসে উপস্থিত হলো তখন কেউই কারোর দিকে চেয়ে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলো না। দুজনের মনের মধ্যেই প্রবল ঝড় চলছিলো। অনুরিমার গিল্ট ফিলিং হচ্ছিলো তো সমীরের মনে চাপা অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিলো। তবুও সমীর কিছুতেই নিজের ফ্যান্টাসির নেশা-কে কাটিয়ে উঠতে পারছিলো না। সে ভাবছিলো যে হয়তো বিষে বিষেই বিষক্ষয় সম্ভব , লোহাই লোহা-কে কাটবে। অর্থাৎ অনুরিমাকে রাজীবের সাথে ক্লোস হতে দেখে তার মনে যতই ঝড় উঠুক না কেন, তার অটুট বিশ্বাস এই যে কাকোল্ড ফ্যান্টাসির থেকে মুক্তির পথ একটাই। ভয়-কে জয় করার জন্য ভয়েরই সম্মুখীন হওয়া। অন্তত একবার তার ভয়াবহ কল্পনা সত্যি হোক। একবার কেউ তার প্রিয়তমা অনুরিমাকে নিজের করে নিক। তখন যে জ্বালায় সে জ্বলবে সেই জ্বলনে তার মন আবার পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে। ফের সে পুরনো ও স্বাভাবিক সমীর হয়ে উঠবে। কিন্তু যদি এর উল্টো হয়, তখন ? সেই জ্বলনে দ্বগ্ধ হয়ে যদি সমীর বা অনুরিমার মধ্যে কোনো একজনের মন অপরের থেকে উঠে যায় , তাহলে কি হবে ? কি হবে ছোট্ট তিন্নির ? ভেবে দেখেছে কি সমীর তা ?
বিছানায় শুয়ে আকাশ পানে চেয়ে সমীর এসব ভাবছিলো। অনুরিমা দেখলো তার স্বামী গভীর কোনো চিন্তায় মগ্ন রয়েছে। তারও আজ তার স্বামীর সাথে কথা বলতে মন চাইছিলো না। আগে সুচরিতার সাথে কথা বলবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে সে কতোটা তার স্বামীকে বলবে বা বলা উচিত তার। তাই অনুরিমা কিছু না বলে চুপচাপ পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর সমীরেরও চোখটা লেগে এলো।
পরের দিন অনুরিমা ছুটলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। দেখা মাত্র সুচরিতা বেশি এদিক ওদিকের কথা না বাড়িয়ে প্রথমেই জানতে চাইলো কি কি হয়েছে তার আর রাজীবের মধ্যে। অনুরিমা ঢোঁক গিলে জল পান করে ধীরে ধীরে নিচু স্বরে সব বর্ণনা করতে লাগলো। সব কথা শুনে সুচরিতা অনুরিমাকে বললো সে কোনো খারাপ কাজ করেনি, মিছি মিছি গিল্ট ফিলিং-এ ভুগছে সে। অনুরিমা তার স্বামীকে এসব কথা বলবে কিনা তার পরামর্শ চাইতেই সুচরিতা সঙ্গে সঙ্গে "না" বলে উঠলো।
- "অনু , তুই কি পাগল হয়েছিস ? এসব কথা তুই সমীরকে এখন জানাতে যাবি !"
- "আমি শুধু নিজের কাছে পরিষ্কার থাকতে চাই। তাছাড়া সমীরকে জানালে কি হবে ? সে তো নিজেই চেয়েছিলো এসব ! এখন তাই একজন অনেস্ট ওয়াইফ হিসেবে আমার উচিত যে আমি যাই কিছু করে থাকি না কেনো তা সবটুকু ওর কাছে কনফেস করা। আমি শিওর যখন আমি ওকে পুরো ঘটনা এবং তার কারণ গুলো ব্যাখ্যা করে বলবো, তখন ও আমাকে ঠিক বুঝবে। তাছাড়া আমি তো রাজীব বাবুর সাথে সবকিছু করিনি। রিহার্সালের নামে যতটুকু প্রয়োজন ছিল ততোটুকুই করার চেষ্টা করেছি মাত্র। তারপর রাজীব বাবু সীমা অতিক্রম করতে চাইলে আমি সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাঁধা দিয়ে সেই পর্যায়েই রিহার্সালের যবনিকা পতন ঘটিয়েছি।"
- "আমি তোর কথা সব বুঝতে পারলাম। আমি তো বললাম তুই কোনো অন্যায় কাজ করিসনি। তুই সমীরকে ঠকাসনি। কিন্তু একটা কথা বল , তোর মেন্টর অর্থাৎ রাজীব কি তোকে বলেছে এসব কথা সমীরকে জানাতে ?"
- "নাহঃ , কিন্তু আমি ওনার কথা সবসময়ে শুনতে যাবো কেনো ? ওনার থেকে আমি আমার স্বামীকে ভালোভাবে চিনি ও জানি। "
- "ফালতু জেদ করিসনা অনু , ভুলে যাসনা রাজীব একজন সেক্সওলজিস্ট , হি নোস্ বেটার দ্যান ইউ টু হাউ টু হ্যান্ডেল দা সিচুয়েশন। নাহলে তুই ওঁর কাছে সমীরকে নিয়ে গেছিলিস কেনো এতোই যদি তুই সমীরের ব্যাপারে সবজান্তা হয়ে থাকিস তো ?"
অনুরিমা আর না পেরে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো , "আমি জানিনা আমি কি করছি , বা আদেও ঠিক করছি কিনা। তবে বিশ্বাস কর আমি শুধু সমীরকে ভালো করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। "
কথা গুলো সে সুচরিতাকে বলছিলো কিন্তু বোঝাচ্ছিলো যেন নিজের মনকেই। সুচরিতা অনুর হাতে হাত রেখে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো , "আমি জানি রিমস্ , তুই এসব শুধু সমীরের জন্য করছিস। কিন্তু বেব্ , সমীরকে এখন সেটা বললে সমীর সেটা বুঝবেনা , ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। "
- "তাহলে এখন কি করবো ?"
- "সেটাই কর যেটা ডক্টর রাজীব রায় তোকে করতে বলছে। "
- "তুই বুঝতে পারছিস না , আমার ভালো লাগছেনা এসব করতে। দেখ আল্টিমেটলি সমীরকে জেলাস ফীল করানো নিয়ে কথা তো , ওকে কিছুটা হলেও ওর অদ্ভুত ফ্যান্টাসির ঝলক দেখানো নিয়ে কথা...... সেটা তো একবারে ডাইরেক্ট ওর সামনে করলেই হয়। তার জন্য এতো রিহার্সালের কি দরকার বল ? আর কি গ্যারান্টি আছে যে পরে ডাক্তার রায় এই রিহার্সালের কথা সমীরকে বলবে না ? তখন যদি সমীর আমাকে অবিশ্বাস করে , ভাবে আমি ডক্টর রায়ের সাথে হয়তো অনেক কিছুই করে ফেলেছি ! "
"হুমঃ .....", কিছুটা ভেবে সুচরিতা বললো , " দেখ তুই এইসবে বেশ আনকোড়া আছিস। তাই একেবারে সমীরের সামনে তুই রাজীব বা অন্য কাউকে কিস করতে পারবি না, তা তুই যতই কনফিডেন্ট হোসনা কেনো। তার জন্য তোর রিহার্সালের দরকার রে। সো, একটা উপায় আছে এর ......"
- "কি , বল ......"
- "যদি তোকে রিহার্সাল করতেই হয়ে, তাহলে তুই অন্য কারোর সাথে রিহার্সাল কর, যাকে রাজীব বা সমীর কেউই চেনে না , এমন কেউ ! কি বলিস ?"
"তুই আমাকে কি ভাবিস সুচি ? আমি চরিত্রহীনা ? আমার কোনো মান সম্মান কিচ্ছু নেই ? আমি যাকে তাকে নিয়ে এসব করে বেড়াবো ? অলরেডি আমি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে মরছি রাজীবের সাথে ওসব হওয়ার পর আর তুই আমাকে উস্কাচ্ছিস আরো একজনের সাথে এসব করতে ? তোর কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে। থাক, তোকে আর কোনো অ্যাডভাইস দিতে হবেনা। আমি এক্ষুনি গিয়ে সমীরকে সব কথা বলে দেবো , তারপর যা হবার দেখা যাবে। অন্তত নিজের অন্তরাত্মার কাছে তো পরিষ্কার থাকবো আমি ", এই বলে রেগে মেগে অনুরিমা চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলো, সঙ্গে সঙ্গে সুচরিতা তাকে ধরে আবার বসালো।
বসিয়ে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললো , "দেখ রিমা , তুই আজকাল অল্পতেই বেশি হাইপার হয়ে যাচ্ছিস। আমি বুঝতে পারছি তোর জীবনে এখন কি ঝড় বয়ে চলেছে , তবুও আমি বলবো, না আমি , না রাজীব , কেউ তোর খারাপ চাইনা। রাজীবের কথা না হয় ছেড়ে দে , ও একজন প্রফেশনাল সেক্সওলজিস্ট, ও হয়তো এটাকে জাস্ট একটা কেস স্টাডি হিসেবে দেখছে। কিন্তু আমি তো তোর বন্ধু , দা বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার উপর তো তুই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারিস।.... তোর যদি মনে হয় , রাজীব তোদের মধ্যেকার ব্যাপার ট্রিটমেন্টের খাতিরেই হোক সমীরকে পরবর্তীতে বলতে পারে, তাহলে তোকে রাজীবের সাথে কিছু করতে হবেনা। বাট একটা ব্যাপারে আমি ডক্টর রাজীব রায়ের সাথে একমত , দ্যাট ইউ নিড সাম প্রিপারেশন অর্ রিহার্সাল। নাহলে তুই কোনোভাবেই সমীরের সামনে ওর ফ্যান্টাসির ডেমো দেখাতে পারবি না। আমি তোকে চিনি সুইটহার্ট। তাই সম্ভব হলে ফাইন্ড সাম আনাদার গাই। যার সাথে লুকিয়ে হলেও ওয়ান টাইম বা টু টাইম হুক আপ করে নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করতে পারিস। তাহলে সেটা সবার অগোচরে হবে সো ইট উইল রিমেইন সিক্রেট। রাজীবের কি , রাজীব ইস আ প্রফেশনাল ডক্টর। ওকে তুই যখন বলবি তখনই সমীরের ডেমো ক্লাস অ্যারেঞ্জ করে দেবে। কিন্তু তুই যদি প্রথমবারে সমীরের সামনে পারফর্ম করতে ভুল করিস , তাহলে সবটা ঘেটে ঘ হয়ে যাবে। তারপর আর কিছু করার থাকবে না। তাই কনসাল্টেড ডক্টরের সাথে রিহার্স করতে হেসিটেট হলে , অন্য কাউকে খুঁজে নে , যে এই ব্যাপারটা গোপন রাখতে পারবে , লাইক সাম জিগোলো। "
- "জিগোলো ? সেটা আবার কি ?"
- "তুই জিগোলো মানে জানিস না ?? ওহঃ মাই গড !! ইউ আর সাচ্ আ নাইভ পার্সন অনু। জিগোলো মানে হলো মেল প্রস্টিটিউট , পুরুষ দেহব্যবসায়ী। তাদের সার্ভিসে প্রাইভেসী ও গোপনীয়তা দুটোই থাকে। তুই চাইলে ওটা অ্যাভেইল করতে পারিস নিজের রিহার্সালের জন্য। নাহলে যদি তোর অন্য কোনো বিশ্বস্ত জানা শোনা পুরুষ থেকে থাকে তুই তাকেও ট্রাই করতে পারিস। ইট'স্ আপ টু ইউ।"
অনুরিমা চুপ করে রইলো। আর একটাও কথা ব্যয় করলো না সে। অনুরিমাকে চুপ করে থাকতে দেখে সুচরিতা আর কোনো কথা বাড়ালো না। ও শুধু বললো, "চল এবার আমি উঠি। আমার শোয়ের টাইম হয়ে যাচ্ছে। আজকে বাইরে থেকে ফ্যাকাল্টি আসবে এক্সহিবিশনে। তোকে নিয়ে গেলে ভালো হতো কিন্তু আমি যেহেতু ওদেরকে ওয়েলকাম করছি তাই তোর সাথে বেশি থাকতে পারবো না। তুই তখন ওখানে একা একা বোড় হবি। তাই মন চাইলেও তোকে যেতে বলতে পারছিনা রে। "
- "না না , ইট'স্ ওকে। আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। আমারও যাওয়ার সেরকম ইচ্ছে নেই ......"
বলতে বলতে আদিত্য সেখানে এসে হাজির , সুচরিতার এক্স হাসব্যান্ড। আসলে অনুরিমা ও সুচরিতা নন্দন চত্বরে দেখা করেছিলো। সেইখান থেকে সুচরিতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস্ এ যাওয়ার কথা ছিলো। আদিত্যও একটু আধটু থিয়েটার করে। সেখান থেকেই সেই সূত্র ধরেই তো সুচরিতার সাথে ওর আলাপ তারপর বন্ধুত্ব, তারপর বিয়ে আর তারপর ডিভোর্স , একটা কমপ্লিট সাইকেল পূর্ণ হয়েছিল শিল্পকলার হাত ধরে। যাই হোক , আদিত্যও সেখানে আর্ট রিলেটেড কোনো কাজে এসেছিলো। তাই হঠাৎ দেখা।
আদিত্যকে দেখা মাত্রই সুচরিতা অনুরিমার কথাকে থামিয়ে বলে উঠলো, "আরে আদি , ওয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইস !"
আদিত্য বললো সে নন্দনে একটা কাজে এসেছিলো। সুচরিতা তখন আদিত্যকে তার সাথে যেতে বললো , আদিত্য বললো সে আর এখন যেতে চাইছেনা। সুচরিতাও বেশি জোর করলো না। বাকি বিষয় নিয়ে সুচরিতা ও আদিত্যর কথোপকথনের মধ্যে হঠাৎ আদিত্যর নজর গিয়ে পড়লো অনুরিমার উপর। অনুরিমাকে দেখে তার মনটা কেন জানিনা ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। সে অনুরিমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে সুচরিতা আদিত্যকে একটা রিকোয়েস্ট করে বসলো। সুচরিতা বললো আদিত্য যখন ফিরেই যাচ্ছে তাহলে সে অনুরিমাকেও তার বাড়ির কাছাকাছি ড্রপ করে দিয়ে আসুক। অনুরিমা সুচরিতার আদিত্যকে করা এমন আবদারে একটু হকচকিয়ে গেলো, সে বলতে লাগলো যে সে একাই যেতে পারবে , কাউকে ড্রপ করতে হবেনা তাকে। কিন্তু সুচরিতা বললো আকাশে মেঘ করে এসেছে , যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে। বাড়ি ফেরা মুশকিল হয়ে যাবে তখন। কলকাতার পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোনো মা বাপ্ নেই , বৃষ্টি-বাদলের দিন কখন ঝুলিয়ে দ্যায় তার নেই ঠিক। তার চেয়ে বরং সে আদিত্যর গাড়িতে বেড়িয়ে যাক।
"প্রাক্তন স্ত্রী হিসেবে আমার বন্ধুর জন্য এইটুকু আবদার আমি করতেই পারি আদিত্যর কাছে , কি আদি ঠিক তো ? ", মজা করে বললো সুচি।
"অ্যাব্সলুটলি ইয়েস ম্যাম। জো আপকি হুকুম ", এই বলে মাথা নিচু করে নিজের আনুগত্যতা প্রকাশ করলো আদিত্য দুই নারীর সামনে। সঙ্গে সঙ্গে ছোট্ট একটা হাসির রোল উঠলো তিনজনের মধ্যে। অনেকক্ষণ পর অনুরিমার মুখে হাসি ফুটেছিলো। তাই আর সে বেশি মানা করলো না। সুচরিতার কথা শুনে সে রাজি হয়েগেলো আদিত্যর গাড়িতে ফিরতে। সেইমতো সুচরিতা দুজনকে "বাই" বলে নিজের কাজে বেড়িয়ে গেলো। রইলো সেখানে তখন দুজন , একজন অনুরিমা ও অপরজন আদিত্য সেনগুপ্ত। .........
পর্ব ১৮
"চলুন , তবে যাওয়া যাক ", অনুরিমাকে আদিত্য বললো।
"হ্যাঁ হ্যাঁ , চলুন ", বলে অনুরিমা আদিত্যর সাথে বেরোতে লাগলো।
আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। মেঘ ঘনিয়ে কালো হয়ে এসছিলো। হঠাৎ করে মেঘ ডেকে উঠলো। অনুরিমা ভয় পেয়ে বললো , "একটু তাড়াতাড়ি চলুন , দেখছেন তো মেঘের কি অবস্থা। সুচরিতা ঠিকই বলেছে , কলকাতার রাস্তায় বাস অটো ট্যাক্সির কোনো মা বাপ্ নেই , কখন যে এরা ভিন্ন ভিন্ন কারণে ঝাঁপি বন্ধ করে দ্যায় তার ঠিক নেই , তা কোনো রাজনৈতিক কারণে হোক বা প্রাকৃতিক কারণে। "
"চিন্তা করবেন না ম্যাডাম , আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যখন কাঁধে নিয়েছি তখন হাজার বিপর্যয় এলেও আপনাকে ঠিক আমি বাড়ি পৌঁছে দেবো। "
"আমি কথাটা ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি। আসলে আপনাকেও তো বাড়ি ফিরতে হবে , আকাশ দেখে মনে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি নামবে। আর অতো বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালানোটা সেফ নয়। তাই বলছিলাম , যদি আপনি বৃষ্টি নামার আগেই নিজের গন্তব্যে পৌঁছে যান তাহলে সেটা আপনার পক্ষেই ভালো হবে। আমি এসে শুধু শুধু আপনার হেডেক বাড়ালাম। "
"মোটেই না। তুমি হয়তো জানোনা , আমি অনেক এক্সপিরিয়েন্সড ড্রাইভার , সেই কলেজ লাইফ থেকে ড্রাইভিং করি নিজের কার। আমার এই বৃষ্টি বাদলের দিনে বরং ড্রাইভিং করতে ভালোই লাগে , বেশ রোম্যান্টিক একটা ব্যাপার থাকে। ..... বাই দা ওয়ে , আমি তোমাকে তুমি করে ডাকলে অসুবিধা নেই তো ? "
"না না , ঠিক আছে। আমি আপনার থেকে বয়সে এমনিতেও অল্পবিস্তর ছোট , তাই তুমি করে ডাকতেই পারেন। "
"তাহলে তো , তোমাকেও তুমি করে ডাকতে হবে আমায়। সো নো আপনি , ওকে ?"
"আচ্ছা সব ছেলেরাই কেন আপনি থেকে তুমি ডাকটা শুনতে বেশি পছন্দ করে ? "
"এই আবদার বুঝি আগেও অন্য কোথাও থেকে আপনার কাছে এসছে ?"
"আলবাত। ...."
"তা সেই ডাকে কি মিস অনুরিমা সাড়া দিয়েছিলো ?"
"সেটা বড়ো কথা নয় , আগে আমার প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া হোক। ...."
"বাকি ছেলেদের কথা তো বলতে পারবো না , বাট আমি তুমি ডাকটাই বেশি প্রেফার করি , সম্বোধন করতেও আর পেতেও। তাই অফিসের জুনিয়ররাও আমাকে তুমি করে ডাকে , আমিও তাদের তুমিই বলি , উভয় লিঙ্গ বিশেষে ...."
"বুঝলাম , তা এটা কেন ভাবলে যে আমিও সমান সাচ্ছন্দ বোধ করবো ?"
"আমি অতো ভাবিনা , এই যেমন তুমি না ভেবেই আমাকে তুমি করে সম্বোধন করা শুরু করলে , এক্ষুনি বলে উঠলে ভাবলে ইনস্টেড অফ ভাবলেন ......"
"সাবকনশাস মাইন্ডে বলেছি , সেটাও অবজার্ভ করলেন ?"
"সে তুমি যেই মাইন্ডেই বলে থাকো না কেন , যখন বলেই ফেলেছো আর ব্যাক আউট করোনা। তুমিতে স্টিক থাকো। "
"আপনি খুব জেদি দেখছি , সরি তুমি .... হয়তো এই জেদের কারণেই সুচরিতার সঙ্গে সম্পর্ক থাকেনি আপনার , সরি এগেইন , তোমার। ....."
সঙ্গে সঙ্গে আদিত্যর মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো। সে খানিকটা কড়া গলায় বললো , "তুমি আদেও জানো , কেনো আমার আর সুচির সম্পর্ক ভেঙে গেছিলো ? তুমি হয়তো সুচির ভার্শনটা শুনেছো , আর সেটাকেই সত্যি ভেবে আমাকে এখন অ্যাকিঊস্ করছো ! আমি খারাপ , আমার মা খারাপ , আর তোমার সুচিই একমাত্র ভালো , তাই তো ??"
আদিত্যর গলার আওয়াজে হঠাৎ কঠোরতার প্রকাশ শুনে অনুরিমা বুঝলো দ্যাট সি হ্যাস ডান দা মিস্টেক বাই ক্রসিং হার লিমিট। সে অনুনয় বিনয় করে আদিত্যর কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলো। বোঝাতে লাগলো তার কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা আদিত্যকে হার্ট করার। কিন্তু আদিত্য অতো সহজে মানতে চাইছিলো না। বোঝাই যাচ্ছিলো না জেনে অনুরিমা তাকে অনেক গভীরে আঘাত করেছে। আদিত্য অনুরিমার সাথে কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে স্টিয়ারিং থেকে তার মন সরে যায়। ব্যাস , আর কি ! নজর হাটি তো দূর্ঘটনা ঘটি। তাদের সাথেও ঠিক সেটাই হলো। ভুলবশত গাড়িটা গিয়ে ধাক্কা খেলো একটা ল্যাম্প পোস্টে।
ভাগ্য ভালো তাদের দুজনের কোনো আঘাত লাগেনি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট দেখে দূর থেকে সাদা ইউনিফর্ম পড়া কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন ছুটে এলো। পথচলতি প্রাইভেট গাড়ির এরকম বিপর্যয়ের মতো সুযোগ কি আর সার্জেনরা ছাড়ে। তাঁরা তো বসেই আছে লম্বা চালান কাটার জন্য আর সাধারণ মানুষদের হ্যারাস করার জন্য।
একজন অফিসার দৌড়ে এলো তাদের কাছে। আদিত্যর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লো। অনুরিমা তা দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। সে আদিত্যকে থামানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আদিত্য কোনো কথা শুনছিলোনা। সে ক্রমাগত পুলিশ অফিসারটার সাথে হিটেড আর্গুমেন্ট করে যাচ্ছিলো। ফলে যা হওয়ার তাই হলো , আদিত্যর একটা লম্বা চালান কেটে গেলো। তাছাড়া যেমন ঘোড়া দেখলে মানুষ খোড়া হয় তেমনই দামী গাড়ি দেখলে পুলিশেরও ট্রাফিক নিয়মের কথা বেশি মনে পড়ে। পুলিশ অফিসার আদিত্যকে তার সাথে থানায় যেতে বললো। আদিত্য রাজি হলোনা , তো অফিসার তার গাড়িকে জব্দ করলো, বললো থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে। আদিত্য বললো , তাই হবে। কিন্তু এখন সে থানায় যেতে পারবে না, পরে গিয়ে ছাড়িয়ে আনবে গাড়িটা। কারণ তার কাছে এখন গাড়ির চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্ব এই মেয়েটিকে (অনুরিমার দিকে আঙ্গুল করে বললো) এই আবহাওয়ায় নিরাপদে তার বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। কথাটা শুনে আদিত্যর প্রতি অনুরিমার মনে শ্রদ্ধার জায়গা তৈরী হলো।
কথামতো অফিসার আদিত্যর কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়িটাকে সরকারী ভাবে দখল করলো। অনুরিমা ও আদিত্য এবার হাঁটা দেওয়া শুরু করলো। অনুরিমা বারবার আদিত্যকে বলছিলো তার এটা করা উচিত হয়নি , তার এখন গাড়িটাকে রেসকিউ করা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। অনুরিমা ঠিক কিছু না কিছু একটা ম্যানেজ করে বাড়ি পৌঁছে যেত। আর আদিত্যও প্রত্যুত্তরে বারবার এটাই বোঝাচ্ছিলো যে সে কখনোই কোনো মেয়েকে এভাবে মাঝরাস্তায় ফেলে এক পার্থিব বস্তুর পিছনে দৌড়োবে না।
আদিত্যর এসব কথা গুলো অনুরিমাকে একটা ফীল গুড ব্যাপার অনুভব করাচ্ছিল। সে এবার আদিত্যর সাথে অনেক বেশি সহজভাবে কথা বলতে পারছিলো। রাজীবের মতো সেখানে কোনো ট্রিটমেন্টের বাধ্যবাধকতা ছিলোনা। মনে মনে অল্প অনুশোচনাও বোধ হচ্ছিলো এটা ভেবে যে আদিত্য ও সুচরিতার অতীতের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে তার ওইরূপ আলটপকা মন্তব্য করা উচিত হয়নি। কিন্তু সে তো শুধু তাই বলেছে যা সে সুচরিতার কাছ থেকে জেনেছে। তাহলে কি সুচরিতা তাকে নিজের ম্যারেড লাইফ নিয়ে ভুল কথা বলেছিলো ? দুই তরফের কথা না শুনে কখনো কোনো জাজমেন্টে আসা উচিত হয়নি তার।
সেই সময়ে অনুরিমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো কেন আদিত্যর সাথে তার বান্ধবীর বিয়েটা টেকেনি ? এই কথা তো ঠিক যে আদিত্য নিঃসন্দেহে একটা ভালো ছেলে , তার প্রমাণ সে আজ পেয়েছে। তাছাড়া তার প্রাক্তন স্ত্রী সুচরিতাও সবসময়ে তার এক্স-হাসবেন্ড কে নিয়ে যতবার কথা বলেছে ভালো ভালো কথাই বলেছে , যা সত্যিই খুব বিরল ব্যাপার। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরও কোনো মেয়ের তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে এতোটা রেসপেক্টফুল থাকা , সচরাচর দেখা যায়না। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আদিত্যকে নিয়ে অনুরিমার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছিলো।
সে আদিত্য ও সুচরিতার বিয়ে নিয়ে কথা তুলতেই যাবে কি সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমে আসলো। তারা তখন এমন একটা জায়গায় ছিল যেখানে কোনো শেড ছিলোনা বৃষ্টি থেকে বাঁচার। এভাবে হঠাৎ করে প্রবল বেগে বৃষ্টি নেমে আসবে সেটা তারা ভাবতে পারেনি। তাদের কাছে ছাতাও ছিলোনা। অনুরিমা প্যানিক করে গিয়ে দৌড়ে কাছের একটি বাস স্টপ ছাউনিতে যেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলো। আদিত্য অনুরিমা বলে চেঁচিয়ে উঠলো। রাস্তা তখন শুনশান , আসে পাশে কেউ নেই সাহায্য করার। গাড়ি থেকে শুরু করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সব নিজের গতি বাড়িয়ে ছুটছিলো , বৃষ্টিতে নিজ নিজ গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য। কারোর সময় নেই থামার।
আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমাকে কোলে তুলে নিয়ে কাছের সেই বাস ছাউনিতে এসে বসালো। যন্ত্রণায় অনুরিমা কাতরাচ্ছিল। হাত পা বেশ ছিলে গেছিলো , রক্ত বেড়োচ্ছিলো। ব্যাথায় অনুরিমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসছিলো। আদিত্য মাথা ঠান্ডা রেখে প্রথমে দেখলো কোথায় কোথায় অনুরিমার লেগেছে। তারপর অনুরিমাকে বসতে বলে বৃষ্টি মাথায় নিজে বেড়িয়ে পড়লো কাছে পিঠে কোনো ওষুধের দোকান আছে কিনা সেটা খুঁজতে। বিধাতার অশেষ কৃপায় পেয়েও গেলো একটা কেমিস্টের দোকান। দোকানে গিয়ে তাড়াতাড়ি একটা ফাস্ট-এইড্ এর বক্স কিনলো , সঙ্গে কিছু নেসেসারি ওষুধপত্র যেমন পেইন কিলার ইত্যাদি। সেসব নিয়ে সে আবার ছুট দিলো অনুরিমার উদ্দেশ্যে।
বাস স্টপে পৌঁছে আদি ফাস্ট-এইড বক্স এর সাহায্যে অনুরিমার সাময়িক শুশ্রুষা করতে লাগলো। বন্ধু নয় , যেন স্বামীর কর্তব্য সে পালন করছিলো। আদিত্যর বিরামহীন যত্নে অনুরিমার একটু আরাম অনুভব হচ্ছিলো। সে মনে মনে সমীরকে কল্পনা করছিলো কিন্তু বাস্তবে সেই কার্য আদিত্য করছিলো। যখন সে সেটা বুঝতে পারলো তখন সে নিজেকেই প্রশ্ন করলো যে সমীর কি কোনোদিনও তার এভাবে যত্ন নিয়েছে , যতটা যত্ন একটা অজানা অচেনা পুরুষ কয়েকদিনের আলাপেই নিচ্ছে। সে চাইলেই তো নিজের গাড়ির পিছনে ছুটতে পারতো ! তা না করে সে আমার সাথে এলো , একসাথে বৃষ্টিতে ভিজলো। ভিজতে ভিজতে আমার জন্য ওষুধ আনতে গেলো। এখন আমার শুশ্রুষা করছে। ইস্সস ! কত ভালোই না হতো যদি এসবকিছু আদিত্যর বদলে সমীর করতো।
মনে মনে অনুরিমা বলে উঠলো , "সমীর তুমি কোথায় ? বারবার কেন এমন হয় , যে যা আমি তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করি তা আমাকে অন্য কেউ দিয়ে যায়। আমি তো এসব কিছু তোমার কাছ থেকে চাই। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই , তোমার সাথে ফাঁকা সিনেমা হলে চুম্বনে লিপ্ত হতে চাই , আর তুমি কিনা আমাকেই অন্য কারোর সাথে কল্পনা করো , ছিঃ !"
মনে মনে এসব ভেবে অনুরিমা কেঁদে উঠলো। আদিত্য ভাবলো এটা তার শারীরিক ব্যাথার কান্না , যে ব্যাথা সে কিছুক্ষণ আগে পড়ে গিয়ে পেয়েছে। কিন্তু না , এ ব্যাথা তো আসলে মনের। জীবনে অপূরণীয় আকাঙ্খা নিয়ে অনুরিমার কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তার এটাই যে সেইসব অপূরণীয় আকাঙ্খা তার পূরণ হচ্ছে অন্য পুরুষদের দিয়ে , তার স্বামীর দ্বারা নয়। সেটা তাকে আরো ব্যাথিত করে তুলছে।
বৃষ্টি ভেজা মুখেও অনুরিমার চোখের জল বুঝে নিতে আদিত্যর অসুবিধা হয়নি। সে ঠিক বুঝতে পারছে অনুরিমা কাঁদছে। তাই সে খুবই নরম গলায় আদরভরা স্নেহে জিজ্ঞেস করে উঠলো , "ব্যাথা করছে ?"
ভাবনার আকাশে মেঘ সরে গিয়ে সে বাস্তবতার আলো দেখতে পেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে অনুরিমা বললো , "হ্যাঁ , ওই একটুখানি।"
অনুরিমা আদিত্যকে বুঝতে দিলোনা তার চোখে জলের পিছনে আসল কারণ। বৃষ্টিটা তখন একটু লেগে এসছিলো। তবু রাস্তা ছিল কাঁদাময় , এবং ফুটপাথ শ্যাওলাময়। অনুরিমা আদিত্যর হাত ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। উঠতে পারলো , কিন্তু চলতে পারছিলো না তখন। আদিত্য বললো এখন আবার পা পিছলে পড়লে সে আর উঠতেও পারবে না। এই বলে আদিত্য কিছু জিজ্ঞেস না করেই অনুরিমাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। অনুরিমা অবাক হয়েগেলো। আদিত্য কোলে করে তাকে কোথায় নিয়ে যাবে ? বাড়ি যে এখনও অনেক দূর।
রাস্তাটা তখনও বেশ ফাঁকাই ছিল। দু-চারজন লোক বেরিয়ে ছিলো। কিন্তু তাদেরও তো চোখে পড়ছিলো যে ফুটপাথ দিয়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় একটা ছেলে একটি মেয়েকে সিনেমার মতো কোলে তুলে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে। অনুরিমা লজ্জায় ছটফট করতে লাগলো। আদিত্যকে অনুরোধ করতে লাগলো তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। আদিত্য তাকে ওয়ার্নিং দিলো , এরকম করলে অনুরিমা নিজেও পড়বে তাকেও ফেলবে। তারপর দুজনের কোমড় ভাঙবে। তখন কে কাকে সাহায্য করবে ? সে যা করছে তা অনুরিমার ভালোর জন্যই করছে। এই অবস্থায় অনুরিমা ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় হেঁটে যেতে পারবে না। পরিস্থিতিটা একটু অনুরিমা বোঝার চেষ্টা করুক।
অনুরিমা তখন জিজ্ঞেস করলো এইভাবে সে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? বাড়ি তো এখন অনেক দূর ! আদিত্য বললো ওষুধ আনতে গিয়ে সে একটি ইন্ লজ দেখে এসছে। এখন তারা সেখানে যাচ্ছে। এভাবে বাস স্টপে কতোক্ষণ আর বসে থাকবে ! কোনো বাস পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও সেই বাসে খুব ভীড় থাকবে , যেখানে অনুরিমা চাইলেও উঠতে পারবে না এই পা নিয়ে। সব ট্যাক্সি নিজেদের মিটার বন্ধ করে গাড়ি গ্যারেজ করে দিয়েছে। তাই এখন হেঁটে হেঁটেও বাড়ি ফেরা যাবেনা। তার চেয়ে বরং একটি লজে কিছুক্ষণ স্টেই করে অনুরিমা বিশ্রাম নিক। ব্যাথা কিছুটা ঠিক হলে , এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হলে তখন কোনো শাটল্ বা গাড়ি ভাড়া করে আদিত্য অনুরিমাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবে।
আদিত্যর সাথে কোনো লজে সময় কাটাতে তার মন তো চাইছিলো না , কিন্তু আর তো কোনো উপায়ও ছিলোনা। আদিত্যর অকাট্য যুক্তিকে কোনো এক্সকিউস দিয়ে খণ্ডন করা যাচ্ছিলো না। সে ভাবলো একবার সমীরকে ফোন করে আসতে বলবে। সেই মতো অনুরিমা তার ছোট হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোনটা বার করলো। ওমাহঃ ! দেখলো তখন পড়ে যাওয়ার সময়ে ব্যাগ সমেত ফোনটা জলে পড়ে যাওয়ায় ফোনটা ডেড হয়েগেছে ! শিট্ ! বিপদ যখন আসে তখন চারদিক থেকে সকল বিপদ একসাথে গ্যাং আপ করেই আসে। একবার ভাবলো যে আদিত্যর কাছে ফোন চেয়ে সে সমীরকে কল করবে। কিন্তু আদিত্য কি ভাববে ? আদিত্য ভাববে যে অনুরিমাকে তাকে বিশ্বাস করছে না ! একেই সে তার আর সুচরিতার বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে যথেষ্ট লজ্জিত , আর সে নিজেকে ছোট করতে পারবে না , আদিত্যকে অবিশ্বাস করে তাকে অহেতুক ভাবে পারভার্ট হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে ! তাছাড়া সমীরও কি ভাববে , যদি সে জানতে পারে আমি আদিত্যর সাথে ছিলাম। নাহঃ নাহঃ , সমীরের এরম অবস্থায় সমীরের অসুস্থ মানসিকতাকে আমি প্রশ্রয় দিতে চাইনা !
এসব ভাবতে ভাবতে সে দেখলো আদিত্যর কোলে চড়ে সে একটি থাকার লজের সামনে এসেছে। সে খানিকটা ইমপ্রেস হলো আদিত্যর স্ট্রেনথ দেখে। অনুরিমা রোগা হলেও ওর তো একটা ভার রয়েইছে। তাকে এতোটা রাস্তা কোলে করে নিয়ে আসা, ..... সত্যিই, একটা সাইলেন্ট সাবাশি আদিত্যর প্রাপ্যই। তাই অনুরিমা মনে মনে তাকে ধন্যবাদ ও কুর্নিশ জানালো। মুখে জানালো না যদি আদিত্য এটার অন্য মানে করে নেয়।
পর্ব ১৯
লজে ঢুকে আদিত্য তাদের জন্য দুটো রুম চাইলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই লজে তখন একটিই মাত্র ঘর ফাঁকা ছিল। তা শুনে অনুরিমা আদিত্যকে বললো অন্য কোথাও যেতে। আদিত্য অনুরিমাকে বোঝালো যে এই এলাকায় আর কোনো ভালো লজ নেই। তাছাড়া তারা তো মাত্র কিছুক্ষণের জন্য থাকবে , তাহলে অনুরিমা কেন এতো হেসিটেট করছে ? আদিত্য জানতে চাইলো , অনুরিমা কি তাকে বিশ্বাস করছে না ? অনুরিমার মন তো চাইলো এটাই বলতে যে হ্যাঁ , করছি না বিশ্বাস। এই স্বল্প আলাপে কাউকেই কখনও বিশ্বাস করা যায়না। কিন্তু আদিত্য যে ওর জন্য এতকিছু করলো , নিজের দামী গাড়িটা পর্যন্ত পুলিশের হাতে ছেড়ে চলে এলো, সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই অনুরিমা এই কঠোর সত্যিটা আদিত্যর মুখের উপর বলতে পারলো না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। অগত্যা একটি রুমের চাবি নিয়েই আদিত্য ও অনুরিমা লিফট দিয়ে উঠে গেলো লজের তিন তলায়।
ঘরে প্রবেশ করে দেখলো ঘরটা কাপল্ রুম , একটাই বিছানা রয়েছে। কিন্তু বিছানা দেখে কি হবে , তারা তো সেখানে রাত্রিবাস করতে আসেনি ! পরিস্থিতির চাপে পড়েছে বলে কিছুক্ষণ থাকবে , তারপর চলে যাবে। আদিত্য ঘরটা ইন্সপেকশন করে দেখতে লাগলো ঘরে কি কি আছে। একটা বিছানা , একটা ডাইনিং টেবিল সাথে দুটো চেয়ার। একটা তিনজনের বসার সোফা , তার সামনে ছোট একটা কাঁচের টেবিল। একটা অ্যাটাচ বাথরুম। দেওয়ালে কাপবোর্ড লাগানো ছিল সেখানে দুটো সাদা টাওয়াল রাখা ছিল। বিছানার চাদরও ধবধবে সাদা ছিল , সাথে দুটো বালিশ রাখা ছিল।
সব দেখে আদিত্য হোটেলের স্টাফটা-কে (যে স্টাফটা তাদের-কে রুম অবধি নিয়ে এসছিলো ) বললো কয়েকটা দড়ি আর একটা হিটার নিয়ে আসতে। একজন ওবিডিয়েন্ট স্টাফ হিসেবে সে তাই আনতে গেলো। অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো আদিত্যর দড়ি আর হিটারের কেনো প্রয়োজন ? আদিত্য অনুরিমাকে ধৈর্য ধরতে বললো। কথামতো স্টাফটি কয়েকটি দড়ি ও একটা হিটার নিয়ে এলো।
হোটেলের কর্মীটি জানতে চাইলো তাদের আর কিছু লাগবে কিনা ? বা তারা কিছু খাবে কিনা ? তখন আদিত্য অনুরিমাকে জিজ্ঞেস করলো এক কাপ কফি চলবে কিনা ? বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় অনুরিমার একটু শীত শীত করছিলো , তাই সে কফির জন্য হ্যাঁ বলে দিলো। আদিত্য হোটেলের স্টাফটা-কে সঙ্গে নিয়ে দরজা অবধি গেলো , ওর হাতে টিপ্ ধরিয়ে বললো যেন ওকে আর অনুরিমাকে তারা অযথা ডিস্টার্ব না করে রুম সার্ভিসের নামে। শুধু কফি দিয়েই চলে যায় , আর যেন কোনো কারণে ফের কেউ না আসে। স্টাফটি মাথা নাড়িয়ে আদিত্যর আবেদনে সম্মতি জানালো , এবং কফির অর্ডার নিয়ে চলে গেলো কফি বানাতে।
দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতরে আসতেই অনুরিমা তাকে আবার প্রশ্ন করা শুরু করলো কেন আদিত্য এতগুলো দড়ি ও হিটার এনেছে? আদিত্য বললো শুধু দেখতে যাও , আমি কি করছি। এই বলে সে দড়ি গুলো নিয়ে রুমের জানলার গ্রিল থেকে দেওয়ালে লাগানো বিভিন্ন আংটা বা হ্যাংগার গুলোতে টান টান করে বেঁধে দিতে লাগলো। হিটারের প্লাগটা সুইচ বোর্ডে লাগিয়ে অন করে দিলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব অনুরিমা শুধু দেখছিলো , কিন্তু ছাতার মাথা কিচ্ছু বুঝতে পারছিলোনা আদিত্য এক্সাক্টলি কি করতে চাইছে সেটা।
আদিত্য নিজের কাজ সেরে অনুরিমাকে বললো , "ডান ! এবার আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি। দেখো তোমার জন্য ফাস্ট-এইড বক্স কিনে আনতে গিয়ে আমি তোমার চেয়েও বেশি ভিজে গেছি। যদিও আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোমার শাড়িটা কাদায় নোংরা হয়ে গ্যাছে , তুমিও বেশ ভালোই ভিজে গ্যাছো। সো ইউ অলসো নিড টু বি ফ্রেশ। বাট আগে আমি আমার পরনে ভেজা জামাকাপড়গুলো খুলে শুকোতে দিই , নাহলে এই সিজন চেঞ্জের সময়ে আমারই আগে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে। তবে চিন্তা করোনা, আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসবো। "
এই বলে আদিত্য অনুরিমার সামনেই এক এক করে নিজের জামাকাপড় গুলো খুলে ফেলতে লাগলো। কাপবোর্ডে রাখা দুটো সাদা তোয়ালের মধ্যে একটা নিজের জন্য নিলো। আদিত্য তখন টপলেস ছিল , শুধু পরনে নিজের প্যান্ট এবং ভেতরের জাঙ্গিয়াটা ছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো আদিত্য জিম করে , পেটানো চেহারা , সিক্স প্যাক আছে কিনা বলা মুশকিল , কিন্তু সেরকমই একটা মাসক্যুলার হ্যান্ডসম ম্যানের ভাইব্ ওর থেকে আসছিলো।
আদিত্যকে জামা খুলতে দেখে অনুরিমা রে রে করে উঠেছিল। সে তৎক্ষণাৎ নিজের চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিয়েছিল। আদিত্য নিজের কার্যকলাপের জাস্টিফিকেশন দিতে লাগলো। সে এবার বলতে শুরু করলো কেন সে হোটেলের স্টাফটা-কে দিয়ে কয়েকটা দড়ি ও একটা হিটার আনালো। দড়িগুলো টাঙানোর পিছনে কারণ হলো নিজেদের ভেজা কাপড় শুকোতে দেওয়া। এইভাবে যদি আদি ও অনুরিমা ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকে তাহলে জোর ঠান্ডা লাগতে বেশি সময় লাগবে না। তার থেকে বাঁচতেই আদিত্যর এতো বন্দোবস্ত। সেই জন্যেই সে হিটারও আনিয়েছে , যাতে জামাকাপড়গুলো তাড়াতাড়ি শুকোয় , এবং ঘরটা তাদের জন্য গরম থাকে। ঠিক একই কারণে সে তাদের দুজনের জন্য কফি অর্ডার দিয়েছে , যাতে ক্যাফিন তাদের শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে।
এসব শুনে অনুরিমার তো চক্ষু চড়কগাছ ! কি বলছে এসব আদিত্য ! সে চায় তারা দুজনই কাপড়জামা খুলে শুকোতে দিক ! মানে টা কি ! সে এরকম ভাবলোও কিভাবে ! অনুরিমার এরকম রিঅ্যাকশন আসাটা আদিত্যর কাছে এক্সপেকটেড ছিলই। সে তখন অনুরিমাকে শুধু একটা কথাই শুধালো , যে আর কি কোনো রাস্তা আছে ?
বাড়িতে অনুরিমার একটা মেয়ে আছে , শ্বশুর শাশুড়ি দুজনে বৃদ্ধ। এই অবস্থায় যদি অনুরিমার এখন কোনো ভাইরাল ফিভার হয়ে যায় , তখন কে দেখবে তাকে এবং তার পরিবারকে ? সতীত্ব ঢাকতে গিয়ে তো সে তার পরিবারের স্বার্থ জ্বলাঞ্জলি দিয়ে দেবে। তাছাড়া তাকে এই অবস্থায় কে আসছে দেখতে ? কেই বা জানবে এই ব্যাপারটা ? হোটেলের সেই স্টাফটা-কে অলরেডি আদিত্য বলে দিয়েছে কফি সার্ভ করার পর আর যাতে তাদের কোনোভাবে ডিস্টার্ব করা না হয়। আর সেটা বলার পিছনে কারণ হলো একটাই , যে যতোক্ষণ তারা রুমে থাকবে তারা নিজেদের কাপড় জামা শুকোতে দেবে। অন্য কোনো বদমতলবের জন্য আদিত্য এই প্রাইভেসি চায়নি।
তাই জন্য আদিত্য আগে ওয়াশরুমে যেতে চায়। সে ফ্রেশ হতে হতে কফি চলে আসবে। কফি সার্ভ করার পর বেয়ারা-টা রুম থেকে চলে গেলে তখন অনুরিমা নিজের কাপড় জামা ছেড়ে শুকোতে দেবে , আর ততোক্ষণ কাপবোর্ডের ভেতরে রাখা অপর আরেক টাওয়েলটা সে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করবে। সিম্পল ! এতে অনুরিমার অতো রিএক্ট করার কি আছে ? এসব বোঝাতে গিয়ে আদিত্যকে অনেক বেশি বিরক্ত দেখালো। আদিত্যর বিরক্তি অনুরিমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো যে কোনো কুমতলবের কারণে নয় , এই দুর্যোগের কারণেই আদিত্য এরূপ কার্য তাকে করতে বলছে।
অনুরিমা তখন চরম এক অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়ে গেছিলো। সত্যিই তো , এখন যদি এই ভেজা কাপড়ে সে থাকে তাহলে নির্ঘাত তার নিউমোনিয়া বা ভাইরাল ফিভার হবে। কয়েকদিনের মধ্যে তিন্নির মিডটার্ম এক্সাম শুরু হবে , এখন যদি মা হয়ে অনুরিমা জ্বরের কবলে পড়ে যায় , তখন তার মেয়েকে কে দেখবে ? শ্বশুর শাশুড়িরও তো বয়স কম হয়নি। শুনেছি ভাইরাল ফিভার তো ছোঁয়াচে রোগ , তার থেকে যদি শ্বশুর শাশুড়িরও ধরে যায় এই রোগ , তখন !! নাহঃ , এটা কিছুতেই হতে পারেনা !
অনুরিমা ভাবলো তাকে ছাড়া তো তার পরিবার অচল ! সে অসুখ পাকিয়ে নিজের পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলতে পারবে না। কালে কালে মেয়েদের তো কতোই না অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। আজ নাহয় সেই নারীদের প্রতিনিধিত্ব হয়ে সেও একটা পরীক্ষা দিলো। আর আদিত্য যদি এই অবস্থার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে , তাহলে পুরুষসমাজ থেকে চিরকালের মতো বিশ্বাস অনুরিমার উঠে যাবে। আবার তখুনি অনুরিমার মনের আরেক দিক তাকে বলে উঠলো, সত্যিই যদি আদিত্যর কিছু করার থাকে তাহলে এই বন্ধ ঘরে নিজের পেশী শক্তি প্রয়োগ করেই সে করে নিতে পারবে। তার জন্য তাকে দড়ি , হিটার এসব নিয়ে এতো আয়োজন করার দরকার পড়তো না।
নিজের মনের সাথে অনেক সলা-পরামর্শ করার পর শেষে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যে সে আগে নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাববে , নিজের কারণে না হলেও নিজের পরিবারের জন্য , বাচ্চা মেয়েটার জন্য , পিতৃ-মাতৃসম বয়স্ক শ্বশুর শাশুড়ির জন্য। তাই সে সাময়িকভাবে নিজের বস্ত্র ত্যাগ করার নির্ণয় নিলো। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতোক্ষণে এসব ভাবছিলো ততোক্ষণে আদিত্য নিজের জামা, স্যান্ডো গেঞ্জি , প্যান্টের বেল্ট খুলে দড়িতে মেলে দিয়েছিলো। এখন শুধু সে জিন্স এর প্যান্ট ও তার ভেতরে জাঙ্গিয়া পরিধানে পরিহীত ছিল। টাওয়েল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলো।
কাপবোর্ডে রাখা দুটি টাওয়েলের মধ্যে একটিকে নিয়ে আদিত্য বাথরুমে প্রবেশ করলো। ঠিক তখুনি দরজায় একটা নক পড়লো। অনুরিমা শাড়িটাকে একটু ঠিক করে দরজার দিকে গেলো। দরজা খুলে দেখলো বেয়ারা কফির ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনুরিমা ভেতরে আসতে বললো। বেয়ারা কফির ট্রে টা ডাইনিং টেবিলে রাখলো। অনুরিমাকে জিজ্ঞেস করলো আর কিছু তাদের লাগবে কিনা। অনুরিমা নো থ্যাংকস বলে সসম্মানে তাকে বিদায় জানালো। অনুরিমা রুমের দরজা বন্ধ করে আসলো। কিছুক্ষণ পর বাথরুমের দরজা খুলে গেলো।
বাথরুম থেকে শুধু সাদা তোয়ালে কোমড়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো আদিত্য। হাতে ছিল তার জিন্সের প্যান্ট ও জাঙ্গিয়া। দুটোই সে দড়িতে মেলে দিলো। ঠিক যেন সাওয়ারিয়া গানের রণবীর কাপুরের মতো লাগছিলো তাকে। সেই সুঠাম চেহারা , গৌর বর্ণ গায়ের রং , মাথায় ঘন কালো চুল , সমীরের থেকে হাজারো গুণ বেশি আকর্ষণীয়। কিন্তু আদিত্যর এই আকর্ষণীয় অর্ধ নগ্ন আবেদনময় চেহারা কি একনিষ্ঠবতী অথচ সুন্দরী অনুরিমার মনকে বিপথে চালিত করার ক্ষমতা রাখে ? তা ছিল অপেক্ষা করে দেখবার।
আদিত্য অনুরিমাকে বললো এবার সে নিজের কাপড় জামা মেলে দিক। অনুরিমা চুপ করে দাঁড়িয়েছিলো , নিজের হাত নিজে টিপে প্রবল অস্বস্তির কথা পরোক্ষভাবে জানান দিচ্ছিলো। আদিত্য অনুরিমার কুণ্ঠাবোধ বেশ ভালোমতোই বুঝতে পারছিলো। তাই আদি অনুরিমাকে উপদেশ দিলো, সে যেন বাথরুমে গিয়ে নিজের শাড়ি, সায়া ও ব্লাউজ খুলে আদিত্যর হাতে দ্যায়। আদিত্য ভালো করে সেগুলোকে মেলে দেবে দড়িতে। এমনিতেও শুধু তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে সে পুরো শাড়ি মেলতে পারবে না। তার চেয়ে সেই কাজটা বরং আদিত্য করে দেবে যতোক্ষণে অনুরিমা বাথরুমে ফ্রেশ হবে।
তাছাড়া শাড়ি , সায়া , ব্লাউজ , অন্তর্বাস সবকিছু একসাথে নিয়ে অনুরিমা বাথরুম থেকে বেরোতে পারবে না। বাথরুমের ভেজা মেঝেতে পড়ে গিয়ে ফের তার কাপড়জামা খারাপ হয়ে যাবে। তাই আদিত্য অনুরিমাকে বললো সে বাথরুমে গিয়ে এক এক করে যথাক্রমে শাড়ি সায়া ও ব্লাউজ খুলে নিজেকে আড়াল করে দরজার ফাঁক থেকে আদিত্যর হাতে তুলে দিক। অনুরিমা শুধু তার প্যান্টি ও ব্রেসিয়ারটা নিজের হাতে নিয়ে বেড়োক , এবং নিজে সেই দুটো মেলুক। সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমা প্রতিবাদ জানিয়ে বললো , সে তার অন্তর্বাস খুলবে না , কিছুতেই না।
আদিত্য ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বললো , অন্তর্বাসটাই আসল জিনিস। সেটাকেই আগে শুকোতে হবে। নাহলে ভেজা অন্তর্বাস পড়ে থাকলে "সেইসব জায়গায়" ইনফেক্শন হয়ে যেতে পারে তার। আদিত্য নিজেও তো নিজের জাঙ্গিয়াটা খুলে মেলে দিয়েছে। আদিত্য বারবার অনুরিমাকে অনুরোধ করে বললো , এখন সময় এতো লজ্জা পাওয়ার নয়। এই ঘরেতে সে আর অনুরিমা ছাড়া আর কেউ নেই , কেউ আসবেও না। তাই তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে দুজনকেই লজ্জা ত্যাগ করে কিছুক্ষণ শুধু সাদা টাওয়েল-টা জড়িয়ে থাকতে হবে। এই সময়ে লজ্জা ঘেন্না ভয় তিন থাকতে নয়। এই একই কথা রাজীবও তো সমীরকে বলেছিলো। তবে তার কারণ ছিল ভিন্ন। আর আদিত্য যখন সমীরের স্ত্রীকে সেই একই কথা বলছে তখন তার পটকথা ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এই একটা বাংলা প্রবাদ স্বামী-স্ত্রীর ভাগ্যটাকে কিরকম বদলে দিচ্ছিলো , সেটা সমীর ও অনুরিমা দুজনেই বুঝতে পারছিলো না। ......
"লজ্জা ঘেন্না ভয় , তিন থাকতে নয়। ........"
পর্ব ২০
অবশেষে অনুরিমা বাথরুমের দিকে যেতে লাগলো। তার পা যেন চলছিলো না। প্রচন্ড ভয় ভয়ে ছিলো। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো তার। কিন্তু কোনো উপায় নেই। তাকে তার শরীরের দিকটাও দেখতে হবে। লজ্জা ঢাকতে গিয়ে এই অবস্থায় শরীরের বারোটা বাজালে , তাকে কে দেখবে ? সমীর তো নিজের ফ্যান্টাসি নিয়েই মশগুল রয়েছে। তার জন্যই তো অনুরিমাকে এতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
কার জন্য আজ তাকে ছুটে যেতে হলো সুচরিতার কাছে ? কার জন্য তাকে এক পরপুরুষের সাথে ওসব রিহার্সাল করতে হয়েছে ? ওসব অহেতুক উটকো ঝামেলা অনুরিমার ঘাড়ে এসে না পড়লে ওকে তো আর আজকের এই বৃষ্টি-বাদলের দিনে বাড়ি থেকে বেড়োতে হতো না ! বাড়ি থেকে বেড়োনোর সময়ই সে আজ দেখেছে আকাশটা কিরকম ভার করে আছে। তবুও সে বেড়িয়েছিলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে কারণ সে স্বয়ং এটা নির্ণয় করতে পাচ্ছিলো না যে সমীরকে সে কতোটুকু বলবে রিহার্সাল সম্পর্কে ! আর ওই রিহার্সাল তাকে করতেই হতো না যদি সমীরের মাথায় এই অদ্ভুত ফ্যান্টাসির ভূত চেপে না বসতো। তাহলে সবদিক দিয়ে সমীরই একমাত্র দায়ী, তার আর আদিত্যর বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় কোনো এক হোটেলের এক ঘরে স্টে করার পিছনে।
মনে মনে সমীরকে দোষারোপ করতে করতে সে আনমনে বাথরুমের দিকে এগোচ্ছিল। একটু ডিসটেন্স বজায় রেখে আদিত্যও তার পিছন পিছন যাচ্ছিলো, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে বলে, কখন অনুরিমা নিজের পরিহীত বস্ত্রসমূহ এক এক করে খুলে আড়াল থেকে তার হাতে সঁপে দেবে সেই জন্যে।
বাথরুমের দরজার পাটাতন-টা একটু উঁচু ছিল। বাথরুমে ঢোকার সময়ে আনমনা অনুরিমা সেটা খেয়াল করেনি। সঙ্গে সঙ্গে হোঁচট খেয়ে সে পড়তে যাচ্ছিলো ঠিক তখুনি পিছন থেকে আদিত্য এসে তাকে জাপটে ধরে ফেললো। কিছুটা আতঙ্কের সুরে টেন্সড হয়ে আদিত্য বলে উঠলো , "কি করছো কি !! কোথায় থাকে মনটা তোমার ? এক্ষুনি তো একটা বড়ো বিপদ বাঁধিয়ে ফেলছিলে ! ভাগ্যিস আমি পেছন পেছন আসছিলাম, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে। কারণ তোমার ছেড়ে দেওয়া জামাকাপড় গুলো কালেক্ট করে মেলবো বলে। "
অনুরিমা তখন নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক মতো উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো , "থ্যাংক ইউ। আই এম ফাইন নাও। "
আদিত্য খানিকটা রেগেমেগে বললো, "তোমার থ্যাংকস আমার লাগবে না। তুমি দয়া করে একটু সাবধানে চলা ফেরা করো। তুমি অলরেডি পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছো , আবার পড়ে গেলে কি হতো শুনি ! বাস স্টপে ভিজে মাথায় দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে তোমার মেডিক্যাল ড্রেসিং করেছি, কিন্তু সবটা ঠিক মতো করতে পারিনি। এখন তুমি কাপড় ছেড়ে এলে ভালো করে তোমার ড্রেসিং করে দেবো। ফাস্ট এইড বক্সটা সাথে করে কোনোমতে নিয়ে এসছি। "
- "তার আর দরকার পড়বে না , আমি এখন ঠিক আছি। "
- "সেটা নাহয় আমাকে বুঝতে দাও অনুরিমা। যাই হোক , ভালো করে গা হাত পা ধুয়ে টাওয়েল গায়ে দিয়ে বেড়ো , তারপর আবার তোমার ভালো মতো ড্রেসিং করে দেবো , যাতে কাটা জায়গায় ইনফেক্শন না হয়ে যায়। "
আদিত্যর এতো কেয়ার নেওয়া , স্বামীর মতো বকাঝকা করা , সব যেন অনুরিমাকে অজান্তেই মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলছিলো। তার উপর বাড়তি সংযোজন আদিত্যর "তুমি" ডাক। তাই আবার সে না চাইতেও সমীরের সঙ্গে আদিত্যর তুলোনা টেনে ফেলছিলো। এরকমটা তো সে রাজীবের বেলায় করেনি , তবে আদিত্য কেন বারবার তার মনের দরজায় কড়া নেড়ে দিচ্ছে ! এতোটা যত্ন , শাসন , এসবকিছু তো অনুরিমা শুধু একজন মানুষের কাছ থেকে এক্সপেক্ট করে, সেটা তার সন্তানের বাবা সমীর। এত বছরের বিবাহিত জীবনে নিঃসন্দেহে সে সমীরের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছে , কিন্তু এরূপ যত্ন সে পায়নি। অপর কেউ দেয়নি বলে তার এই ব্যাপারটা এতোদিন মাথায়ও আসেনি। আজ যখন হঠাৎ করে অন্য এক পুরুষ তার যত্ন নিচ্ছে , তার ভালোর জন্য তাকেই শাসন করছে তখন তার মনে পড়ছে সমীরের খামতির জায়গা গুলি।
বেশ কিছুক্ষণ সে এভাবেই আদিত্যর দিকে তাকিয়ে সেসব কথা ভাবতে লাগলো। তারপর আদিত্যই তার বাস্তব চেতনা ফেরালো , "কি হলো অনুরিমা , কি এতো ভাবছো তুমি ? "
খানিকটা চমকে গিয়ে অনুরিমা নিজেকে সামলে নিলো। আঙ্গুল দিয়ে নিজের চুল-কে কানের পাশে সরিয়ে কিছু না বলে বাথরুমে প্রবেশ করলো। আদিত্যর মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আদিত্য ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। বাথরুমে ঢুকে সে ভাবতে লাগলো তার এই কাজটা করা উচিত কিনা যেটা আদিত্য তাকে করতে বলছে।
অনেক ভাবার পর সে নিজের শাড়িটা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো। ভেজা শাড়িতে সত্যি তার খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। তখুনি বাথরুমের দরজায় আদিত্য কড়া নাড়লো। আসলে অনুরিমা কাপবোর্ডে পড়ে থাকা অপর টাওয়েলটি নিজের সাথে নিয়ে আনতেই ভুলে গেছিলো। তার মনের উপর দিয়ে এতো চাপ যাচ্ছিলো যে সে সেই দিকে খেয়ালই করেনি। অনুরিমার বাথরুমে প্রবেশ করার পর আদিত্যর মাথায় স্ট্রাইক করলো যে সে অনুরিমার হাতে কোনো টাওয়েল দেখেনি , যখন তাকে মুখ থুবড়ে পড়ার থেকে আদিত্য বাঁচিয়ে ছিল। আদিত্য কাপবোর্ডের কাছে গিয়ে খুলে দেখলো তার ভাবনাই ঠিক। অপর তোয়ালে-টি যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে রয়েছে। তখন আদি সেটা নিয়ে গিয়ে বাথরুমের দরজায় কড়া নাড়লো।
অনুরিমা চমকে গেলো। কারণ সে তখন নিজের ভেজা শাড়িটা গা থেকে খুলে ফেলছিলো। ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে আদিত্য বাইরে থেকে অনুরিমাকে বললো , সে তোয়ালেটা না নিয়েই বাথরুমে গ্যাছে , তাই বাইরে আদিত্য তোয়ালে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনুরিমার খেয়াল হলো , ঠিক তো ! সে তোয়ালেটাই নিয়ে আসেনি।
অনুরিমা দরজার ছিটকিনি-টা খুলে অল্প ফাঁক করলো। সেখান দিয়ে নিজের হাত বাড়ালো। বাইরে থেকে শুধু অনুরিমার দুধ সাদা কোমল হাতটিই দেখা যাচ্ছিলো , আর কিছু না। আদিত্য সময় নষ্ট না করে সেই ফাঁক দিয়েই তোয়ালেটা অনুরিমার হাতে ধরিয়ে দিলো। অনুরিমা আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।
এই ছোট্ট একটা ঘটনা অনুরিমার মনে আদিত্যকে নিয়ে আত্মবিশ্বাস জাগালো। তার মনে যেটুকু ডাউট্ ছিল আদিত্যর সততা নিয়ে সেটুকুও তখন মুছে গেলো, আদিত্যর এই ছোট্ট সাহায্য ও সুযোগের অপব্যবহার না করা থেকে। তাই এবার অনুরিমা সব দ্বিধা কাটিয়ে একে একে নিজের শাড়ি , সায়া , ব্লাউজ সব খুলে দরজার ফাঁক দিয়ে নিজেকে আড়াল করে আদিত্যর হাতে তুলে দিতে লাগলো , আর আদিত্যও বাধ্য ছেলের মতো এক এক করে অনুরিমার বস্ত্র গুলো নিয়ে দড়িতে মেলতে লাগলো।
অনুরিমা পরনে তখন শুধু নিজের অন্তর্বাস দুটি (ব্রা ও প্যান্টি) ছিল। সে দরজাটা হালকা করে খুলে উঁকি মেরে দেখতে চাইলো এখনো আদিত্য দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কিনা ? কারণ কথা মতো আদিত্যর তো কাজ শেষ। সে কেনই বা তাহলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে ?
অনুরিমা উঁকি মেরে দেখলো আদিত্য নেই। সে দূরে বিছানায় গিয়ে বসে রয়েছে বাথরুমের দিকে পিঠ করে। অনুরিমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আদিত্য তার কথা রেখেছে। আদিত্যর সত্যি অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই অনুরিমার প্রতি। সে সত্যিই তাদের হেল্থ এর কথা মাথায় রেখেই অনুকে নিজের ভেজা কাপড় ছাড়তে বলেছিলো।
অনুরিমা নিজের মনকে বললো সে সঠিক মানুষকেই বিশ্বাস করেছে। এবার সে নির্দ্বিধায়ে নিজের অন্তর্বাস ছেড়ে শুধু তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে। সে এখন ১০০ শতাংশ নিশ্চিত আদিত্য এই পরিস্থিতির কোনোরূপ ফায়দা তুলবে না। বিকউস্ আদিত্য রিয়্যালি ইস এ পিওর জেন্টলম্যান। ইস্স, কেনো যে সুচরিতা বিয়েটা ভাঙলো ? অনুরিমার মনে আবার তাদের বিয়ে নিয়ে কৌতূহল জেগে উঠলো। তার মন সুচরিতার জন্য আফসোস করতে লাগলো। নাকি আফসোসটা ছিল নিজের জন্য , সমীর কেন আদিত্যর মতো পারফেক্ট নয় ? কারণ তার চোখে আদিত্য এখন এক আদর্শ পুরুষ হয়ে উঠেছিলো , যে সুযোগ থাকলেও কোনো মেয়ের অনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেনা, উল্টে তার যত্ন নিতে জানে।
পর্ব ২১
"আমি আর পারছি না আদিত্য......"
অনুরিমা এক এক করে নিজের ব্রা ও প্যান্টি খুলে উলঙ্গ হলো। তারপর শাওয়ার চালিয়ে গা টা ভালোমতো ধুলো। তোয়ালেটা দিয়ে ভালো করে নিজের ভেজা শরীরটা-কে মুছে সেই তোয়ালেটা-ই নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো , এমন ভাবে যেন তার বক্ষ ও নিম্নাঙ্গ দুটোই ঢাকা থাকে , অর্থাৎ ব্রা-কাপ্ ও প্যান্টির জায়গাটা। যেইভাবে আর কি মেয়েরা টাওয়েল গায়ে জড়ায়। বাথরুমের হ্যাঙারে তখন ব্রা ও প্যান্টিটা ঝুলছিলো। সেই দুটি সে হাতে নিলো। এবার সে দরজা খুলতে যাবে। তার বুকটা ধড়পড়িয়ে উঠলো। যতোই আদি সভ্য ভদ্র একটা ছেলে হোক না কেন , আদতে তো সে অনুরিমার কাছে একটা পরপুরুষই। ওর সামনে শুধু টাওয়েল পড়ে যেতে হেসিটেশন তো হবেই।
কিছুক্ষণ সে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। তার পা কাঁপছিলো। কিভাবে সে আদিত্যকে এইভাবে ফেস করবে ? আদিত্যর মন যদি ডগমগিয়ে যায়। ঝোঁকের বশে নিজেকে সামলাতে না পেরে যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে তার সাথে ! কিন্তু সে কতোক্ষণই বা এইভাবে বাথরুমের ভেতর বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
ঘর থেকে আদিত্যর হাঁক এলো , অনুরিমা তোমার হয়েছে , কফি তো ঠান্ডা হয়েগেলো। নার্ভাস হয়ে মুখ ফসকে অনুরিমা বাথরুমের ভেতর থেকে বলে উঠলো , "হ্যাঁ যাই। "
শিট ! সে কেন উত্তর দিলো ! ঠোঁট কামড়াচ্ছিল অনুরিমা। আদিত্যর কথার উত্তর দেওয়ার অর্থ ছিল অনুরিমার স্নান হয়ে গ্যাছে , এবার সে এক্ষুনি বাইরে আসবে। কিন্তু অনুরিমা যে এখন আসতে চাইছিলো না বাইরে , তাতে কফি ঠান্ডা হলে হোক ! সে আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইছিলো , কিভাবে আদিত্যকে ফেস করবে সে ব্যাপারে। কিন্তু হটকারিতায় "হ্যাঁ যাই " বলে ফেলাতে তাকে এখুনি বেড়োতে হবে। কফির জন্য নাহলেও , নিজের দৃপ্ততা দেখানোর জন্য। আসলে অনুরিমা চাইছিলো না যে আদিত্য জানুক সে কতোটা নার্ভাস এই সাদা টাওয়েল পড়ে। সি সুড্ লুক কনফিডেন্ট , যাতে আদিত্য চাইলেও তাকে কোনোভাবে ম্যানিপুলেট করতে না পারে , যদি সে চায় তা করতে।
পুরুষজাতি মানেই নারীলোভী। সে চায় নারীর উপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে , তা সে যেভাবেই হোক না কেন। যুগ যুগ ধরে তা হয়ে এসছে। তাই আদি ভালো ছেলে হলেও , তার কাছে সম্পূর্ণ সারেন্ডার করতে নারাজ অনুরিমা। কারণ আদি তার স্বামী নয়। সে তার স্বামীর চেয়ে হাজারগুণ ভালো হলেও সে একজন পরপুরুষই। আর সমীরের মধ্যে হাজার খামতি থাকলেও পতি পরমেশ্বরই হয়, এটা সে ভোলে নাই।
যাই হোক , অনেক ভেবে চিন্তে অনুরিমা বাথরুমের দরজাটা আস্তে করে খুললো। সাদা তোয়ালে জড়ানো এক তুলোর গজ বাঁশি রোল এর ন্যায় কোমল ও ধবধবে ফর্সা দেহখানি এক পা দু পা করে বাথরুম হইতে বেড়িয়ে আসছিলো। চুল থেকে জল টিপ্ টিপ্ করে ঘাড় হয়ে নদীর মতো আঁকা বাঁকা পথ নিয়ে দুই আবৃত দুধের মধ্যিখানের সুড়ঙ্গে (যাকে আমরা ক্লিভেজ বলি) ঢুকে যাচ্ছিলো। হয়তো সেই গতিপথ নাভিতে গিয়ে মিশবে বা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে যোনিপথের উদ্দেশ্যে গমন করবে।
তার হাতে তার ব্রা ও প্যান্টিটি ছিল। সেগুলো সে মেলতে আসছিলো। সেদিন বোঝা গেলো যে ময়দার থেকেও নরম কোনো শ্বেতবর্ণের কিছু থেকে থাকে তাহলে তা হবে অনুরিমার মাখো মাখো দেহটি। অদ্ভুত কামদায়িনী লাগছিলো তাকে। আদিত্য কফি খাওয়ার জন্য তখন বিছানা ছেড়ে ডাইনিং চেয়ারে বসেছিলো। সুতরাং এবার সে অনুরিমার সামনাসামনি ছিল। অনুরিমাকে দেখছিলো কিভাবে সে বাথরুমের দরজা খুলে গুটি গুটি পায়ে তার পানে আসছে।
প্রথমে অনুরিমা নিজের ব্রা ও প্যান্টিটা-কে দড়িতে মেলে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে ধীমে পায়ে লজ্জামিশ্রিত মুখ নিয়ে আদিত্যর সামনের চেয়ারে এসে বসলো, কফি খাওয়ার জন্য। অনুরিমা কফি কাপের মুখে ঠোঁট লাগিয়ে হালকা চুমুক দিতেই আদি বলে উঠলো , "তাহলে , সব কেমন চলছে তোমার ?"
- "সব বলতে ?"
- "এই .... তোমার হাসবেন্ড , তাঁর ফ্যান্টাসি , এইসব নিয়ে যে তুমি বেজায় খুব জর্জরিত , তা আমি বেশ বুঝি। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম ......"
- "আমার কথা ছাড়ো , আগে তোমার কথা বলো। তোমার আর সুচরিতার সম্পর্কটা ভাঙলো কি করে ?"
- "তোমাকে তো তোমার বান্ধবী সব বলেইছে। আর কি জানতে চাও ?"
- "আমি বুঝতে পেরেছি যে একতরফা বিশ্লেষণ শুনে কখনোই কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে নেই। অপর পক্ষকেও সুযোগ দিতে হয় বিশ্লেষণের। আমি খুব লজ্জিত গাড়িতে ওভাবে ক্যাসুয়ালি তোমার আর সুচরিতার সম্পর্ক নিয়ে তুলোনা টেনে এনেছিলাম , সবটা না জেনেই। তাই আমি এখন তোমার ভার্শনটাও জানতে চাই। ....."
- "আমাদের বিয়ে ভাঙার কারণ জেনে তুমি কি করবে ?"
- "আদিত্য , আমি বিবাহীতা , নিজের স্বামীকে হারাতে ভয় পাই। আমি জানি সুচরিতা ও আমার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে , ও অতো সহজে মানিয়ে নিতে পারেনা। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরও ওর মুখে তোমার অহরহ প্রশংসা শুনে আমি সত্যিই খুব বিস্মিত ! সুচরিতার মতো মেয়ে কারোর সম্পর্কে এতো ভালো কথা বলেনা , কিন্তু তোমার সম্পর্কে বলে। অথচ তুমি তার প্রাক্তন স্বামী , তোমাদের সম্পর্ক ভেঙে গ্যাছে। স্বভাবগত ভাবে ওর তোমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলার কথা , কিন্তু এতো একেবারে উলটপূরাণ ! কিভাবে ??"
- "হা হা !! আগে বলো , সুচরিতা কি বলেছে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে ?"
- "এটাই যে ওর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিলো , কারণ ....... "
- "কারণ আমার মায়ের জন্য তো ? এবং খানিকটা আমার জন্য ? আমি আর মা দুজনে ওর পায়ে সাংসারিক শেকল পড়িয়ে রাখতাম , এই কথাই বলেছে তো ও ?"
- "হ্যাঁ , মানে সেরকমই ......"
- "এই এক কথা ও সবাইকে বলে বেড়িয়েছে , নিজের হীনমন্যতা-কে ঢাকতে। আসলে পুরুষদের যেমন মেল ইগো থাকে তেমন কিছু মেয়েদেরও নারীবাদী ইগো থাকে যা দিয়ে তারা নিজেদের দুর্বল ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ঢাকতে চেষ্টা করে। সুচরিতাও সেটাই করার চেষ্টা করে। "
- "সুচরিতা যদি ঠিক না বলে থাকে , তাহলে আসল সত্যিটা কি ?"
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে আদিত্য বলতে শুরু করলো , "বিয়ের পর থেকেই সুচরিতা কিরকম অন্যমনস্কা থাকতো। আমার কাছে আসতে চাইতো না। প্রথমে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতো না। পরে ধীরে ধীরে যখন ধাতস্থ হলো , তখন মনের কথা খুলে বললো। সুচরিতা কলেজ জীবনে মনে মনে একজনকে চাইতো। কিন্তু সেই মানুষটা মজেছিলো অন্য কারোর প্রেমে। রিতা-কে সে ভালো তো বাসতোইনা উল্টে ওকে সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু তাও রিতা আড়াল থেকে তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে গ্যাছে।"
আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা আকাশ থেকে পড়লো। সুচরিতার মনের গভীর কোণের এই গোপন সত্য তার জানা ছিলোনা। কলেজ জীবনে সে সুচরিতার সাথে অনেকটা সময় হোস্টেলে কাটিয়েছে , তবুও সুচরিতা কোনোদিনও তাকে জানতে দেয়নি এসব ! কে সেই ছেলেটা যে তার বান্ধবীর ভালোবাসা বুঝতে পারেনি ? অনুরিমা আরো বিস্তারিত ভাবে আদিত্যর কাছে সবকিছু জানতে চাইলো।
আদিত্য বললো , "আমি এর থেকে বেশি কিছু জানিনা। সেই ছেলেটা কে ছিলো , কোথায় থাকতো কিচ্ছু আমায় বলেনি সুচরিতা। শুধু এইটুকু বলতো যে সুচরিতা তাকে ভুলতে পারেনি , আর কোনোদিন পারবেও না। আমি জিজ্ঞেস করতাম ছেলেটা কোথায় থাকে বলো , আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি তার কাছে , কিন্তু রিতা বলেছিলো আনফর্চুনেটলি সেই ছেলেটার বিয়ে হয়ে গ্যাছে , এবং সে সুখে শান্তিতে সংসার করছে। "
- "কিন্তু ও তো নিজের জীবনকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিতে পারতো ? কেন সেই ব্যর্থ ভালোবাসাটা-কে বুকে নিয়ে আজও সে বয়ে বেড়াচ্ছে ? আপনি তো যথেষ্ট যোগ্য একজন ছেলে , হয়তো সুচরিতাকে ভালোও বাসেন। তাহলে কেন ওকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসছেন না ?"
- "আসলে ভালোবাসা নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আমার ভালো লাগেনা। এটাকে মেল ইগো ভেবোনা। খানিকটা আত্মসম্মানে লাগে। তাছাড়া আমি যেটা বুঝেছি , মেয়েরা প্রথম প্রেমকে সহজে ভুলতে পারেনা , বা ভুলতে চায়না। এই দেখো না , তোমার প্রথম প্রেম তোমার স্বামী তোমার উপর এতো মানসিক অত্যাচার করছে , তাও তুমি একবারের জন্যও ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছো ? কল্পনাতেও না !
- "মানসিক অত্যাচার ??"
- "তা নয় ? একটা মেয়ে তার স্বামীকে এতোটা ভালোবাসে , পরোয়া করে , তাও সেই স্বামীই নাকি তাকে অন্য কারোর সাথে...... না জানি আর কতো স্বামীরা এরকম সামাজিক ব্যাধিতে জর্জরিত হয়ে তোমার মতো মেয়েদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবে। "
আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। তার মৌনতা দেখে আদি কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। মনে মনে আশংকা করলো সে একটু বেশিই বলে ফেলেনি তো ! তাই নিজের বলে দেওয়া কথাকে প্রলেপ দেওয়ার জন্য বললো , "কিছু মনে করোনা , আমি ওইভাবে ঠিক বলতে চাইনি। আসলে আমি যদি তোমার স্বামীর জায়গায় থাকতাম তাহলে কোনোদিনও এধরণের চিন্তাভাবনা মনে পোষণ করতাম না। হয়তো সমীরের এসব ভাবনার পিছনে কোনো কারণ রয়েছে , যেমন ধরো অফিসে কাজের চাপ চলছে , তাই এরকম উদ্ভট চিন্তা মাথায় এসেছে ওনার। "
মৌনতা ধারণ করে থাকা অনুরিমা এবার বললো , "জানেন , এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি , তারা সবাই আমার বিরুদ্ধাচারণ করেছে , তা সমীর হোক , বা সুচরিতা বা ডাক্তার রায়। সবাই পরোক্ষভাবে এই ফ্যান্টাসির সাথে আমাকে আপোষ করতেই বলেছে। আপনি প্রথম যিনি আমার মতোই পুরো ব্যাপারটাকে নেতিবাচক দিক দিয়ে দেখছেন। আপনি ঠিক বলেছেন , সত্যিই এটা আমার উপর একটা মানসিক অত্যাচার। কিন্তু এর থেকে নিস্তারের পথ কোনো দেখতে পাচ্ছিনা ", এই বলে অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সে ভুলে গেছিলো তার পরনে তখন টাওয়েল ছাড়া আর কোনো কাপড় ছিলোনা। ভেজা চুলগুলো পিঠের দিকে রাখা ছিল। সুতরাং যখন সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে মাথা নিচু করে মাটির পানে চেয়েছিলো তখন স্পষ্টত তার বক্ষের খাঁজ অর্থাৎ ক্লিভেজ বেশ অনেকটা উন্মুক্ত হয়েগেছিলো , যা আদিত্যর নজর এড়ায়নি।
চোখের সামনে এরম দৃশ্য দেখলে যেকোনো পুরুষের শরীর প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করবে , সেটা স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক কাজটা আদিত্যর জন্য মোটেই স্বাভাবিক ছিলোনা। কারণ অনুরিমার মতো সেও তো স্রেফ একটা টাওয়েল জড়িয়ে বসেছিলো। ফলে অনুরিমার নরম দুগ্ধ বেষ্টিত ক্লিভেজ দেখে তার নিম্নাঙ্গ যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল তাতে আদিত্যর টাওয়েলের কোমড়ের বাঁধন খুলে যাওয়ার উপক্রম ছিল। আদিত্য তা কোনোমতে সামলে নিয়ে অনুরিমার মাথায় হাত রাখলো , তাকে মিথ্যে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।
অনুরিমার উন্মুক্ত বক্ষ তাকে ক্রমশ আকর্ষিত করছিলো। তবুও আদিত্য নিজের মনের সমুদ্রে বাঁধ লাগিয়ে অনুরিমার কাছে গেলো বন্ধু হয়ে। সে চেয়ারটা স্বল্প টেনে আরো কাছে এসে অনুরিমার সামনে বসলো। যাতে শান্ত্বনা প্রদানের অছিলায় সে আরো ভালোভাবে অনুরিমাকে স্পর্শ করতে পারে। কি নরম শরীর তার ! না ছুঁয়েও চোখ জানান দিচ্ছে তা।
আদিত্য অনুরিমার মাথায় আলতো ভাবে হাত বোলাতে বোলাতে বললো , "চিন্তা করোনা অনু , সব ঠিক হয়ে যাবে। নিশ্চই কোনো না কোনো মুক্তির পথ খুঁজে পাবে তুমি। মেয়েরা যখন কাউকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে শুরু করে তখন সেই মেয়ে সেই ভালোবাসার জন্য সব সীমা অতিক্রম করতে রাজি থাকে। তা সে মেয়ে অনুরিমা হোক , বা সুচরিতা। আমার আফসোস, সুচরিতাকে তো কোনোভাবে সাহায্য করতে পারিনি , শুধু ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া। কিন্তু তোমার বেলায় আমি কথা দিচ্ছি , সাধ্য মতো চেষ্টা করবো তোমার পাশে থাকার , তোমার লড়াইয়ে শরিক হওয়ার। "
আদিত্যর মন ভোলানো কথাগুলো কিছুটা অযৌক্তিক হলেও তা তৎকালীন অনুরিমার দূর্বল চিত্তকে ভেদ করে নিজভাবে আবেগের বাসা তৈরি করে নিচ্ছিলো। অনুরিমা মুখ তুলে তাকালো। আদিত্যও তখন নিজের নজর অনুরিমার কোমল বুকের খাঁজ থেকে সরিয়ে নিলো। আদিত্যর চোখ তখন অনুরিমার চোখে এক চিলতে আশা খুঁজছিলো। কিছুক্ষণ স্থির থেকে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে আমাদের আদিত্য বললো , "কফিটা খেয়ে নাও , ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে। "
চোখের ঈশান কোণে জমা জলগুলো আঙ্গুল দিয়ে মুছে অনুরিমা কফির কাপটা হাতে তুলে নিলো। আদিত্যও একটু স্বাভাবিক হয়ে বসলো। ততোক্ষণে কিছুটা হলেও উত্তেজিত বাঁড়ার প্রসারণে লাগাম টানা গেছিলো, তাই অনুরিমা লক্ষ্য করেনি আদিত্যর নিম্নাঙ্গের শোচনীয় অবস্থা। নাহলে আদিত্যকে প্রচন্ড পরিমাণের এম্ব্যারেসমেন্টে পড়তে হতো। যাই হোক , অনুরিমা ও আদিত্য চুপচাপ নিজেদের কফি শেষ করলো।
এরপর আদিত্য একজন নারীর প্রতি যত্নশীল পুরুষের ন্যায় ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ফের একবার অনুরিমার কেটে-ছিলে যাওয়া হাঁটুতে শুশ্রূষা করতে শুরু করলো। অনুরিমা প্রাথমিকভাবে বাধা দিলেও আদিত্য তা অগ্রাহ্য করে হাঁটু গেড়ে বসে নিজের মতো করে অনুরিমার ক্ষতে প্রলেপ দিতে লাগলো। অনুরিমার একদিক দিয়ে সেটা ভালোই লাগছিলো। একটু আদর , একটু যত্ন পেতে কারই না ভালো লাগে।
অজান্তেই আদিত্যর প্রতি অনুরিমার মন উষ্ণায়নভূক্ত হিমবাহ চেয়েও দ্রুত গতিতে গলতে লাগলো। প্রথমে তাকে বাড়িতে ড্রপ করার জন্য গাড়িতে তোলা। মাঝরাস্তায় তাকে একা না ফেলে যাওয়ার জন্য পুলিশের হাতে বন্ধক সাধের গাড়িটাকেও ত্যাগ করে দেওয়া। বৃষ্টিভেজা রাস্তায় একপ্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার জন্য ওষুধ নিয়ে আনা এবং শুশ্রূষা করা। তাকে এক নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা। তার মনের কথা শোনা , বোঝা , এবং যত্ন নেওয়া। এসব তো কোনো পরপুরুষ করেনা , বরং কোনো রূপকথার গল্পের একতরফা প্রেমে নিমজ্জিত কোনো পাগল প্রেমিক করে থাকে তার এক্তিয়ারের বাইরে থাকা প্রেমিকার জন্য, যাকে পাওয়া অসম্ভব , তবুও তার জন্য তার পদতলে জীবন লুটিয়ে দেওয়া। একেই হয়তো বলে একতরফা প্রেম ! ভালোবাসা তো এখন শুধু শরীরের দেওয়া নেওয়া তে পরিণত হয়েছে।
আদিত্যও কি সেরকম এক একতরফা প্রেমের পাগল প্রেমিকে পরিণত হয়েছিলো ? Who Knows ..... তবে সেসব কিছু বিস্তারিতভাবে না ভেবে অনুরিমা শুধু আদিত্য কতৃক তার পায়ের শুশ্রূষা অনুভব ও উপভোগ করছিলো। মাঝে মাঝে আরামে তার চোখ বুজে আসছিলো , আবার মাঝে মাঝে ক্ষতে ওষুধের রিঅ্যাকশন বেশি হলে "উহ্হঃ .... আহ্হ্হঃ ....." করে নিজের ব্যাথা জানান দিচ্ছিলো। তখন আদিত্য আরো আলতো করে সেই জায়গাটা মালিশ করে দিচ্ছিলো। ফের আরামে অনুরিমার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছিলো। এরকম চক্রাকার ন্যায়ে অনুরিমার ইন্দ্রিয়তে কখনো ব্যাথা তো কখনো আরামের উপলব্ধি ঘটছিলো।
আদিত্যর মন তো খুব করছিলো। এটাই সুযোগ অনুরিমার দূর্বল মুহূর্তে তাকে কাছে টেনে নেওয়ার। কিন্তু তার মনুষ্যত্ব বারবার তার কামলালসা-কে হারিয়ে দিচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর অনুরিমার মেডিক্যাল ড্রেসিং শেষ হলো। আদিত্য ওকে বিছানায় গিয়ে পা ছড়িয়ে বসতে বললো। সেইমতো অনুরিমা উঠতে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবার তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেঝেতে পড়তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন ফের একবার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালো আদিত্য। কিন্তু এবার তাড়াহুড়োতে তাকে ধরতে গিয়ে তার তোয়ালের গিঁটে-তে টান মারলো। ব্যাস !! সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমার টাওয়েল মেঝেতে পড়ে গেলো !
আদিত্য অনুরিমাকে মেঝেতে পড়া থেকে তো বাঁচিয়ে নিয়েছিলো , কিন্তু তার তোয়ালেটা-কে ধরতে পারলো না। আদিত্যর একটা হাত অনুরিমার পিঠে, আরেকটা কোমড়ে। অনুরিমা সম্পূর্ণভাবে এক্সপোসড্ , নগ্ন ! পুরো ব্যাপারটা অনুরিমার মস্তিষ্কে প্রসেস হতে কিছুটা সময় নিলো। তারপর যখন মস্তিস্ক মনকে বার্তা পাঠালো, "অনুরিমা চেয়ে দেখো , তুমি এখন নগ্ন , তাও এক পরপুরুষের সামনে ", তখন তো মন আর যায় কোথায় , মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম !
মন তো বেড়োলো না , তবে আওয়াজ বেড়োলো ! অনুরিমা চিৎকার করে উঠলো। চিৎকার এতো প্রবল ছিল যে আদিত্য ভয় পেয়ে গেলো , পাছে কেউ যদি শুনে নেয়, তাহলে কি ভাববে ? একটা বিবাহীতা মেয়েকে হোটেলের ঘরে নিয়ে এসে সতীত্ব নষ্ট করছে ? কেউ জিজ্ঞেস করলে সরল অনুরিমা তো সোজা সত্যি কথা বলে দেবে আদিত্য তার কেউ নয় , তখন আদিত্য মরণ ফাঁসান ফাঁসবে ! তাই অনুরিমাকে কি করে শান্ত করবে সেটা বুঝতে না পেরে সে সোজা অনুরিমার মুখে নিজের মুখ ঢুকিয়ে দিলো !
অনুরিমার মুখ বন্ধ হয়েগেলো। আদিত্য অনুরিমার ঠোঁটে ঠোঁট ঢুকিয়ে চুষতে লাগলো যাতে অনুরিমার মুখ দিয়ে একটাও শব্দ চিৎকার-রূপে না বেরোয়। অনুরিমা যাতে আবার পড়ে না যায় তাই আদিত্য ওকে দু'হাত দিয়ে আরো জাপটে ধরলো। সেই কারণে অনুরিমা বেশি ছটফট করতে পারলো না। ফলে এই চুম্বন গভীরতর হলো, থামলো না , দীর্ঘ প্রসারিত হলো।
একটা সময়ে অনুরিমা ভুলেই গেলো সে অন্য এক পুরুষের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চুমু নিচ্ছে। মনের অবচেতনে অনুরিমার অবশিষ্ট ছটফটানিও কমে গেলো। শরীর একটু ঢিল দিলো, আলগা হয়ে পড়লো। পূর্ণ আত্মসমর্পণ যাকে বলে। এইরকম মুহূর্তের সদ্ব্যবহারে আদিত্যর বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ঘটলো না। সে অনুরিমাকে আরো আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চুমু খেতে লাগলো।
শরীরে শরীর ঘষা খাচ্ছিলো। ফলে এই প্রক্রিয়াতে আরো একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। কোমড় থেকে খসে আদিত্যর তোয়ালেটাও পড়ে গেলো মেঝেতে ! ভাগ্যচক্রে দুজনেই আদিম মানবে পরিণত হলো। আদিত্যর বাঁড়া খাঁড়া হয়ে তখন খাম্বা-তে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ সেই খাম্বা-কে অনুরিমা নিজের যোনিদ্বারে অনুভব করায় তার বাস্তব চেতনা পূনরায় ফিরে এলো। বুঝতে পারলো ঘোরের মধ্যে সে কতো বড়ো মহাপাপ করতে যাচ্ছিলো। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সর্বস্য পেশী শক্তি দিয়ে আদি-কে নিজের থেকে আলাদা করলো। আদিরও তখন শুভচেতনার উদয় হলো। অনুরিমা কিছু রিএক্ট করুক তার আগেই নিজে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়লো।
অনুরিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে বললো , "আই এম সরি অনুরিমা , আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলোনা। আমি যা করেছি নিজের আর তোমার মান সম্মান বাঁচানোর জন্যই করেছি , কোনো দৈহিক লালসায় পড়ে নয়। "
অনুরিমা তখন কিছু শোনার মতো পরিস্থিতিতে ছিলোনা। সে সর্বপ্রথম মেঝে থেকে নিজের তোয়ালেটা নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর আদিত্যর দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে রইলো। বোঝাতে চাইলো আদিত্যও যেন নিজের তোয়ালেটা জড়িয়ে নেয়। অনুরিমার ইঙ্গিত বুঝতে দেরী হলোনা আদিত্যর। সে ঝট করে নিজের তোয়ালেটা মেঝে থেকে তুলে কোমড়ে জড়িয়ে নিলো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো , "তুমি হয়তো এখন আমার উপর রেগে আছো , বাট্ সুযোগ দিলে আই ক্যান এক্সপ্লেইন এভরিথিং। "
অনুরিমা চুপ করে রইলো। কোনো সাড়া শব্দ করলো না , নড়চড় করলো না। পিছন ফিরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলো। আদিত্য সেটাকে মৌনম সম্মতি লক্ষণম্ হিসেবে ধরে নিয়েই নিজের কার্যকলাপের জবাবদিহি দিতে শুরু করলো , " তুমি তখন এমনভাবে চিৎকার করে উঠেছিলে , যা শুনে হোটেলের লোকজন ছুটে আসতো। তখন সবথেকে বেশি সমস্যায় আমি পড়তাম। বন্ধ দরজার ভেতরে কি হচ্ছে তা না জেনে দরজা ভেঙে ঢুকে আসতে পারতো। তখন তারা তোমাকে আর আমাকে শুধুমাত্র টাওয়েল পরিধানে দেখে নানারূপ প্রশ্ন করতো। জিজ্ঞেস করতো আমাদের মধ্যেকার কি সম্পর্ক ? তখন তুমি কি উত্তর দিতে ? আমাকে তো আর স্বামী বলে পরিচয় দিতে না। লোকে ভাবতো আমি তোমাকে ইলোপ করে নিয়ে এসছি , আর এখন সুযোগের ফায়দা ওঠাচ্ছি, তাই জন্য তুমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছো। এরূপ মিসকন্সেপশন এর ফলস্বরূপ আমার কি অবস্থা হোটেলের স্টাফরা করতো তুমি ভাবতে পারছো? গণপিটুনি খেতাম। কেউ আমার কোনো এক্সপ্ল্যানেশন শুনতো না। তুমিও একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে। তাই তোমার চিৎকার তৎক্ষণাৎ বন্ধ করার আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ফ্র্যাক্শন অফ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলাম। তারপর কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। ভুলে গেলাম আমি কোথায় আছি , কার সাথে আছি। আসলে বহুকাল হয়েগেছে আমি কোনো নারীর স্পর্শ পাইনি। তবুও আমি জানি আমি সীমা লঙ্ঘন করেছি। তার জন্য তোমার কাছে কোটি কোটি বার ক্ষমা চাইতে আমি রাজি আছি। "
এই বলে আদিত্য অনুরিমার সামনে হাত জোড় করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো , এটা বোঝানোর জন্য যে সে সত্যিই খুব অনুতপ্ত। অনুরিমা পিছন ফিরে তাকালো। দেখলো আদি হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে তার সামনে বসে রয়েছে। এটা দেখে অনুরিমার মন একটু হলেও গললো। সে আদিকে উঠে দাঁড়াতে বললো। বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ালো , কিন্তু তার মস্তক এখনো অপরাধবোধে নিম্নমুখী ছিল। যা দেখে অনুরিমা বুঝলো আদিত্য সত্যিই খুব অনুতপ্ত। অনুরিমা গলা ঝেড়ে স্বাভাবিকভাবে আদিকে বললো তাকে আর অনুশোচনা বোধে ভুগতে হবেনা। ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা দূর্ঘটনা ঘটেই গ্যাছে। আদি চাইলে হাত দিয়ে তার মুখটা চেপে ধরতে পারতো। মুখের প্রয়োগ সে না করলেও পারতো।
আদিত্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে বললো , তার দুটি হাত অনুরিমাকে বেষ্টন করে ছিলো , নাহলে যে অনুরিমা আবার পড়ে গিয়ে পায়ের বারোটা বাজাতো। অগত্যা তাকে বাধ্য হয়ে নিজ মুখগহ্বরের সাহায্য নিতে হয়েছে অনুরিমার তারস্বরে নির্গত আওয়াজকে প্রশমিত করতে। আদিত্যর কথায় সত্যি কোনো ফাঁক-ফোঁকড় ছিলোনা। তাই অনুরিমাও ব্যাপারটাকে নিয়ে বেশি জলঘোলা করলো না। একটা দুঃস্বপ্নের কিছু মুহূর্ত ভেবে ভুলে যেতে চাইলো।
আদিত্য তাকে বিশ্রাম নিতে বললো। তার পায়ের উপর দিয়ে অনেক ধকল যাচ্ছে , এখন ড্রেসিং করা হয়েছে , বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা ফুলে যেতে পারে। আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা বিছানার দিকে এগোলো। পাছে সে আবার পড়ে না যায় তাই আদিত্য তার হাতটা ধরলো। আদিত্যর এই ছোট ছোট বিষয়ে কেয়ারিং নেওয়া গুলো অজান্তে অনুরিমার মনে হালকা হালকা করে দাগ কেটে যাচ্ছিলো। সে আদিত্যকে ধন্যবাদ দিতে ভুললো না , তার পায়ে এতো সুন্দরভাবে ড্রেসিং করার জন্য। আদিত্যও স্পষ্ট জানিয়ে দিলো , সে অনুরিমার থ্যাংকস পাওয়ার জন্য বসে ছিলোনা। এটা তার বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব ছিল যেটা সে পালন করেছে।
আদিত্য হাত ধরে অনুরিমাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো। পা টা ভালো মতো ছড়িয়ে দিয়ে তার নিচে বালিশ রাখলো। আরেকটা বালিশ অনুরিমার পিঠের পিছনে রাখলো হেলান দিয়ে বসানোর জন্য। একটা চেয়ার এনে বিছানার সামনে রাখলো , যেখানে বসে সে অনুরিমার সাথে কথা বলবে। সেইমতো সেই চেয়ারে নিজের পশ্চাদ ঠেকিয়ে আদিবাবু বসলেন।
অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। অনুরিমার নীরবতা আদিত্যকে চঞ্চল করে তুলছিলো। না জানি গোটা ঘটনার পর অনুরিমা কি ভাবছে তার সম্পর্কে ! আদিত্য নিজেকে দোষারোপ করে মনে মনে বললো, "ওহঃ মন , নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারোনা ? মানছি, তোমার অনুরিমাকে ভালো লাগে , তাই বলে সুযোগ পেলেই নরম শরীরটার উপর দখল নিতে চাইবে ??"
অনুরিমাকে সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। তবুও ইনিশিয়েট তো তাকেই নিতে হবে কথা বলার। তাই আর বেশি সময় নষ্ট না করে আদি বললো , "আমি জানি অনুরিমা তোমার খুব খারাপ লাগছে। তুমি আমাকে খারাপ ভাবছো। কিন্তু বিশ্বাস করো সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার আর কিছু করার ছিলো না। তুমি এতো ভয় পেয়েগেছিলে যে তোমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামানো যেতো না। তার উপর তুমি আমার বাহুতে আবদ্ধ ছিলে , বেশি কিছু হলে যদি আবার পড়ে যেতে , সেই ভয়েই অগত্যা ........"
"আমি বুঝতে পেরেছি আদি , তোমাকে আর ফার্দার কিছু এক্সপ্লেইন করতে হবেনা ", আদিত্যকে থামিয়ে অনু বললো। তারপর সংযোজন করলো , "আমি ভাবছি অন্য কথা ......."
"কি কথা অনু ?", বিস্ময়সূচক মুখ নিয়ে আদি জিজ্ঞেস করলো।
অনুরিমা প্রথমে একটু আমতা আমতা করে হেসিটেট ফীল করছিলো বলতে , কিন্তু আদি একটু কথার চাপ দেওয়ায় অবশেষে অনু সিদ্ধান্ত নিলো সে আদিত্যকে কথাটা বলবে। কি কথা ?? আসুন জানি ......
- "দেখো আদি তুমি তো মোটামুটি জানো আমার ব্যাপারটা, আমার সাথে গত কয়েকদিন ধরে কি কি হচ্ছে সেইসব। সুচরিতার কথামতো আমি সমীরকে নিয়ে একটা সেক্সওলজিস্ট দেখাই। উনি আমাকে অনেক কিছু অ্যাডভাইস করেছেন। কিন্তু ......."
- "কিন্তু কি অনুরিমা ?"
- "আমি বুঝতে পারছিনা কোথা থেকে শুরু করবো , কিভাবে বলবো তোমায় ......"
- "আচ্ছা ঠিক আছে , তোমাকে অতো চাপ নিতে হবেনা। আমি তোমার জন্য ব্যাপারটাকে একটু ইজি করে দিচ্ছি। তুমি বললে ডক্টর তোমাকে কিছু অ্যাডভাইস দিয়েছে। তুমি কি সেগুলো নিয়ে কিছুটা দ্বিধাভক্ত আছো ? মানে সেই অ্যাডভাইস গুলোই কি তোমার গলার কাঁটা হয়েগেছে ? না মানতে পারছো না ছাড়তে পারছো। ...."
- "এক্সাক্টলি ! তুমি ঠিক ধরেছো। ..এতোটা অ্যাকুড়েট হলে কি করে ? তুমি কি রাজীববাবু-কে চেনো ? চেনাটা অস্বাভাবিক নয় , সুচরিতার থ্রু দিয়েই তো তাকে পেয়েছি , সুচরিতার পরিচিত মানে তোমারও জানাশোনা হতে পারে। "
- "আমি ডক্টর রাজীবকে পার্সোনালি চিনিনা। থিয়েটার করার দরুন এক আধবার সাক্ষাৎ হয়েছিল তাও সেটা সুচরিতার মারফৎ। ব্যাস এইটুকুই , মুখ চেনা বলতে পারো, এর থেকে বেশি কিছুনা। আমি আসলে তোমার মুখভঙ্গি দেখে আর তোমার শব্দচয়নের মাধ্যমে আন্দাজ করতে পারলাম সমস্যাটা ঠিক কোথায়। থিয়েটার করি ম্যাডাম , আমরা লোকের চালচলন দেখেই তার ভেতরকার আত্মবিশ্বাসের পরিমাণ , সত্য মিথ্যা সব যাচাই করে নিতে পারি , তাহলে তোমার এইটুকু না বলা কথা বুঝবো না। "
- "সত্যি আপনি পারেন না বলা কথা বুঝতে ? আমি আসলে এই সকল কথা নিয়ে বাক্যালাপ করতে প্রচুর দ্বিধাবোধ করি। পরিস্থিতির চাপে পড়েই আমাকে অনেক অসহজ কাজ করতে হচ্ছে , যা আমার একদম পোষাচ্ছে না। "
- "আমি বুঝতে পারি অনুরিমা , কিন্তু তোমাকে তো একটু মেলে ধরতে হবে তোমার কথার সাজি। না বলা কথা বুঝলেও, আমি তো একেবারে অন্তর্যামী নই।"
- "ঠিক আছে , বলছি। ...... আসলে ডাক্তারবাবু আমাকে এক অদ্ভুত ব্যাপার সাজেস্ট করেছেন ......", এই কথা বলে অনুরিমা চুপ করে গেলো। তার মুখ দিয়ে যেন কথা বেরোচ্ছিলোনা , বা সংকোচে বেরোতে চাইছিলনা। আদিত্য আবার কোমল ভাবে কথার চাপ দিলো , "কি হলো অনুরিমা ? থেমে গেলে কেন ? কি সাজেস্ট করেছে ডক্টর রাজীব ? বলো .... আমার কাছে কুন্ঠা বোধ করোনা। নির্দ্বিধায়ে, যা মনে আছে সব বলে ফেলো ...." , এই বলে আদিত্য আলতো করে নিজের হাতটা অনুরিমার হাতে রাখলো, তাকে ভরসা দেওয়ার জন্য এবং তার মনে ভরসার জায়গাটা নেওয়ার জন্য।
অনুরিমা একটু শান্ত স্বাভাবিক হয়ে বললো , "প্রথমে রাজীব আমাকে ছেলে বন্ধু বানাতে বলে। তাঁর মতে আমি সংসারের জাঁতাকলে এতোটাই পিষে গেছি যে বাস্তব পৃথিবীর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই জন্মায়নি। এই পৃথিবী আগের থেকে অনেক বদলে গ্যাছে , এখন মন দেওয়া নেওয়া হয়না , শরীরের সওদা হয়। যাক গে ..... ওনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আমার বদলে যাওয়া সমীরকে বোঝার জন্য আমাকে নাকি খোলা আকাশে শ্বাস নিতে হবে। নতুন বন্ধু বানাতে হবে। ছেলে বন্ধু বানাতে হবে। অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে তাদের চাওয়া পাওয়া, মন, সেসব বুঝতে হবে। তবেই নাকি আমি সমীরের মনের অজানা দিকগুলো-কে ঠিকমতো এক্সপ্লোর করতে পারবো। "
- "তারপর?"
"তারপর আর কি .... আমি সমীরের সামনেই রাজীবকে জিজ্ঞেস করলাম , কোথায় পাবো ছেলে বন্ধু ? আমার তো জীবনে একটাই ছেলে রয়েছে , সে হলো সমীর। স্বামীও সে , সখাও সে। তখন রাজীব সমীরের উপস্থিতিতেই বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়ে বসে। সবচেয়ে খারাপ লাগলো যখন আমার সেই সখা , সেই স্বামীও তাতে সম্মতি প্রদান করলো। সমীর কি ভুলতে বসেছে আমার জীবনে তার গুরুত্বটা ? কে জানে ......", এই বলে কিছুটা থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো অনুরিমা।
অনুরিমার চোখ ছলছল করছিলো। এক দু'ফোটা গড়িয়েও পড়লো। আদি সঙ্গে সঙ্গে সেই অশ্রুস্রোতে নিজের আঙ্গুলের বাঁধ লাগালো। তার গাল স্পর্শ করে জল মুছে দিলো। তা দেখে দূর্বল হয়ে থাকা অনুরিমা আবেগের জোয়ারে ভেসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। এই করুণ দৃশ্য আদি সহ্য করতে পাচ্ছিলো না। সে সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। অনুরিমাও এক লহমায় সব ভুলে গেলো। আদি যে তার কাছে সামাজিকভাবে একজন পরপুরুষ, সেটা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো। কারণ সে তখন একটা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলো , যার তলায় শুয়ে সে তার ভরাট মনকে একটু বিশ্রাম দিতে চাইছিলো।
অনুরিমা আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো , আর ততোই আদিত্য অনুরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। একটা সময়ে দুজন দুজনকে জাপটে ধরলো। আবেগের সুনামি এসেছিলো যে।
হঠাৎ অনুরিমা বলে উঠলো , "কিস মি আদি। ....."
আদিত্য চমকে গেলো ! সে ঠিক শুনলো তো ! নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলো , "ওয়াট ??"
- "আমি আর পারছি না আদিত্য।....." ডক্টর রাজীব আমাকে সাজেস্ট করেছে সমীরের সামনে কোনো পরপুরুষকে চুমু খেতে। সেটা দেখে যদি সমীর বিচলিত হয় , তবে হয়তো ওর কাকোল্ড ফ্যান্টাসির ভূত মাথা থেকে নামতে পারে। কিন্তু আমি তো আনকোড়া , নিজের স্বামী ব্যাতিত আগে অন্য কোনো ছেলের সাথে সেভাবে মিশিনি। আমি কি করে অতো সহজে সেই কার্যসিদ্ধি করতে পারবো ? তাই রাজীব আমাকে তার সাথে রিহার্সাল করতে বলেছে , যাতে আমি এই বিষয়ে পটু হয়ে সমীরের সামনে নিজের কলার প্রদর্শন করতে পারি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে , রাজীবের সাথে রিহার্সালের বিষয়টা যদি কোনোভাবে সমীর জানতে পারে , তাহলে সে আমায় ভুল বুঝতে পারে। এই আশংকার কথা আজ তোমার প্রাক্তন স্ত্রী-কে বলায় সে আমায় অ্যাডভাইস দিলো আমি যেন অন্য কোনো এক পুরুষের সাথে কিসিং রিহার্সালটা করি। তারপর ফাইনাল ডে তে রাজীবের সাথে সমীরের সামনে সেটা মঞ্চস্থ করি। রাজীব ব্যাতিত অন্য পুরুষ বলতে আমি এখন তোমাকেই চিনি। তাই আমার চিৎকার থামাতে তুমি যখন আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটা লাগিয়ে দিলে তখন ৫ শতাংশ হলেও আমার তাতে সায় ছিল , কারণটা এই জন্যে। তাই আমাদের সেই চুম্বন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। আমি সেই কারণে তোমার সাথে রিহার্সালটা করতে চাই। কেন জানিনা তোমাকে আমার খুব বিশ্বস্ত মানুষ বলে মনে হচ্ছে , যাকে চোখ বন্ধ করেও বিশ্বাস করা যেতে পারে। এই অল্প সময়ে তুমি আমার বিশ্বাসের জায়গাটা নিতে পেরেছো আদি ......"
এই বলে আদিত্যকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার ঠোঁটের সাথে অনুরিমা নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলো !
পর্ব ২২
আদিত্যকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অনুরিমা তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলো ! আদিত্যও সঙ্গে সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ধরলো। এবার আর কোনোকিছুর পরোয়া সে করলো না। মনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলো নিজের খেয়ালখুশি চালানোর। যেখানে স্বয়ং অনুরিমাই তার কাছে ধরা দিয়েছে সেখানে সে অযথা মনকে নীতির শেকল পড়িয়ে রাখবেই বা কেন ? এবার আদিত্যকে রোখে কে ? অনুরিমা তো শুধু চুমু চেয়েছে , তাও শুধু রিহার্সালের জন্য , কিন্তু আদি কি শুধু চুমুতে থামবে ? নাকি ঘুমুও দেবে তার সাথে ? ......... দেখাই যাক .......
আদিত্য ডুবে গেলো চুম্বনের সাগরে। এতোটা আষ্টে পিষ্টে তারা জড়িয়ে পড়েছিলো যে কখন আদিত্য ও অনুরিমার পরনে থাকা টাওয়েলের গিঁট খুলে গেলো সেটা তাদের খেয়ালই হলোনা। ফলে যেটা হওয়ার সেটাই হলো। তাদের অবচেতনেই তাদের শরীর থেকে এক এক করে দুটি তোয়ালে খুলে নিচে নেমে গেলো। অনুরিমারটা বিছানায় পড়লো , আদিত্যরটা মেঝেতে।
দুই নগ্ন শরীর একে অপরের স্পর্শে উত্তপ্ত হচ্ছিলো। অনুরিমার ঠোঁটে আদিত্য নিজ ঠোঁট-কে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুমু দিচ্ছিলো , যাতে অনুরিমার শ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়। তাই ঠোঁট চুম্বন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিলো। আদি এবার অনুরিমার মুখ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে তার আশেপাশে গালে , গলায় চুমু খেতে লাগলো। অনুরিমা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলো , "কি করছো আদি , রিহার্সাল শুধু লিপ কিস্ এর জন্য। ....."
- "সমীরের সামনে কনফিডেন্টলি কিছু করতে হলে তোমাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে প্রিপারেশন নিতে হবে। পরীক্ষায় যা আসে আমরা কি শুধু সেটাই পড়ি নাকি পুরো সিলেবাসটা কভার করি , যাতে সব প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত রাখা যায় নিজেকে।"
আদিত্য ঠিক কি মিন করতে চাইলো অনুরিমা বুঝতে পারলো না। কিন্তু সে খেয়াল করলো তার শরীরে কোনো বস্ত্র অবশিষ্ট নেই। আরো চমকে উঠলো যখন অনুধাবিত করলো যে তার নবনিযুক্ত বন্ধুও নগ্ন ! আঁতকে উঠে বললো , "আদি আমাদের টাওয়েল গুলো ......"
আদি তখন ব্যস্ত অনুরিমার সারা মুখমণ্ডলের স্বাধ নিতে। সে চুমু খেতেই খেতেই বললো , "আমি জানি ..... কিন্ত এখন মাঝপথে রিহার্সাল থামিও না। শরীরে ঘষাঘষি লাগলে ওই আলগা বাঁধন খুলে যাবেই। এখানে কেউ তোমাকে আমাকে দেখতে আসছে না। তাই অতো রাখঢাক, লজ্জা না রেখে রিহার্সালে কন্সেন্ট্রেট (মনোযোগ) করাই ভালো। "
অনুরিমা কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। আদি পাগলের মতো তার গালে , মুখে , ঠোঁটে চুমু খেয়ে যাচ্ছিলো। অনুরিমার না চাইলেও সেটা তার মনকে ভালোও লাগাচ্ছিলো। চাপ চাপ দাঁড়িওয়ালা মুখ যখন অনুরিমার কোমল গালে ঘষা খাচ্ছিলো , তখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুরিমার শিহরণ জাগিয়ে তুলছিলো। ঠিক যেমন পাথরে পাথরে ঘষা খেলে আগুন জ্বলে ওঠে, এখানে তেমন শরীরে শরীরে ঘর্ষণে কামনার আগুন জ্বলে উঠছিলো। তাই অনুরিমা তার হাত ওঠাতে পারছিলোনা আদিত্যকে বাঁধা দিতে। তুললেও সেটা অবচেতন মন দিকভ্রষ্ট করে দিচ্ছিলো। ফলে হাত উঠিয়ে সে আদিত্যর কাঁধে গিয়ে রাখলো , বাঁধা দেওয়ার পরিবর্তে !
আদিত্য তাতে আরো অনুপ্রাণিত হয়ে অনুরিমার ঘাড়ে কামড় বসালো , যাকে আজকের দুনিয়া লাভ বাইট্ বলে। চিৎকারের পরিবর্তে অনুরিমার মুখ দিয়ে শীৎকার বেড়িয়ে এলো। এতে আদিত্য আরোই উজ্জীবিত হলো। সে আর ছাড়লো না। দাঁত বসিয়ে সেই স্থানে নিজের কামের স্বাক্ষর রেখে দিলো।
অনুরিমা ছটফট করছিলো। কিন্তু আদি কোনো তোয়াক্কা করলো না। সে নিজের মনমর্জি চালিয়ে যাচ্ছিলো। কখনো ঘাড়ে , কখনো বুকে , কখনো গলায় ঠোঁটের অবিরাম বিচরণ চলতে লাগলো। এই করতে করতে হঠাৎ অনুরিমার বাম স্তনটি কে আদি হাত দিয়ে খামচে ধরলো। এবার শীৎকারের বদলে চিৎকার করে উঠলো, আর বললো , "আদি , কি করছো এটা তুমি ? have you lost your mind? তুমি কিন্তু এবার নিজের সীমা অতিক্রম করছো !"
অবাক করে দিয়ে আদি সেই সাবধানবাণীতে কোনো কর্ণপাত করলো না। সে নিজের খেয়ালে অনুরিমাকে চুমু খেতে থাকলো। Anurima was stunned ! অনুরিমা পূনরায় চেষ্টা করলো আদিত্যকে বোঝানোর। কিন্তু সব প্রচেষ্টা বৃথা গেলো। আদি ওর কথা শোনা তো দূরের ব্যাপার , প্রত্যুত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করলো না। তার বদলে সে অনুরিমাকে ক্রমাগত চুমু খেয়ে যাচ্ছিলো। অনুরিমাও তার ফলে ভেতর থেকে দূর্বল হতে লাগলো। সে মুখে অনবরত আদিত্যকে বারণ করে যাচ্ছিলো , কিন্তু তাকে ঠেকানোর মতো শক্তি ধীরে ধীরে ভেতর থেকে কমে আসছিলো। তা বুঝে আদিত্য অনুরিমাকে যৌন উস্কানি দিতে লাগলো , "ওহঃ অনুরিমা , please কোনো বাঁধা দিও না। ভেতরের আগুন-কে আরো জ্বলতে দাও। সেই আগুনে তোমার সব মানসিক যন্ত্রণা পুড়ে খাঁক হয়ে যাক। আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই করছি সোনা ! আজকের আত্মত্যাগ আগামীর সকাল-কে আরো সুন্দর করে তুলবে। শুধু এই আগুনকে নিভতে দিওনা। "
এই বলে আদিত্য অনুরিমার দুদু দুটিকে যথা প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগে টিপতে লাগলো। অনুরিমার হৃদস্পন্দনে জোয়ার-ভাটা নেমে এসেছিলো। নিষ্পেষণ এতো প্রবল ছিল যে অনুরিমার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো এবং মুখ হ্যাঁ হয়ে খুলে গেলো। তখুনি আদিত্য নিজের তর্জনী সেই মুখগহ্বরে ঢুকিয়ে দিলো। অনুরিমার মুখ বন্ধ হয়ে এলো।
আদিত্য ওকে সময়ই দিচ্ছিলো না কোনোপ্রকার রিএক্ট করার। পাছে যদি মৌলিক চেতনা ফিরে আসে ! অনুরিমা না চাইতেও আদিত্যর তর্জনী চুষতে লাগলো। আদিত্য তেমনভাবেই সেটা করার বন্দবস্ত করেছিল। সে ক্রমাগত নিজের ডান হাতের তর্জনীকে অনুরিমার মুখগহ্বরের ভেতর ওঠা নামা করাচ্ছিলো। যার ফলপ্রসূত অনুরিমার জিহ্বার লালারসে মেখে আদিত্যর আঙ্গুল পুরো চমচমের মতো রসালো হয়ে যাচ্ছিলো।
একটা সময়ের পর অনুরিমারও তা ভালো লাগতে শুরু করলো। মুখ দিয়ে গোঙানি বেড়োতে লাগলো, "হ্হ্হম্ম ..... ওঃহহহ ..... পছ্হঃহহ.... ম্মম্হহঃ ......"
আদিত্য এক হাত অনুরিমার পিছন দিক দিয়ে নিয়ে গিয়ে ওকে বেষ্টন করে বগলের ভেতর দিয়ে বার করে একটা দুদু ধরে টিপছিল , তো অপর একটা হাতের আঙ্গুল অনুরিমার মুখগহ্বরে সুনামি আনছিলো। অনুরিমা যাবে কোথায় , কামনার জ্বালে সে ফেঁসে গেছিলো যে। তার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ উপলব্ধ ছিলোনা। সে খানিকক্ষণ আদিত্যর ডান তর্জনী চুষতে লাগলো। আরেকদিকে আদিত্যর অপর হাত অনুরিমার বাম স্তনের বোঁটায় বেলেল্লাপনা চালাতে লাগলো। যা অনুরিমার পক্ষে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে পড়ছিলো। সে তাই নিজের হাতটা নিয়ে গিয়ে আদিত্যর বাম হস্তে রাখলো , তাকে বাঁধা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আদি সেইসময়ে আরো জোরে বাম দুদুটা-কে চেপে ধরলো।
অনুরিমা কাতরাতে লাগলো। আওয়াজ দিয়ে নিজের ব্যাথা প্রকাশ করতে পাচ্ছিলোনা কারণ আদিত্যর তর্জনী অনুরিমার মুখ বন্ধ করে রেখেছিলো। সে ছটফট করছিলো , যেন বিনা পানির জ্যান্ত মাছ। আদিত্য বুঝতে পারছিলো অনুরিমার খুব কষ্ট হচ্ছে। সেই কষ্ট লাঘবে আদি এক বিরল পন্থা অবলম্বন করলো। সে তর্জনী বার করে নিজের মুখটাকে অনুরিমার ঠোঁটে সিঁটিয়ে দিলো। যন্ত্রনায় কাতর অনুরিমার কাছে যেন সেটাই ছিল মুক্তির সমান। কারণ যেভাবে আদির শক্ত আঙ্গুল অনুরিমার আলজিভে ধাক্কা মারছিলো তার চেয়ে ঢেড় ভালো আদিত্যর ঠোঁটকে নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে রাখা। ফলে অনুরিমা একপ্রকার আদিকে গ্রহণ-ই করে নিলো। জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দিতে লাগলো। তাই আদিও তাকে যন্ত্রণা থেকে পুরোপুরি রেহাই দিলো। তার স্তন থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে , তাকে দুদিক দিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে আপন করে নিলো। ব্যাস ! এভাবেই শুরু হয়েগেলো ওদের লীলা খেলা। শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়ের। ........
আদিত্য অনুরিমাকে নিয়ে পুরোপুরিভাবে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অনুরিমা নিচে , আদিত্য ওর উপরে। বেলাগাম চুম্বনের বৃষ্টি পড়তে লাগলো নগ্ন হয়ে থাকা সারা শরীরে। যেন পৃথিবীতে সমীর ও সুচরিতা নামক কোনো মানুষ কখনো ছিলোনা তাদের জীবনে। অনুরিমার ভাঙা মনের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার জন্য নিয়তি যেন আদিত্যকে পাঠিয়েছিল তার জীবনে। নিয়তির সেই দায়িত্ব আদি দক্ষতার সাথে পালন করছিলো , অনুরিমার বুকে , গালে , গলায় সর্বাঙ্গে লেহন করে।
আদি অনুরিমার হাত দুটিকে নিজ হস্তযুগলের দ্বারা মুষ্টিবদ্ধ করে অনুরিমার মাথার দুপাশে রাখলো। তারপর আস্তে আস্তে কপাল হইতে নাক ঠোঁট থুতনি সবজায়গায় আলতো আলতো করে চুমু খেতে লাগলো। বাইরে আবহাওয়া তখন স্বাভাবিক হয়েগেছিলো। রাস্তায় যান চলাচলও করতে শুরু করেছিল। ঘরের ভেতরে তাদের দ্বারা পরিত্যক্ত কাপড়জামা-গুলোও হয়তো অনেকটা শুকিয়ে গেছিলো। কিন্তু সেসবের খবর কি তখন যৌন যজ্ঞে আহুতি দেওয়া দুই জোয়ান নর-নারীর খেয়ালে ছিল ? নাহঃ। .... তারা তো তখন সেই যজ্ঞে নিজেদের জ্বালিয়ে পুনরুজ্জীবিত করছিলো।
চুমু খেতে খেতে আদি অনুরিমার স্তনের নিকট এসে পৌঁছলো। সে খানিকক্ষণ দুচোখ ভোরের অনুর দুগ্ধ সমৃদ্ধ স্তনটি মন ভরে দেখলো। মনের আঁশ মেটার পর এবার ছিল জিহ্বার আকাঙ্খা। তাই দেরী না করে একমুখ লালামিশ্রিত জিহ্বা নিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়লো অনুরিমার দুধে ! মাখা ময়দার তাল এর মতো নরম দুদুতে আদি নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো। স্বামী সমীর ও কন্যা তিন্নির পর আদিই ছিল তৃতীয় মানুষ যে অনুরিমার কোমল বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিতে পেরেছিলো।
আদিত্য নিজের সর্বস্য দম লাগিয়ে মাই এর বোঁটা টেনে টেনে চুষতে লাগলো। কখনো বাম-টার তো কখনো ডান-টার। সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতেও লাগলো। সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ছিলো। তার হাত দুটো আবদ্ধ ছিল , তাই বেশি ছটফট করতে পাচ্ছিলো না। খালি মাথা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে নিজের চঞ্চল হয়ে ওঠা রূহু এর যাতনা ব্যক্ত করার চেষ্টা করছিলো। এই চঞ্চলতায় অনুরিমার মুখ তার মাথার চুলে ঢেকে গেছিলো। ফলে সে দেখতে পাচ্ছিলো না আদিত্যর মুখ তার শরীরের কোন পানের উদ্দেশ্যে গমন করতে চাইছে। যদিও দেখতে পেলেও তার বেশি কিছু করার ছিলোনা, তবু তাও , মানসিকভাবে তো প্রস্তুত রাখা যেত নিজেকে আগামীর বিপর্যয়ে। কিন্তু তার কোমল ত্বক সময়ে সময়ে তার মনে শিহরণ জাগিয়ে আদির জিহ্বার উপস্থিতি অনুভব করাচ্ছিল।
স্তন লেহনের পর আদি তার জিহ্বা-কে অনুর উদরে ঘষতে ঘষতে নাভীতে নিয়ে আনলো। নাভীর ভেতরে ঢুকে দুস্টু জিহ্বা সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। না থাকতে পেরে অনুরিমা বলে উঠলো , "please আদি , আমার হাত দুটো ছেড়ে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে আর আটকাবোনা। কিন্তু এভাবে আমাকে উত্যক্ত করোনা। "
অনুরিমার কথা আদি মেনে নিলো। ওর হাত দুটো ছেড়ে দিলো। ছাড়তেই অনু আদিত্যর চুলের মুঠি ধরে আদিত্যকে নিচের দিকে ঠেলে দিলো। যাতে সে আর জীভ দিয়ে নাভীতে আন্দোলন করতে না পারে। কিন্তু নিচে তো আরো বড়ো গর্ত আদির জিহ্বার আন্দোলনে আন্দোলিত হতে যাচ্ছিলো, সেটা অনুরিমার মাথায় আসেনি।
আদিত্য নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিল। অনুরিমার তলপেটে অবিরাম চোষণ কার্য চালিয়ে সে মূল গন্তব্যে এসে পৌঁছেছিল , যোনি ! সে ধীরে ধীরে যোনির চারদিকে নিজের মুখ ঘোরাতে লাগলো। ভগাঙ্কুর এর চতুর্দিকে আদিত্যর উপস্থিতি অনুরিমার হালকা হালকা অনুভব হচ্ছিলো পুরুষালী জিহ্বার চালচলনে। তবুও তার কিছু করার জো ছিলোনা। সে যে আদিকে কথা দিয়েছে , তাকে আর বাধা দেবেনা বলে। এখন কথার খেলাপ করে বাধা দিতে গেলে আদি যদি আরো ফিউরিয়াস হয়ে ওঠে ! তার চেয়ে বরং এই হালকা হালকা অনুভব করা ঢের ভালো। পুরুষ মানুষের পেশী শক্তির সাথে কি আর পেরে ওঠা যায় ! আর যখন সেটা বিছানায় হয় তখন তো আরোই যায়না।
বেশ কিছুক্ষণ রেকি করার পর আদি প্রস্তুত হলো অনুরিমার যোনিগহ্বরে নিজেকে নিমজ্জিত করতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বেশি সময় না নিয়ে আদি নিজের মুখ বাড়ালো চুতের পানে। বহুকাল বাদে নিজের যোনিপথে কোনো এক পুরুষের স্পর্শ অনুরিমা অনুভব করলো। সেই কবে সমীর সেখানে নিজের রাজত্ব চালিয়েছিল। ঠিক মতো মনেও নেই তার। এখন রাজা বদলেছে। অন্য কেউ এসেছে নিজের রাজপাট বুঝে নিতে।
রাজা আদিত্য তার মুখ ঢুকিয়ে দিলো সেই যোনিপথে। প্রাণটা যেন বেড়িয়ে এলো অনুরিমার। শুরু হলো মর্দন , মুখমন্ডলের সাহায্যে। উত্তেজনায় আদিত্যর মাথার চুল মুষ্টি করে চেপে ধরলো অনুরিমা ! এতোক্ষণ আদি অনুরিমার পাশে অর্ধশায়িত হয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করছিলো। তাতে তার অল্পবিস্তর অসুবিধা হচ্ছিলো বইকি। মন ভরে সুখ নেওয়ার জন্য সে তাই অনুরিমার দুটি পা প্রথমে ফাঁক করলো , তারপর তার মাঝখানে এসে বসলো। অনুরিমা বুঝতে পারলো না আদি হঠাৎ কেন তার দুটি পা দুদিকে সরিয়ে তার মাঝে এসে বসলো ! সে প্রশ্নভরা চোখে ঝুঁকে আদির দিকে একবার তাকালো। আদিও দুস্টু নয়নে অনুরিমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। যেন বোঝাতে চাইলো আসল খেলা তো এখনো বাকি সোনা ! এতোক্ষণ তো শুধুমাত্র ট্রেইলার ছিল।
আদি নিজের মুখ নামিয়ে অনুরিমার যোনিতে রেখে দিলো। অনুরিমা এবার বুঝতে পারলো আগামী কিছুক্ষণ তার সাথে কি হতে চলেছে। সে সেটাকে নিজের ভবিতব্য হিসেবে মেনে নিয়ে মাথাটা বিছানার বালিশে এলিয়ে দিলো। তারপরেই টের পেলো আদির মুখ জননছিদ্রে খণ্ডন করতে বসেছে। আদিত্য অনুরিমার কোমল চুতে প্রথমে নাক ঘষতে লাগলো। তারপর জীভ বার করে সেখানটা চাটতে লাগলো। অনুরিমার হার্টবিট দ্রুতগামী হলো। সে পা দুটো মুড়িয়ে আদিত্যর লেহন থেকে নিজের 'ইজ্জত'-কে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আদি সেটা হতে দিলোনা। সে শক্ত করে অনুরিমার কোমড় দুদিক দিয়ে চেপে ধরলো , যাতে অনুরিমা বেশি নড়চড় না করতে পারে। তারপর কোনো বিলম্ব না করে আদিত্য অনুরিমার চুতে ঠোঁট ঢুকিয়ে চুষতে লাগলো।
অনুরিমার মন কামনার সমুদ্রে সাঁতার কাটতে না পেরে পুরোপুরি ডুবে গেলো ! সে নিজের হাত নিয়ে গিয়ে আদিত্যর মাথায় রাখলো , তার চুল মুঠি করে ধরলো। আদিত্য চুষতে লাগলো অনুরিমার চুত , ক্রমাগত ! থামার যেন নামই নিচ্ছিলো না। অনুরিমাও তার ফলে বিচলিত হতে লাগলো। তার ভীতরে যে ধীরে ধীরে যৌনরসের সমাগম হচ্ছিলো , তা কিছু মুহূর্তের মধ্যেই বেরোনোর জন্য উতলা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আদিত্য তো এত সহজে সবকিছু তাড়াতাড়ি শেষ হতে দেবেনা। সে এই মুহূর্তটা-তে আরো বাঁচতে চায় , উপভোগ করতে চায়। কে জানে ভাগ্য তাকে আবার কোনোদিনও সুযোগ করে দ্যায় কিনা। তাই অনুরিমার ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর আগেই সে মুখটা সরিয়ে নিলো , যাতে উত্তেজনাটা-কে প্রশমিত করতে পারে। অনুরিমা এটা এক্সপেক্ট করেনি। সে আবার মাথাটা অল্প তুলে প্রশ্নসূচক চাউনি নিয়ে আদিত্যর দিকে তাকালো। আদিত্য মুচকি হেসে কিছুটা পিছিয়ে এলো। তারপর অনুরিমার ডান পা-টা ধরে একটান দিয়ে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে অনুরিমাকে উল্টো করে উপুড় হয়ে শুইয়ে দিলো বিছানায়। এবার কি তবে আদিত্য অনুরিমার পশ্চাদে গমন করতে চলেছিল !
অনুরিমা কিছু বলছিলো না। বলার মতো আর পরিস্থিতিতেই ছিলোনা। সে তার ভবিতব্য মেনে নিয়ে ছিলো। নিজেকে পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে দিয়েছিলো আদিত্যর সামনে। তাই আদিত্য অবাধ কিন্তু অনৈতিক অধিকার পেয়েগেছিলো অনুরিমার শরীর নিয়ে খেলা করার। সেই কারণে আদিত্য এই মুহূর্তটাকে এত সহজে শেষ হতে দিতে চাইছিলো না।
আদিত্য এবার অনুরিমার পা এর গোড়ালি থেকে শুরু করলো নিজের যৌনযাত্রা। প্রথমে পায়ের চেটো ধরে চাটলো। অনুরিমার সুড়সুড়ি লাগছিলো। সে পা সরাতে চাইলো তবু সরাতে পারলো না , কারণ আদি নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিলো। আস্তে আস্তে পায়ের গোড়ালি হয়ে আদিত্য উরুপ্রদেশের দিকে এগোতে লাগলো। পা এর সর্বাংশে চুমু খেয়ে খেয়ে কামড়ে দিয়ে একেবারে লাল করে দিলো।
আস্তে আস্তে হাঁটুর মালাইচাকিতে এসে পৌঁছলো। সেখানে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করলো আদিত্য। তারপর আরো উপরের দিকে উঠতে উঠতে অবশেষে অনুরিমার নিতম্বে এসে পৌঁছলো আদি। সাত-পাঁচ কিছু না ভেবে আদি অর্বাচীনের মতো অনুরিমার নিতম্বছিদ্রে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমা বলে উঠলো , "আদি !! কি হচ্ছে এটা ?? ছিঃ !!....."
এবার আদিত্য একটু কড়া গলায় বললো , "চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমার যা করার আমি করছি। "
আদির গলার টোন শুনে অনুরিমা অল্পবিস্তর ভয় পেয়ে গেলো। সে আর কিই বা করবে , তার যে এখন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই। অগত্যা তাকে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতেই হবে। তাই আদির কথা মেনে নিয়ে অনুরিমা আবার চুপ করে গেলো , এবং আদির জংলী উচ্চাভিলাষের সাথে আপোষ করে নিলো।
অনুরিমা চুপ হয়ে যাওয়ায় মুচকি হাসি হেসে আদিত্য বললো , "গুড গার্ল ! নাও ডু হোয়াট আই সে। এতে তোমারই মঙ্গল। তুমি আরো বেশি প্রিপেয়ার্ড হয়ে সমীরকে ওর কাকোল্ড ফ্যান্টাসির ডেমো দেখাতে পারবে। এরপর তোমাকে আর কারোর সাথে কোনো রিহার্সাল করতে হবেনা। তুমি ডাইরেক্ট মঞ্চে উপনীত হবে। ট্রাস্ট মি , ইউ ক্যান , ইউ উইল। "
এই বলে অনুরিমাকে অনুপ্রাণিত করে আদিত্য যেন লাইসেন্স পেতে চাইলো নিজের কামনার ঘোড়াকে বেলাগাম করে দৌড় করানোর। অনুরিমাও কিছু বললো না। বলার মতো কিছু ছিলোও না। পরিস্থিতি তাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে , বা বলা ভালো শুইয়েছে , তা সে হাড়ে হাড়ে বুঝছে !
আদির হাত তখন অনুরিমার নিতম্বের ভেতর ছিল। সে তার হাত-কে ঘুরিয়ে নিতম্বের ভেতর চালনা করতে লাগলো। অনুরিমার বুকের ভেতরটায় হৃদস্পন্দনের অধিক কম্পনে তোলপাড় হয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য আবার নিজের জিহ্বা-কে অনুরিমার শরীরের নিকট নিয়ে এলো। কোমল পশ্চাদে লেহন করা শুরু করলো। দক্ষ কারিগরের মতো আদিত্য নিজের জিহ্বাকে তুলির ন্যায় প্রয়োগ করে লালারসের অস্থির চিত্র অনুরিমার গায়ে এঁকে দিতে লাগলো। না চাইতেও অনুরিমার মুখ দিয়ে শীৎকার বেরোতে শুরু করলো। যা আদিত্যর যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে প্রচ্ছন্ন ভাবে সাহায্য করছিলো।
আদিত্য অনুরিমার নগ্ন পিঠে রসালো চুম্বন বসাতে লাগলো। চুম্বন এতোটা আঁঠালো ছিল যে প্রতিবারের অনুরিমার দেহের সহিত আদিত্যর ঠোঁটের স্পর্শে চোঁক চোঁক করে আওয়াজ হতে লাগলো। আদিত্য ঠোঁটে চাপ দিয়ে দিয়ে অনুরিমার পিঠে চুমু দিচ্ছিলো। এই করতে করতে সে ঘাড় অবধি পৌঁছলো। নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে সে অনুর গলাটা চেপে ধরলো। মাথার চুল গুলো একপাশে বামদিকে করে রাখলো। তারপর ডান দিক দিয়ে অনুরিমার ঘাড় ঘুরিয়ে আদি পেছন থেকে অনুরিমার গলায়, ঘাড়ে , মুখে , ঠোঁটে চুমু দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর দুজনেই বুঝলো যে এই উদ্ভট পজিশনে তারা কমফোর্টেবল নয়। তাই আদি আবার অনুরিমাকে বিছানায় ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে নিলো। এবার দুজনে একে অপরের দিকে সামনাসামনি চেয়ে ছিল।
আদিত্য সময় নষ্ট না করে সোজা অনুরিমার সাথে ঘন ঠোঁট চুম্বনে লিপ্ত হলো। অনুরিমারও কিছু করার ছিলোনা। তাই সে আদিত্যকে আঁকড়ে ধরলো। বিছানায় দুই নগ্ন শরীর একে অপরের সাথে লেপ্টে ছিল। আদিত্যর হাত অনুরিমার বগলের ভেতর দিয়ে পিঠের পিছনে , তো অনুরিমার পা আদিত্যর কোমরের উপর। আদিত্য অনুরিমাকে শ্বাস নেওয়ার সময় পর্যন্ত দিচ্ছিলো না। এক নাগাড়ে মুখের চারিদিকে চুমু খেয়েই যাচ্ছিলো। অনুরিমাও কামের স্রোতে তখন ভেসে গেছিলো।
অবশেষে এলো সেই মোক্ষম মুহূর্ত যার জন্য যৌনক্রিয়ার এত যাতনা যুগলেরা সহ্য করে থাকে। মিলনের অন্তিম ক্রিয়া , লিঙ্গ দ্বারা যোনীছিদ্রে মর্দন ! আর বিন্দুমাত্র সময় অপব্যয় না করে আদিত্য নিজের খাঁড়া হয়ে থাকা দন্ডায়মান লিঙ্গটিকে অনুরিমার কোমল চুতে ঢুকিয়ে দিলো। তারস্বরে চিৎকার করে উঠলো অনুরিমা। ওর প্রানপাখিটা যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছিল।
আদিত্য ধাক্কা দিতে লাগলো , আর আদিত্যর শিশ্ন যোনি ফালাফালা করে নিজের রাস্তা সুগম করে যেতে লাগলো। আদিত্যর খাম্বা সমীরের থেকে অনেক লম্বা ছিল। তাই অনুরিমার ব্যাথার পারদ সেরকমভাবেই গগনচুম্বী হচ্ছিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো বিয়ের দশটা বছর পর অনুরিমা আরো একবার নিজের ভার্জিনিটি লুস করতে চলেছে। সত্যিই সে এই যুগের দ্রৌপদী হয়ে উঠেছিলো। শাস্ত্রে বলে দ্রৌপদী বরদান প্রাপ্ত ছিল, যতবার সে ভিন্ন ভিন্ন পাণ্ডবপুত্রদের সাথে সঙ্গম করবে ততোবার তার যোনি পূনরায় কুমারীত্ব লাভ করবে নতুন সঙ্গীর জন্য।
প্রথম কিছুক্ষণ অনুরিমার কষ্ট হলেও , পরে ধীরে ধীরে তা সয়ে গেলো। এবার শুধু ওঠা নামা আর তার ফলনে কম্পন চলিতে লাগলো। অর্থাৎ আদিত্যর লিঙ্গ অনুরিমার ছিদ্রে ওঠা নামা করছিলো , এবং তার দরুন অনুরিমার সারা শরীর কম্পিত হচ্ছিলো। এরকম বেশ কয়েকবার চললো , চলতে থাকলো , চলতেই থাকলো। এতোটা ব্যাকুল হয়ে আদিত্যর সারা শরীর এই ক্রিয়ায় মত্ত ছিল, যেন আদিত্য জীবনের শেষ কিছু মুহূর্ত উপভোগ করছিলো ।
অবশেষে কোনো শতর্কবাণী না দিয়েই আদিত্য নিজের বীর্য অনুরিমার ভেতরে ঢেলে দিলো ! একের পর এক কামনার ঢেউ অনুরিমার যোনিতে আছড়ে পড়তে লাগলো। সর্বনাশ ! অনুরিমা অপবিত্র হয়েগেলো যে ! লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে আদিত্য অনুরিমার বুকের উপর আছড়ে পড়লো। অনুরিমার দুদু যেন আদির বক্ষতলে পিষ্ট হয়েগেলো। আদি নিজের লিঙ্গ বের করলো না, ওভাবেই অনুরিমার গুহার ভেতর ঢুকিয়ে রেখে দিলো। যেন বোঝাতে চাইলো সে অনুরিমার যোনির উপর দখল নিয়ে ফেলেছে। আর সে নিজের অন্যায্য অধিকার ছাড়বে না।
অনুরিমাও ততোক্ষণে হাঁফিয়ে উঠেছিল। তাই সেও বেশি কিছু না ভেবে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। যা সর্বনাশ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে , এখন আর তা নিয়ে ভেবে কি হবে। ফলে অনুরিমা নিজের শরীরটাকে মনের বাঁধন হইতে মুক্ত করে আদিত্যর পিঠে হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আগেই বলেছিলাম , অনুরিমা তো শুধু চুমু চেয়েছিলো আদিত্যর কাছে , তাও রিহার্সালের জন্য। কিন্তু আদিত্য কি শুধু চুমুতে থামবে নাকি সে সমীরের স্ত্রীর সাথে ঘুমু দেওয়ার চেষ্টাও করবে ? শেষে সেই শঙ্কাটাই সত্যি হয়ে বাস্তব রূপ নিলো। নিয়মের বেড়াজালের তোয়াক্কা না করে দুই নগ্ন শরীর তখন বিছানায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে একেবারে মিশে গিয়ে গভীর নিদ্রায় অবতীর্ণ হলো।
আমার দুহাতে তোমার স্তন
দুটো হাতবোমা, এই সভ্যতার ধ্বংস চাই।
আদমের জারজ আমি
তবুও তোমার সঙ্গমে আমার মুক্তি চাই।
একটা জীবন, একমাত্র তুমি
শুধু কবিতায় নয়, চরিত্রহীন অসামাজিক আমি
তোমাতে মুক্তি চাই।
.
অনেকের সাথে মিশে আমি আর নষ্ট নই
শুধু আগুন খেয়ে তোমাতে নষ্ট হতে চাই,
কবিতা লেখার জন্য বহুগামি শাড়ীর তলায় নষ্টামি
হাজারো সুচরিতার মাঝে আমি একা,
বন্ধুত্ব নিয়ে নষ্টামি প্রেম আর কবিতার তফাৎ
আর নয় ,
এইবার শুধু ধ্বংস চাই।
এক চরিত্রহীন কবিতার মেরুদন্ডে
আমি তোমার উরু বেঁয়ে রক্ত হয়ে ঝরতে চাই।
.
বড্ড মিথ্যা আমি
আমার ধ্বংস স্তূপে ছড়ানো তুমি, তোমার মুহুর্ত,
তোমার বুকের কবিতার নগ্ন স্তূপ।
তোমার নখের ডগায় ভয়ানক সায়ানাইট,
তোমার ঠোঁটে আগুন,
আমি সেই আগুন চুষে এইবার মরতে চাই।
এ কোন কবিতা না,
একটা ছবি ভ্যান গগ এবং মৃত্যু।
আমি চরিত্রহীন !
স্বপ্নে যেন এই কথাগুলোই অনুরিমাকে বলতে চাইলো আদিত্য।
পর্ব ২৩
সমীরের আজ বড্ড বউটার কথা মনে পড়ছিলো। ভালোবাসার টান বোধহয় একেই বলে। স্ত্রী ওদিকে পরপুরুষের কামের জালে জড়িয়ে পড়েছে , তো এদিকে স্বামীর মন হঠাৎ করে উচাটন হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখন এই উচাটন মন আর কিই বা করবে। যা সর্বনাশ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে সমীরের অগচরে। তাই হয়তো সমীরের মন আজ টিকছিলো না অফিসের ফাইলে।
অফিসে বসে আনমনে সমীর ভাবছিলো বিগত কয়েকদিন ধরে সে জেনে না জেনে কতখানি অনুরিমার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে ফেলেছে। বেচারি ! সে তো তাকে ভালোবাসে। আর সেই কিনা তার ভালোবাসাকে চোখের সামনে অন্য কারোর দ্বারা লুটতে দেখতে চায় ? নাহঃ নাহঃ ! ফ্যান্টাসি ফ্যান্টাসি করে না জানি সে কতদূর এগিয়ে গেছে। তারই জন্য অনুরিমাকে রাজীবের মতো এক অজানা অচেনা পুরুষের সাথে ভিক্টোরিয়ায় দেখা করতে যেতে হয়েছিল। রাজীব তার কাছে আসার চেষ্টা করেছিলো। এসব নিশ্চই অনুরিমার ভালো লাগেনি। না লাগারই কথা। অনুরিমা যে তাকে ছাড়া আর কাউকে কোনোদিনও ভালোবাসেনি। অনুরিমা এই যাতনা সইবে কি করে ? না না সমীর , এটা ঠিক হচ্ছেনা। একদমই ঠিক হচ্ছেনা। তুই ভুল করছিস। সমীর বারংবার নিজের মনকে বলছিলো আর দুষছিলো। সে ঠিক করে নিয়েছিল যে অনেক হয়েছে আর না। এবার তার মনকে দড়ি পড়াতে হবে। নাহলে তার প্রতি অনুরিমার বিশ্বাস, ভালোবাসা সব নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা সে কিছুতেই মানতে পারবে না। তাই আজ সে বাড়ি গিয়ে অনুরিমাকে বলবে তার কোনো কাকোল্ড এক্সপিরিয়েন্স নেওয়ার দরকার নেই। সে যেমন আছে তেমনই ঠিক আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে সমীর একবার নিজের ফোনের দিকে তাকালো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো অথচ তার বউ তাকে আজকে একটাও কল দেয়নি ! Strange ! এরকম তো সে কখনো করেনা। তাহলে আজ কি হলো ? বলেছিলো ঠিকই যে সে আজ ওই সুচরিতার সাথে দেখা করতে যাবে। আর সুচরিতার সাথে কথা বলতে শুরু করলে তো অনুরিমার আর বাকি দুনিয়ার খেয়াল মাথায় থাকেনা। বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা ! কি জাদুই না জানে ওই মায়াবিনী সুচরিতা। এইজন্যই মেয়েটাকে আমার একদম ভালো লাগেনা। ভীষণ ম্যানিপুলেটিভ। না জানি আমার অনুকে কিনা কিই বুঝিয়ে দেবে ! কিন্তু অনুরিমার তো বিকেলের আগেই বাড়ি ফিরে আসার কথা। তাহলে সে ভুললো কি করে আজ আমায় কল করতে ? দেখি একবার ফোনটা করে।
নিজের মনে মনে এইভেবে সমীর ফোনটা হাতে নিলো। নিয়ে অনুরিমার নাম্বারে ডায়াল দিলো। কিন্তু নট্ রিচেয়েবেল ! কেন ? আজ বৃষ্টি হয়েছে বলে কি টাওয়ার এর প্রবলেম ? বেশ খান তিনেক বার সমীর ট্রাই করলো। প্রতিবার একই কথা , "The number you have dialed is not reachable at this moment, please try after sometime, or send a voice message by dialing............."
সমীর ফোনটা রেখে দিলো। ভাবলো কিছুক্ষণ পরে আবার ট্রাই করবে , না পেলে নাহয় বাড়িতে একটা কল দেবে। এখন তো সবে বিকেল হয়েছে , তাই বাইরে থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। এইভেবে সমীর নিজের মনকে আস্বস্ত করলো। কিন্তু বাস্তবে সমীরের জীবনে নিস্তব্ধে যে প্রলয় এসে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল , তার পূর্বাভাস কোনো আবহাওয়া দপ্তর থেকে পাওয়াও অসম্ভব ছিল। স্বামীর স্ত্রীর জীবনে অলরেডি তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে গেছিলো , আর সেটা তার পরিচিত রাজীব নয়, তার স্ত্রীয়ের বান্ধবীর প্রাক্তন স্বামী আদিত্য সেনগুপ্ত। কখন কোথা থেকে সম্পর্কে সিঁধ কেটে চোর ঢুকে পড়ে মন চুরি করতে , তার খেয়াল কেই বা রাখে। ভীত নড়বড়ে হয়ে গেলে সিঁধ তো কাটা হবেই। কেউ আটকাতে পারবে না তখন।
এসপ্ল্যানেড এর এক ছোট্ট লজে তিনতলার এক ঘরে তখন দুই নগ্ন নর নারী সামাজিক নৈতিকতার বিস্মরণ ঘটিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে গভীর নিদ্রায় ও অলীক স্বপ্নে মগ্ন ছিল। বিকেল বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের কোলাহল বাড়তে শুরু করলো। খোলা জানলা দিয়ে সেই আওয়াজ কানে পৌঁছতে শুরু করলো। এবং স্বাভাবিক নিয়মেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর অনুরিমার ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলে সে দেখলো বাস্তব পৃথিবীটা কে। রিয়েলাইজেশন হলো সে এখন কোথায় আছে , কি অবস্থায় আছে এবং সর্বোপরি কার সাথে আছে !
চোখ দিয়ে অঝোরে জল বেরিয়ে এলো, কোন বাঁধ যেন দেওয়া যাচ্ছিলো না অশ্রুনদীতে। ক্রমাগত বাধা হীন ভাবে বয়ে চলেছিলো চোখ থেকে গাল বেয়ে। প্রথমে নিস্তব্ধে পরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু হলো। সেই ক্রন্দনের আওয়াজে আদিত্যর ঘুমও ভাঙলো। সেও প্রথমে ঘোরের মধ্যেই ছিল , চারদিকটা চেয়ে দেখলো আগে। তারপর দেখলো তার পাশে বিছানায় বসে এক রূপসী পরী কাঁদছে। চোখের সামনে অনুরিমার খোলা নগ্ন পিঠ দেখে মন আবার চাইলো দুপুরের অঘটনের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে। কিন্তু এখন যে হাওয়া অনুকূলে নেই তা অনুরিমার কান্না দেখেই আদি বুঝতে পারছিলো। তাই এখন সময় ছিল কামনার খোলস ছেড়ে মানবিকতার পোশাক পড়ার। প্রেমিকের বদলে ফের একবার বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ানোর ও মিথ্যে শান্ত্বনা প্রদান করার।
আদিত্য উঠে বসে পেছন থেকে অনুরিমার কাঁধে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ বেঁকিয়ে অনুরিমা সেই হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে দিলো। সে শুধু দুঃখী নয় , রেগেও ছিল। আদিত্য পরিস্থিতি বুঝে আর বেশি বাড়াবাড়ি করলো না। সে বিছানা থেকে উঠে মেলতে থাকা নিজের জামা কাপড় গুলো এক এক করে নিয়ে পড়ে নিলো। তারপর অনুরিমার জামাকাপড় গুলো দড়ি থেকে তুলে বিছানায় অনুরিমার সামনে এনে রাখলো।
অনুরিমা সেগুলো এক এক করে পড়ে নিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করলো। তারপর আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অনুরিমা নিজের ব্যাগ নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলো। তার পায়ের যন্ত্রণাটা এখনও অল্পবিস্তর ছিল , আগে তা কামের বশে টের পায়নি। এখন আবার ব্যাথাটা একটু ধরেছিলো। আদিত্য তা দেখে অনুরিমাকে আটকাতে গেলো , অনুরিমা খুব বাজে ভাবে রিয়েক্ট করবে তা জেনেও। হলোও তাই। যখন আদিত্য অনুরিমাকে পেছন থেকে গিয়ে হাত ধরে টানলো , তখন অলরেডি ইর্রিটেটেড হয়ে থাকা অনুরিমা আরো রেগে গিয়ে এক কষিয়ে চড় বসালো আদিত্যর গালে। আদিত্য হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনুরিমা রিয়েক্ট করবে সেটা কাঙ্খিত ছিল , তবে এতোটা রুক্ষ ভাবে করবে সেটা জানা ছিলোনা।
অপমানে আদিত্যর পা যেন মাটিতে আটকে গেছিলো। সে স্থির হয়ে রইলো , একটুও নড়াচড়া করলো না। অনুরিমা বড়ো বড়ো চোখ করে কটমটিয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ, বিরক্তি, উষ্মা প্রকাশ করছিলো, যেন সে আদিকে গিলে ফেলতে চায়। অনু ফের ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার পানে যেতে লাগলো। এবার আদিত্য কিছুটা রেগে ক্রোধিত গলায় অনুরিমাকে ডাকলো , "অনুরিমা !!!!......"
আদিত্যর কড়া গলার আওয়াজ শুনে অনু থমকে গেলো কিছু মুহূর্তের জন্য। আদিত্য গটমটিয়ে হেঁটে অনুরিমার কাছে এলো , হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘোরালো। জবাবদিহি চাইলো এভাবে থাপ্পড় মারার, "তুমি আমাকে চড় মারলে কেন ? কি এমন ক্ষতি করেছি তোমার ? আমাদের মধ্যে যা হয়েছে , দুজনের প্রচ্ছন্ন সম্মতিতেই হয়েছে। মানছি তুমি এসব করতে চাওনি , কিন্তু আল্টিমেটলি তুমি তো আমাকে বাঁধা দিতে পারোনি। স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিলে। আর এখন তুমি আমাকে কাটগড়ায় দাঁড় করাচ্ছ ?"
"হ্যাঁ , করাচ্ছি। কারণ আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম , বন্ধু হিসেবে। আর তুমি সেই বিশ্বাস ভেঙেছো। তুমি যখন জানতেই যে আমি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ছি , তাহলে কেন নিজেকে সংযত করলে না ? কেন আমার দুর্বলতার সুযোগ এভাবে নিলে আদি ? লজ্জা করলো না একবারও তোমার তা করতে? ছিঃ! এই তুমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলে ? এই তোমার বন্ধুত্ব ?" , এই বলে অনুরিমা অঝোরে কাঁদতে লাগলো।
অনুর এই একগুচ্ছ প্রশ্নবাণের উত্তর আদির কাছে ছিলোনা। সে কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছিলো না। অগত্যা চুপ করে মাথা নিচু হয়ে সে অনুরিমার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। আর সেই সুযোগে অনুরিমা আদিত্যর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে খানিকটা খুঁড়িয়ে, দৌড়াতে দৌড়োতে দরজা দিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। আদিত্য চেষ্টা করলো পেছন পেছন খানিকটা গিয়ে অনুকে ডেকে থামানোর, কিন্তু অনু তখন শোনে কার কথা ! সে চোখের জল মুছতে মুছতে লিফট দিয়ে নেমে চলে গেলো। আর আদিত্য? সে বেচারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
বাইরে বেরিয়ে অনুরিমা একটা ট্যাক্সি খুঁজতে লাগলো। পেয়েও গেলো। ট্যাক্সিতে উঠে সে প্রথমে তার ব্যাগটা চেক করলো, সবকিছু রয়েছে কিনা , কিছু ছেড়ে আসেনি তো। ফোনটা দেখলো ডেড হয়ে পড়ে আছে। অনেক কষ্টে অন করে নেটওয়ার্ক পেলো। নেটওয়ার্ক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন বাজলো , সমীরের নম্বর।
ফোন তুলতেই সমীর জিজ্ঞেস করে উঠলো , "কি গো , এতোবার করে ফোন করছি , ফোন আনরিচেবল আসছে ? বাড়িতেও তখন ফোন করলাম , বললো তুমি ফেরোনি। এখন কোথায় আছো তুমি ? বাড়িতে? ফিরেছো ?"
অনুরিমার প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম হয়েছিল। অপরাধবোধে সে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ থেমে কোনোমতে নিজের কান্নাকে আটকে সে উত্তর দিলো , "না.... , আমার এখনও ফেরা হয়নি। "
"এখনও ফেরোনি ??", অবাক হয়ে সমীর জিজ্ঞেস করলো।
"নাহঃ। ...."
"কোথায় আছো ? কি করছো ? কখন ফিরবে ?"
"আমি আসছি , এক্ষুনি আসছি। ট্যাক্সিতেই রয়েছি।"
"ঠিক আছে সাবধানে এসো", কিছুটা হতাশ গলায় সমীর বললো।
হুম, এসে সব বলছি ", বলেই অনুরিমা ফোনটা কেটে দিলো।
মুখের উপর ফোনটা কেটে দিলো ! অনুরিমার এরূপ ঠান্ডা ও অপ্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া দেখে , শুনে , অনুভব করে সমীর হতবাক ! মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো, "কি হয়েছে অনুরিমার ? শরীরটা ঠিক নেই নাকি ?"
ওদিকে অনুরিমা ফোনটা রেখেই আবার অঝোরে কাঁদতে লাগলো। ট্যাক্সির ড্রাইভারটা মানবিকতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলো , "কেয়া হুয়া মেমসাহাব , সাব ঠিক হ্যাঁ না ?"
অনুরিমা তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিলো। বললো কিছু হয়নি তার। ট্যাক্সি ড্রাইভারটাও আর বেশি কথা বাড়ালো না। চুপচাপ অনুরিমাকে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পৌঁছে দিতে ফোর্থ গিয়ারে দিলো গাড়ি। রাস্তা মোটামোটি ফাঁকা থাকায় তাড়াতাড়ি লেক টাউনে ঢুকে গেলো গাড়ি। বাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির দরজায় এসে কড়া নাড়লো অনুরিমা।
সমীর দরজা খোলায় বেশ খানিকটা অবাক হলো অনু। এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফেরার কারণ জিজ্ঞেস করলো তো সমীর উত্তর দিলো যে তার আজ কেন জানিনা অফিসের কাজকর্মে মন টিকছিলো না , বারবার নিজের স্ত্রীয়ের কথা মনে পড়ছিলো। তাই সাত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেড়িয়ে এসছে। এই সবে ফিরলো সে। বাড়ি ঢোকার ঠিক আগে সে অনুরিমাকে ফোন করেছিলো। ফোনে যখন কথা হচ্ছিলো তখন সে ভিআইপি রোডে সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল। একজন ফুল বিক্রেতার কাছ থেকে নিজের বউয়ের জন্য ফুল কিনেছিলো। ভেবেছিলো অনুরিমা হয়তো এতোক্ষণে বাড়িতে চলে এসছে। সেটা জানতেই তখন সে অনুরিমাকে কল করেছিলো। সময়ের আগে তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরিমাকে ফুল দিয়ে সারপ্রাইস দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ফোনে তো অনুরিমা বললো সে আসছে। মানে এখনও বাড়িই ফেরেনি !
দুঃখী মুখ করে সমীর কথা গুলো বলে গেলো। সমীরের কথা শুনে অনুরিমার বুকটা ফেটে গেলো। চেষ্টা করেও দু এক ফোঁটা জল চোখ দিয়ে বেয়ে পড়ার থেকে আটকাতে পারলো না নিজেকে। অনুরিমার মুখ চোখ দেখে সমীরের ভালো ঠেক ছিলোনা। সে এই অশ্রুর পিছনের যথার্থ কারণ জিজ্ঞেস করতেই যাবে কি খেয়াল করলো অনুরিমার পায়ে ব্যাণ্ডেজ দেওয়া। সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো তার স্ত্রীয়ের পায়ে কি হয়েছে ??
অনুরিমা বললো সব কথা দরজায় দাঁড়িয়ে বলা যাবেনা। সমীর তাকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে এলো। অনুরিমার এই অবস্থা দেখে তার শ্বশুর শাশুড়িও চিন্তিত হয়ে পড়লো। তাকে নিয়ে সবাই ধর ধর করতে লাগলো। অনুরিমা মনে মনে ভাবলো এতো ভাগ্য করে সে এরকম একটা কেয়ারিং শশুর বাড়ি পেয়েছে , যেখানে স্বামীর সাথে সাথে তার শশুর শাশুড়িও তার এতো খেয়াল রাখে , সেখানে সে অবুজের মতো এরকম একটা কাজ করতে পারলো কি করে। পুরোনো কলকাতার বনেদি মল্লিক বাড়ির বউ হয়ে সে এক পরপুরুষের সাথে এসপ্লানেডের এক ছোট্ট হোটেলে সহবাস কি করে করতে পারে , তাও আবার তার বান্ধবীর প্রাক্তন স্বামীর সাথে ! ছিঃ! তার ওই লেক টাউনের খালের জলে দড়ি কলসি নিয়ে ডুবে মরতে ইচ্ছে করছিলো।
এসব ভেবে ভেবে অনুরিমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত অশ্রু নির্গত হচ্ছিলো , আর তার পরিবারের লোকজন ভাবছিলো ব্যাথার কারণে সেই অশ্রু নির্গত হচ্ছে। পায়ের ব্যাথা তো সে কখন সেরে গ্যাছে আদিত্যর শুশ্রূষায়। এটা তো ছিল অনুশোচনা , অপরাধবোধ, এবং আত্মগ্লানির ব্যাথা যা ভেতর থেকে তাকে শেষ করে দিচ্ছিলো।
খানিকক্ষণ শুশ্রূষা যত্ন-আত্তি করার পর অবশেষে সমীর তার বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে অনুরিমাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরে তাকে বিছানায় বসিয়ে আলতো করে তার উরুতে সমীর নিজের হাত বোলালো। খুব নরমভাবে সে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলো , "কি হয়েছে ? কিভাবে কাটলো পা ?"
অনুরিমা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। সত্যিটা সে বলতে পারবেনা , আর মিথ্যে সে বলতে পারেনা। তাই অর্ধ সত্যি ও অর্ধ মিথ্যের মিশ্রণ করতে হলো তাকে। খানিকটা "অশ্বত্থামা হত,.. ইতি গজ" এর মতো। সে বললো বাড়ি ফেরার পথে তুমুল বৃষ্টি নেমেছিল। বাস ট্যাক্সি কিচ্ছু পাওয়া যাচ্ছিলো না। একটা শেল্টার খুঁজে দৌড়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিতে গিয়ে ভেজা ফুটপাথে পা পিছলে সে পড়ে যায়। পথচলতি এক অজানা পুরুষ তাকে এসে সাহায্য করে। তার জন্য ওষুধের দোকান থেকে ক্রেপ ব্যান্ডেজ , মলম , ওষুধ ইত্যাদি নিয়ে আসে , এবং তার শুশ্রূষা করে। সেই লোকটার পরামর্শে অনুরিমা কাছে পিঠের এক ছোট্ট রেস্টুরেন্ট কাম হোটেলে কিছুক্ষণ স্টেই করে। বৃষ্টি ছাড়লেও রাস্তায় যানবাহন বেশি চলাচল করছিলো না। গুটিকয়েক ট্যাক্সি থাকলেও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ট্যাক্সির আগুন ভাড়া চড়িয়ে রাখা হয়েছিল। তার উপর অনুরিমার করুণ অবস্থা দেখে কিছু অসৎ হলুদ ট্যাক্সিওয়ালা খুব বেশি ভাড়া চার্জ করছিলো। তাই সে সঠিক সময়ে সঠিক দামের মিটার অন থাকা নো রিফিউসাল ট্যাক্সির অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে পেলোও , এবং তাতে করে বাড়ি ফিরে এলো। তাই তার আসতে এতোটা দেরী হয়েছে আজ।
অনুরিমার সাজিয়ে বলা কথাগুলোর মধ্যে কোনো ফাঁকফোকড় ছিলোনা। তাই সমীর সবটাই বিশ্বাস করলো। অনুরিমাই জানতো তার এই কথার মধ্যে কতোটা সত্যি আর কতোটা জল মেশানো আছে। সত্যিই তো আদিত্য একজন অজানা পুরুষই , তার সবটা জানা থাকলে কি আর অনুরিমার তার পাতা কামের ফাঁদে পা থুড়ি শরীরটা দিতো।
যাই হোক , সবকিছু শুনে সমীর আর কথা বাড়ালো না। অনুরিমাকে রেস্ট নিতে বললো। বলে সে ডাইনিং রুমে ফিরে এলো। নিজের বাবা মা-কে সবটা বললো। বাবা মাও পুরো ব্যাপারটা নিয়ে অনুরিমার প্রতি খুব সহানুভূতিশীল হলো , ছেলেকে বউমার পাশে থাকতে বললো। যে বউমা একা হাতে সবটা সামলায় , সেই বউমা আজ আহত। এখন তাকে সামলানো বাড়ির বাকি সদস্যদের কর্তব্য। এই ভেবে তারা সবাই এক সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে অনুরিমা আজ সারা সন্ধ্যে বিশ্রাম নেবে। রাতের খাবারটা নাহয় তার শাশুড়ি মা বানিয়ে নেবে। সমীর যদিও তার মায়ের দিকটাও বিবেচনা করে হোম ডেলিভারি থেকে খাবার আনতে চাইলো , কিন্তু সমীরের মা সত্বর জানিয়ে দিলো যে আজকে বউমা কে বাইরের খাবার খাওয়ানোর ঝুঁকি নেওয়া যাবেনা। কোন খাবার থেকে ভেতরে কি ইনফেক্শন হয়ে যা , তা কে জানে ? তার চেয়ে বরং আজ বাড়িতেই রান্না হবে এবং চারুলতা দেবী অর্থাৎ সমীরের মা নিজেই রান্না-বান্নার সব দায়িত্ব নেবে। কালকে ডাক্তার দেখিয়ে তারপর বউমা-কে কোনো কাজ করতে অ্যালাও করা হবে, তার আগে নয়।
এদিকে ডাইনিং রুমে বাবা মা ও ছেলের মধ্যে এসব আলোচনা হচ্ছিলো , তো ওদিকে বেডরুমে শুয়ে শুয়ে অনুরিমা আজকে ঘটে যাওয়া সব মুহূর্তগুলোকে এক এক করে সাজিয়ে পূনরায় মনের পর্দা দিয়ে দেখছিলো, এবং না চাইতেও সেসব মুহূর্তগুলো ফীল করে যাচ্ছিলো। পাশে ছোট্ট তিন্নি অঘোড়ে ঘুমোচ্ছিলো। কিছুক্ষণ নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মন কে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে ও মন প্লিজ আমাকে বিপথে চালিত করোনা। দেখো আমি শুধু কারোর স্ত্রী নয় , কারোর মাও , এবং কারোর বউমাও বটে। এতগুলো সম্পর্কের মায়াজাল ভেদ করে তুমি আমাকে অনির্দিষ্ট ভবিতব্যের দিকে ঠেলে দিওনা। দোহাই তোমার , পায়ে পড়ি।
পর্ব ২৪
রাতে ডিনার সেরে সমীর অনুরিমাকে নিয়ে ঘরে এলো। তিন্নি তার ঠাকুমা ঠাকুরদার কাছে ছিল। মায়ের চোট লেগেছে , তাই ওকে বলে দেওয়া হয়েছিল আজ যাতে সে মায়ের ধারে কাছে যেন না যায়। মায়ের পায়ে লেগেছে , দুস্টুমি করতে গিয়ে যদি আবার পায়ে ব্যাথা লাগিয়ে দ্যায় ছোট্ট তিন্নি। তাই মায়ের পা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তিন্নি থাকবে ওর ঠাকুমা ঠাকুরদার দায়িত্বে ও জিম্মায়।
ঘরে এসে অনুরিমা বালিশে মাথা দিয়ে বিছানায় গা-টা এলিয়ে দিলো। সমীরের মনে পড়লো সে অনুরিমার জন্য যে ফুলগুলো নিয়ে এসছিলো সেগুলো তো দেওয়াই হয়নি তাকে। সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে ফুলগুলো বের করে অনুরিমাকে দিলো। ভারাক্রান্ত অনুরিমার মনে কিছুটা হাওয়া বাতাস এলো , যা তার মন ভালো করে দিলো। অনুরিমা সানন্দে ফুলগুলো গ্রহণ করলো। অনুরিমা ফুলগুলি-কে যত্ন সহকারে কাপবোর্ডের উপর রাখা ফুলদানির কাছে নিয়ে গেলো। কাগজের ফুল সরিয়ে সমীরের আনা সেই প্রাকৃতিক ফুলের গুচ্ছ ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখলো। জীবনটাও তো খানিকটা এরকমই এক ফুলদানির মতো। বেশিরভাগ সময়েই প্রাকৃতিক ফুলের অভাবে আমরা কাগজের ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখি , এবং তাতে আশা করি প্রাকৃতিকতার। কোনটা কাগজের ফুল এবং কোনটা প্রাকৃতিক সেটা বোঝার মতো দৃষ্টি এবং মনও তো থাকা দরকার। এক্ষেত্রে যেমন ঈশ্বরই জানেন অনুরিমার জীবনে প্রাকৃতিক ফুল কে এবং কাগজের ফুলই বা কে।
"অনুরিমা ....."
"হুম। .... বলো সমীর। ...."
"আমি আজকে অফিসে অনেক ভাবলাম। "
"কি নিয়ে ?"
"আমাদের সম্পর্কটাকে নিয়ে। .... ভাবলাম ঝোঁকের বশে আমি আমাদের সম্পর্কটা-কে আজ কোথায় নিয়ে এনে দাঁড় করিয়েছি। সত্যিই তো , যে আমি তোমার পাশে অন্য কোনো পুরুষ দাঁড়ালে সহ্য করতে পারতাম না , সেই আমি কিনা আজ কল্পনায়। ..... ছিঃ ছিঃ ছিঃ !! কতোটা চেতনার অধঃপতন হয়েছে আমার। "
সমীরের কথাগুলো শুনে অনুরিমার চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মনে মনে ভাবলো , অবশেষে তোমার চৈতন্য ফিরলো, তাও আবার আজকেই , যেদিন আমি তোমার অগোচরে ব্যাভিচার করে এলাম। কেন, একদিন আগে এই কথা গুলো আমাকে বলতে পারতে না ? আমি তাহলে আজ সুচরিতার সাথে দেখা করতে যেতাম না , না সেখানে আমার সাথে আদিত্যর দেখা হতো , না এই দুর্ঘটনা-টা আমার জীবনে ঘটতো।
সমীর আপন মনে তার অনুশোচনার কথা ব্যক্ত করে যাচ্ছিলো , আর অনুরিমা অন্যমনস্ক হয়ে তার জীবনের এই ট্র্যাজেডির কথা ভাবছিলো ও চোখের জল ফেলছিলো। সমীর অবশেষে খেয়াল করলো তার স্ত্রী কিছুটা বেখেয়ালি হয়ে নীরবে ক্রন্দন করে যাচ্ছে। সমীর ভাবলো এই অশ্রু হয়তো আনন্দের , যন্ত্রণা মুক্তির, যে যন্ত্রণা সে ক্রমাগত দিয়ে গ্যাছে নিজের স্ত্রীকে, কাকোল্ড ফ্যান্টাসির চাড়া রোপন করে। কিন্তু এই অশ্রু ছিল হতাশার , আক্ষেপের। সময় বড়ো নিষ্ঠুর হয়। যখন অনু পবিত্র ছিল , শরীর মন চেতনায় সব দিক দিয়ে শুধু সমীরের ছিল তখন সমীর গ্রহণ করতে চায়নি সেই পরিশুদ্ধতা। আর আজ যখন যেদিন সমীরের চৈতন্য হলো , ফিরে পেতে চাইলো তার স্ত্রীয়ের সেই পবিত্রতা , ঠিক সেইদিনই তার স্ত্রী জীবনে প্রথমবার অন্য পুরুষের ছোঁয়ায় অপবিত্র হলো।
সমীর অনুরিমার কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আশ্বাস দিলো এমন ভুল সে আর কোনোদিনও করবেনা। এরকম বিকৃত চিন্তা কখনো নিজের মাথায় আনবে না। কিন্তু শুধু অনুরিমাই জানে যে "আব্ কারে তো কারে কেয়া জাব চিড়িয়া চুক্ গাই খেত !" অর্থাৎ এখন আর সমীরের এই সংকল্প নিয়ে কি হবে যখন অনুরিমা অলরেডিই রিহার্সালের নামে বিভোর হয়ে অন্য কাউকে নিজের শরীর দিয়ে ফেলেছে।
সমীর অনুরিমার সাথে ঘনিষ্ট হতে যাচ্ছিলো , কিন্তু অনুরিমা স্মরণ করিয়ে দিলো যে তার পায়ে চোট লেগেছে , বিশ্রামের প্রয়োজন। সত্যি বলতে সেটা কোনো বড়ো কারণ ছিলোনা। পায়ে চোট নিয়েও তো সে আদিত্যর সাথেও মর্দনে লিপ্ত হয়েছে। অনুরিমা আসলে চাইছিলো না আজকে সমীর তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখুক। বলা তো যায়না আদিত্যর সাথে সঙ্গমের সময় তার শরীরে আদিত্যর দেওয়া কোনো চিহ্ন থেকে গ্যাছে কিনা। তাই আগে সে নিজের শরীরটা-কে ভালো মতো ইন্সপেকশন করে নিতে চাইছিলো। তারপর নাহয় সমীরকে সপেঁ দেবে নিজের শরীর। বিবাহসূত্রে এই শরীর তো সমীরেরই।
সমীর অতো কিছু না জেনে অনুরিমার অনুরোধে রাজি হয়ে গেলো তাকে একা ছেড়ে দিতে। অনুরিমা গিয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে গেলো। সমীরও অনুরিমার পাশে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝরাতে দর দর করে ঘেমে অনুরিমার ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেলো। সে তড়িঘড়ি উঠে বসলো বিছানায়। এ কি স্বপ্ন দেখলো সে !! আদিত্য সমীরের সামনে তাকে মর্দন করছে , এবং সমীর তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেটা উপভোগ করছে ! আর সেও কোনো বাঁধা দিচ্ছেনা তাতে, হোক না তা স্বপ্নেই, তাও! এর মানে কি অবচেতন মনে অনুরিমাও চায়না আদিত্য-কে বাধা দিতে? তারও কি অবস্থা তার স্বামীর মতোই হয়েছে ? এবার কি তবে সেও চায় কাকোল্ড ফ্যান্টাসিকে বাস্তব রূপ দিতে ? কিন্তু সমীর? সে তো সরে এসছে এই পথ থেকে ! তাহলে অনুরিমা কেন এরকম উদ্ভট স্বপ্ন দেখে নিজের মনকে বিপথে চালিত করছে !
এত কিছু ভাবতে ভাবতে অনুরিমা বিছানা থেকে উঠলো। সোজা বাথরুমে চলে গেলো। সমীর তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছিলো। সে কিছু টের পায়নি। বাথরুমে ঢুকে অনুরিমা চটজলদি নিজের বস্ত্র ত্যাগ করে নগ্ন হলো। হয়ে , শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পড়লো। শাওয়ার চালিয়ে জল দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করলো। শরীর হয়তো শুদ্ধ হয়ে যেত তাতে , কিন্তু মন ? সেটার পরিশুদ্ধি কি H২O দিয়ে সম্ভব !
স্নান করে , ফ্রেশ হয়ে অনুরিমা নতুন একটা নাইট ড্রেস পড়লো। হেয়ার ড্র্যায়ার দিয়ে মাথার চুল গুলো শোকালো। ভেজা চুলে শুলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তারপর আবার মাথাটা এলিয়ে দিলো বালিশের কোলে। কিন্তু ঘুম আর এলোনা , স্বপ্ন তো দূরের কথা। সারারাত তার যেমন তেমন করে কাটলো। ওদিকে সুদূরে দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনে আরো একজনের ঘুম আসছিলো না কিছুতেই , তার নাম আদিত্য সেনগুপ্ত। তারও সেই একই অবস্থা। স্বপ্নে সে তার নব প্রিয়তমা অনুরিমাকে দেখেছে। তারপর থেকে সে একা বিছানায় ছটফট করছিলো নিজের শখের নারীর জন্য। তাকে প্রবল ভাবে কাছে পেতে চাইছিলো। পাশবালিশ কে অনুরিমা ভেবে সেটা জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছিলো। কিরকম যেন পাগল পাগল অবস্থা হয়েগেছিলো আদিত্যর। তবে কি না চাইতেই দুজনের ভাইব্স একে অপরের জন্য ম্যাচ খাচ্ছিলো। "আনান্দ" সিনেমায় রাজেশ খান্না অমিতাভ বচ্চন-কে বলেছিলো, আমাদের শরীর এক একটা ট্রান্সমিটার যা সবসময়ে কিছু সিগন্যাল ছাড়ে। তখন অন্য এক ট্রান্সমিটারে সেই সিগন্যাল অনুকূল হলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে ক্যাচ করে নেয়। তবে কি আদিত্য ও অনুরিমার ন্যায় দুই বডি ট্রান্সমিটার একে অপরের সিগন্যাল ক্যাচ করছিলো ??
পরদিন যথা নিয়মে সূর্য উদয় হলো। সকাল হলো। নতুন দিন , নতুন আশা। সমীর অনুরিমাকে নিয়ে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তার একটা এক্স-রে করতে দিলো। রিপোর্ট দেখে বললো , সব ঠিক আছে বাট কয়েকদিন রেস্টে থাকতে হবে। বাড়ি ফিরে অনুরিমা সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। গতকালে ঘটে যাওয়া সেই আসল অ্যাক্সিডেন্ট এর পর থেকেই অনুরিমা খুব অ্যাবসেন্স মাইন্ডেড ছিল। কারোর সাথে ঠিক মতো কথা বলছিলোনা। সবসময়ে কোন এক ভাবনায় বিভোর লাগছিলো তাকে। সমীর সেটা লক্ষ্য করছিলো। তবুও সে জেরা করে অনুরিমাকে উত্যক্ত করতে চায়নি। বেচারির পায়ে চোট লেগেছে , তাই ব্যাথায় হয়তো নিজের অভিব্যক্তি ঠিক মতো প্রকাশ করতে পাচ্ছেনা। সময় দিলে ঠিক স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। এই আশায় ছিল সমীর।
এইভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেলো। অনুরিমার পাও একেবারে ঠিক হয়েগেলো। ঠিকমতো চলাফেরা করতে লাগলো। মাঝে আদিত্য ওকে বারংবার ফেসবুকে মেসেজ করলেও অনুরিমার তার একটাও রিপ্লাই দ্যায়নি। সমীর নিজের কাকোল্ড ফ্যান্টাসি ভুলে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো , তবুও কিছুতেই মাথা থেকে সেটাকে সরাতে পারছিলোনা। মুখে সে যতোই বলুক , আর বাইরে থেকে যতোই অভিনয় করুক স্বাভাবিক থাকার, মনে মনে এখনও সে অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছিলো। তার মধ্যে আর কাকোল্ড মানসিকতা নেই তা প্রমাণ করতে অনুরিমার সামনেই একদিন সমীর ডক্টর রাজীবকে ফোন করে, এবং পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয় তাদের আর কোনো অ্যাপয়েনমেন্টের দরকার নেই। কারণ সমীরের মতে সে নিজের কাকোল্ড ফ্যান্টাসির চিন্তা মাথা থেকে একবারে ঝেড়ে ফেলেছে।
রাজীব তা শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়। মানতে চাইছিলো না সমীরের এরূপ আকস্মিক পরিবর্তনটা-কে। সে ফোনে সমীরকে বললো অনুরিমার সাথে কথা বলার পর তবেই সে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবে সমীরের এই চেঞ্জ অফ মাইন্ড-টা নিয়ে। সমীর অনুরিমাকে ফোনটা দিলো। অনুরিমাও একই কথা বললো, যে তাদের আপাতত আর ডক্টর রায়ের কনসালমেন্টের দরকার নেই। সমীর এখন মানসিকভাবে পুরোপুরি স্বাভাবিক। অনুরিমার কথা শুনে রাজীবের মনে কিছুটা বেদনার সঞ্চার হলো। ভারী মন নিয়ে ফোনে সে দুজনকে বললো, তার ভালো লাগছে সেরকম কিছু না করেই অনুরিমা ও সমীর পূনরায় নিজের স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে ফিরে যাচ্ছে এটা দেখে। কিন্তু তবুও যদি ভবিষ্যতে আবার কোনো কমপ্লিকেশন ক্রিয়েট হয় তাহলে যেন আবারও তারা এই ডক্টর রায়ের-ই শরণাপন্ন হয়। এই বলে ডাক্তার বাবু ফোনটা রেখে দিলো। পরে অনুরিমাকে একটা টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়ে রাখলো যা অনুরিমার মনে সমীরের চারিত্রিক বদল নিয়ে সংশয় জিইয়ে রাখলো।
আর সেই টেক্সট ম্যাসেজ-টা ছিল এরকম , "আমি জানি অনুরিমা , তুমি এখন তোমার স্বামীর কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ভাবছো সমীরের সব সমস্যা ঠিক হয়েগেছে। কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি , সমীর ঠিক হয়নি। ও শুধু তোমার সামনে ঠিক থাকার ভান করছে। ওর হয়তো মনে হয়েছে, তোমার এসবে খুব খারাপ লাগছে , তাই বুকে পাথর রেখে সে নিজের ইচ্ছে-কে দমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই পাথর তো বরফের চাঁইয়ের মতো, একদিন ঠিক গলে যাবে। তখন আবার তোমরা সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। একজন সেক্সওলজিস্ট হয়ে আমি তোমাদের দুজনের ভালোর জন্যই সবকিছু করছিলাম। বেশি কিছুনা , জাস্ট তোমাকে ওর সামনে আমাকে বা অন্য যেকোনো পুরুষকে কিস করতে বলেছিলাম। এতে সমীরের বাস্তব পরীক্ষা হতো , এবং সত্যি সত্যি ওর শুভ চেতনা ফিরে আসতো। এখন যেটা ও করছে সেটা সিম্পল অভিনয় ছাড়া আর কিছু নয়। তুমি এখন সম্পর্কের কাঁচের ঘরে বাস করছো , তাই বেশি আশায় বুক বেঁধো না। যখন কাঁচটা ভাঙবে তখন সবথেকে বেশি আহত তুমিই হবে। আমার শেষ অ্যাডভাইস হলো তুমি ওকে কয়েকদিন অবজার্ভ করো, ওর সাথে শারীরিক ভাবে লিপ্ত হয়ে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজে থেকে কাকোল্ডনেসের টপিক-টা তুলে নিয়ে আনো। দেখো ও কিভাবে রিয়েক্ট করে। তাহলে সব দুধ কা দুধ , আর পানি কা পানি হয়ে যাবে। আমি নিজে থেকে তোমাকে আর ম্যাসেজ বা কল করে ডিস্টার্ব করবো না। একজন ডাক্তার হিসেবে এটা করা আমাকে শোভা দেয়না। তুমি যদি এই এক্সপেরিমেন্টে ফেল করো , তাহলে তুমি নিজেই আমার সাথে যোগাযোগ করবে। সমীর যদি তোমার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, আর তোমার কল যদি না আসে , তাহলে বুঝবো আমার ডাক্তারি জীবনে প্রথম এরকম মিরাকেল ঘটলো যেখানে রোগী বিনা কোনো ওষুধেই নিজের মন থেকে সুস্থ হয়েগেলো।..... ভালো থেকো। ......."
ওদিকে সুচরিতাও একদিন অনুরিমা-কে ক্যাসুয়ালি কল করলো হালচাল জানতে। অনুরিমা ভাবলো আদিত্য হয়তো সুচি-কে সব বলে দিয়েছে। সে তাই সুচি-কে পরোক্ষভাবে যাচাই করতে চাইলো , সেদিনের সেই ঘটনার ব্যাপারে সুচি কিছু জানে কিনা। কথা বলে যা বুঝলো আদিত্য সুচরিতাকে কিছুই বলেনি। উল্টে সুচরিতা জানতে চাইলো সেদিন আদিত্য ওকে ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলো কিনা।
অনু কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলো যে সুচির সাথে আদিত্যর এর মধ্যে একবারও কথা হয়েছে কিনা। সুচি বললো সেদিনের পর থেকে আদি নাকি একদিনের জন্যও নাট্য একাডেমি-তে আসেনি। শুনে অনুরিমার মনটা কিছুটা উৎকণ্ঠায় ছেয়ে গেলো। সে সুচরিতার কাছে জানতে চাইলো সুচরিতা কেন আদির কোনো খোঁজ নেয়নি, যখন সে জানে আদি এতোদিন ধরে অনুপস্থিত আছে। এতোটা ক্যাসুয়াল কেন সুচরিতা আদির প্রতি! এই বলে অনুরিমা সুচরিতাকে খুব বকাবকি করতে লাগলো। সুচরিতা অনুরিমার এরূপ রিঅ্যাকশন দেখে কিছুটা taken aback হয়েগেলো। As if , আদি যেন অনুরিমার হাসবেন্ড , এবং সে নিখোঁজ।
সুচরিতা হাসতে হাসতে অনুরিমাকে তার বাস্তব জায়গাটা দেখালো এই বলে যে অনুরিমা এমনভাবে রুডলি তার সাথে বিহেভ করছে যেন আদিত্য সুচরিতার প্রাক্তন স্বামী নয় , অনুরিমার বর্তমান কেউ। অনুরিমার কি এসে যায়, আদিত্যর ভালো থাকা, না ভালো থাকা নিয়ে ? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো সুচরিতা অনুরিমার দিকে।
সুচরিতার এই প্রশ্নে অনুরিমার রিয়েলাইজেশন হলো যে সে অবচেতন মনেই খানিকটা ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে সে তার রাগের ফলস্ জাস্টিফিকেশন দিতে লাগলো। পাল্টা সে তার বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলো আদির প্রতি কি ওর আর কোনো ফিলিংস বেঁচে নেই ? হতে পারে আদি তার প্রাক্তন স্বামী, তাই বলে কি সুচরিতা এইটুকু খোঁজ নেবেনা যে তার প্রাক্তন কেন এতোদিন ধরে কোনো কথাবার্তা ছাড়া, কাউকে খবর না দিয়ে অনুপস্থিত হয়ে আছে ! সুচরিতার এই খাপছাড়া অতিরিক্ত উদাসীন অ্যাপ্রোচ তাকে শুধু অবাক করছে না, রাগের সঞ্চারও ঘটাচ্ছে তার প্রতি।
অনুরিমার বকা খেয়ে সুচরিতা আর কিছু বললো না, বলার মতো কিছু ছিলোও না। মুখের উপর ফোনটা কেটে দিলো। সুচরিতা যে সত্যিই আদিত্যকে ভালোবাসেনা সেটার প্রমাণ অনুরিমা পেলো। অনুরিমা ভাবলো, আদিত্য তাহলে সুচরিতার সম্পর্কে ঠিকই বলছিলো। তাদের বিয়ে ভাঙার সব দোষ তার বান্ধবীরই। সেই কখনো আদিকে সুখে রাখতে পারেনি। কলেজ জীবন থেকেই গোপনে কোনো এক ছেলেকে ভালোবেসে গ্যাছে , তাকে না পেয়েও। অনুরিমার ইচ্ছে করছিলো সুচরিতার কাছে গিয়ে এই ব্যাপারে তাকে কনফ্রন্ট করতে। কিন্তু পর মুহূর্তেই সে ভাবলো তাহলে তো অনুরিমাকে সেদিনের প্রায় সব কথাই সুচরিতাকে খুলে বলতে হবে, যেটা সে পারবে না। পাছে সুচরিতা জিজ্ঞেস করে আদিত্যর সাথে এতো তার কিসের সখ্যতা যে আদি নিজের ব্যর্থ দাম্পত্যের কথা সব খুলে বলেছে ওকে ??
সুচরিতার কথাবার্তা শুনে অনু এটা অন্তত বুঝেছিলো যে আদিত্য অতোটাও অনাস্থাভাজন নয় , যতোটা সে ভেবেছিলো। সেদিন পরিস্থিতির কবলে পড়ে সেও হয়তো নিজেকে সামলাতে পারেনি। কিন্তু এক মিনিট ! সে কেন এতোটা সহানুভূতিশীল হচ্ছে সেই ব্যাক্তিটির জন্য যে তার আব্রু নষ্ট করেছে , তা বুঝেই হোক বা না বুঝে। কিন্তু আবার তার মনই কু ডেকে উঠলো আদিত্য কে নিয়ে। না চাইতেও তার চিন্তা হচ্ছিলো আদিত্যর জন্য। কেন সে অ্যাকাডেমি তে আসছে না। কিছু হয়েছে কি ওর ?
অনুরিমা নিজের ফেসবুক চেক করতে লাগলো। চ্যাট হিস্ট্রি তে আদিত্যর লম্বা লম্বা ম্যাসেজ এসেছিলো, যেগুলো সে দেখেছিলো কিন্তু পড়েনি। পড়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। আজ করছে বোধ। ম্যাসেজ গুলো ওপেন করে দেখলো তাতে আদিত্য নিজের কৃতকর্মের বিস্তারিত জাস্টিফিকেশন দিয়েছে , এবং বারংবার সরি বলেছে। সবথেকে বড়ো ব্যাপার হলো সে বলেছে অনুরিমা যদি তাকে রিপ্লাই না দেয়, তাকে ক্ষমা না করে তাহলে সে নিজের প্রাণ নিয়ে নেবে। এইসব ম্যাসেজ দেখে অনুরিমার চক্ষু চড়কগাছ হয়েগেলো ! তাহলে কি আদিত্য?? ...... নাহঃ নাহঃ , এটা হতে পারেনা। সে কারোর মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারেনা। সে তৎক্ষণাৎ আদিত্যকে ম্যাসেজ করলো এই লিখে যে সে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। অপেক্ষা করতে লাগলো আদিত্যর রিপ্লাই এর। কিন্তু আদিত্যর প্রোফাইল থেকে আর কোনো ম্যাসেজ এলোনা।
অনুরিমার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। সে এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। সে আবার সুচরিতাকে ফোন লাগালো। জিজ্ঞেস করলো তার বকাঝকার কোনো প্রভাব সুচরিতার মন মস্তিষ্কে পড়েছে কিনা ? অর্থাৎ সে আদিত্যকে ফোন করে জানতে চেয়েছে কিনা কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে ? অনুরিমার কথা শুনে সুচরিতা খুব বিরক্ত হলো, ভাবলো ওর এতো আদিত্যর উপর দরদ উতলে উঠছে কেন ?
"অনুরিমা একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে", এই ভেবে সুচরিতা ঔদ্ধত্যের সুরে অনুরিমাকে জানালো যে অনুরিমার যদি অতোই চিন্তা হয় আদিত্যকে নিয়ে তাহলে সেই যেন ফোন করে আদিত্যর খোঁজ নেয়, সুচরিতার অতো টাইম নেই নিজের অতীতের মানুষকে নিয়ে মাথা ঘামানোর। রাগ ও জেদ করে অনুরিমা তখন সুচরিতার কাছ থেকে আদিত্যর নাম্বার চেয়ে বসলো, "ঠিক আছে, তুই যখন স্বার্থপরের মতো আদিত্যর কোনো খোঁজ নিতে চাসনা , তাহলে ওর নাম্বার-টা আমাকে দে, আমিই খোঁজ নিচ্ছি। হাজার হোক আমার মধ্যে এখনও মানবিকতা বোধ আছে। যে মানুষটা দুর্যোগের দিন আমাকে গাড়িতে লিফট দিয়ে সাহায্য করলো, তাকে একটা থ্যাংক ইউ পর্যন্ত বলা হয়নি আমার। সো, তুই আমাকে নাম্বারটা ইমিডিয়েট্লি ম্যাসেজ করে দে। এইটুকু তো করতে পারবি ?"
"ওকে বেব্, আই উইল সেন্ড হিস্ নাম্বার, চিল্ !", এইভাবে ক্যাসুয়ালি কথাটা বলে সুচরিতা ফোন রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর আদির নাম্বারটা অনুরিমাকে সেন্ড করে দিলো। অনুরিমা অপেক্ষা করছিলো সুচরিতার টেক্সট এর। কারণ ওই জানে কেন সে আদির জন্য এতোটা চিন্তিত। আদি যে সুইসাইড করার থ্রেট দিয়ে ফেইসবুকে।
বিন্দুমাত্র দেরী না করে অনুরিমা আদির নাম্বারটায় ফোন করলো। প্রথমে কিছুক্ষণ রিং হয়ে কল্-টা কেটে গেলো। আবার ফোন করলো অনুরিমা। Unknown number দেখে আদিত্য কল্-টা রিসিভ করেই নিলো , "হ্যালো ....."
"হ্যালো আদিত্য ....."
"কে , অনুরিমা !!!!"
"হ্যাঁ .....", বলেই অনুরিমা কাঁদতে লাগলো।
অনুরিমার আওয়াজ কানে ভাসতেই আদির মনের ভেতর শীতল বাতাসের ঢেউ যেন বয়ে গেলো। ...... সে বললো , "কি হয়েছে অনুরিমা , তুমি কাঁদছো কেন ??"
"তোমার জন্য। .... তুমি কিসব লিখেছো ফেইসবুকে ?? আমি ক্ষমা না করলে তুমি সুইসাইড করবে ??"
"আর কোনো রাস্তা কি ছেড়েছো তুমি আমার জন্য? সেদিনের পর থেকে গিল্ট ফিলিং আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। তার উপর ফেইসবুকে করা আমার এতো ম্যাসেজের কোনো রিপ্লাই দিচ্ছিলে না, যেখানে প্রায় প্রতিটা ম্যাসেজে বারংবার শুধু ক্ষমাই চেয়ে যাচ্ছিলাম। ......"
"আচ্ছা , আমি ক্ষমা করেছি তোমায়, এবার এসব ছেলেমানুষী বন্ধ করো আদিত্য। তুমি কেন নাট্য অ্যাকাডেমী-তে যাচ্ছনা ?"
"সেটা তুমি জানলে কি করে ?"
"সুচরিতা কল্ করেছিলো ...."
"আমার খোঁজ নিচ্ছিলে ??"
"হ্যাঁ ......"
অনুরিমার এই একটা ছোট্ট "হ্যাঁ" আদিত্যর মনে অকাল বসন্ত নামিয়ে আনলো। আনন্দের শিখরে উঠে আদিত্যর মন উদ্দাম নৃত্যে মত্ত হতে চাইছিলো। নিজের এই উত্তেজনাকে কোনোমতে প্রশমিত করে সে জিজ্ঞেস করলো, "কেন? হঠাৎ আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গেলে কেন ?"
"সুচরিতা প্রায়ই আমাকে ফোন করে থাকে, কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনার পর কো-ইন্সিডেন্টলি ও আমাকে কোনো ফোন করেনি , হয়তো এমনিই। তাও আজ যখন ফোন করলো মনের মধ্যে একটা সুপ্ত ভয় কাজ করছিলো যে হয়তো তুমি ওকে কিছু বলেছো কিনা। তাই পরোক্ষভাবে তোমার খোঁজ নিচ্ছিলাম। ....."
"তা খোঁজ নিয়ে কি বুঝলে ?"
"থ্যাংকস। ..... সুচরিতাকে কিছু না বলার জন্য। ....."
"আমি বিশ্বাসঘাতক নই অনু , একবার যখন কথা দিয়েছি তোমার আর মধ্যেকার সকল কথা গোপন রাখবো, তখন তা আমৃত্যু পালন করবো। কিন্তু তুমি সেদিন রাগের বশে আমাকে যা নয় তাই বললে। আই ওয়াস সো হার্ট !! তাই জন্যই তো এরকম একটা ড্রাষ্টিক্ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভেবেছি। তোমার চোখে অপরাধী হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ", কাঁদো কাঁদো গলায় ইমোশনাল হয়ে আদি বললো।
ফোনের ওপার থেকে আদির ক্রন্দনে ভাঙা গলার আওয়াজ অনুর হৃদয়ে গিয়ে বাঁধলো। এমনিতেই অনু আমাদের খুবই ইমোশনাল একটা মেয়ে। তার উপর কেউ যদি ওকে এভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং করে তাহলে কি অনুর মন তার মস্তিষ্কের কথা শোনে ! তাই সেও খানিকটা ইমোশনাল হয়ে ফোনের এপার থেকে আদিত্যকে বললো , "আই এম সরি আদিত্য ! আমি সেদিন রাগের মাথায় তোমাকে অনেক ছোট বড়ো কথা শুনিয়েছি, তাই জন্য নাও আই ফীল ভেরি ব্যাড ! এখন আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তুমি please কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নিও না। তাছাড়া আমি তোমার কে যে আমার জন্য তুমি মরতে যাবে ?"
"সত্যি জানতে চাও , তুমি কেন স্পেশাল আমার কাছে ?"
অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সে ভয় পাচ্ছিলো এমন কোনো কথা শোনার থেকে যা তার হৃদয় কে আরো দূর্বল করে বিপথে না চালিত করে।
"কি হলো অনুরিমা , জানতে চাওনা তুমি , কেন তোমার জন্য মরতেও চেয়েছিলাম ?"
"না ...", বলে ফোনটা কেটে দিলো অনুরিমা। আদিত্যর ভূবন ভোলানো কথা অনুরিমার হার্টবিট বিপি সব বাড়িয়ে দিয়েছিলো। সে ফোনটা রেখে বেসিনে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ওদিকে আদিত্য বুঝতে পারলো অনুরিমার হেসিটেশন-টা। সে তাই আর ফোন করলো না, এবং ঠিক করলো যে যতোক্ষণ বা যতোদিন অনুরিমা নিজে থেকে তাকে ফোন করছে ততোক্ষণ বা ততোদিন সে নিজে থেকে কোনোরকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। দেখাই যাক না তাদের মধ্যেকার এই ক্রমবর্ধমান রসায়নের উষ্ণ-শীতল জল ঠিক কতদূর গড়ায়।
এভাবে কয়েকটা দিন আরো কেটে গেলো। এর মাঝে প্রায় প্রতি রাতে সমীর অনুরিমার কাছাকাছি আসতো, দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করতো। কিন্তু প্রতিবারই অনুরিমার প্রাপ্তির ভান্ডার শূন্যই থেকে যেত। একজন কো-অপারেটিভ স্ত্রীয়ের ন্যায় অনুরিমা চেষ্টা করতো সমীরের সঙ্গ কে উপভোগ করার, কিন্তু বারবার অনুরিমার মনে হতো দ্যাট্ সামথিং ইস মিসিং। সে চাইলেও ইকুয়্যালি নিজের কন্ট্রিবিউশন রাখতে পারতো না।
ডক্টর রাজীব তাকে আগেই অ্যাডভাইস করেছিলো সমীরকে যাচাই করে নিতে, সে সত্যিই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসছে কিনা। কিন্তু অনুরিমা তা করার প্রয়োজন বোধ করেনি আর। কিন্তু ভাগ্যের কি খেল দেখুন, না চাইতেও একদিন অনুরিমার কাছে সব জলের মতো পরিষ্কার হয়েগেলো যে সমীর আদেও বদলেছে কিনা, নাকি সেই ফ্যান্টাসিটা মনের চিলেকোঠায় লুকিয়ে রেখেছে।
একদিন রাতে সমীর ও অনুরিমা যখন সঙ্গমে লিপ্ত ছিল তখন কাম উত্তেজনায় মশগুল হয়ে মুখ ফস্কে সমীর বলে ফেলে , "ওহঃ অনুরিমা , তোমার গুদে যতোই রস ঢালি ততোই কম মনে হয়। এরকম ভাবে গুদ চুদতে সমীরও পারবেনা। ......."
"সমীরও পারবেনা" মানে ? সেই তো সমীর ! তাহলে কাকে কল্পনা করে সে নিজের স্ত্রীয়ের সাথে মর্দনে উদ্যত হয়েছে ? নিজেকে সে কার প্রতিরূপ ভাবছে ?? অনুরিমার মাথায় হঠাৎ করে এই কথাটা স্ট্রাইক করলো। মাঝপথে ইন্টারকোর্স থামিয়ে অনুরিমা বলে উঠলো , "দাঁড়াও ..... দাঁড়াও সমীর ! ওয়েট। .... তুমি কি বললে ?"
"কিই ..... কি বললাম ?"
"তুমি এক্ষুনি বললে সমীরও এত ভালোভাবে করতে পারবে না। তাহলে তুমি কে ??"
সমীর বুঝতে পারলো সে ধরা পড়ে গ্যাছে। মনের সেই চিলেকোঠা থেকে বেড়িয়ে পড়েছে সেই ফ্যান্টাসির রূপকথা, যা এতোদিন ভালো মানুষী সেজে অনুরিমার থেকে আড়াল করে রেখেছিলো। সমীর আমতা আমতা করছিলো। কিছু বলতে পারছিলো না। তার অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল। বিছানায় সে নগ্নাবস্থায় নিজের নগ্ন স্ত্রীয়ের উপর শুয়ে তার যোনি ছিদ্রে লিঙ্গ ঢুকিয়ে চোদন কার্য চালাচ্ছিল। হঠাৎ বেফাঁস মন্তব্যের কারণে তার স্ত্রী সেই যৌনক্রিয়া মাঝপথে থামিয়ে দেয়, এবং তার বলা কথার কৈফিয়ৎ চায়। এবার সে চুদবে নাকি ওই অবস্থায় জাস্টিফিকেশন দেবে ? এমনিতেও সমীরের মতো দূর্বল চিত্তের পুরুষদের সেক্স করার সময় মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়, কারণ বুদ্ধি তখন ঘাস চড়াতে যায়। আর সেরকম মুহূর্তে তার স্ত্রী দৃপ্ত ভাবে কোনো কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে বসে তাহলে বেচারা যাবে কোথায় ?
অগত্যা বেশি ভণিতা না করে সপাট স্বীকারোক্তিই একমাত্র পথ বা অবলম্বন ছিল পরিত্রাণের। সমীর তাই করলো। সে অকপট স্বীকার করে নিলো যে তার ভেতরকার কাকোল্ড ফ্যান্টাসি এখনও পুরোপুরি ভাবে যায়নি, তবে আশ্বাস দিলো যে সে চেষ্টা করছে গেট ওভার করার। কিন্তু এই আশ্বাস যে মিথ্যে আশ্বাস ছিল সেটা বুঝতে অনুরিমার এক বিন্দুও সময় লাগলো না। তবুও অনুরিমা কিছু বললো না। সমীরের তখন যৌন উত্তেজনা গগনচুম্বী ছিল। সে আর কথা না বাড়িয়ে মর্দন চালাতে লাগলো অনুরিমার গহ্বরে। এমনিতেও কয়েকদিন ধরে সমীরের সঙ্গ তার ভালো লাগছিলোনা কোনো এক অজানা কারণে, আজ সেই ভালো না লাগা রূপান্তরিত হলো ঘেন্নায়।
অনুরিমা আর জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করলো না যে সমীর কল্পনায় নিজেকে কার জায়গায় রেখে তার সাথে যৌন ক্রিয়া পরিচালনা করছিলো। জিজ্ঞেস করতে তার রুচিতে বাঁধছিলো। সে চুপচাপ জীবন্ত লাশ হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো এবং নিজের স্বামীর লিঙ্গ-কে নিজের শরীরের ভেতর খামখেয়ালী করতে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সমীরের রস চুঁইয়ে অনুরিমার ডিম্বাশয়ে চলে গেলো। অল্পেই ক্লান্ত সমীর পাশ ফিরে তক্ষুনি ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু পাশে পড়ে থেকেও যার ঘুম এলোনা সে হলো অনুরিমা। চোখ দিয়ে কয়েকফোটা শুধু জল বেড়িয়ে এলো। সেদিনের মতো সমীরকে অনুরিমা কিছু না বললেও, বিষয়টা তার কাছে পরিষ্কার দেওয়াল লিখনের মতো মন মস্তিষ্কে থেকে গেলো, দ্যাট হার্ হাসবেন্ড ষ্টীল পোসেস্ কাকোল্ড ফ্যান্টাসি। সে ভাবলো, ডাক্তার রাজীবের তত্ত্বই তবে সঠিক প্রমাণিত হলো ! তার বিশ্বাস হেরে গেলো মেডিক্যাল থিওরির সামনে।
অনুরিমা এখন কি করবে কিছু বুঝে পাচ্ছিলো না। কার সাথে কনসাল্ট করবে ? এই বিষয়ে এক্সপার্ট ডক্টর রাজীবের সাথে, নতুবা এই বিষয়ে পরামর্শদাত্রী বেস্ট ফ্রেন্ড সুচরিতার সাথে, নাকি এই বিষয়ে তাকে বাস্তব অনুভূতি দেওয়া তার নতুন দিওয়ানা আদিত্যর সাথে ??? তারপরই সে ভাবলো আর কতো সে নিজের স্বামীকে ছোট করবে পরের সামনে। সে আর পারছে না, হাঁফিয়ে উঠেছে। এবার এর একটা বিহিত তাকে করতেই হবে। অনেক হয়েছে লোকের পরামর্শ নেওয়া। এবার এই সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে তুলে নেবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সে অনেকক্ষণ ভেবে একটা উপায় বার করলো। তাতে অনেক রিস্ক ছিল নিশ্চই, কিন্তু এর থেকে বেটার ওয়ে বর্তমানে তার মস্তিকে অ্যাভেইলেবল ছিলোনা। সে ভাবলো সে তো না চাইতেও একবার ব্যাভিচার করেছে , তার স্বামীকে ঠিক পথে আনতে নাহয় আরো একবার ..... কিন্তু কার সাথে ?? আবার সেই আদিত্য না রাজীব নাকি অন্য কেউ ঢুকে পড়বে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে অনুরিমা ও সমীরের জীবনে ?????
পর্ব ২৫
নতুন মানুষের আগমন ?
কাকোল্ড ফ্যান্টাসি নিয়ে এবার রিসার্চ করতে শুরু করলো অনুরিমা। একজন পুরুষ বিশেষ করে একজন স্বামী কিভাবে কাকোল্ড-এ পরিণত হয়, সে কি কি চায় এই ফ্যান্টাসি থেকে, পরবর্তী ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে এর কি প্রভাব পড়ে সব নিয়ে রীতিমত গবেষণা করতে লাগলো। সে খুঁজে পেলো একটি শব্দ, "Bull ", অর্থাৎ সেই ব্যক্তি যে কাকোল্ড হাসবেন্ডের স্ত্রীকে তার সামনেই সম্ভোগ করে, এবং হাসবেন্ডকে হিউমিলিয়েট করে। আর সেই হাসবেন্ড তাতে আনন্দও পায় !
সবটা বুঝে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে এবার একটা Bull এর খোঁজ করবে ! আদিত্য বা রাজীব, কাউকেই সে আর bother করবে না। কারণ সবটা গোপনে রাখতে চায় সে, যাতে কাক পক্ষীতেও টের না পায়। তবে কি অনুরিমা অবশেষে মেনে নিলো সমীরের ফ্যান্টাসিটা কে? সমীরকে ঠিক করতে গিয়ে কি সে এক চরম বিপদ ডেকে আনতে যাচ্ছিলো ? সত্যি কি সে একা সবকিছু সামলাতে পারবে ? সে যে এসব ব্যাপারে বড্ড বেশি অনভিজ্ঞ !
তাও সে এই অগ্নিপরীক্ষাটা দেবে বলেই সিদ্ধান্ত নিলো। অনলাইনে খোঁজ করতে লাগলো একটা বেটার সাইট, যেখানে সে Bull এর খোঁজ পাবে। একটি ডেটিং সাইট পেলো। সাহস করে সেখানে নিজের অ্যাকাউন্ট ওপেন করলো। শুরু হলো খোঁজ। কয়েকজনের সাথে কথাবার্তা চলতে লাগলো। প্রথমেই সে নিজের কাহিনীর পসাড় মেলে ধরেনি। আগে একজন বিশস্ত কাউকে পাবে, তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে আনফোল্ড করবে, তার আগে নৈব নৈব চঃ! আর এর মধ্যে সমীরের কান্ডকারখানাও সমান ভাবে বিদ্যমান ছিল, যা অনুরিমাকে ঠেলে দিচ্ছিলো মৃত্যুর দিকে , নৈতিকতার মৃত্যুর দিকে। প্রায় প্রতিরাতে সমীরের এরকম স্লিপ অফ টাং হচ্ছিলো, যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো সমীর নিজেকে অন্য কারোর জায়গায় কল্পনা করে নিজের স্ত্রীয়ের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হচ্ছে। অনুরিমা এবিষয়ে রিয়েক্ট করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। জানতো, বলে আর কোনো লাভ হবেনা। বারবার সমীর তাকে মিথ্যে আশ্বাস দেবে যে সে নিজেকে শুধরে নেবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাবেনা। তাই অনুরিমা চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিতে লাগলো। আর সমীর ভাবলো অনুরিমা এতে used to হয়ে গ্যাছে।
অনুরিমা অনলাইনে মনের মতো কাউকে পাচ্ছিলো না যাকে সে বিশ্বাস করে সবকথা বলতে পারবে এবং নিজের কাজে লাগাতে পারবে। সবাই মেয়ে দেখে সুযোগ বুঝে শুধু flirt করছিলো। তাই অনুরিমা সেই সাইটে পেইড সাবস্ক্রিপশন নিলো, প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ, যাতে এই কাজের জন্য সে কোনো অথেন্টিক ও পেশাদার কাউকে পেতে পারে। অবশেষে সে একজনকে খুঁজে পেলো, যার user id তে নাম ছিল Bull_7387 , bio তে লেখা ছিল Always at your service .. সাহস করে অনুরিমা add request পাঠালো। কিছুক্ষণ বাদে accept এও হয়েগেলো। শুরু হলো কথা বার্তা। প্রথম দিকে অনুরিমা ছদ্মনাম-ই নিয়েছিলো, user id ছিলো Sweet_Girl_Jinia , bio তে লেখা ছিল Searching for Love .. যেহেতু লোকটার নামেই ছিল Bull, তাই কথা বলার purpose টা দু'পক্ষের কাছেই খুব cliear ছিল প্রথম থেকে। শুধু অপেক্ষা ছিল কে প্রথম কথাটা পাড়বে, এবং কিভাবে ?
Primary introduction, এবং কিছু formal কথাবার্তার পর পেশাগত কারণে Bull-ই প্রথমে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করে বসলো, কবে এবং কোথায় ? কোনো ভনিতা না করেই সোজা টপিকে এন্ট্রি ! অনুরিমা চমকে উঠলো ! থতমত খেয়ে রিপ্লাই করলো, কি ??
"কি আবার বুঝতে পাচ্ছো না ? আমার বুল আইডি দেখেই তো ম্যাসেজ করেছো। বুল মানে নিশ্চই জানো !"
"হুমঃ। ...."
"তাহলে জিনিয়া, আসল কথায় আসা যাক এবার। .. তবে আগে বলো এই প্রোফাইলটা কার ? Hot wife এর নাকি cuckold husband এর ? পয়সা দিয়ে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আমার প্রোফাইল অবধি যখন পৌঁছেছো, তখন এটা আর যাই হোক টাইম পাস করার জন্য তৈরি কোনো ফেক অ্যাকাউন্ট নয়। তবে অনেক হাসবেন্ড female account খুলে ম্যাসেজ দেয়, তাড়াতাড়ি রিপ্লাই ও অ্যাটেন্শন পাওয়ার জন্য। অনেকে আবার বউকে রাজি করার আগেই আমাদের কাছে পৌঁছয়, তারপর আমাদেরকেই দায়িত্ব দেয় ছলে বলে কৌশলে বউকে পরকীয়াতে ফাঁসিয়ে নিজের ফ্যান্টাসি-কে পরিণতি দিতে। আগেই বলে রাখছি, সেরকম কেস হলে কিন্তু এক্সট্রা চার্জ লাগবে। সহজ সরল বাঙালি সাদাসিধে ঘরোয়া বউদের ফাঁসাতে কিন্তু অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।"
"আপনারা এসবও করেন ??"
"করতে হয় বইকি। তবে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে এক্সপ্লয়েট করিনি, জোর জবরদস্তি তো দূরের কথা, ইভেন ডেসপারেট হয়ে ওঠা হাসবেন্ড-রা সেটা করতে বললেও আমরা করিনা। তাই পয়সাওসুল গ্যারান্টি বা সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ হয়না কখনো। কিন্তু তার ফলে কোনো মানি ব্যাক স্কিম নেই। It's a non-refundable investment .."
"আচ্ছা আপনি যে বারবার আমরা আমরা বলছেন, আপনার কি কোনো টিম আছে, যারা একসাথে এসব করে ??"
"না না, আমরা বলতে আমি আমাদের Bull কমিউনিটির কথা বলছি। এই ওয়েবসাইটে রেজিস্টার্ড সকল bull দের কিছু ethics মেইনটেইন করতে হয়, যাতে সাইটের বিশ্বস্ততা বজায় থাকে পরিষেবা প্রাপকদের কাছে। প্রাইভেসী বজায় রাখার জন্য কোনো বুল-ই নিজের কাস্টমারের ডিটেলস অন্য কোনো বুলের সাথে শেয়ার করেনা। এই ব্যাপারে আপনি একশো শতাংশ গ্যারান্টি নিতে পারেন, তাও আবার লিখিত ভাবে, যদি চান।"
"আচ্ছা , এই করে আপনাদের সংসার চলে যায় ??"
"দেখুন আপনি এটা সীমা অতিরিক্ত প্রশ্ন করলেন।.. তাও আপনাকে বলি, কাস্টমার যা বুকিং ফিস দেয়, তার একটা certain percent ওয়েবসাইট কতৃপক্ষ কমিশন হিসেবে নেয়। বাকিটা বুল বা জিগোলো, যাকে অ্যাপয়েন্ট করা হয়, সে পায়। ওয়েবসাইটের আরো সাইড ইনকাম থাকে বিভিন্ন কন্ডোম ও কন্ট্রাসেপ্টিক অ্যাড ও স্পনসরশিপ থেকে। আমাদের অনেক সময়ে হাসবেন্ড বা ওয়াইফ পার্সোনাল ডিটেক্টিভ হিসেবেও ব্যবহার করে, অর্থাৎ আমরা পরকীয়া করাতে এবং ধরাতে দুটোতেই সাহায্য করি। কিন্তু ওই যে আগেই বললাম, আলাদা আলাদা কাজের জন্য আলাদা আলাদা ফিস চার্জ করি। এছাড়াও বাকি সাইড খরচাও কাস্টমার-দের বহন করতে হয়। বর্তমানে এইসব ফ্যান্টাসির চাহিদা খুব বেড়েছে, তাই পেইড কাস্টমারদের অভাব হয়না। আমরা আউটস্টেশন সার্ভিসও দিয়ে থাকি। কখনো কখনো শহরের বাইরে, বা রাজ্যের বাইরেও যেতে হয়। শুধু তো urban sector এ নয়, ছোট শহর এবং জেলাতেও চাহিদা রয়েছে। তবে ওই যে বললাম সাইড খরচা গুলো আপনাদেরই বহন করতে হয়, যাতায়াত খরচা থেকে হোটেল ভাড়া, খাওয়া দাওয়া সব। এটাই আমাদের পেশা, আর এতে আমার মতো বুল দের ভালোই ইনকাম হয়। শুধু বুল নয়, জিগোলো, ম্যাসাজ এবং প্রাইভেট ডিটেক্টিভ সার্ভিসও দিয়ে থাকি। কিন্তু আমার প্রেফারেন্স হলো থ্রিসাম বা কাকোল্ড সার্ভিস, তাই ইউসার আইডি-টা বুল হিসেবেই বানিয়েছি। এবার আপনি বলুন , আপনি সত্যিই মেয়ে নাকি ছেলে ? আই মিন , হট ওয়াইফ নাকি কাক্কু ? আর আমার থেকে কিধরনের সার্ভিস চান ?"
বুলের কথা শুনে অনুরিমা অনেকক্ষণ চিন্তা করলো। ওদিকে বুল সুইট গার্ল জিনিয়া অনলাইন দেখে তার রিপ্লাই পাওয়ার জন্য ওয়েট করতে লাগলো। তারপর কিছুটা অধৈর্য হয়ে বুল আবার ম্যাসেজ করলো , "কি হলো ? কিছু বলবেন, নাকি আমি চললাম ? দেখুন আমি এখানে টাইমপাস করতে বসিনি, এটা আমার পেশা। আমাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে কথা আগে বাড়ান, নাহলে এখানেই কথোপকথনের ইতি করুন। "
এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি অনুরিমা ওরফে জিনিয়া রিপ্লাই করে বসলো, "না না আমি রাজি। "
"তাহলে বিস্তারিত করে বলুন, কে আপনি, আর কিই চান? কথা দিচ্ছি, সবকথা দায়িত্বের সাথে গোপন রাখা হবে, ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি। "
অনুরিমা কিছুটা সময় নিয়ে রিপ্লাই দিলো, "আমি সত্যি সত্যিই একজন মেয়ে, তবে জিনিয়া আমার নাম নয়। আমার হাসবেন্ড কাকোল্ড ফ্যান্টাসি মাথায় নিয়ে মত্ত। তাকে কিছুতেই সঠিক পথে নিয়ে আনা যাচ্ছেনা। আমি রাজি না হওয়ায় সে এই ব্যাপারটা নিয়ে না এগোলেও, মনে মনে সে এখনও এটিকে পুষে বেড়াচ্ছে। আমি তাই চাই তার এই ফ্যান্টাসিটা-কে একবারের জন্য বাস্তব রূপ দিতে, তবে সেটা তার অজান্তেই। এমনভাবে, যেন সে বুঝতে না পারে এটা প্রিপ্ল্যান।"
"হুমঃ, আপনার ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং। তাই এভাবে চ্যাটে সব কথা ডিসকাস করা যাবেনা। আমাদের সামনাসামনি একদিন বসতে হবে। ভয় নেই, এমন কোনো জায়গায় ডাকবোনা যেখানে আপনার আসতে অস্বস্তি বোধ হবে। ভর দুপুরে কোনো এক লোকালয়ের রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পারি আমরা, যদি আপনার বিশ্বাস থাকে আমার উপর।"
"বিশ্বাস না রেখেও উপায় কি বলুন। দীঘিতে সাঁতার কাঁটতে নেমে কি আর কুমিরের ভয় পেলে হয় !"
"কুমির নয়.... বুল, মানে ষাঁড় !!"
"আচ্ছা .... আপনাকে আমি পরে জানাবো দেখা করার দিনক্ষণ। "
"ঠিক আছে, তবে আপনাকে আগে একটা কাজ করতে হবে। আমার প্রোফাইলে গিয়ে বুক দা বুল অপশনে ক্লিক করবেন। সেখানে ডেট এন্ড টাইম টা মেনশন করতে হবে, কবে আপনি আমার অ্যাপয়েনমেন্ট চান তার জন্য। বুকিং ফিস ওয়ান টাইম, তারপর কাজ বুঝে ফিস চার্জ হবে। চিন্তা করবেন না, সবকিছু খুব গোপন রাখা হবে। প্রাইভেসীর গ্যারান্টি এখানে হানড্রেড পার্সেন্ট। এইসব ফর্মালিটিস কমপ্লিট হয়েগেলে আমাকে বুকিং আইডি-টা শেয়ার করে দেবেন, তাহলেই যেখানে বলবেন সেখানে এই বান্দা হাজির।"
"এসব কি আজকেই করতে হবে ?", কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অনুরিমা টেক্সট করলো।
"না , তবে আপনার অ্যাড রিকোয়েস্ট-টা যতোক্ষণ আমি অ্যাকসেপ্ট করে রেখেছি ততোক্ষণ আমিই আপনার জন্য অ্যাভেইলেবল থাকবো, অর্থাৎ আমি আপনাকে সার্ভিস দেব। আমার প্রোফাইলটা আগামী ৪৮ ঘন্টা আপনার জন্য লক থাকবে, তাই যা ডিসিশন নেওয়ার এই দুদিনের মধ্যে নিয়ে নেবেন। তারপর কিন্তু আমি আপনার অ্যাড রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেবো।"
"মাত্র ৪৮ ঘন্টা !! তার মধ্যেই জানাতে হবে আমাকে ??"
"সাধারণত আমি ক্লায়েন্টদের ২৪ ঘন্টার বেশি সময় দিই না, কারণ কেউ যদি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আমার সাথে contact করে তার মানে ধরে নেওয়া যায় সেই মানুষটি একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, তাই তার আর ভাবনা চিন্তার বেশি অবকাশ থাকার কথা তো নয়। কিন্তু আপনার ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড দেখছি। আপনি নিজে রাজি নন, কিন্তু নিজের স্বামীর সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ করার জন্য যোগাযোগ করেছেন, তাও আবার স্বামীর অজান্তেই। সত্যিই ম্যাডাম, আপনাকে স্যালুট ! আপনার স্বামী খুব লাকি।"
"হুম...."
"যাই হোক, বেশি কথা আর বাড়াচ্ছি না, দুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন। যদি রাজি থাকেন, তাহলে যে প্রসিডিউর বললাম, সেটা ফলো করে আমাকে জানাবেন। মাঝে বুকিং করতে কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হলেও বলবেন, আমি সাহায্য করে দেবো। তবে মনে থাকে যেন, আজ বুধবার, বৃহস্পতির পর শুক্রবার হলো লাস্ট ডেট। তারপর কিন্তু অন্য কাউকে আপনাকে খুঁজে নিতে হবে।"
এই বলে Bull_7387 অফলাইন হয়েগেলো। রয়েগেলো অনলাইন Sweet_Girl_Jinia, তবে কিছুক্ষণ। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো ওয়েবসাইটের অথেন্টিসিটি-টা, Bull_7387 এর প্রোফাইলটা, এবং বুকিং এর প্রসিডিউর-টা। কিন্তু এখুনি তাড়াহুড়ো করে কিছু করলো না। ভাবনার জন্য সময় নিলো। হাতে তো আছে দুটো দিন এখনো। দেখাই যাক..... ভাগ্য কোন পথে অনুরিমাকে ধাবিত করে।
পর্ব ২৫
নতুন মানুষের আগমন ?
কাকোল্ড ফ্যান্টাসি নিয়ে এবার রিসার্চ করতে শুরু করলো অনুরিমা। একজন পুরুষ বিশেষ করে একজন স্বামী কিভাবে কাকোল্ড-এ পরিণত হয়, সে কি কি চায় এই ফ্যান্টাসি থেকে, পরবর্তী ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে এর কি প্রভাব পড়ে সব নিয়ে রীতিমত গবেষণা করতে লাগলো। সে খুঁজে পেলো একটি শব্দ, "Bull ", অর্থাৎ সেই ব্যক্তি যে কাকোল্ড হাসবেন্ডের স্ত্রীকে তার সামনেই সম্ভোগ করে, এবং হাসবেন্ডকে হিউমিলিয়েট করে। আর সেই হাসবেন্ড তাতে আনন্দও পায় !
সবটা বুঝে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে এবার একটা Bull এর খোঁজ করবে ! আদিত্য বা রাজীব, কাউকেই সে আর bother করবে না। কারণ সবটা গোপনে রাখতে চায় সে, যাতে কাক পক্ষীতেও টের না পায়। তবে কি অনুরিমা অবশেষে মেনে নিলো সমীরের ফ্যান্টাসিটা কে? সমীরকে ঠিক করতে গিয়ে কি সে এক চরম বিপদ ডেকে আনতে যাচ্ছিলো ? সত্যি কি সে একা সবকিছু সামলাতে পারবে ? সে যে এসব ব্যাপারে বড্ড বেশি অনভিজ্ঞ !
তাও সে এই অগ্নিপরীক্ষাটা দেবে বলেই সিদ্ধান্ত নিলো। অনলাইনে খোঁজ করতে লাগলো একটা বেটার সাইট, যেখানে সে Bull এর খোঁজ পাবে। একটি ডেটিং সাইট পেলো। সাহস করে সেখানে নিজের অ্যাকাউন্ট ওপেন করলো। শুরু হলো খোঁজ। কয়েকজনের সাথে কথাবার্তা চলতে লাগলো। প্রথমেই সে নিজের কাহিনীর পসাড় মেলে ধরেনি। আগে একজন বিশস্ত কাউকে পাবে, তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে আনফোল্ড করবে, তার আগে নৈব নৈব চঃ! আর এর মধ্যে সমীরের কান্ডকারখানাও সমান ভাবে বিদ্যমান ছিল, যা অনুরিমাকে ঠেলে দিচ্ছিলো মৃত্যুর দিকে , নৈতিকতার মৃত্যুর দিকে। প্রায় প্রতিরাতে সমীরের এরকম স্লিপ অফ টাং হচ্ছিলো, যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো সমীর নিজেকে অন্য কারোর জায়গায় কল্পনা করে নিজের স্ত্রীয়ের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হচ্ছে। অনুরিমা এবিষয়ে রিয়েক্ট করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। জানতো, বলে আর কোনো লাভ হবেনা। বারবার সমীর তাকে মিথ্যে আশ্বাস দেবে যে সে নিজেকে শুধরে নেবে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাবেনা। তাই অনুরিমা চুপচাপ সবকিছু সহ্য করে নিতে লাগলো। আর সমীর ভাবলো অনুরিমা এতে used to হয়ে গ্যাছে।
অনুরিমা অনলাইনে মনের মতো কাউকে পাচ্ছিলো না যাকে সে বিশ্বাস করে সবকথা বলতে পারবে এবং নিজের কাজে লাগাতে পারবে। সবাই মেয়ে দেখে সুযোগ বুঝে শুধু flirt করছিলো। তাই অনুরিমা সেই সাইটে পেইড সাবস্ক্রিপশন নিলো, প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ, যাতে এই কাজের জন্য সে কোনো অথেন্টিক ও পেশাদার কাউকে পেতে পারে। অবশেষে সে একজনকে খুঁজে পেলো, যার user id তে নাম ছিল Bull_7387 , bio তে লেখা ছিল Always at your service .. সাহস করে অনুরিমা add request পাঠালো। কিছুক্ষণ বাদে accept এও হয়েগেলো। শুরু হলো কথা বার্তা। প্রথম দিকে অনুরিমা ছদ্মনাম-ই নিয়েছিলো, user id ছিলো Sweet_Girl_Jinia , bio তে লেখা ছিল Searching for Love .. যেহেতু লোকটার নামেই ছিল Bull, তাই কথা বলার purpose টা দু'পক্ষের কাছেই খুব cliear ছিল প্রথম থেকে। শুধু অপেক্ষা ছিল কে প্রথম কথাটা পাড়বে, এবং কিভাবে ?
Primary introduction, এবং কিছু formal কথাবার্তার পর পেশাগত কারণে Bull-ই প্রথমে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করে বসলো, কবে এবং কোথায় ? কোনো ভনিতা না করেই সোজা টপিকে এন্ট্রি ! অনুরিমা চমকে উঠলো ! থতমত খেয়ে রিপ্লাই করলো, কি ??
"কি আবার বুঝতে পাচ্ছো না ? আমার বুল আইডি দেখেই তো ম্যাসেজ করেছো। বুল মানে নিশ্চই জানো !"
"হুমঃ। ...."
"তাহলে জিনিয়া, আসল কথায় আসা যাক এবার। .. তবে আগে বলো এই প্রোফাইলটা কার ? Hot wife এর নাকি cuckold husband এর ? পয়সা দিয়ে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আমার প্রোফাইল অবধি যখন পৌঁছেছো, তখন এটা আর যাই হোক টাইম পাস করার জন্য তৈরি কোনো ফেক অ্যাকাউন্ট নয়। তবে অনেক হাসবেন্ড female account খুলে ম্যাসেজ দেয়, তাড়াতাড়ি রিপ্লাই ও অ্যাটেন্শন পাওয়ার জন্য। অনেকে আবার বউকে রাজি করার আগেই আমাদের কাছে পৌঁছয়, তারপর আমাদেরকেই দায়িত্ব দেয় ছলে বলে কৌশলে বউকে পরকীয়াতে ফাঁসিয়ে নিজের ফ্যান্টাসি-কে পরিণতি দিতে। আগেই বলে রাখছি, সেরকম কেস হলে কিন্তু এক্সট্রা চার্জ লাগবে। সহজ সরল বাঙালি সাদাসিধে ঘরোয়া বউদের ফাঁসাতে কিন্তু অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।"
"আপনারা এসবও করেন ??"
"করতে হয় বইকি। তবে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে এক্সপ্লয়েট করিনি, জোর জবরদস্তি তো দূরের কথা, ইভেন ডেসপারেট হয়ে ওঠা হাসবেন্ড-রা সেটা করতে বললেও আমরা করিনা। তাই পয়সাওসুল গ্যারান্টি বা সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ হয়না কখনো। কিন্তু তার ফলে কোনো মানি ব্যাক স্কিম নেই। It's a non-refundable investment .."
"আচ্ছা আপনি যে বারবার আমরা আমরা বলছেন, আপনার কি কোনো টিম আছে, যারা একসাথে এসব করে ??"
"না না, আমরা বলতে আমি আমাদের Bull কমিউনিটির কথা বলছি। এই ওয়েবসাইটে রেজিস্টার্ড সকল bull দের কিছু ethics মেইনটেইন করতে হয়, যাতে সাইটের বিশ্বস্ততা বজায় থাকে পরিষেবা প্রাপকদের কাছে। প্রাইভেসী বজায় রাখার জন্য কোনো বুল-ই নিজের কাস্টমারের ডিটেলস অন্য কোনো বুলের সাথে শেয়ার করেনা। এই ব্যাপারে আপনি একশো শতাংশ গ্যারান্টি নিতে পারেন, তাও আবার লিখিত ভাবে, যদি চান।"
"আচ্ছা , এই করে আপনাদের সংসার চলে যায় ??"
"দেখুন আপনি এটা সীমা অতিরিক্ত প্রশ্ন করলেন।.. তাও আপনাকে বলি, কাস্টমার যা বুকিং ফিস দেয়, তার একটা certain percent ওয়েবসাইট কতৃপক্ষ কমিশন হিসেবে নেয়। বাকিটা বুল বা জিগোলো, যাকে অ্যাপয়েন্ট করা হয়, সে পায়। ওয়েবসাইটের আরো সাইড ইনকাম থাকে বিভিন্ন কন্ডোম ও কন্ট্রাসেপ্টিক অ্যাড ও স্পনসরশিপ থেকে। আমাদের অনেক সময়ে হাসবেন্ড বা ওয়াইফ পার্সোনাল ডিটেক্টিভ হিসেবেও ব্যবহার করে, অর্থাৎ আমরা পরকীয়া করাতে এবং ধরাতে দুটোতেই সাহায্য করি। কিন্তু ওই যে আগেই বললাম, আলাদা আলাদা কাজের জন্য আলাদা আলাদা ফিস চার্জ করি। এছাড়াও বাকি সাইড খরচাও কাস্টমার-দের বহন করতে হয়। বর্তমানে এইসব ফ্যান্টাসির চাহিদা খুব বেড়েছে, তাই পেইড কাস্টমারদের অভাব হয়না। আমরা আউটস্টেশন সার্ভিসও দিয়ে থাকি। কখনো কখনো শহরের বাইরে, বা রাজ্যের বাইরেও যেতে হয়। শুধু তো urban sector এ নয়, ছোট শহর এবং জেলাতেও চাহিদা রয়েছে। তবে ওই যে বললাম সাইড খরচা গুলো আপনাদেরই বহন করতে হয়, যাতায়াত খরচা থেকে হোটেল ভাড়া, খাওয়া দাওয়া সব। এটাই আমাদের পেশা, আর এতে আমার মতো বুল দের ভালোই ইনকাম হয়। শুধু বুল নয়, জিগোলো, ম্যাসাজ এবং প্রাইভেট ডিটেক্টিভ সার্ভিসও দিয়ে থাকি। কিন্তু আমার প্রেফারেন্স হলো থ্রিসাম বা কাকোল্ড সার্ভিস, তাই ইউসার আইডি-টা বুল হিসেবেই বানিয়েছি। এবার আপনি বলুন , আপনি সত্যিই মেয়ে নাকি ছেলে ? আই মিন , হট ওয়াইফ নাকি কাক্কু ? আর আমার থেকে কিধরনের সার্ভিস চান ?"
বুলের কথা শুনে অনুরিমা অনেকক্ষণ চিন্তা করলো। ওদিকে বুল সুইট গার্ল জিনিয়া অনলাইন দেখে তার রিপ্লাই পাওয়ার জন্য ওয়েট করতে লাগলো। তারপর কিছুটা অধৈর্য হয়ে বুল আবার ম্যাসেজ করলো , "কি হলো ? কিছু বলবেন, নাকি আমি চললাম ? দেখুন আমি এখানে টাইমপাস করতে বসিনি, এটা আমার পেশা। আমাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে কথা আগে বাড়ান, নাহলে এখানেই কথোপকথনের ইতি করুন। "
এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর তড়িঘড়ি অনুরিমা ওরফে জিনিয়া রিপ্লাই করে বসলো, "না না আমি রাজি। "
"তাহলে বিস্তারিত করে বলুন, কে আপনি, আর কিই চান? কথা দিচ্ছি, সবকথা দায়িত্বের সাথে গোপন রাখা হবে, ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি। "
অনুরিমা কিছুটা সময় নিয়ে রিপ্লাই দিলো, "আমি সত্যি সত্যিই একজন মেয়ে, তবে জিনিয়া আমার নাম নয়। আমার হাসবেন্ড কাকোল্ড ফ্যান্টাসি মাথায় নিয়ে মত্ত। তাকে কিছুতেই সঠিক পথে নিয়ে আনা যাচ্ছেনা। আমি রাজি না হওয়ায় সে এই ব্যাপারটা নিয়ে না এগোলেও, মনে মনে সে এখনও এটিকে পুষে বেড়াচ্ছে। আমি তাই চাই তার এই ফ্যান্টাসিটা-কে একবারের জন্য বাস্তব রূপ দিতে, তবে সেটা তার অজান্তেই। এমনভাবে, যেন সে বুঝতে না পারে এটা প্রিপ্ল্যান।"
"হুমঃ, আপনার ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং। তাই এভাবে চ্যাটে সব কথা ডিসকাস করা যাবেনা। আমাদের সামনাসামনি একদিন বসতে হবে। ভয় নেই, এমন কোনো জায়গায় ডাকবোনা যেখানে আপনার আসতে অস্বস্তি বোধ হবে। ভর দুপুরে কোনো এক লোকালয়ের রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পারি আমরা, যদি আপনার বিশ্বাস থাকে আমার উপর।"
"বিশ্বাস না রেখেও উপায় কি বলুন। দীঘিতে সাঁতার কাঁটতে নেমে কি আর কুমিরের ভয় পেলে হয় !"
"কুমির নয়.... বুল, মানে ষাঁড় !!"
"আচ্ছা .... আপনাকে আমি পরে জানাবো দেখা করার দিনক্ষণ। "
"ঠিক আছে, তবে আপনাকে আগে একটা কাজ করতে হবে। আমার প্রোফাইলে গিয়ে বুক দা বুল অপশনে ক্লিক করবেন। সেখানে ডেট এন্ড টাইম টা মেনশন করতে হবে, কবে আপনি আমার অ্যাপয়েনমেন্ট চান তার জন্য। বুকিং ফিস ওয়ান টাইম, তারপর কাজ বুঝে ফিস চার্জ হবে। চিন্তা করবেন না, সবকিছু খুব গোপন রাখা হবে। প্রাইভেসীর গ্যারান্টি এখানে হানড্রেড পার্সেন্ট। এইসব ফর্মালিটিস কমপ্লিট হয়েগেলে আমাকে বুকিং আইডি-টা শেয়ার করে দেবেন, তাহলেই যেখানে বলবেন সেখানে এই বান্দা হাজির।"
"এসব কি আজকেই করতে হবে ?", কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে অনুরিমা টেক্সট করলো।
"না , তবে আপনার অ্যাড রিকোয়েস্ট-টা যতোক্ষণ আমি অ্যাকসেপ্ট করে রেখেছি ততোক্ষণ আমিই আপনার জন্য অ্যাভেইলেবল থাকবো, অর্থাৎ আমি আপনাকে সার্ভিস দেব। আমার প্রোফাইলটা আগামী ৪৮ ঘন্টা আপনার জন্য লক থাকবে, তাই যা ডিসিশন নেওয়ার এই দুদিনের মধ্যে নিয়ে নেবেন। তারপর কিন্তু আমি আপনার অ্যাড রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেবো।"
"মাত্র ৪৮ ঘন্টা !! তার মধ্যেই জানাতে হবে আমাকে ??"
"সাধারণত আমি ক্লায়েন্টদের ২৪ ঘন্টার বেশি সময় দিই না, কারণ কেউ যদি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিয়ে আমার সাথে contact করে তার মানে ধরে নেওয়া যায় সেই মানুষটি একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, তাই তার আর ভাবনা চিন্তার বেশি অবকাশ থাকার কথা তো নয়। কিন্তু আপনার ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড দেখছি। আপনি নিজে রাজি নন, কিন্তু নিজের স্বামীর সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ করার জন্য যোগাযোগ করেছেন, তাও আবার স্বামীর অজান্তেই। সত্যিই ম্যাডাম, আপনাকে স্যালুট ! আপনার স্বামী খুব লাকি।"
"হুম...."
"যাই হোক, বেশি কথা আর বাড়াচ্ছি না, দুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিন। যদি রাজি থাকেন, তাহলে যে প্রসিডিউর বললাম, সেটা ফলো করে আমাকে জানাবেন। মাঝে বুকিং করতে কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হলেও বলবেন, আমি সাহায্য করে দেবো। তবে মনে থাকে যেন, আজ বুধবার, বৃহস্পতির পর শুক্রবার হলো লাস্ট ডেট। তারপর কিন্তু অন্য কাউকে আপনাকে খুঁজে নিতে হবে।"
এই বলে Bull_7387 অফলাইন হয়েগেলো। রয়েগেলো অনলাইন Sweet_Girl_Jinia, তবে কিছুক্ষণ। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো ওয়েবসাইটের অথেন্টিসিটি-টা, Bull_7387 এর প্রোফাইলটা, এবং বুকিং এর প্রসিডিউর-টা। কিন্তু এখুনি তাড়াহুড়ো করে কিছু করলো না। ভাবনার জন্য সময় নিলো। হাতে তো আছে দুটো দিন এখনো। দেখাই যাক..... ভাগ্য কোন পথে অনুরিমাকে ধাবিত করে।
পর্ব ২৬
সর্বনাশের খেলায় নেমে ধর্ম জাতপাত দেখা বিলাসিতা মাত্র
ওয়েবসাইট থেকে সাইন আউট করে ল্যাপটপ অফ করে অনুরিমা বাড়ির কাজ সারতে লাগলো। মাথায় সবসময়ে সেই এক চিন্তা ঘুরছিলো, সমীর ও তার বিদঘুটে ফ্যান্টাসি ! কি করবে আর কি করবেনা, কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিলো না। সে ঠিক করলো একবার অন্তত সমীরের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করবে তার ওই ফ্যান্টাসিটা নিয়ে। একটা অন্তিম চেষ্টা করে দেখবে বিনা যুদ্ধে রাজা ও তার রাজ্যপাট কে জিতে নেওয়ার। এই সংসারটাই তো তার কাছে একটা রাজ্যপাট, যার বর্তমান রাজা হলো বাড়ির একমাত্র ওয়ার্কিং ম্যান সমীর, এবং রানি হলো সে নিজে।
সেই মতো রাতে শুতে যাওয়ার আগে অনুরিমা কথাটা পাড়লো। নাহঃ, অনলাইনে বুলের সাথে কথা বলার ব্যাপারটা নয়, সেটা তো অনুরিমার কাছে লাস্ট অল্টারনেটিভ অপশন। সব দরজা বন্ধ হলে তবেই সেই দরজায় সে কড়া নাড়বে। কিন্তু তার আগে বাকি দরজা গুলো ধাক্কা দিয়ে দেখবে, খোলে কিনা। অনুরিমা ঠিক সেটাই করছিলো।
"সমীর ...."
"বলো ...."
"তুমি কি আদেও সিরিয়াস নিজেকে নিয়ে?"
"মানে?"
"সমীর তুমি কেন বুঝতে পারছো না, তোমার একটা মেয়ে আছে, সাজানো গোছানো সংসার আছে।..... তাও তুমি......."
"তুমি কি বলছো আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা !"
"তাই ?? তুমি কিছুই বুঝতে পারছো না? এই যে প্রতি রাতে নিজেকে অন্য পুরুষ ভেবে আমার সাথে মিলিত হও, এটা কতোটা লজ্জার ও অপমানের আমার কাছে সেটা বুঝতে পারো ??"
"ওহঃ , কাম অন অনু।.... এটা এমন কি ব্যাপার ! আমি তো আগের মতো তোমাকে জোর করছি না কিছু করতে। আমি এখন মনে মনে কি ভাববো সেটাও তুমি ঠিক করে দেবে ?"
"তুমি আমাকে প্রমিস করেছিলে সমীর যে তুমি নিজের এই মানসিক ব্যাধিটা-কে কাটিয়ে উঠবে। "
"তোমার মনে নেই ডক্টর রয় কি বলেছিলেন ! এটা কোনো মানসিক ব্যাধি নয়। ইট'স কোয়াইট ন্যাচারাল। "
"ন্যাচারাল হবে বাকিদের কাছে, আমার কাছে নয়। "
"তাহলে সেটা তোমার সমস্যা, অনুরিমা। "
"তুমি এতোটা ডেসপারেট হয়েগেছো সমীর ! এখন কোনো কিছুতেই তোমার কিচ্ছু যায় আসছে না ?? চক্ষুলজ্জা বলে আর কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই ?? আমি যদি সত্যি অন্য কারোর সাথে এসব করি, তাহলে তুমি খুশি হবে তো ??"
"হ্যাঁ, হবো। শুধু হবোই না, তাড়িয়ে তাড়িয়ে তা নিজের চোখে দেখে উপভোগও করবো। হয়েছে ?? "
রাগের মাথায় এসব বলে সমীর পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। অনুরিমার কাছে এবার সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়েগেলো। সে অবশেষে বুঝে গেলো তার এখন কি করণীয়। নাহঃ! অনেক কষ্ট করেও এই সর্বনাশটা আটকানো গেলো না। তাকে এবার এই অগ্নিপরীক্ষায় নিজের মান-ইজ্জত কে আহুতি দিতেই হবে। সে আর বেশি দেরী না করে তক্ষুনি রাগে অভিমানে ল্যাপটপ অন করে বসলো। সেই ওয়েবসাইটে সাইন ইন করে বুল বুকিং প্রসিডিউর ফলো করতে লাগলো। ফাইনাল পেমেন্টে ক্লিক করার আগে একবার সমীরের দিকে চেয়ে রইলো। সমীর তখন নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিলো। তার কোনো দৃক্পাত না দেখে অনুরিমা আরোই ফ্রাস্ট্রেটেড ফীল করতে লাগলো।
"সমীর কি এখন একটুও তার মন বোঝেনা?? ঝগড়া করে উল্টো দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে পড়লো ! একবার আমাকে মানানোর চেষ্টা পর্যন্ত করলো না ! ঠিক আছে, তবে তো এর একটা নিস্পত্তি করতেই হবে। তোমাকে আমি ভালোবেসে বাঁধতে চেয়েছিলাম। নিজেও শুধু তোমার হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। তুমিই থাকতে দিলে না। আজ যে সর্বনাশের খেলায় আমি নামতে চলেছি, তার অশুভ সূচনা তুমি করে দিয়েছো। এবার শুধু পরিণামের অপেক্ষা। একদিন এমন আসবে যেদিন তুমি আজকের এই ব্যবহারের জন্য পস্তাবে, মিলিয়ে নিও। "
মনে মনে সমীরকে এই কথা বলে চোখের জল মুছে সে ফাইনাল পেমেন্টে ক্লিক করে দিলো। বুকিং ডান ! Bull_7387 প্রোফাইলে বুকিং আইডি শেয়ার করে দিলো। ঘটনাক্রমে Bull_7387 তখন অনলাইন ছিল। বুকিং কনফার্মেশন পেয়ে তৎক্ষণাৎ সে ম্যাসেজ দিলো।
"হাই। ..... তাহলে ?? এতো তাড়াতাড়ি মন বানিয়ে নিলেন ? অবশ্য বানাবেন নাই বা কেন ! পেইড সাবস্ক্রিপশন যখন আগে থেকে নেওয়া ছিল তার মানে সেখানেই হাফ অফ ইওর মাইন্ড এগ্রিড টু ডু দিস অ্যাডভেঞ্চার। বাকি মনটা কে তৈরি করানো ছিল জাস্ট সময়ের অপেক্ষা।.... আচ্ছা তবে আবার সেই পুরোনো প্রশ্নে ফিরে যাই, কবে এবং কোথায় ??"
আগের বারের মতো এবার আর অনুরিমার বুঝতে অসুবিধা হলোনা, প্রশ্নের প্রসঙ্গটা ঠিক কি ? সে তাই ঝট্পট উত্তর দিয়ে দিলো, "কালকে ঠিক দুপুর ১২টায়, The Tea Trove Cafe, Park Street .."
"কালকেই !! ওয়াহঃ! আপনি তো দেখছি খুব তাড়াহুড়োতে আছেন !"
"হ্যাঁ, যখন একটা স্টেপ নেবো বলে ঠিক করেছি তখন শুভস্য শীঘ্রম। তাছাড়া আজকের পর আমার কাছে সবটা খুব ক্লিয়ার হয়েগেলো, আমার মনে আর কোনো দ্বিধা নেই। আপনি কাল ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় চলে আসবেন, দেরী করবেন না যেন। আমি এখন অফ হলাম, ঘুমোতে যাবো। Good Night....."
ওপার থেকে বুলের কোনো রিপ্লাইয়ের ওয়েট না করেই আমাদের স্যুইট গার্ল জিনিয়া সাইন আউট করে দিলো। অনলাইনে 'জিনিয়া'-কে অফ হয়ে যেতে দেখে বুলও আর কোনো ফর্মাল ম্যাসেজ দিলো না, লাইক 'গুড নাইট', 'কালকে দেখা হচ্ছে' etc etc.. এসব রোড সাইড রোমিও-রা করে, কোনো প্রফেশনাল বুল নয়। এটা তার কাছে পেশা, এবং জিনিয়া ওরফে অনুরিমা হলো তার জাস্ট একজন ক্লায়েন্ট, দ্যাটস ইট !
পরের দিন The Tea Trove এ বসে বুল অপেক্ষা করছিলো তার ক্লায়েন্ট জিনিয়ার জন্য। কিছু সময় পশ্চাদ শাড়ি পরিহীত সাধারণ সাজে অনুরিমা প্রবেশ করলো সেই ক্যাফেতে। সাধারণ সাজেও অনুরিমার মতো অপরূপা-দের সবসময়ে অসাধারণই লাগে, তাই সাধারণ সাজ বলাটা কখনোই উপযুক্ত নয়, বিশেষ ভাবে অনুরিমার ক্ষেত্রে।
অনুরিমাকে দেখে বুল বাবু হাঁ হয়ে গেলো। বিশ্বাস করতে পাচ্ছিলোনা এতো সুন্দরি মেয়ে তার ক্লায়েন্ট, এবং একে সম্ভোগ করার জন্য সে টাকাও পাবে !! উল্টে তো তাকেই টাকা দেওয়া উচিত। বিশ্বাস করতে আরোই কষ্ট হচ্ছিলো এটা ভেবে যে এর স্বামীই নাকি চায় কাকোল্ড হয়ে অন্য পুরুষকে দিয়ে একে চোদাতে !! হায় কপাল ! কতোই রঙ্গ দেখবো দুনিয়ায় ! এরকম মেয়ের স্বামীও নাকি যৌনতায় অতৃপ্ত হয়ে কাকোল্ড হতে চায় ?? কি নেই এই মায়াবী মখমলি নরম শরীরে ! এই ভেবে সে অনুরিমাকে আপাদমস্তক স্ক্যান করতে লাগলো চোখ দিয়ে।
"আপনিই কি মিস্টার বুল?"
"হুঁহঃ, ....... হ্যাঁ হাঁ। .... আমিই সেই অধম যাকে আপনি choose করেছেন, নিজের জন্য..... ", চেতনা ফিরে অনুরিমার বুক থেকে চোখটা সরিয়ে উর্ধপানে তাকিয়ে বুল বাবু বললেন। অনুরিমা চেয়ার টেনে বুলের সামনাসামনি মুখ করে বসলো। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকলো। এবার বুল-ই ইনিশিয়েট নিলো কথা বলার, "আগে কিছু অর্ডার দেওয়া যাক? ভীষণ খিদে পেয়েছে। আসলে বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসিনি তো। আপনি এতো দামি একটা ক্যাফেতে আমাকে ডেকেছেন, তাই পেট টা খালি করে এসছি।"
বুলের এই সহজ সরল কথায় অনুরিমা ফিকঃ করে হেসে ফেললো। হয়তো এটাই চেয়েছিলো বুল, might be a part of tricks to ease her. তা সে যাই হোক না কেন, অন্তত কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও অনুরিমার মুখে হাসি তো ফুটে ছিল, তার এই বিষাদে ভরে যাওয়া জীবনে অল্প আলো বাতাস তো খেললো। এর জন্য বুল বাবু-কে দশে দশ !
অনুরিমা নিজের মুচকি হাসি চেপে বললো , "ঠিক আছে, তাহলে আগে কিছু অর্ডার-ই দিই। বলুন কি খাবেন?"
বলতে বলতেই ওয়েটার মেনু কার্ড নিয়ে হাজির। সেটা টেবিলে রেখে দিলো। মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে খুলে অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো লোকটি-কে সে কি খাবে? মিস্টার বুল বললেন As her wish, যেটা তার ইচ্ছে। মেনু কার্ডটা বুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে অনুরিমা বললো, আজকে তিনি অনুরিমার কথায় এখানে এসছেন। হতে পারে তাকে সে বুক করেছে, কিন্তু তবুও সেই মানুষটা অনুরিমার অতিথি। তাই অতিথি নিজেই ডিসাইড করুক, সে কি খাবে। এই কথা বুল বাবাজীবনের মন ছুঁয়ে গেলো। সে মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে প্রথমে অনুরিমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো, তারপর বললো, "আমি অনেক কাস্টমারের সাথে ডিল করেছি, কিন্তু আপনার মতো দিল-দরদী মানুষ একটাও দেখিনি। সবাই শুধু নিজের ফায়দা-য় আসে, আর খালি ধান্ধায় থাকে কি করে খরচ কম করা যায়। আর এদিকে আপনি আমাকে এত বড়ো ক্যাফেতে ডাকলেন, তারপর আমাকেই আমার মনের মতো খাবার অর্ডার দিতে বলছেন ! সত্যি ম্যাডাম, আপনার কোনো তুলনা হয়না। একদিকে আপনি স্বামীর ফ্যান্টাসি পূরণের জন্য তাকে না জানিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন, তার উপর আমাকে এত সম্মান দিচ্ছেন। আপনাকে তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আপনার সমস্যা সমাধান না করে আমি এই কেস-টা ছাড়বো না। আপনি যা করতে বলবেন, আমি ঠিক তাই করবো।.... বাই দা ওয়ে, আমার নাম রাকিব মন্ডল, ছোট্ট করে রকি", এই বলে সে অনুরিমার দিকে আবার হাত বাড়িয়ে দিলো, এবার হ্যান্ডশেকের জন্য।
অনুরিমাও সৌজন্যতার খাতিরে নিজের হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক-টা সারলো। কথাবার্তা শুনে ও হাবভাব দেখে রাকিবকে তার বিশ্বাসযোগ্যই মনে হলো। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে অনুরিমা নিজের আসল পরিচয়টা দিয়ে দিলো, "আমার আসল নাম অনুরিমা, ছোট্ট করে অনু।"
"ওহঃ আচ্ছা।..... ওয়েবসাইটে কেউ নিজের আসল নাম দেয় না, সেটাই খুব স্বাভাবিক। তবে আমার নাম শুনে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন আমি মুসলমান, তাতে আপনার সমস্যা নেই তো?"
"যে সর্বনাশের খেলায় আমি নেমেছি , যেখানে আরো বড়ো পরীক্ষা আমার জন্য অপেক্ষা করে হয়তো বসে রয়েছে, সেখানে সেই খেলার শরিকের জাতপাত, ধর্ম দেখাটা বিলাসিতা মাত্র।"
"সর্বনাশের খেলা কেন বলছেন? আমি আপনার কোনো সর্বনাশ করবো না, প্রতিটি পদক্ষেপেই আপনার থেকে আমি পারমিশন নেবো। "
"সর্বনাশ আপনি করবেন সেটা কখন বললাম? সর্বনাশ তো নিয়তি আমার সাথে করবে। যাই হোক, আপনি আগে খাবারটা অর্ডার দিন। দেখে মনে হচ্ছে আপনার খুব খিদে পেয়ে গ্যাছে।"
"ঠিক বলেছেন। আমি বরঞ্চ এখন খাবারেই আপাতত কন্সেন্ট্রেট করি। হা হা হা হা । ...."
অনেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাকিব মেনু কার্ডটা দেখলো। খাবারের নাম গুলো খুব খটমট ছিল। তাই সে মেনু কার্ডটা অনুরিমাকে দিয়ে বললো, অনুরিমাই পছন্দমত খাবার অর্ডার দিক। কারণ সে বুঝতে পারছেনা কোনটা কি খাবার?
এই শুনে অনুরিমা জোরে জোরে হাসতে লাগলো। হাসি যেন থামছিলোই না। অনুরিমাকে হাসতে দেখে রাকিব ওর রূপে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। সে অনুরিমার দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে ছিল। হাসতে হাসতে অনুরিমা সেটা লক্ষ্য করলো। হাসি থামিয়ে রাকিবকে সে জিজ্ঞেস করলো এরকম একদৃষ্টি তে রাকিবের তার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণ? রাকিব সরলভাবে উত্তর দিলো, হাসলে নাকি অনুরিমাকে জান্নাতের হুর মনে হয়। অনুরিমা এবার হালকা হাসলো। প্রশংসা পেতে কারই না ভালো লাগে।
বেশি কিছু না বলে অনুরিমা মেনু কার্ডটা হাতে নিয়ে পছন্দসই খাবার গুলো choose করতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, রাকিব তো মুসলিম, নন-ভেজ এ ওর নিশ্চই কোনো আপত্তি থাকবে না। তাই ওয়েটার-কে ডেকে রাকিবের জন্য সে Turkish Lamb Burger, Crispy Fried Chicken সাথে Virgin Mojito অর্ডার দিলো। সে নিজে সকালে ব্রেকফাস্ট করে এসেছে তাই নিজের জন্য শুধু একটা Caffe Latte নিলো।
ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলো। তারপর তাদের মধ্যে আসল কথা শুরু হলো। রাকিব জানতে চাইলো পুরো ব্যাপারটা, এবং তাকে ঠিক কি কি করতে হবে সেটা। অনুরিমাও সব খুলে বলতে লাগলো। কথা চলতে লাগলো অনেকক্ষণ। তারই মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে এলো। অনুরিমা রাকিবকে আগে খেয়ে নিতে বললো, তারপর বাকি কথা হবে। ক্ষুদার্ত রাকিব লোভনীয় সব বিদেশী খাবার দেখে যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো, গপ গপ করে খেতে লাগলো। অনুরিমা ভাবলো এ কোনো আদিম মানব-কে সে ডেকে এনেছে ? তবে এটাও ঠিক আদিম মানবদের মর্দন যথেষ্ট বেদনাদায়ক হয়, যাকে করে তার জন্যও এবং যে দেখবে তার জন্যও। সমীর, be ready for that..... মনে মনে তা জানান দিলো অনুরিমা।
অনুরিমা আস্তে আস্তে নিজের Caffe Latte শেষ করতে লাগলো। টেবিলের অপরদিকে বসা রাকিবও কথা ছেড়ে এখন শুধু খাওয়াতে মনোনিবেশ করেছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে দুজনে নিজ নিজ খাওয়ার শেষ করলো। হাত মুখ ফ্রেশ করে পূনরায় নিজের নিজের কেদারায় এসে স্থাপিত হলো তারা।
- "তাহলে, সেই কথাই রইলো অনুদি। ...."
- "যে শরীরটার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবেন তাকে দিদি বলছেন ??"
- "সেটা তো একটা কারণবশত, তাই বলে কি আপনার প্রাপ্য সম্মানটুকু আপনাকে দেবোনা? আপনি তো আর বাজারের রেন্ডি নন, বড়ো বাড়ির বউ। "
- "তাও, বাজারের মেয়ের সাথে পার্থক্য কি রইলো বলুন? আমাকেও তো সেই নিজের শরীরটাকে নিয়ে কমপ্রমাইস করতে হচ্ছে, সেটাও আবার নিজের স্বামীর জন্যই ", এই বলে অনুরিমা কাঁদতে কাঁদতে লাগলো। রাকিব চেয়ার থেকে উঠে অনুরিমার কাছে এলো। কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনা দিয়ে বললো, "কেঁদো না please.... এখন থেকে আপনি শুধু আমার কাস্টমার নন, বন্ধুও। আমি তোমাকে অনু বলে ডাকবো, এবং আপনি নয় তুমি করে ডাকবো। "
চোখের জল মুছে কিছুটা সামলে নিয়ে অনুরিমা বললো, "অনু দি নয়, অনুও নয়, তুমি আমায় অনুরিমা বলে ডাকবে কেমন। হ্যাঁ, আপনির বদলে তুমি করে সম্বোধন করতে পারো, কিন্তু আমায় দিদি বলবে না, নাহলে দিদি ও ভাইয়ের পবিত্র সম্পর্কের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। কয়েকদিনের জন্য হলেও তোমার সাথে আমি এক অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হতে চলেছি, সেই কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না রাকিব। সত্যি বলতে কি, তোমাকে এতটাও আপন করে নিতে পারছি না যে আমি তোমাকে অনু ডাকে অনুমতি দিতে পারি। তাই তুমি আমাকে আমার পুরো নাম ধরেই ডাকবে, অনুরিমা। "
- "ঠিক আছে, তাহলে তাই হবে, অনুরিমা ", এই বলে রাকিব পূনরায় নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। পরবর্তী পদক্ষেপের দিনক্ষণ, কার্যপ্রণালী সব ফাইনালাইস করে ওঠার পর ছিল বিদায়ের পালা। দুজনেই সিট্ ছেড়ে উঠলো। একে অপরের সাথে করমর্দন সেরে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে রওনা দিলো। যাওয়ার আগে ভদ্রতার খাতিরে রাকিব অনুরিমাকে বললো সে তাকে একটু এগিয়ে দেবে। কিন্তু খুব বিনয়ের সাথে অনুরিমা তা প্রত্যাখ্যান করলো। রাকিবও তাই নিজের সীমা বুঝে বেশি জোরাজুরি করলো না আর।
Comments
Post a Comment